বুকে জাপানে জ্বরে অজ্ঞান ঈশ্বরের দেহটা জলে ভিজে দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে উঠতে চায়।
প্ৰাণপণে তাকে সামলাতে সামলাতে গৌরী পাগলিনীর মতো চিৎকার করে বলে, আয়, পিসি, সবাই মিলে বন্যায় ঝাপিয়ে পড়ি। মরে গেলেই তো ফুরিয়ে গেল।
তারপর তোড় কমে এলে ঢলের জলে ভেসে আসে নৌকা–প্রথম নৌকাতেই আসে লখার মা, রোস্তম, খোলবাজিয়ে নিরঞ্জন, ভূতনাথ এবং আরো দু-একজন।
নৌকা শান সায়েবের। আরো কয়েকজনের বাড়ি উদ্ধার ও সাহায্যের কাজের জন্য যেতে হবে। জলের তোড়টা কমতেই লখার মার তাগিদে সবার আগে নৌকা আসে ঈশ্বরের ভাঙা বাড়িতে।
নুরুল আসে নি কিন্তু সেও বলে দিয়েছে সকলের আগে ঈশ্বরের বাড়ি যেতে হবে।
এই বন্যার মধ্যে আবার যেন আদর দেখা যায় ঈশ্বরের।
বনানীর তাগিদে প্রভাসও ব্যবস্থা করে একটা ছোট নৌকা ঈশ্বরের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
হেলে পড়া চালা দেখে লখার মা চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করে, কোন নৌকায় যাবি লো গৌরী?
কোথা নিয়ে যাবে?
যেখানে উঁচু জমি আছে, যেখানে ঘরবাড়ি খাড়া আছে।
খাড়া কি উঁচু আছে ঘরবাড়ি জমিজায়গা? মানুষটার ইদিকে যায় যায় অবস্থা।
লখার মা এসে গলা চড়িয়ে বলে, বড্ড তুই নরম মানুষ, নইলে এ দশা হয়? চালাটা পড়ে গিয়েছে, উপায় কি? পায়ের নিচের মাটি তত সরে যায় নি। আয় সবাই মিলে ধরাধরি করে মানুষটাকে নৌকায় নামিয়ে আনি। মানুষের আশ্রয় মিলবেই, বন্যা হোক আর ভূমিকম্প হোক।