7- যাহাকে মোগল বাদশাহেরা গোসলখানা বলিতেন, তাহাতে আধুনিক বৈঠকখানার মত কার্য হইত। সেইটি আয়েশের স্থান।
রাজসিংহ – ৭.৩
তৃতীয় পরিচ্ছেদ : বাদশাহ বহ্নিচক্রে
প্রভাতে বাদশাহী সেনা কুচ করিতে আরম্ভ করিল। সর্বাগ্রে পথপরিষ্কারক সৈন্য পথ পরিষ্কারের জন্য সশস্ত্রে ধাবিত। তাহাদের অস্ত্র কোদালি, কুড়ালি, দাও কাটারি। তাহারা সম্মুখের গাছ সকল কাটিয়া, সরাইয়া খানা-পয়গার বুজাইয়া, মাটি চাঁচিয়া, বাদশাহী সেনার জন্য প্রশস্ত পথ প্রস্তুত করিয়া অগ্রে অগ্রে চলিল। সেই প্রশস্ত পথে কামানের শ্রেণী, শকটের উপর আরূঢ় হইয়া ঘড়্-ঘড়্ হড়্-হড়্ করিয়া চলিল,-সঙ্গে গোলন্দাজ সেনা। অসংখ্য গোলন্দাজি গাড়ির ঘড়্-ঘড়্ শব্দে কর্ণ বধির,-তাহার চক্রসহস্র হইতে বিঘূর্ণিত ঊর্ধ্বোত্থিত ধূলিজালে নয়ন অন্ধ; কালান্তক যমের ন্যায় ব্যাদিতাস্য কামানসকলের আকার দেখিয়া হৃদয় কম্পিত। এই গোলন্দাজ সেনার পশ্চাৎ রাজকোষাগার। বাদশাহী কোষাগার সঙ্গে সঙ্গে চলিত; দিল্লীতে কাহাকেও বিশ্বাস করিয়া ঔরঙ্গজেব ধনরাশি রাখিয়া যাইতে পারিতেন না; ঔরঙ্গজেবের সাম্রাজ্যশাসনের মূলমন্ত্র সর্বজনে অবিশ্বাস। ইহাও স্মরণ রাখা কর্তব্য যে, এইবার দিল্লী হইতে যাত্রা করিয়া ঔরঙ্গজেব আর কখন দিল্লী ফিরিলেন না। শতাব্দীর একপাদ শিবিরে শিবিরে ফিরিয়া দাক্ষিণাত্যে প্রাণত্যাগ করিলেন।
অনন্ত ধনরত্নরাজিপরিপূর্ণ গজাদিবাহিত রাজকোষের পর, বাদশাহী দফতরখানা চলিল। থাকে থাকে থাকে, গাড়ি, হাতী, উটের উপর সাজান খাতাপত্র বহিজাত; সারির পর সারি, শ্রেণীর পর শ্রেণী; অসংখ্য, অনন্ত, চলিতে লাগিল। তার পর গঙ্গাজলবাহী উটের শ্রেণী। গঙ্গাজলের মত সুপেয় কোন নদীর জল নহে; তাই বাদশাহদিগের সঙ্গে অর্ধেক গঙ্গার জল চলিত। জলের পর আহার্য–আটা, ঘৃত, চাউল, মশলা, শর্করা, নানাবিধ পক্ষী, চতুষ্পদ–প্রস্তুত অপ্রস্তুত, পক্ক, অপক্ক, ভক্ষ্য চলিত। তার সঙ্গে সঙ্গে সহস্র সহস্র বাবর্চি। তৎপশ্চাৎ তোষাখানা–এলবাস পোষাকের, জেওরাতের হুড়াহুড়ি ছড়াছড়ি; তার পর অগণনীয় অশ্বারোহী মোগল সেনা।
এই গেল সৈন্যের প্রথম ভাগ। দ্বিতীয় ভাগে বাদশাহ খোদ। আগে আগে অসংখ্য উষ্ট্রশ্রেণীর উপর জ্বলন্ত বহ্নিবাহী বৃহৎ কটাহসকলে, ধূনা, গুগ্গুল, চন্দন, মৃগনাভি প্রভৃতি গন্ধদ্রব্য। সুগন্ধে ক্রোশ ব্যাপিয়া পৃথিবী ও অন্তরীক্ষ আমোদিত। তৎপশ্চাৎ বাদশাহী খাস মধ্যে বাদশাহ নিজে মণিরত্নকিঙ্কিণীজালাদি শোভায় উজ্জ্বল উচ্চৈ:শ্রবা তুল্য অশ্বের উপর আরূঢ়–শিরোপরি বিখ্যাত শ্বেতছত্র। তার পর সৈন্যের সার, দিল্লীর সার, বাদশাহীর সার, ঔরঙ্গজেবের অবরোধবাসিনী সুন্দরীপসম্প্রদায়। কেহ বা ঐরাবততুল্য গজপৃষ্ঠে, সুবর্ণনির্মিত কারুকার্যবিশিষ্ট মখ্মলে মোড়া, মুক্তাঝালরভূষিত, অতি সূক্ষ্ম লূতাতন্তুতুল্য রেশমী বস্ত্রে আবৃত, হাওদার ভিতরে, অতি ক্ষীণমেঘাবৃত উজ্জ্বল পূর্ণচন্দ্রতুল্য জ্বলিতেছে–রত্নমালাজড়িত কালভুজঙ্গীতুল্য বেণী পৃষ্ঠে দুলিতেছে–কৃষ্ণতার বৃহচক্ষুর মধ্যে কালাগ্নিতুল্য কটাক্ষ খেলিতেছে; উপরে কালো ভ্রূযুগ, নীচে সুর্মার রেখা, তাহার মধ্যে সেই বিদ্যুদ্দামবিস্ফুরণে, সমস্ত সৈন্য বিশৃঙ্খল হইয়া উঠিতেছে; মধুর তাম্বূলারক্ত অধরে মাধুর্যময়ী সুন্দরীকুল মধুর মধুর হাসিতেছে। এমন এক জন নয়; দুই জন নয়,-হাতীর গায়ে হাতী, হাতীর পিছু হাতী, তার পিছু হাতী। সকলের উপরেই তেমনই হাওদা, সকল হাওদার ভিতর তেমনই সুন্দরী, সকল সুন্দরীর নয়নের মেঘযুগলমধ্যস্থ বিদ্যুদ্দামের ক্রীড়া! কালো পৃথিবী আলো হইয়া গেল। কেহ বা কদাচিৎ দোলায় চলিল –দোলার বাহিরে কিংখাপ, ভিতরে জরদোজী কামদার মখমল, উপরে মুক্তার ঝালর, রূপার দাণ্ডা, সোণার হাঙ্গর–তাহার ভিতর রত্নমণ্ডিতা সুন্দরী। যোধপুরী ও নির্মলকুমারী, উদিপুরী ও জেব-উন্নিসা, ইহারা গজপৃষ্ঠে। উদিপুরী হাস্যময়ী। যোধপুরী অপ্রসন্ন। নির্মলকুমারী রহস্যময়ী। জেব-উন্নিসা, গ্রীষ্মকালে উন্মূলিতা লতার মত ছিন্নবিছিন্ন, পরিশুষ্ক, শীর্ণ, মৃতকল্প। জেব-উন্নিসা ভাবিতেছে, “এ হাতিয়ার লহরীমাঝে আমার ডুবিয়া মরিবার কি উপায় নাই?”
এই মনোমোহিনী বাহিনীর পশ্চাৎ কুটুম্বিনী ও দাসীবৃন্দ। সকলেই অশ্বারূঢ়া, লম্বিতবেণী, রক্তাধরা, বিদ্যুৎকটাক্ষা; অলঙ্কারশিঞ্জিতে ঘোড়া সকল নাচিয়া উঠিতেছে। এই অশ্বারোহিণী বাহিনীও অতিশয় লোকমনোমোহিনী। ইহাদের পশ্চাতে আবার গোলন্দাজ সেনা–কিন্তু ইহাদের কামান অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র। বাদশাহ বুঝি স্থির করিয়াছিলেন, কামিনীর কমনীয় কটাক্ষের পর আর বড় কামানের প্রয়োজন নাই।
তৃতীয় ভাগে পদাতি সৈন্য। তৎপশ্চাৎ দাস-দাসী, মুটে-মজুর, নর্তকী প্রভৃতি বাজে লোক, খালি ঘোড়া, তাম্বুর রাশি এবং মোট-ঘাট।
যেমন ঘোরনাদে গ্রাম প্রদেশ ভাসাইয়া–তিমিমকরআবর্তাদিতে ভয়ঙ্করী, বর্ষাবিপ্লাবিতা স্রোতস্বতী, ক্ষুদ্র সৈকত ডুবাইতে যায়, তেমনই মহাকোলাহলে, মহাবেগে এই পরিমাণরহিতা অসংখ্যেয়া, বিস্ময়করী মোগলবাহিনী রাজসিংহের রাজ্য ডুবাইতে চলিল।
কিন্তু হঠাৎ একটা প্রতিবন্ধক উপস্থিত হইল। যে পথে আকব্বর সৈন্য লইয়া গিয়াছিলেন, ঔরঙ্গজেবও সেই পথে সৈন্য লইয়া যাইতেছিলেন। অভিপ্রায় এই যে, আকব্বর শাহের সৈন্যের সঙ্গে নিজ সৈন্য মিলিত করিবেন। মধ্যে যদি কুমার জয়সিংহের সৈন্য পান, তবে তাঁহাকে মাঝে ফেলিয়া টিপিয়া মারিবেন, পরে দুই জনে উদয়পুর প্রবেশ করিয়া রাজ্য ধ্বংস করিবেন। কিন্তু পার্বত্য পথে আরোহণ করিবার পূর্বে সবিস্ময়ে দেখিলেন যে, রাজসিংহ ঊর্দ্ধ্বে পর্বতের উপত্যকায় তাঁহার পথের পার্শ্বে সৈন্য লইয়া বসিয়া আছেন। রাজসিংহ নয়ননামা গিরিসঙ্কটে পার্বত্য পথ রোধ করিয়াছিলেন, কিন্তু অতি দ্রুতমুখে দূতমুখে আকব্বরের সংবাদ শুনিয়া, রণপাণ্ডিত্যের অদ্ভুত প্রতিভার বিকাশ করিয়া আমিষলোলুপ শ্যেনপক্ষীর মত দ্রুতবেগে সেনা সহিত পূর্বপরিচিত পার্বত্যপথ অতিক্রম করিয়া এই গিরিসানুদেশে সসৈন্যে উপবিষ্ট হইয়াছিলেন।
মোগল দেখিল, রাজসিংহের এই অদ্ভুত রণপাণ্ডিত্যে তাহাদিগের সর্বনাশ উপস্থিত। কেন না, মোগলেরা যে পথে যাইতেছিল, সে পথে আর চলিলে রাজসিংহকে পার্শ্বে রাখিয়া যাইতে হয়। শত্রুসৈন্যকে পার্শ্বে রাখিয়া যাওয়ার অপেক্ষা বিপদ্ অল্পই আছে। পার্শ্ব হইতে যে আক্রমণ করে, তাহাকে রণে বিমুখ করা যায় না, সেই জয়ী হইয়া বিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করিয়া ফেলে। সালামাঙ্কা ও ঔস্তরলিজে ইহাই ঘটিয়াছিল। ঔরঙ্গজেবও এ স্বত:সিদ্ধ রণতত্ত্ব জানিতেন। তিনি ইহাও জানিতেন যে, পার্শ্বস্থিত শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করা যায় বটে, কিন্তু তাহা করিতে গেলে নিজ সৈন্যকে ফিরাইয়া শত্রুর সম্মুখবর্তী করিতে হয়। এই পার্বত্য পথে তাদৃশ মহতী সেনা ফিরাইবার ঘুরাইবার স্থান নাই, এবং সময়ও পাওয়া যাইবে না। কেন না, সেনার মুখ ফিরাইতে না ফিরাইতে রাজসিংহ পর্বত হইতে অবতরণপূর্বক তাঁহার সেনা দুই খণ্ডে বিভক্ত করিয়া, এক এক খণ্ড পৃথক্ করিয়া বিনষ্ট করিতে পারেন। এরূপ যুদ্ধে সাহস করা অকর্তব্য। তার পর এমন হইতে পারে, রাজসিংহ যুদ্ধ না করিতেও পারেন। নির্ব্বিঘ্নে ঔরঙ্গজেব চলিয়া গেলে রাজসিংহ পার্বতাবতরণ করিয়া ঔরঙ্গজেবের পশ্চাদ্গামী হইবেন। হইলে, তিনি যে মোগলের পশ্চাদ্বর্তী মাল, আসবাব লুঠপাট ও সেনাধ্বংস করিবেন, সেও ক্ষুদ্র কথা। আসল কথা, রসদের পথ বন্ধ হইবে। সম্মুখে কুমার জয়সিংহের সেনা। রাজসিংহের সেনা ও জয়সিংহের সেনা উভয়ের মধ্যে পড়িয়া, ফাঁদের ভিতর প্রবিষ্ট মূষিকের মত, দিল্লীর বাদশাহ সসৈন্য নিহত হইবেন।
ফলে দিল্লীশ্বরের অবস্থা জালনিবদ্ধ রোহিতের মত,-কোন মতেই নিস্তার নাই। তিনি প্রত্যাবর্তন করিতে পারেন, কিন্তু তাহা হইলে রাজসিংহ তাঁহার পশ্চাদ্বর্তী হইবেন। তিনি উদয়পুরের রাজ্য অতল জলে ডুবাইতে আসিয়াছিলেন–সে কথা দূরে থাকুক, এখন উদয়পুরের রাজা তাঁহার পশ্চাৎ করতালি দিতে দিতে ছুটিবে–পৃথিবী হাসিবে। মোগল বাদশাহের অপরিমিত গৌরবের পক্ষে ইহার অপেক্ষা অবনতি আর কি হইতে পারে? ঔরঙ্গজেব ভাবিলেন–সিংহ হইয়া মূষিকের ভয়ে পলাইব? কিছুতেই পলায়নের কথাকে মনে স্থান দিলেন না।
তখন আর কি হইতে পারে? এক মাত্র ভরসা–উদয়পুরে যাইবার যদি অন্য পথ থাকে। ঔরঙ্গজেবের আদেশে চারি দিকে অশ্বারোহী পদাতি অন্য পথের সন্ধানে ছুটিল। ঔরঙ্গজেব নির্মলকুমারীকেও জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইল। নির্মলকুমারী বলিল, “আমি পরদানশীন স্ত্রীলোক–পথের কথা আমি কি জানি?” কিন্তু অল্পকাল মধ্যে সংবাদ আসিল যে উদয়পুরে যাইবার আর একটা পথ আছে। একজন মোগল সওদাগরের সাক্ষাৎ পাওয়া গিয়াছে, সে পথ দেখাইয়া দিবে। মনসবদার সে পথ দেখিয়া আসিয়াছে। সে একটি পার্বত্য রন্ধ্রপথ; অতিশয় সঙ্কীর্ণ। কিন্তু পথটা সোজা পথ, শীঘ্র বাহির হওয়া যাইবে। সে দিকে কোন রাজপুত দেখা যাইতেছে না। যে মোগল সংবাদ দিয়াছে, সে বলিতেছে যে, সে দিকে কোন রাজপুত সেনা নাই।
ঔরঙ্গজেব ভাবিলেন। বলিলেন, “নাই, কিন্তু লুকাইয়া থাকিতে পারে |”
যে মনসবদার পথ দেখিয়া আসিয়াছিল–বখত খাঁ–সে বলিল যে, “যে মোগল আমাকে প্রথমেই এই পথের সন্ধান দেয়, তাহাকে আমি পর্বতের উপরে পাঠাইয়া দিয়াছি। সে যদি রাজপুত সেনা দেখিতে পায়, তবে আমাকে সঙ্কেত করিবে |”
ঔরঙ্গজেব জিজ্ঞাসা করিলেন, “সে কি আমার সিপাহী?”
বখ্ত খাঁ। না, সে একজন সওদাগর। উদয়পুরে শাল বেচিতে গিয়াছিল। এখন শিবিরে বেচিতে আসিয়াছিল।
ঔ। ভাল, সেই পথেই তবে ফৌজ লইয়া যাও।
তখন বাদশাহী হুকুমে, ফৌজ ফিরিল। ফিরিল–কেন না, কিছু পথ ফিরিয়া আসিয়া তবে রন্ধ্রপথে প্রবেশ করিতে হয়। ইহাতেও বিশেষ বিপদ–তবে জালনিবদ্ধ বৃহৎ রোহিত আর কোন দিকে যায়? যেরূপ পারম্পর্যের সহিত মোগলসেনা আসিয়াছিল–তাহা আর রক্ষিত হইতে পারিল না। যে ভাগ আগে ছিল, তাহা পিছে পড়িল; যাহা পিছনে ছিল, তাহা আগে চলিল। সোনার তৃতীয় ভাগ আগে আগে চলিল। বাদশাহ হুকুম দিলেন যে, তাম্বু ও মোট-ঘাট ও বাজে লোক সকল এক্ষণে উদয়সাগরের পথে যাক্–পরে সেনার পশ্চাতে তাহারা আসিবে। তাহাই হইল। ঔরঙ্গজেব নিজে, পদাতি ও ছোট কামান ও গোলন্দাজ সেনা লইয়া রন্ধ্রপথে চলিলেন। আগে আগে বখ্ত খাঁ।
দেখিয়া রাজসিংহ, সিংহের মত লাফ দিয়া, পর্বত হইতে অবতরণ করিয়া মোগল সেনার মধ্যে পড়িলেন। অমনই মোগল সেনা দ্বিখণ্ড হইযা গেল–ছুরিকাঘাতে যেন ফুলের মালা কাটিয়া গেল। এক ভাগ ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে রন্ধ্রমধ্যে প্রবিষ্ট; আর এক ভাগ; এখন পূর্বপথে, কিন্তু রাজসিংহের সম্মুখে।
মোগলের বিপদের উপর বিপদ এই যে, যেখানে হাতী, ঘোড়া, দোলার উপর বাদশাহের পৌরাঙ্গনাগণ, ঠিক সেইখানে, পৌরাঙ্গনাদিগের সম্মুখে, রাজসিংহ সসৈন্যে অবতীর্ণ হইলেন। দেখিয়া, যেমন চিল পড়িলে চড়াইয়ের দল কিল-বিল করিয়া উঠে, এই সসৈন্য গরুড়কে দেখিয়া রাজাবরোধের কালভুজঙ্গীর দল তেমনই আর্তনাদ করিয়া উঠিল। এখানে যুদ্ধের নামমাত্র হইল না। যে সকল আহদীয়ান্ তাঁহাদের প্রহরায় নিযুক্ত ছিল–তাহারা কেহই অস্ত্রসঞ্চালন করিতে পারিল না–পাছে বেগমেরা আহত হয়েন। রাজপুতেরা বিনা যুদ্ধে আহদীদিগকে বন্দী করিল। সমস্ত মহিষীগণ এবং তাঁহাদিগের অসংখ্য অশ্বারোহিণী অনুচরীবর্গ, বিনা যুদ্ধে রাজসিংহের বন্দিনী হইলেন।
মাণিকলাল রাজসিংহের নিকটে নিকটে থাকেন–তিনি রাজসিংহের অতিশয় প্রিয়। মাণিকলাল আসিয়া যুক্তকরে নিবেদন করিলেন, “মহারাজাধিরাজ! এখন এই মার্জরী সম্প্রদায় লইয়া কি করা যায়? আজ্ঞা হয় ত উদর পুরিয়া দধিদুগ্ধ ভোজনের জন্য ইহাদের উদয়পুরে পাঠাইয়া দিই |”
রাজসিংহ হাসিয়া বলিলেন, “এত দই-দুধ উদয়পুরে নাই। শুনিয়াছি, দিল্লীর মার্জরীদের পেট মোটা। কেবল উদিপুরীকে মহিষী চঞ্চলকুমারীর কাছে পাঠাইয়া দাও। তিনি ইহার জন্য আমাকে বিশেষ করিয়া বলিয়াছেন। আর সব ঔরঙ্গজেবের ধন ঔরঙ্গজেবকে ফিরাইয়া দাও |”
মাণিকলাল জোড়হাতে বলিল, “লুঠের সামগ্রী সৈনিকেরা কিছু কিছু পাইয়া থাকে |”
রাজসিংহ হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “তোমার কাহাকেও প্রয়োজন থাকে, গ্রহণ করিতে পার। কিন্তু মুসলমানী, হিন্দুর অস্পর্ষীয়া |”
মা। উহারা নাচিতে গায়িতে জানে।
রা। নাচ-গানে মন দিলে, রাজপুত কি আর তোমাদিগের মত বীরপনা দেখাইতে পারিবে? সব ছাড়িয়া দাও। উদিপুরীকে কেবল উদয়পুরে পাঠাইয়া দাও।
মা। এ সমুদ্রমধ্যে সে রত্ন কোথায় খুঁজিয়া পাইব? আমার ত চেনা নাই। যদি আজ্ঞা হয়, তবে হনূমানের মত, এ গন্ধমাদন লইয়া গিয়া মহিষীর কাছে উপস্থিত করি। তিনি বাছিয়া লইবেন। যাহাকে রাখিতে হয়, রাখিবেন, বাকিগুলা ছাড়িয়া দিবেন। তাহারা উদয়পুরের বাজারে সুরমা মিশি বেচিয়া দিনপাত করিবে।
এমন সময়ে মহাগজপৃষ্ঠ হইতে নির্মলকুমারী রাজসিংহ ও মাণিকলাল উভয়কে দেখিতে পাইল। করযুগল উত্তোলন করিয়া সে উভয়কে প্রণাম করিল। দেখিয়া রাজসিংহ মাণিকলালকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ও আবার কোন্ বেগম? হিন্দু বোধ হইতেছে–সেলাম না করিয়া, আমাদের প্রণাম করিল |”
মাণিকলাল দেখিয়া উচ্চহাস্য করিলেন। বলিলেন, “মহারাজ! ও একটা বাঁদী-ওটা বেগম হইল কি প্রকারে? উহাকে ধরিয়া আনিতে হইবে |”
এই বলিয়া মাণিকলাল, হুকুম দিয়া, নির্মলকুমারীকে হাতীর উপর হইতে নামাইয়া আপনার নিকট আনাইল। নির্মল কথা না কহিয়া হাসিতে আরম্ভ করিল। মাণিকলাল জিজ্ঞাসা করিল, “এ আবার কি? তুমি বেগম হইলে কবে?”
নির্মল , মুখ-চোখ ঘুরাইয়া বলিল, “মেয়নে হজরৎ ইমলি বেগম। তস্লিম দে |”
মাণিকলাল। তা না হয় দিতেছি–বেগম ত তুমি নও জানি; তোমার বাপ-দাদাও কখনও বেগম হয় নাই–কিন্তু এ বেশ কেন?
নি । পহেলা মেরা হুকুম তামিল কর্–বাজে বাত আব্হি রাখ্।
মা। সীতারাম! বেগম সাহেবার ধমক দেখ!
নি। হামারি হুকুম যেহি হৈ কি হজরৎ উদিপুরী বেগম সাহেবা সাম্নেকো পঞ্জকলস্– দার হাওদাওয়ালে হাতিপর তশরিফ রাখতী হেঁই। উনকো হামারা হুজুর মে হাজির কর্।
বলিতে বিলম্ব সহিল না–মাণিকলাল তখনই উদিপুরীকে হাতী হইতে নামাইতে বলিল। উদিপুরী অবগুণ্ঠনে মুখ আবৃত করিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে নামিল। মাণিকলাল একখানা দোলা খালি করিয়া, সে দোলা উদিপুরীর হাতীর কাছে পাঠাইয়া দিয়া, দোলায় চড়িয়া উদিপুরীকে লইয়া আসিল। তার পর মাণিকলাল, নির্মলকুমারীকে কাণে কাণে বলিল, “জী হামলী বেগম সাহেবা ! আর একটা কথা__”
নি । চুপ রহ, বেতমিজ ! মেরে নাম হজরৎ ইমলি বেগম।
মা। আচ্ছা, যে বেগমই হও না কেন, জেব-উন্নিসা বেগমকে চেন?
নি। জানতে নেহিন? বহ হামারি বেটী লাগতী হৈ। দেখ, আগাড়ী সোনেকা তিন কলস যো হাওদে পর জলুষ দেতা হ্যায়, বসপর জেব-উন্নিসা বৈঠী হৈ।
মাণিকলাল তাঁহাকেও হাতী হইতে নামাইতে দোলায় তুলিয়া লইয়া আসিলেন।
সেই সময়ে আবার কোন মহিষী হাওদার জরির পরদা টানিয়া মুখ বাহির করিয়া, নির্মলকুমারীকে ডাকিল।
মাণিকলাল নির্মল কে জিজ্ঞাসা করিল, “আবার তোমাকে কে ডাকিতেছে না?”
নির্মল কহিল, “হাঁ। যোধপুরী বেগম। কিন্তু উঁহাকে এখানে আনা হইবে না। আমাকে হাতীর উপর চড়াইয়া উঁহার কাছে লইয়া চল। শুনিয়া আসি |”
মাণিকলাল তাহাই করিল। নির্মলকুমারী যোধপুরীর হাতীর উপর উঠিয়া তাঁহার ইন্দ্রসনতুল্য হাওদার ভিতর প্রবেশ করিল। যোধপুরী বলিলেন, “আমাকে তোমাদের সঙ্গে লইয়া চল |”
নি। কেন মা?
যো। কেন, তা ত কতবার বলিয়াছি। আমি এ ম্লেচ্ছাপুরীতে, এ মহাপাপের ভিতর আর থাকিতে পারি না।
নি । তাহা হইবে না। তোমার যাওয়া হইবে না। আজ যদি মোগল সাম্রাজ্য টিকে, তবে তোমার ছেলে দিল্লীর বাদশাহ হইবে। আমরা সেই চেষ্টা করিব। তাঁর রাজত্বে আমরা সুখে থাকিব।
যোধপুরী। অমন কথা মুখে আনিও না, বাছা ! বাদশাহ শুনিলে, আমার ছেলে এক দিনও বাঁচিবে না। বিষপ্রয়োগে তাহার প্রাণ যাইবে।
নি । এখনকার কথা বলিতেছি না। যাহা শাহজাদের হক্, কালে তিনি পাইবেন। আপনি আমাকে আর কোন আজ্ঞা করিবেন না। আপনি যদি আমার সঙ্গে এখন যান, আপনার পুত্রের অনিষ্ট হইতে পারে।
যোধপুরী ভাবিয়া বলিল, “সে কথা সত্য। তোমার কথাই শুনিলাম। আমি যাইব না। তুমি যাও |”
নির্মলকুমারী তখন তাঁহাকে প্রণাম করিয়া বিদায় গ্রহণ করিলেন।
উদিপুরী এবং জেব-উন্নিসা উপযুক্ত সৈন্যে বেষ্টিতা হইয়া নির্মলকুমারীর সহিত উদয়পুরে চঞ্চলকুমারীর নিকট প্রেরিতা হইলেন।
রাজসিংহ – ৭.৪
চতুর্থ পরিচ্ছেদ : অগ্নিচক্র বড় ভীষণ হইল
তখন রাজসিংহ আর সকল পৌরাঙ্গনাগণকে–গজারূঢ়া, শিবিকারূঢ়া, এবং অশ্বারূঢ়া–সকলকেই, ঔরঙ্গজেবকে যে রন্ধ্রপথে প্রবেশ করাইয়াছিলেন, সেই পথে প্রবেশ করিতে দিলেন। তাহারা প্রবেশ করিলে পর, উভয় সেনা নিস্তব্ধ হইল। ঔরঙ্গজেবের অবশিষ্ট সেনা অগ্রসর হইতে পারিতেছে না–কেন না, রাজসিংহ পথ বন্ধ করিয়া বসিয়াছেন। কিন্তু ঔরঙ্গজেবের সাগরতুল্য অশ্বারোহী সেনা যুদ্ধের উদ্যোগ করিতে লাগিল। তাহারা ঘোড়ার মুখ ফিরাইয়া রাজপুতের সম্মুখীন হইল। তখন রাজসিংহ একটু হঠিয়া গিয়া তাহাদের পথ ছাড়িয়া দিলেন–তাহাদের সঙ্গে যুদ্ধ করিলেন না। তাহারা “দীন্ দীন্” শব্দ করিতে করিতে বাদশাহের আজ্ঞানুসারে, বাদশাহ যে সংকীর্ণ রন্ধ্রপথে প্রবেশ করিয়াছিলেন, সেই পথে প্রবেশ করিল। রাজসিংহ আবার আগু হইলেন। তারপর বাদশাহী তোষাখানা আসিয়া উপস্থিত হইল। রক্ষক নাই বলিলেই হয়, রাজপুতেরা তাহা লুঠিয়া লইল। তার পর খ্যাদ্যদ্রব্য । যাহা হিন্দুর ব্যাবহার্য, তাহা রাজসিংহের রসদের সামিল হইল। যাহা হিন্দুর অ ব্যাবহার্য, তাহা ডোম দোসাদে লইয়া গিয়া কতক খাইল, কতক পর্বতে ছড়াইল–শৃগাল-কুকুর এবং বন্য পশুতে খাইল। রাজপুতেরা দফতরখানা হাতীর উপর হইতে নামাইল–কতক বা পুড়াইয়া দিল, কতক বা ছাড়িয়া দিল। তার পর মালখানা; তাহাতে যে ধনরত্নরাশি আছে, পৃথিবীতে এমন আর কোথাও নাই,-জানিয়া রাজপুত সেনাপতিগণ লোভে উন্মত্ত হইল। তাহার পশ্চাতে বড় গোলন্দাজ সেনা। রাজসিংহ আপন সেনা সংযত করিলেন। বলিলেন, “তোমরা ব্যস্ত হইও না। ও সব তোমাদেরই। আজ ছাড়িয়া দাও। আজ এখন যুদ্ধের সময় নহে |” রাজসিংহ নিশ্চেষ্ট হইয়া রহিলেন। ঔরঙ্গজেবের সমস্ত সেনা রন্ধ্রপথে প্রবেশ করিল।
তার পর মাণিকলালকে বিরলে লইয়া গিয়া বলিলেন, “আমি সেই মোগলের উপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়াছি। এতটা সুবিধা হইবে, আমি মনে করি নাই। আমি যাহা অভিপ্রেত করিয়াছিলাম, তাহাতে যুদ্ধ করিয়া মোগলকে বিনষ্ট করিতে হইত। এক্ষণে বিনা যুদ্ধেই মোগলকে বিনষ্ট করিতে পারিব। মবারককে আমার নিকট লইয়া আসিবে। আমি তাহাকে সমাদর করিব |”
পাঠকের স্মরণ থাকিতে পারে, মবারক মাণিকলালের হাতে জীবন পাইয়া তাহার সঙ্গে উদয়পুর আসিয়াছিলেন। রাজসিংহ তাহার বীরত্ব অবগত ছিলেন, অতএব তাহাকে নিজসেনা মধ্যে উপযুক্ত পদে নিযুক্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু মোগল বলিয়া তাহাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করিতেন না। তাহাতে মবারক কিছু দু:খিত ছিল। আজ সেই দু:খে গুরুতর কার্যের ভার লইয়াছিল। সে গুরুতর কার্য যদ সুসম্পন্ন হইয়াছে, তাহা পাঠক দেখিয়াছেন। পাঠক বুঝিয়া থাকিবেন যে, মবারকই ছদ্মবেশী মোগল সওদাগর।
মাণিকলাল আজ্ঞা পাইয়া মবারককে লইয়া আসিলেন। রাজসিংহ মবারকের অনেক প্রশংসা করিলেন। বলিলেন “তুমি এই সাহস ও চাতুর্য প্রকাশ করিয়া, মোগল সওদাগর সাজিয়া, মোগল সেনা রন্ধ্রপথে না লইয়া গেলে অনেক প্রাণহত্যা হইত। তোমাকে কেহ চিনিত পারিলে তোমারও মহাবিপদ উপস্থিত হইত |”
মবারক বলিল, “মহারাজ! যে ব্যক্তি সকলের সমক্ষে মরিয়াছে, যাহাকে সকলের সমক্ষে গোর দিয়াছে, তাহাকে কেহ চিনিতে পারিলেও চেনে না–মনে করে, ভ্রম হইতেছে। আমি এই সাহসেই গিয়াছিলাম |”
রাজসিংহ বলিলেন, “এক্ষণে যদি আমার কার্য সিদ্ধ না হয়, তবে সে আমার দোষ। তুমি যে পুরস্কার চাহিবে, আমি তাহাই তোমাকে দিব |”
মবারক কহিল, “মহারাজ! বে-আদবী মাফ হৌক! আমি মোগল হইয়া মোগলের রাজ্য ধ্বংসের উপায় করিয়া দিয়াছি। আমি মুসলমান হইয়া হিন্দুরাজ্য স্থাপনের কার্য করিয়াছি। আমি সত্যবাদী হইযা মিথ্যা প্রবঞ্চনা করিয়াছি। আমি বাদশাহের নেমক খাইয়া নেমকহারামী করিয়াছি। আমি মৃত্যুযন্ত্রণার অধিক কষ্ট পাইতেছি। আমার আর কোন পুরস্কারে সাধ নাই। আমি কেবল এক পুরস্কার আপনার নিকট ভিক্ষা করি। আমাকে তোপের মুখে রাখিয়া উড়াইয়া দিবার আদেশ করুন। আমার আর বাঁচিবার ইচ্ছা নাই |”
রাজসিংহ বিস্মিত হইয়া বলিলেন, “যদি এ কাজে তোমার এতই কষ্ট, তবে এমন কাজ কেন করিলে? আমাকে জানাইলে না কেন? আমি অন্য লোক নিযুক্ত করিতাম। আমি কাহাকেও এত দূর মন:পীড়া দিতে চাহি না |”
মবারক, মাণিকলালকে দেখাইয়া দিয়া বলিল, “এই মহাত্মা আমার জীবন দান করিয়াছিলেন। ইঁহার নিতান্ত অনুরোধ যে, আমি এই কার্য সিদ্ধ করি। আমি নহিলেও এ কাজ সিদ্ধ হইত না; কেন না, মোগল ভিন্ন হিন্দুকে মোগলেরা বিশ্বাস করিত না। আমি ইহা অস্বীকার করিলে অকৃতজ্ঞতা পাপে পড়িতাম। তাই এ কাজ করিয়াছি। এক্ষণে এ প্রাণ আর রক্ষা করিব না স্থির করিয়াছি। আমাকে তোপের মুখে উড়াইয়া দিতে আদেশ করুন। অথবা আমাকে বাঁধিয়া বাদশাহের নিকটে পাঠাইয়া দিন, অথবা অনুমতি দিন যে, আমি যে প্রকারে পারি, মোগল সেনামধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া, আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া প্রাণত্যাগ করি |”
রাজসিংহ অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইলেন। বলিলেন, “কাল তোমাকে আমি মোগল সেনায় প্রবেশের অনুমতি দিব। আর একদিন মাত্র থাক। আমার কেবল এক্ষণে একটা কথা জিজ্ঞাস্য আছে। ঔরঙ্গজেব তোমাকে বধ করিয়াছিলেন কেন?”
ম। তাহা মহারাজের সাক্ষাৎ বক্তব্য নহে।
রা। মাণিকলালের সাক্ষাৎ?
ম। বলিয়াছি।
এই বলিয়া রাজসিংহ মবারককে বিদায় দিলেন।
তার পর, মাণিকলাল মবারককে নিভৃতে লইয়া গিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “সাহেব! যদি আপনার মরিবার ইচ্ছা, তবে শাহাজাদীকে ধরিতে আমাকে অনুরোধ করিয়াছিলে কেন?”
মবারক বলিল, “ভুল! সিংহজী ভুল! আমি আর শাহজাদী লইয়া কি করিব? মনে করিয়াছিলাম বটে যে, যে শয়তানী আমার ভালবাসার বিনিময়ে আমাকে কালসাপের বিষদন্তে সমর্পণ করিয়া মারিয়াছিল, তাহাকে তাহার কর্মের প্রতিফল দিব। কিন্তু মানুষ যাহা আজ চাহে, কাল তাহার ইচ্ছা থাকে না। আমি এখন মরিব নিশ্চয় করিয়াছি–এখন আর শাহজাদী প্রতিফল পাইল না পাইল, তাহাতে আমার কি? আমি আর কিছুই দেখিতে আসিব না |”
মা। জেব-উন্নিসাকে রাখিতে যদি আপনি অনুমতি না করেন, তবে আমি বাদশাহের নিকট কিছু ঘুষ লইয়া তাহাকে ছাড়িয়া দিই।
মবারক। আর একবার তাহাকে আমার দেখিতে ইচ্ছা আছে। একবার জিজ্ঞাসা করিবার ইচ্ছা আছে যে, জগতে ধর্মাধর্মে তাহার কিছু বিশ্বাস আছে কি না? একবার শুনিবার ইচ্ছা আছে যে, সে আমায় দেখিয়া কি বলে? একবার জানিবার ইচ্ছা আছে যে, আমাকে দেখিয়া সে কি করে?
মা। তবে আপনি এখনও তাহার প্রতি অনুরক্ত?
ম। কিছুমাত্র না। একবার দেখিব মাত্র। আপনার কাছে এই পর্যন্ত ভিক্ষা।
রাজসিংহ – ৮.০১
অষ্টম খণ্ড
আগুনে কে কে পুড়িল?
প্রথম পরিচ্ছেদ : বাদশাহের দাহনারম্