চিঠি শেষ করে বীণা চুপচাপ বসে রইল।
শ্রাবণ মাসের দুপুর।
আকাশ মেঘলা। মেঘলা দুপুরে সব কেমন অন্যরকম লাগে। কুয়ার কাছের চাঁপা গাছে কর্কশ স্বরে একটা কাক ডাকছে-কা-কা-কা-কা।
বীণার দাদী বললেন, মর হামজাদা মর।
কাক তাতে উৎসাহ পেয়ে আরো শব্দ করে ডাকতে লাগল-কা-কা-কা। মিজান সাহেব বারান্দায় বসে বিড়বিড় করে হিসাব করছেন। তাঁর খানিকটা মাথার দোষ হয়েছে। এমন ভয়াবহ কিছু না। বাইরের কেউ ধরতে পারে না। সবই ঠিকমতোই করেন। শুধু যখন বাসায় থাকেন তখন হিসাব করতে থাকেন। অফিসের না-মেলা হিসাব মিলাতে চেষ্টা করেন। হিসাব মেলে না।
এখন তিনি বারান্দায় জলচৌকিতে বসে অতি দ্রুত হিসাব করছেন।
বাবলু তাঁকে দেখছে। এখন বাবাকে তার আর মোটেই ভয় করে না। বরং বড় ভালো লাগে। বাবার সঙ্গে সে নানান গল্প করে।
বাবলু বলল, বাবা কি করছ?
মিজান সাহেব বললেন, হিসাব।
মিলছে বাবা?
প্রায়। একটু বাকি।
মিজান সাহেব হাসেন। এই হাসি বাবলুর বড় ভালো লাগে।
সেও হাসে।
ক্লান্ত দুপুরগুলোত বীণা বসে থাকে কুয়ার পাশে। মাঝেমাঝে কুয়ার কাছে মুখ নিয়ে বলে, লুবু, লুবু। কুয়া সেই শব্দ উল্টো করে ফেরত পাঠায়। কি সুন্দর প্রতিধ্বনি–বুলু, বুলু।
বীণার কাছে গানের মতো মনে হয়। অন্ধকারের গান।