দেখতে দেখতে কত দিন হয়ে গেল।
তার পর সাত-আট বছর কেটে গিয়েছে …
আমার সে অল্প বয়সের ভবঘুরে জীবনের পূর্ণচ্ছেদ পড়েছে অনেকদিন। তবু সে-সব দিনের ছন্নছাড়া মুহূর্তগুলোর জন্যে এখনও মাঝে মাঝে মন কেমন করে ওঠে, যদিও এখন বুঝেছি হারানো-বসন্তের জন্যে আক্ষেপ করে কোন লাভ নেই। মহাকালের বীথিপথ অনাগত দিনের শত বসন্তের পাখির কাকলিতে মুখর, যা পেলুম তাই সত্য, আবার পাব, আবার ফুরিয়ে যাবে..তার চলমান রূপের মধ্যেই তার সার্থকতা।
মালতীও চলে গিয়েছে কত দিন হ’ল, পৃথিবী ছেড়ে কোন প্রেমের লোকে, নক্ষত্রদের দেশে, নক্ষত্রদের মতই বয়সহীন হয়ে গিয়েছে।
কেবল মাঝে মাঝে গভীর ঘুমের মধ্যে তার সঙ্গে দেখা হয়। সে যেন মাথার শিয়রে বসে থাকে। ঘুমের মধ্যেই শুনি, সে গাইছে—
মুক্ত আমার প্রাণের মাঠে
ধেনু চরায় রাখাল কিশোর
প্রিয়জনে লয় সে হরি
ননী খায় সে ননীচোর।
সেই আমার প্রিয় গানটা…যা ওর মুখে শুনতে ভালবাসতুম।
চোখাচোখি হ’লেই হাসি হাসি মুখে পুরনো দিনের মত তার সেই ছেলেমানুষি ভঙ্গিতে ঘাড় দুলিয়ে বলছে–পালিয়ে এসে যে বড় লুকিয়ে আছো? আখড়ার কত কাজ বাকী আছে মনে নেই?
তখন আমার মনে হয় ওকে আমি খুব কাছে পেয়েছি। দ্বারবাসিনীর পুকুরপাড়ের কাঞ্চনফুল-তলার দিনগুলোতে তাকে যেমনটি পেতুম, তার চেয়েও কাছে। গভীর সুষুপ্তির মধ্যেই তন্দ্রাঘোরে বলি–সব মনে আছে, ভুলিনি মালতী। তোমার ব্যথা দিয়ে, ব্যর্থতা দিয়ে তুমি আমাকে জয় করেছ। সে কি ভোলবার?