প্রসাদদাস বন্দ্যোপাধ্যায়,
ইউগাণ্ডা রেলওয়ে হেড অফিস, কনস্ট্রাকশন ডিপার্টমেন্ট,
মোম্বাসা, পূর্ব-আফ্রিকা।
শঙ্করের হাত থেকে কাগজের টুকরোটা পড়ে গেল। পূর্ব-আফ্রিকা! পালিয়ে মানুষে এতদূর যায়? তবে সে জানে ননীবালা দিদির এই স্বামী অত্যন্ত একরোখা ডানপিটে ও ভবঘুরে ধরণের। একবার এই গ্রামেই তার সঙ্গে শঙ্করের আলাপও হয়েছিল— শঙ্কর তখন এন্ট্রান্স ক্লাসে সবে উঠেছে। লোকটা খুব উদার প্রকৃতির, লেখাপড়া ভালোই জানে, তবে কোনো একটা চাকুরিতে বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না, উড়ে বেড়ানো স্বভাব। আর একবার পালিয়ে বর্মা না কোচিন কোথায় যেন গিয়েছিল। এবারও বড়দাদার সঙ্গে কি নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ার দরুন বাড়ি থেকে পালিয়েছিল— এ খবর শঙ্কর আগেই শুনেছিল। সেই প্রসাদবাবু পালিয়ে গিয়ে ঠেলে উঠেছেন একেবারে পূর্ব-আফ্রিকায়!
রামেশ্বর মুখুয্যের স্ত্রী ভালো বুঝতে পারলেন না তাঁর জামাই কত দূরে গিয়েছে। অতটা দূরত্বের তাঁর ধারনা ছিল না। তিনি চলে গেলে শঙ্কর ঠিকানাটা নিজের নোট বইয়ে লিখে রাখলে এবং সেই সপ্তাহের মধ্যেই প্রসাদবাবুকে একখানা চিঠি দিলে। শঙ্করকে তাঁর মনে আছে কি? তাঁর শ্বশুরবাড়ির গাঁয়ের ছেলে সে। এবার এফ.এ. পাশ দিয়ে বাড়িতে বসে আছে। তিনি কি একটা চাকুরি করে দিতে পারেন তাঁদের রেলের মধ্যে? যতদূরে হয় সে যাবে।
দেড়মাস পরে, যখন শঙ্কর প্রায় হতাশ হয়ে পড়েছে চিঠির উত্তর প্রাপ্তি সম্বন্ধে— তখন একখানা খামের চিঠি এল শঙ্করের নামে। তাতে লেখা আছে—
মোম্বাসা
২ নং পোর্ট স্ট্রীট
প্রিয় শঙ্কর,
তোমার পত্র পেয়েছি। তোমাকে আমার খুব মনে আছে। কব্জির জোরে তোমার কাছে সেবার হেরে গিয়েছিলুম, সে কথা ভুলিনি। তুমি আসবে এখানে? চলে এসো। তোমার মতো ছেলে যদি বাইরে না বেরুবে তবে কে আর বেরুবে? এখানে নতুন রেল তৈরি হচ্ছে, আরও লোক নেবে। যত তাড়াতাড়ি পারো এসো। তোমার কাজ জুটিয়ে দেবার ভার আমি নিচ্ছি।
তোমাদের—
প্রসাদদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
শঙ্করের বাবা চিঠি দেখে খুব খুশি। যৌবনে তিনি নিজেও ছিলেন ডানপিটে ধরণের লোক। ছেলে পাটের কলে চাকুরি করতে যাবে এতে তাঁর মত ছিল না, শুধু সংসারের অভাব অনটনের দরুন শঙ্করের মায়ের মতেই সায় দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
এর মাস খানেক পরে শঙ্করের নামে এক টেলিগ্রাম এল ভদ্রেশ্বর থেকে। সেই জামাইটি দেশে এসেছেন সম্প্রতি। শঙ্কর যেন গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে টেলিগ্রাম পেয়েই। তিনি আবার মোম্বাসায় ফিরবেন দিন কুড়ির মধ্যে। শঙ্করকে তাহলে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেন।
০২. চাঁদের পাহাড় – দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
চার মাস পরের ঘটনা। মার্চ মাসের শেষ।
মোম্বাসা থেকে রেলপথ গিয়েছে কিসুমু-ভিক্টোরিয়া নায়ানজা হ্রদের ধারে— তারই একটা শাখা লাইন তখন তৈরি হচ্ছিল। জায়গাটা মোম্বাসা থেকে সাড়ে তিনশো মাইল পশ্চিমে। ইউগাণ্ডা রেলওয়ের নুডসবার্গ স্টেশন থেকে বাহাত্তর মাইল দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে। এখানে শঙ্কর কনস্ট্রাকশন ক্যাম্পের কেরানি ও সরকারি স্টোরকিপার হয়ে এসেছে। থাকে ছোট একটা তাঁবুতে। তার আশেপাশে অনেক তাঁবু। এখানে এখনও বাড়িঘর তৈরি হয়নি বলে তাঁবুতেই সবাই থাকে। তাঁবুগুলো একটা খোলা জায়গায় চক্রাকারে সাজানো— তাদের চারধার ঘিরে বহু দূরব্যাপী মুক্ত প্রান্তর, লম্বা লম্বা ঘাসে ভরা, মাঝে মাঝে গাছ। তাঁবুগুলোর ঠিক গায়েই খোলা জায়গার শেষ সীমায় একটা বড় বাওবাব গাছ। আফ্রিকার বিখ্যাত গাছ, শঙ্কর কতবার ছবিতে দেখেছে, এবার সত্যিকার বাওবাব দেখে শঙ্করের যেন আশ মেটে না।
নতুন দেশ, শঙ্করের তরুণ তাজা মন— সে ইউগান্ডার এই নির্জন মাঠ ও বনে নিজের স্বপ্নের সার্থকতাকে যেন খুঁজে পেলে। কাজ শেষ হয়ে যেতেই সে তাঁবু থেকে রোজ বেরিয়ে পড়তো— যেদিকে দু’চোখ যায় সেদিকে বেড়াতে বের হত— পুবে, পশ্চিমে, দক্ষিণে, উত্তরে। সব দিকেই লম্বা লম্বা ঘাস। কোথাও মানুষের মাথা সমান উঁচু, কোথাও তার চেয়েও উঁচু।
কনস্ট্রাকশন তাঁবুর ভারপ্রাপ্ত এঞ্জিনিয়ার সাহেব একদিন শঙ্করকে ডেকে বললেন— শোনো রায়, ওরকম এখানে বেড়িও না। বিনা বন্দুকে এখানে এক পা-ও যেও না। প্রথম— এই ঘাসের জমিতে পথ হারাতে পারো। পথ হারিয়ে লোকে এসব জায়গায় মারাও গিয়েছে জলের অভাবে। দ্বিতীয়— ইউগান্ডা সিংহের দেশ। এখানে আমাদের সাড়াশব্দ আর হাতুড়ি ঠোকার আওয়াজে সিংহ হয়তো একটু দূরে চলে গিয়েছে— কিন্তু ওদের বিশ্বাস নেই। খুব সাবধান। এসব অঞ্চল মোটেই নিরাপদ নয়।
একদিন দুপুরের পরে কাজকর্ম বেশ পুরোদমে চলছে, হঠাৎ তাঁবু থেকে কিছুদূরে লম্বা ঘাসের জমির মধ্যে মনুষ্যকণ্ঠের আর্তনাদ শোনা গেল। সবাই সেদিকে ছুটে গেল ব্যাপার কী দেখতে। শঙ্করও ছুটল। ঘাসের জমি পাতিপাতি করে খোঁজা হল— কিছুই নেই সেখানে।
কিসের চিৎকার তবে?
এঞ্জিনিয়ার সাহেব এলেন। কুলিদের নামডাক হল, দেখা গেল একজন কুলি অনুপস্থিত। অনুসন্ধানে জানা গেল সে একটু আগে ঘাসের বনের দিকে কি কাজে গিয়েছিল, তাকে ফিরে আসতে কেউ দেখেনি।
খোঁজাখুঁজি করতে করতে ঘাসের বনের বাইরে কটা বালির ওপরে সিংহের পায়ের দাগ পাওয়া গেল। সাহেব বন্দুক নিয়ে লোকজন সঙ্গে করে পায়ের দাগ দেখে অনেক দূর গিয়ে একটা বড় পাথরের আড়ালে হতভাগ্য কুলির রক্তাক্ত দেহ বার করলেন। তাকে তাঁবুতে ধরাধরি করে নিয়ে আসা হল। কিন্তু সিংহের কোনো চিহ্ন মিলল না। লোকজনের চিৎকারে সে শিকার ফেলে পালিয়েছে। সন্ধ্যার আগেই কুলিটা মারা গেল।
তাঁবুর চারপাশের লম্বা ঘাস অনেক দূর পর্যন্ত কেটে সাফ করে দেওয়া হল পরদিনই। দিনকতক সিংহের কথা ছাড়া তাঁবুতে আর কোনো গল্পই নেই। তারপর মাসখানেক পরে ঘটনাটা পুরনো হয়ে গেল, সে কথা সকলের মনে চাপা পড়ে গেল। কাজকর্ম আবার বেশ চলল।
সেদিন দিনে খুব গরম। সন্ধ্যার একটু পরেই কিন্তু ঠাণ্ডা পড়ল। কুলিদের তাঁবুর সামনে কাঠকুটো জ্বালিয়ে আগুন করা হয়েছে। সেখানে তাঁবুর সবাই গোল হয়ে বসে গল্পগুজব করছে। শঙ্করও সেখানে আছে, সে ওদের গল্প শুনছে এবং অগ্নিকুণ্ডের আলোতে ‘কেনিয়া মর্নিং নিউজ’ পড়ছে। খবরের কাগজখানা পাঁচদিনের পুরনো। কিন্তু এ জনহীন প্রান্তরে তবু এখানাতে বাইরের দুনিয়ার যা কিছু একটা খবর পাওয়া যায়।
তিরুমল আপ্পা বলে একজন মাদ্রাজি কেরানির সঙ্গে শঙ্করের খুব বন্ধুত্ব হয়েছিল। তিরুমল তরুণ যুবক, বেশ ইংরেজী জানে, মনেও খুব উৎসাহ। সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে এ্যাডভেঞ্চারের নেশায়। শঙ্করের পাশে বসে সে আজ সন্ধ্যা থেকে ক্রমাগত দেশের কথা, তার বাপ-মায়ের কথা, তার ছোট বোনের কথা বলছে। ছোট বোনকে সে বড় ভালোবাসে। বাড়ি ছেড়ে এসে তার কথাই তিরুমলের বড় মনে হয়। একবার সে দেশের দিকে যাবে সেপ্টেম্বর মাসের শেষে। মাস দুই ছুটি মঞ্জুর করবে না সাহেব?
ক্রমে রাত বেশি হল। মাঝে মাঝে আগুন নিভে যাচ্ছে, আবার কুলিরা তাতে কাঠকুটো ফেলে দিচ্ছে। আরও অনেকে উঠে শুতে গেল। কৃষ্ণপক্ষের ভাঙা চাঁদ ধীরে ধীরে দূর দিগন্তে দেখা দিল— সমগ্র প্রান্তর জুড়ে আলো-আঁধারের লুকোচুরি আর বুনো গাছের দীর্ঘ দীর্ঘ ছায়া।
শঙ্করের ভারি অদ্ভুত মনে হচ্ছিল বহুদূর বিদেশের এই স্তব্ধ রাত্রির সৌন্দর্য। কুলিদের ঘরের একটা খুঁটিতে হেলান দিয়ে সে একদৃষ্টে সম্মুখের বিশাল জনহীন তৃণভূমির আলো-আঁধারমাখা রূপের দিকে চেয়ে চেয়ে কত কি ভাবছিল। ওই বাওবাব গাছটার ওদিকে অজানা দেশের সীমা কেপটাউন পর্যন্ত বিস্তৃত— মধ্যে পড়বে কত পর্বত, অরণ্য, প্রাগৈতিহাসিক যুগের নগর জিম্বারি— বিশাল ও বিভীষিকাময় কালাহারি মরুভূমি, হীরকের দেশ, সোনার খনির দেশ!
একজন বড় স্বর্ণাণ্বেষী পর্যটক যেতে যেতে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন। যে পাথরটাতে লেগে হোঁচট খেলেন সেটা হাতে তুলে ভালো করে পরীক্ষা করে দেখলেন, তার সঙ্গে সোনা মেশানো রয়েছে। সে জায়গায় বড় একটা সোনার খনি বেরিয়ে পড়ল। এ ধরণের কত গল্প সে পড়েছে দেশে থাকতে।
এই সেই আফ্রিকা, সেই রহস্যময় মহাদেশ, সোনার দেশ, হীরের দেশ— কত অজানা জাতি, অজানা দৃশ্যাবলী, অজানা জীবজন্তু এর সীমাহীন ট্রপিক্যাল অরণ্যে আত্মগোপন করে আছে, কে তার হিসেব রেখেছে?
কত কি ভাবতে ভাবতে শঙ্কর কখন ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ কিসের শব্দে তার ঘুম ভাঙল। সে ধড়মড় করে জেগে উঠে বসল। চাঁদ আকাশে অনেকটা উঠেছে। ধবধবে সাদা জ্যোৎস্না দিনের মতো পরিস্কার। অগ্নিকুণ্ডের আগুন গিয়েছে নিভে। কুলিরা সব কুন্ডলি পাকিয়ে আগুনের উপরে শুয়ে আছে। কোনোদিকে কোনো শব্দ নেই।
হঠাৎ শঙ্করের দৃষ্টি পড়ল তার পাশে— এখানে তো তিরুমল আপ্পা বসে তার সঙ্গে গল্প করছিল। সে কোথায়? তাহলে সে তাঁবুর মধ্যে ঘুমুতে গিয়ে থাকবে।
শঙ্করও নিজে উঠে শুতে যাবার উদ্যোগ করছে, এমন সময়ে অল্প দূরেই পশ্চিম কোণে মাঠের মধ্যে ভীষণ সিংহগর্জন শুনতে পাওয়া গেল। রাত্রির অস্পষ্ট জ্যোৎস্নালোক যেন কেঁপে উঠল সে রবে। কুলিরা ধড়মড় করে জেগে উঠল। এঞ্জিনিয়ার সাহেব বন্দুক নিয়ে তাঁবুর বাইরে এলেন। শঙ্কর জীবনে এই প্রথম শুনল সিংহের গর্জন— সেই দিকদিশাহীন তৃণভূমির মধ্যে শেষ রাত্রের জ্যোৎস্নায় সে গর্জন যে কি এক অনির্দেশ্য অনুভূতি তার মনে জাগালে! তা ভয় নয়, সে এক রহস্যময় জটিল মনোভাব। একজন বৃদ্ধ মাসাই কুলি ছিল তাঁবুতে। সে বললে— সিংহ লোক মেরেছে। লোক না মারলে এমন গর্জন করবে না।
তাঁবুর ভিতর থেকে তিরুমলের সঙ্গী এসে হঠাৎ জানালো তিরুমলের বিছানা শূন্য। তাঁবুর মধ্যে কোথাও সে নেই।
কথাটা শুনে সবাই চমকে উঠল। শঙ্করও নিজে তাঁবুর মধ্যে ঢুকে দেখে এল সত্যিই সেখানে কেউ নেই। তখনি কুলিরা আলো জ্বেলে লাঠি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। সব তাঁবুগুলোতে খোঁজ করা হল, নাম ধরে চিৎকার করে ডাকাডাকি করলে সবাই মিলে— তিরুমলের কোনো সাড়া মিলল না।
তিরুমল যেখানটাতে শুয়ে ছিল, সেখানটাতে ভালো করে দেখা গেল তখন। কোনো একটা ভারী জিনিসকে টেনে নিয়ে যাওয়ার দাগ মাটির ওপর সুস্পষ্ট। ব্যাপারটা বুঝতে কারো দেরি হল না। বাওবাব গাছের কাছে তিরুমলের জামার হাতার খানিকটা টুকরো পাওয়া গেল। এঞ্জিনিয়ার সাহেব বন্দুক নিয়ে আগে আগে চললেন, শঙ্কর তাঁর সঙ্গে চলল। কুলিরা তাঁদের অনুসরণ করতে লাগল। সেই গভীর রাত্রে তাঁবু থেকে দূরে মাঠের চারিদিকে অনেক জায়গা খোঁজা হল, তিরুমলের দেহের কোনো সন্ধান মিলল না। এবার আবার সিংহগর্জন শোনা গেল— কিন্তু দূরে। যেন এই নির্জন প্রান্তরের অধিষ্ঠাত্রী কোনো রহস্যময়ী রাক্ষসীর বিকট চিৎকার।
মাসাই কুলিটা বললে— সিংহ দেহ নিয়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু ওকে নিয়ে আমাদের ভুগতে হবে। আরও অনেকগুলো মানুষ ও ঘায়েল না করে ছাড়বে না। সবাই সাবধান। যে সিংহ একবার মানুষ খেতে শুরু করে সে অত্যন্ত ধূর্ত হয়ে ওঠে।
রাত যখন প্রায় তিনটে তখন সবাই ফিরল তাঁবুতে। বেশ ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় সারা মাঠ আলো হয়ে উঠেছে। আফ্রিকার এই অংশে পাখি বড় একটা দেখা যায় না দিনমানে, কিন্তু এক ধরণের রাত্রিচর পাখির ডাক শুনতে পাওয়া যায় রাত্রে— সে সুর অপার্থিব ধরণের মিষ্টি। এইমাত্র সেই পাখি কোনো গাছের মাথায় বহুদূরে ডেকে উঠল। মনটা এক মুহূর্তে উদাস করে দেয়। শঙ্কর ঘুমুতে গেল না। আর সবাই তাঁবুর মধ্যে শুতে গেল কারণ পরিশ্রম কারো কম হয়নি। তাঁবুর সামনে কাঠকুটো জ্বালিয়ে প্রকান্ড অগ্নিকুণ্ড করা হল। শঙ্কর সাহস করে বাইরে বসতে অবিশ্যি পারলে না— এ রকম দুঃসাহসের কোনো অর্থ হয় না। তবে সে নিজের ঘরে শুয়ে জানলা দিয়ে বিস্তৃত জ্যোৎস্নালোকিত অজানা প্রান্তরের দিকে চেয়ে রইল।
মনে কি এক অদ্ভুত ভাব। তিরুমলের অদৃষ্টলিপি এইজন্যেই বোধ হয় তাকে আফ্রিকায় টেনে এনেছিল। তাকেই বা কি জন্যে এখানে এনেছে তার অদৃষ্ট, কে জানে তার খবর?
আফ্রিকা অদ্ভুত সুন্দর দেখতে— কিন্তু আফ্রিকা ভয়ঙ্কর। দেখতে বাবলা বনে ভর্তি বাঙলাদেশের মাঠের মতো দেখালে কি হবে, আফ্রিকা অজানা মৃত্যুসঙ্কুল! যেখানে সেখানে অতর্কিত নিষ্ঠুর মৃত্যুর ফাঁদ পাতা… পরমুহূর্তে কি ঘটবে, এ মুহূর্তে তা কেউ বলতে পারে না।
আফ্রিকা প্রথম বলি গ্রহণ করেছে— তরুণ হিন্দু যুবক তিরুমলকে। সে বলি চায়…