• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

ইন্দিরা – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

Indira by BankimChandra Chatterjee

দশম পরিচ্ছেদ : আশার প্রদীপ

সেইদিন বৈকালে সুভাষিণী আমার হাত ধরিয়া টানিয়া লইয়া গিয়া নিভৃতে বসাইল। বলিল, “বেহান! তুমি সেই কালাদীঘির ডাকাতির গল্পটি বলিবে বলিয়াছিলে—আজিও বল নাই। আজ বল না—শুনি।”
আমি অনেক্ষণ ভাবিলাম। শেষ বলিলাম, “সে আমারই হতভাগ্যের কথা। আমার বাপ বড়মানুষ, একথা বলিয়াছি। তোমার শ্বশুরও বড়মানুষ—কিন্তু তাঁহার তুলনায় কিছুই নহেন। আমার বাপ আজিও আছেন—তাঁহার সেই অতুল ঐশ্বর্য এখনও আছে, আজিও তাঁহার হাতীশালে হাতী বাঁধা। আমি যে রাঁধিয়া খাইতেছি, কালাদীঘির ডাকাতিই তাহার কারণ।”
এই পর্যন্ত বলিয়া দুইজনেই চুপ করিয়া রহিলাম। সুভাষিণী বলিল, “তোমার যদি বলিতে কষ্ট হয়, তবে নাই বলিলে। আমি না জানিয়াই শুনিতে চাহিয়াছিলাম।”
আমি বলিলাম, “সমস্তই বলিব। তুমি আমাকে যে স্নেহ কর, আমার যে উপকার করিয়াছ, তাহাতে তোমাকে বলিতে কোন কষ্ট নাই।”
আমি বাপের নাম বলিলাম না, বাপের বাড়ীর গ্রামের নাম বলিলাম না। স্বামীর নাম বা শ্বশুরের নাম বলিলাম না। শ্বশুরবাড়ীর গ্রামের নাম বলিলাম না। আর সমস্ত বলিলাম, সুভাষিণীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত বলিলাম। শুনিতে শুনিতে সুভাষিণী কাঁদিতে লাগিল। আমিও যে বলিতে বলিতে মধ্যে মধ্যে কাঁদিয়া ফেলিয়াছিলাম, তাহা বলা বাহুল্য।
সেদিন এই পর্যন্ত। পরদিন সুভাষিণী আমাকে আবার নিভৃতে লইয়া গেল। বলিল, “বাপের নাম বলিতে হইবে।”
তাহা বলিলাম।
“তাঁর বাড়ী যে গ্রামে, তাহাও বলিতে হইবে।”
তাও বলিলাম।
সু। ডাকঘরের নাম বল।
আমি। ডাকঘর! ডাকঘরের নাম ডাকঘর।
সু। দূর পোড়ারমুখী! যে গ্রামে ডাকঘর, তার নাম।
আমি। তা ত জানি না। ডাকঘরই জানি।
সু। বলি, যে গ্রামে তোমাদের বাড়ী, সেই গ্রামেই ডাকঘর আছে, না অন্য গ্রামে?
আমি। তা ত জানি না।
সুভাষিণী বিষণ্ণ হইল। আর কিছু বলিল না। পরদিন সেইরূপ নিভৃতে বলিল, “তুমি বড় ঘরের মেয়ে, কত কাল আর রাঁধিয়া খাইবে? তুমি গেলে আমি বড় কাঁদিব—কিন্তু আমার সুখের জন্য তোমার সুখের ক্ষতি করি, এমন পাপিষ্ঠা আমি নই। তাই আমরা পরামর্শ করিয়াছি—”
কথা শেষ না হইতে না হইতে আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “আমরা কে কে?”
সু। আমি আর র-বাবু।
র-বাবু কি না রমণ বাবু। এইরূপে সুভাষিণী আমার কাছে স্বামীর নাম ধরিত। তখন সে বলিতে লাগিল, “পরামর্শ করিয়াছি যে, তোমার বাপকে পত্র লিখিব যে, তুমি এইখানে আছ, তাই কাল ডাকঘরের কথা জিজ্ঞাসা করিতেছিলাম।”
আমি। তবে সকল কথা তাঁহাকে বলিয়াছ?
সু। বলিয়াছি—দোষ কি?
আমি। দোষ কিছু না। তার পর?
সু। এখন মহেশপুরেই ডাকঘর আছে, বিবেচনা করিয়া পত্র লেখা হইল।
আমি। পত্র লেখা হইয়াছে না কি?
সু। হাঁ।
আমি আহ্লাদে আটখানা হইলাম। দিন গণিতে লাগিলাম, কতদিনে পত্রের উত্তর আসিবে। কিন্তু কোন উত্তর আসিল না। আমার কপাল পোড়া—মহেশপুরে কোন ডাকঘর ছিল না। তখন গ্রামে গ্রামে ডাকঘর হয় নাই। ভিন্ন গ্রামে ডাকঘর ছিল—আমি রাজার দুলালী—অত খবর রাখিতাম না। ডাকঘরের ঠিকানা না পাইয়া, কলিকাতার বড় ডাকঘরে রমণ বাবুর চিঠি খুলিয়া ফেরত পাঠাইয়া দিয়াছিল।
আমি আবার কাঁদিতে আরম্ভ করিলাম। কিন্তু র-বাবু—নাছোড়। সুভাষিণী আসিয়া আমাকে বলিল, “এখন স্বামীর নাম বলিতে হইবে।”
আমি তখন লিখিতে শিখিয়াছিলাম। স্বামীর নাম লিখিয়া দিলাম। পরে জিজ্ঞাসা হইল, “শ্বশুরের নাম?”
তাও লিখিলাম।
“গ্রামের নাম?”
তাও বলিয়া দিলাম।
“ডাকঘরের নাম?”
বলিলাম, “তা কি জানি?”
শুনিলাম, রমণ বাবু সেখানেও পত্র লিখিলেন। কিন্তু কোন উত্তর আসিল না। বড় বিষণ্ণ হইলাম। কিন্তু একটা কথামনে পড়িল, আমি আশায় বিহ্বল হইয়া পত্র লিখিতে বারণ করি নাই। এখন আমার মনে পড়িল, ডাকাতে আমাকে কাড়িয়া লইয়া গিয়াছে; আমার কি জাতি আছে? এই ভাবিয়া, শ্বশুর স্বামী আমাকে প্রত্যাখ্যান করিবেন সন্দেহ নাই। সে স্থলে, পত্র লেখা ভাল হয় নাই। একথা শুনিয়া সুভাষিণী চুপ করিয়া রহিল।
আমি এখন বুঝিলাম যে, আমার আর ভরসা নাই। আমি শয্যা লইলাম।

ইন্দিরা – ১১-১৫

একাদশ পরিচ্ছেদ : একটা চোরা চাহনি

এক দিবস প্রাতে উঠিয়া দেখিলাম, কিছু ঘটার আয়োজন। রমণ বাবু উকীল। তাঁহার একজন মোয়াক্কেল ছিল। দুই দিন ধরিয়া শুনিতেছিলাম, তিনি কলিকাতায় আসিয়াছেন। রমণ বাবু ও তাঁহার পিতা সর্বদা তাঁহার বাড়ীতে যাতায়াত করিতেছিলেন। তাঁহার পিতা যাতায়াত করিয়াছিলেন, তাহার কারণ এই যে, তাঁহার সহিত কারবার-ঘটিত কিছু সম্বন্ধ ছিল। আজ শুনিলাম, তাঁহাকে মধ্যাহ্নে আহারের নিমন্ত্রণ করা হইয়াছে। তাই পাকশাকের কিছু বিশেষ আয়োজন হইতেছে।
রান্না ভাল চাই—অতএব পাকের ভারটা আমার উপর পড়িল। যত্ন করিয়া পাক করিলাম। আহারের স্থান অন্ত:পুরেই হইল। রামরাম বাবু, রমণ বাবু, ও নিমন্ত্রিত ব্যক্তি আহারে বসিলেন। পরিবেশনের ভার বুড়ীর উপর—আমি বাহিরের লোককে কখন পরিবেশন করি না।
বুড়ী পরিবেশন করিতেছে—আমি রান্নাঘরে আছি—এমন সময়ে একটা গোলযোগ উপস্থিত হইল। রমণ বাবু বুড়ীকে বড় ধমকাইতেছিলেন। সেই সময়ে একজন রান্নাঘরের ঝি আসিয়া বলিল, “ইচ্ছে করে লোককে অপ্রতিভ করা।”
জিজ্ঞাসা করিলাম, “কি হয়েছে?”
ঝি বলিল, “বুড়ী দাদাবাবুর বাটিতে (বুড়া ঝি, দাদাবাবু বলিত)—বাটিতে ডাল দিতেছিল—তিনি তা দেখেও উঁহু! উঁহু! করে হাত বাড়িয়ে দিলেন—সব ডাল হাতে পড়িয়া গেল।”
আমি এদিকে শুনিতেছিলাম, রমণ বাবু বামনীকে ধমকাইতেছিলেন, “পরিবেশন করতে জান না ত এসো কেন? আর কাকেও থাল দিতে পার নি?”
রামরাম বাবু বলিলেন, “তোমার কর্ম নয়! কুমোকে পাঠাইয়া দাও গিয়া।”
গৃহিণী সেখানে নাই; বারণ করে কে? এদিকে খোদ কর্তার হুকুম—অমান্যই বা করি কিপ্রকারে? গেলেই গিন্নী বড় রাগ করিবেন, তাও জানি। দুই চারি বার বুড়ীকে বুঝাইলাম—বলিলাম, “একটু সাবধান হয়ে দিও থুইও”—কিন্তু সে ভয়ে আর যাইতে স্বীকৃত হইল না। কাজেই, আমি হাত ধুইয়া, মুখ মুছিয়া, পরিষ্কার হইয়া, কাপড়খানা গুছাইয়া পরিয়া, একটু ঘোমটা টানিয়া, পরিবেশন করিতে গেলাম। কে জানে যে এমন কাণ্ড বাধিবে? আমি জানি যে, আমি বড় বুদ্ধিমতী—জানিতাম না যে, সুভাষিণী আমায় এক হাটে বেচিতে পারে, আর এক হাটে কিনিতে পারে।
আমি অবগুণ্ঠনবতী, কিন্তু ঘোমটায় স্ত্রীলোকের স্বভাব ঢাকা পড়ে না। ঘোমটার ভিতর হইতে একবার নিমন্ত্রিত বাবুটিকে দেখিয়া লইলাম।
দেখিলাম, তাঁহার বয়স ত্রিশ বৎসর বোধ হয়; তিনি গৌরবর্ণ এবং অত্যন্ত সুপুরষ; তাঁহাকে দেখিয়া রমণীমনোহর বলিয়া বোধ হইল। আমি বিদ্যুচ্চমকিতের ন্যায় একটু অন্যমনস্ক হইলাম। মাংসের পাত্র লইয়া একটু দাঁড়াইয়া রহিলাম, আমি ঘোমটার ভিতর হইতে তাঁহাকে দেখিতেছিলাম, এমত সময়ে তিনি মুখ তুলিলেন—দেখিতে পাইলেন যে, আমি ঘোমটার ভিতর হইতে তাঁহার প্রতি চাহিয়া আছি। আমি ত জানিয়া শুনিয়া ইচ্ছাপূর্বক তাঁহার প্রতি কোনপ্রকার কুটিল কটাক্ষ করি নাই। তত পাপ এ হৃদয়ে ছিল না। তবে সাপও বুঝি জানিয়া শুনিয়া ইচ্ছা করিয়া ফণা ধরে না; ফণা ধরিবার সময় উপস্থিত হইলেই ফণা আপনি ফাঁপিয়া উঠে। সাপেরও পাপহৃদয় না হইতে পারে। বুঝি সেইরূপ কিছু ঘটিয়া থাকিবে। বুঝি তিনি একটা কুটিল কটাক্ষ দেখিয়া থাকিবেন। পুরুষ বলিয়া থাকেন যে, অন্ধকারে প্রদীপের মত, অবগুণ্ঠনমধ্যে রমণীর কটাক্ষ অধিকতর তীব্র দেখায়। বোধ হয়, ইনিও সেইরূপ দেখিয়া থাকিবেন। তিনি একটু মাত্র মৃদু হাসিয়া, মুখ নত করিলেন। সে হাসি কেবল আমিই দেখিতে পাইলাম। আমি সমুদয় মাংস তাঁহার পাতে ফেলিয়া দিয়া চলিয়া আসিলাম।
আমি একটু লজ্জিতা, একটু অসুখী হইলাম। আমি সধবা হইয়াও জন্মবিধবা। বিবাহের সময়ে একবার মাত্র স্বামিসন্দর্শন হইয়াছিল—সুতরাং যৌবনের প্রবৃত্তিসকল অপরিতৃপ্ত ছিল। এমন গভীর জলে ক্ষেপণীনিক্ষেপে বুঝি তরঙ্গ উঠিল ভাবিয়া বড় অপ্রফুল্ল হইলাম। মনে মনে নারীজন্মে সহস্র ধিক্কার দিলাম; মনে মনে আপনাকে সহস্র ধিক্কার দিলাম; মনের ভিতর মরিয়া গেলাম।
পাকশালায় ফিরিয়া আসিয়া আমার যেন মনে হইল, আমি ইঁহাকে পূর্বে কোথাও দেখিয়াছি। সন্দেহভঞ্জনার্থ, আবার অন্তরাল হইতে ইঁহাকে দেখিতে গেলাম। বিশেষ করিয়া দেখিলাম। দেখিয়া মনে মনে বলিলাম, “চিনিয়াছি।”
এমন সময়ে রামরাম বাবু, আবার অন্যান্য খাদ্য লইয়া যাইতে ডাকিয়া বলিলেন। অনেকপ্রকার মাংস পাক করিয়াছিলাম—লইয়া গেলাম। দেখিলাম, ইনি কটাক্ষটি মনে করিয়া রাখিয়াছেন। রামরাম দত্তকে বলিলেন, “রামরাম বাবু, আপনার পাচিকাকে বলুন যে, পাক অতি পরিপাটি হইয়াছে।”
রামরাম ভিতরের কথা কিছু বুঝিলেন না, বলিলেন, “হাঁ, উনি রাঁধেন ভাল।”
আমি মনে মনে বলিলাম, “তোমার মাথামুণ্ড রাঁধি।”
নিমন্ত্রিত বাবু কহিলেন, “কিন্তু এ বড় আশ্চর্য যে, আপনার বাড়ীতে দুই একখানা ব্যঞ্জন আমাদের দেশের মত পাক হইয়াছে।”
আমি মনে মনে ভাবিলাম, “চিনিয়াছি।” বস্তুত: দুই একখানা ব্যঞ্জন আমাদের নিজদেশের প্রথামত পাক করিয়াছিলাম।
রামরাম বলিলেন, “তা হবে, ওঁর বাড়ী এ দেশে নয়।”
ইনি এবার যো পাইলেন, একবারে আমার মুখ পানে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া বলিলেন, “তোমাদের বাড়ী কোথায় গা?”
আমার প্রথম সমস্যা কথা কই কি না কই। স্থির করিলাম, কথা কহিব।
দ্বিতীয় সমস্যা, সত্য বলিব, না মিথ্যা বলিব। স্থির করিলাম, মিথ্যা বলিব। কেন এরূপ স্থির করিলাম, তাহা যিনি স্ত্রীলোকের হৃদয়কে চাতুর্যপ্রিয়, বক্রপথগামী করিয়াছেন, তিনিই জানেন। আমি ভাবিলাম, আবশ্যক হয়, সত্য কথা বলা আমার হাতেই রহিল, এখন আর একটা কথা বলিয়া দেখি। এই ভাবিয়া আমি উত্তর করিলাম, “আমাদের বাড়ী কালাদীঘি।”
তিনি চমকিয়া উঠিলেন। ক্ষণেক পরে মৃদুস্বরে কহিলেন, “কোন্ কালাদীঘি, ডাকাতে কালাদীঘি?”
আমি বলিলাম, “হাঁ।”
তিনি আর কিছু বলিলেন না।
আমি মাংসপাত্র হাতে করিয়া দাঁড়াইয়া রহিলাম। দাঁড়াইয়া থাকা আমার যে অকর্তব্য, তাহা আমি ভুলিয়াই গিয়াছিলাম। এই মাত্র যে আপনাকে সহস্র ধিক্কার দিয়াছিলাম, তাহা ভুলিয়া গেলাম। দেখিলাম যে, তিনি আর ভাল করিয়া আহার করিতেছেন না। তাহা দেখিয়া রামরাম দত্ত বলিলেন, “উপেন্দ্র বাবু, আহার করুন না।” আমি নাম শুনিবার আগেই চিনিয়াছিলাম, ইনি আমার স্বামী।
আমি পাকশালায় গিয়া পাত্র ফেলিয়া একবার অনেক কালের পর আহ্লাদ করিতে বসিলাম। রামরাম দত্ত বলিলেন, “কি পড়িল?” আমি মাংসের পাত্রখানা ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিয়াছিলাম।

Page 8 of 16
Prev1...789...16Next
Previous Post

আনন্দমঠ – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

Next Post

কপালকুণ্ডলা – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

Next Post

কপালকুণ্ডলা - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

কৃষ্ণকান্তের উইল - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In