- বইয়ের নামঃ ইন্দিরা
- লেখকের নামঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- প্রকাশনাঃ জয় প্রকাশন
- বিভাগসমূহঃ উপন্যাস
ইন্দিরা – ০১-০৫
প্রথম পরিচ্ছেদ : আমি শ্বশুরবাড়ী যাইব
অনেক দিনের পর আমি শ্বশুরবাড়ী যাইতেছিলাম। আমি ঊনিশ বৎসরে পড়িয়াছিলাম, তথাপি এ পর্যন্ত শ্বশুরের ঘর করি নাই। তাহার কারণ, আমার পিতা ধনী, শ্বশুর দরিদ্র। বিবাহের কিছু দিন পরেই শ্বশুর আমাকে লইতে লোক পাঠাইয়াছিলেন, কিন্তু পিতা পাঠাইলেন না; বলিলেন, “বিহাইকে বলিও যে, আগে আমার জামাতা উপার্জন করিতে শিখুক—তার পর বধূ লইয়া যাইবেন—এখন আমার মেয়ে লইয়া গিয়া খাওয়াইবেন কি?” শুনিয়া আমার স্বামীর মনে বড় ঘৃণা জন্মিল— তাহার বয়স তখন কুড়ি বৎসর, তিনি প্রতিজ্ঞা করিলেন যে, স্বয়ং অর্থোপার্জন করিয়া পরিবার প্রতিপালন করিবেন। এই ভাবিয়া তিনি পশ্চিমাঞ্চলে যাত্রা করিলেন। তখন রেইল হয় নাই—পশ্চিমের পথ অতি দুর্গম ছিল। তিনি পদব্রজে, বিনা অর্থে, বিনা সহায়ে, সেই পথ অতিবাহিত করিয়া, পঞ্জাবে গিয়া উপস্থিত হইলেন। যে ইহা পারে, সে অর্থোপার্জন করিতেও পারে। স্বামী অর্থোপার্জন করিতে লাগিলেন—বাড়ীতে টাকা পাঠাইতে লাগিলেন—কিন্তু সাত আট বৎসর বাড়ী আসিলেন না, বা আমার কোন সংবাদ লইলেন না। রাগে আমার শরীর গর গর করিত। কত টাকা চাই? পিতা—মাতার উপর বড় রাগ হইত-কেন পোড়া টাকা উপার্জনের কথা তাঁহারা তুলিয়াছিলেন? টাকা কি আমার সুখের চেয়ে বড়! আমার বাপের ঘরে অনেক টাকা—আমি টাকা লইয়া “ছিনিমিনি” খেলিতাম। মনে মনে করিতাম, একদিন টাকা পাতিয়া শুইয়া দেখিব—কি সুখ? একদিন মাকে বলিলাম, “মা, টাকা পাতিয়া শুইব|” মা বলিলেন, “পাগলী কোথাকার!” মা কথাটা বুঝিলেন। কি কলকৌশল করিলেন বলিতে পারি না, কিন্তু যে সময়ের ইতিহাস আরম্ভ করিতেছি, তাহার কিছু পূর্বে আমার স্বামী বাড়ী আসিলেন। রব উঠিল যে, তিনি কমিসেরিয়েটের (কমিসেরিয়েট বটে ত?) কর্ম করিয়া অতুল ঐশ্বর্যের অধিপতি হইয়া আসিয়াছেন। আমার শ্বশুর আমার পিতাকে লিখিয়া পাঠাইলেন, “আপনার আশীর্বাদে উপেন্দ্র (আমার স্বামীর নাম উপেন্দ্র—নাম ধরিলাম, প্রাচীনারা মার্জনা করিবেন, হাল আইনে তাঁহাকে “আমার উপেন্দ্র” বলিয়া ডাকাই সম্ভব)—বধূমাতাকে প্রতিপালন করিতে সক্ষম। পাল্কী বেহারা পাঠাইলাম, বধূমাতাকে এ বাটীতে পাঠাইয়া দিবেন। নচেৎ আজ্ঞা করিলে পুত্রের বিবাহের আবার সম্বন্ধ করিব।”
পিতা দেখিলেন, নূতন বড়মানুষ বটে। পাল্কীখানার ভিতরে কিংখাপ মোড়া, উপরে রূপার বিট, বাঁটে রূপার হাঙ্গরের মুখ। দাসী মাগী যে আসিয়াছিল, সে গরদ পরিয়া আসিয়াছে, গলায় বড় মোটা সোণার দানা। চারি জন কালো দাড়িওয়ালা ভোজপুরে পাল্কীর সঙ্গে আসিয়াছিল।
আমার পিতা হরমোহন দত্ত বুনিয়াদি বড়মানুষ, হাসিয়া বলিলেন, “মা ইন্দিরে! আর তোমাকে রাখিতে পারি না। এখন যাও, আবার শীঘ্র লইয়া আসিব। দেখ, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ দেখিয়া হাসিও না।”
মনে মনে বাবার কথার উত্তর দিলাম। বলিলাম, “আমার প্রাণটা বুঝি আঙ্গুল ফুলিয়া কলাগাছ হইল; তুমি যেন বুঝিতে পারিয়া হাসিও না।”
আমার ছোট বহিন কামিনী বুঝি তা বুঝিতে পারিয়াছিল;-বলিল, “দিদি! আবার আসিবে কবে?” আমি তাহার গাল টিপিয়া ধরিলাম।
কামিনী বলিল, “দিদি, শ্বশুরবাড়ী কেমন, তাহা কিছু জানিস না?”
আমি বলিলাম, “জানি। সে নন্দনবন, সেখানে রতিপতি পারিজাত ফুলের বাণ মারিয়া লোকের জন্ম সার্থক করে। সেখানে পা দিলেই স্ত্রীজাতি অপ্সরা হয়, পুরুষ ভেড়া হয়। সেখানে নিত্য কোকিল ডাকে, শীতকালে দক্ষিণে বাতাস বয়, অমাবস্যাতেও পূর্ণচন্দ্র উঠে।”
কামিনী হাসিয়া বলিল, “মরণ আর কি!”
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : শ্বশুরবাড়ী চলিলাম
ভগিনীর এই আশীর্বাদ লইয়া আমি শ্বশুরবাড়ী যাইতেছিলাম। আমার শ্বশুরবাড়ী মনোহরপুর। আমার পিত্রালয়ে মহেশপুর। উভয় গ্রামের মধ্যে দশ ক্রোশ পথ, সুতরাং প্রাতে আহার করিয়া যাত্রা করিয়াছিলাম, পৌঁছিতে পাঁচ সাত দণ্ড রাত্রি হইবে, জানিতাম।
তাই চক্ষে একটু একটু জল আসিয়াছিল। রাত্রিতে আমি ভাল করিয়া দেখিতে পাইব না, তিনি কেমন। রাত্রিতে ত তিনি ভাল করিয়া দেখিতে পাইবেন না, আমি কেমন। মা বহু যত্নে চুল বাঁধিয়া দিয়াছিলেন—দশ ক্রোশ পথ যাইতে যাইতে খোঁপা খসিয়া যাইবে, চুল সব স্থানচ্যুত হইয়া যাইবে। পাল্কীর ভিতর ঘামিয়া বিশ্রী হইয়া যাইব। তৃষ্ণায় মুখের তাম্বুলরাগ শুকাইয়া উঠিবে, শ্রান্তিতে শরীর হতশ্রী হইয়া যাইবে। তোমরা হাসিতেছ? আমার মাথার দিব্য হাসিও না, আমি ভরা যৌবনে প্রথম শ্বশুরবাড়ী যাইতেছিলাম।
পথে কালাদীঘি নামে এক বৃহৎ দীর্ঘিকা আছে। তাহার জল প্রায় অর্ধ ক্রোশ। পাড় পর্বতের ন্যায় উচ্চ। তাহার ভিতর দিয়া পথ। চারিপার্শ্বে বটগাছ। তাহার ছায়া শীতল, দীঘির জল নীল মেঘের মত, দৃশ্য অতি মনোহর। তথায় মনুষ্যের সমাগম বিরল। ঘাটের উপরে একখানি দোকান আছে মাত্র। নিকটে যে গ্রাম আছে, তাহারও নাম কালাদীঘি।
এই দীঘিতে লোকে একা আসিতে ভয় করিত। দস্যুতার ভয়ে এখানে দলবদ্ধ না হইয়া লোক আসিত না। এই জন্য লোকে “ডাকাতে কালাদীঘি” বলিত। দোকানদারকে লোকে দস্যুদিগের সহায় বলিত। আমার সেসকল ভয় ছিল না। আমার সঙ্গে অনেক লোক-ষোলজন বাহক, চারিজন দ্বারবান, এবং অন্যান্য লোক ছিল।
যখন আমরা এইখানে পৌঁছিলাম, তখন বেলা আড়াই প্রহর। বাহকেরা বলিল যে, “আমরা কিছু জল-টল না খাইলে আর যাইতে পারি না।” দ্বারবানেরা বারণ করিল—বলিল, “এ স্থান ভাল নয়।” বাহকেরা উত্তর করিল, “আমরা এত লোক আছি—আমাদিগের ভয় কি?” আমার সঙ্গের লোকজন ততক্ষণ কেহই কিছুই খায় নাই। শেষে সকলেই বাহকদিগের মতে মত করিল।
দীঘির ঘাটে—বটতলায় আমার পাল্কী নামাইল। আমি হাড়ে জ্বলিয়া গেলাম। কোথায়, কেবল ঠাকুর দেবতার কাছে মানিতেছি, শীঘ্র পৌঁছি—কোথায়, বেহারা পাল্কী নামাইয়া হাঁটু উঁচু করিয়া ময়লা গামছা ঘুরাইয়া বাতাস খাইতে লাগিল! কিন্তু ছি! স্ত্রীজাতি বড় আপনার বুঝে! আমি যাইতেছি কাঁধে, তাহারা কাঁধে বহিতেছে; আমি যাইতেছি ভরা যৌবনে স্বামিসন্দর্শনে— তারা যাইতেছে খালি পেটে এক মুঠা ভাতের সন্ধানে; তারা একটু ময়লা গামছা ঘুরাইয়া বাতাস খাইতেছে বলিয়া কি আমার রাগ হইল! ধিক্ ভরা যৌবনে!
এই ভাবিতে ভাবিতে আমি ক্ষণেক পরে, অনুভবে বুঝিলাম যে, লোকজন তফাৎ গিয়াছে। আমি তখন সাহস পাইয়া অল্প দ্বার খুলিয়া দীঘি দেখিতে লাগিলাম। দেখিলাম, বাহকেরা সকলে দোকানের সম্মুখে এক বটবৃক্ষতলে বসিয়া জলপান খাইতেছে। সেই স্থান আমার নিকট হইতে প্রায় দেড় বিঘা। দেখিলাম যে, সম্মুখে অতি নিবিড় মেঘের ন্যায় বিশাল দীর্ঘিকা বিস্তৃত রহিয়াছে, চারিপার্শ্বে পর্বতশ্রেণীবৎ উচ্চ অথচ সুকোমল শ্যামল তৃণাবরণশোভিত “পাহাড়”,– পাহাড় এবং জলের মধ্যে বিস্তৃত ভূমিতে দীর্ঘ বটবৃক্ষশ্রেণী; পাহাড়ে অনেক গোবৎস চরিতেছে—জলের উপর জলচর পক্ষিগণ ক্রীড়া করিতেছে—মৃদু পবনের মৃদু মৃদু তরঙ্গহিল্লোলে স্ফটিক ভঙ্গ হইতেছে—ক্ষুদ্রোর্মিপ্রতিঘাতে কদাচিৎ জলজপুষ্পপত্র এবং শৈবাল দুলিতেছে। দেখিতে পাইলাম যে, আমার দ্বারবানেরা জলে নামিয়া স্নান করিতেছে—তাহাদের অঙ্গচালনে তাড়িত হইয়া শ্যামসলিলে শ্বেত মুক্তাহার বিক্ষিপ্ত হইতেছে।
আকাশ পানে চাহিয়া দেখিলাম, কি সুন্দর নীলিমা! কি সুন্দর শ্বেত মেঘের স্তর পরস্পরের মূর্তিবৈচিত্র্য—কিবা নভস্তলে উড্ডীন ক্ষুদ্র পক্ষী সকলের নীলিমামধ্যে বিকীর্ণ কৃষ্ণবিন্দুনিচয়তুল্য শোভা! মনে মনে হইল, এমন কোন বিদ্যা নাই, যাতে মানুষ পাখী হইতে পারে? পাখী হইতে পারিলে আমি এখনই উড়িয়া চিরবাঞ্ছিতের নিকট পৌঁছিতাম!
আবার সরোবর প্রতি চাহিয়া দেখিলাম—এবার একটু ভীত হইলাম, দেখিলাম যে, বাহকেরা ভিন্ন আমার সঙ্গের লোক সকলেই এককালে স্নানে নামিয়াছে। সঙ্গে দুইজন স্ত্রীলো—একজন শ্বশুরবাড়ীর, একজন বাপের বাড়ীর, উভয়েই জলে। আমার মনে একটু ভয় হইল—কেহ নিকটে নাই—স্থান মন্দ, ভাল করে নাই। কি করি, আমি কুলবধূ, মুখ ফুটিয়া কাহাকে ডাকিতে পারিলাম না।
এমত সময়ে পাল্কীর অপর পার্শ্বে কি একটা শব্দ হইল। যেন উপরিস্থ বটবৃক্ষের শাখা হইতে কিছু গুরু পদার্থ পড়িল। আমি সে দিকের কপাট অল্প খুলিয়া দেখিলাম। দেখিলাম যে, একজন কৃষ্ণবর্ণ বিকটাকার মনুষ্য! ভয়ে দ্বার বন্ধ করিলাম; কিন্তু তখনই বুঝিলাম যে, এ সময়ে দ্বার খুলিয়া রাখাই ভাল। কিন্তু আমি পুনশ্চ দ্বার খুলিবার পূর্বেই আর একজন মানুষ গাছের উপর হইতে লাফাইয়া পড়িল। দেখিতে দেখিতে আর একজন, আবার একজন! এইরূপ চারিজন প্রায় এককালেই গাছ হইতে লাফাইয়া পড়িয়া পাল্কী কাঁধে করিয়া উঠাইল। উঠাইয়া ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটিল।
দেখিতে পাইয়া আমার দ্বারবানেরা “কোন্ হ্যায় রে! কোন্ হ্যায় রে!” রব তুলিয়া জল হইতে দৌড়িল।
তখন বুঝিলাম যে, আমি দস্যুহস্তে পড়িয়াছি। তখন আর লজ্জায় কি করে? পাল্কীর উভয় দ্বার মুক্ত করিলাম। আমি লাফাইয়া পড়িয়া পলাইব মনে করিলাম, কিন্তু দেখিলাম যে, আমার সঙ্গের লোক অত্যন্ত কোলাহল করিয়া পাল্কীর পিছনে দৌড়াইল। অতএব ভরসা হইল। কিন্তু শীঘ্রই সে ভরসা দূর হইল। তখন নিকটস্থ অন্যান্য বৃক্ষ হইতে লাফাইয়া পড়িয়া বহুসংখ্যক দস্যু দেখা দিতে লাগিল। আমি বলিয়াছি, জলের ধারে বটবৃক্ষের শ্রেণী। সেই সকল বৃক্ষের নীচে দিয়া দস্যুরা পাল্কী লইয়া যাইতেছিল। সেই সকল বৃক্ষ হইতে মনুষ্য লাফাইয়া পড়িতে লাগিল। তাহাদের কাহারও বাঁশের লাঠি, কাহারও হাতে গাছের ডাল।
লোকসংখ্যা অধিক দেখিয়া আমার সঙ্গের লোকেরা পিছাইয়া পড়িতে লাগিল। তখন আমি নিতান্ত হতাশ্বাস হইয়া মনে করিলাম, লাফাইয়া পড়ি। কিন্তু বাহকেরা যেরূপ দ্রুতবেগে যাইতেছিল-তাহাতে পাল্কী হইতে নামিলে আঘাতপ্রাপ্তির সম্ভাবনা। বিশেষত: একজন দস্যু আমাকে লাঠি দেখাইয়া বলিল যে, “নামিবি ত মাথা ভাঙ্গিয়া দিব।” সুতরাং আমি নিরস্ত হইলাম।
আমি দেখিতে লাগিলাম যে, একজন দ্বারবান অগ্রসর হইয়া আসিয়া পাল্কী ধরিল, তখন একজন দস্যু তাহাকে লাঠির আঘাত করিল। সে অচেতন হইয়া মৃত্তিকাতে পড়িল। তাহাকে আর উঠিতে দেখিলাম না। বোধ হয়, সে আর উঠিল না।
তখন তাহারাও চলিয়া যায়, সেই নিবিড় অরণ্যে অন্ধকার রাত্রিতে আমাকে বন্য পশুদিগের মুখে সমর্পণ করিয়া যায় দেখিয়া আমি কাঁদিয়া উঠিলাম। আমি কহিলাম, “তোমাদের পায়ে পড়ি, আমাকে সঙ্গে লইয়া চল।” দস্যুর সংসর্গও আমার স্পৃহণীয় হইল।
এক প্রাচীন দস্যু সকরুণ ভাবে বলিল, “বাছা, অমন রাঙ্গা মেয়ে আমরা কোথায় লইয়া যাইব? এ ডাকাতির এখনই সোহরৎ হইব—তোমার মত রাঙ্গা মেয়ে আমাদের সঙ্গে দেখিলেই আমাদের ধরিবে।”
একজন যুবা দস্যু কহিল, “আমি ইহাকে লইয়া ফাটকে যাই, সেও ভাল, তবু ইহাকে ছাড়িতে পারি না।” সে আর যাহা বলিল, তাহা লিখিতে পারি না।–এখন মনেও আনিতে পারি না। সেই প্রাচীন দস্যু ঐ দলের সর্দার। সে যুবাকে লাঠি দেখাইয়া কহিল, “এই লাঠির বাড়িতে এইখানেই তোর মাথা ভাঙ্গিয়া রাখিব। ওসকল পাপ কি আমাদের সয়?” তাহারা চলিয়া গেল।
ইহা দেখিয়া অবশিষ্ট রক্ষিগণ নিরস্ত হইল। বাহকেরা আমাকে নির্বিঘ্নে লইয়া গেল। রাত্রি এক প্রহর পর্যন্ত তাহারা এইরূপ বহন করিয়া পরিশেষে পাল্কী নামাইল। দেখিলাম, যেখানে নামাইল, সে স্থান নিবিড় বন—অন্ধকার। দস্যুরা একটা মশাল জ্বালিল। তখন আমাকে কহিল, “তোমার যাহা কিছু আছে দাও—নইলে প্রাণে মারিব।” আমার অলঙ্কার বস্ত্রাদি সকল দিলাম— অঙ্গের অলঙ্কারও খুলিয়া দিলাম। কেবল হাতের বালা খুলিয়া দিই নাই—তাহারা কাড়িয়া লইল। তাহারা একখানি মলিন, জীর্ণ বস্ত্র দিল, তাহা পরিয়া পরিধানের বহুমূল্য বস্ত্র ছাড়িয়া দিলাম। দস্যুরা আমার সর্বস্ব লইয়া পাল্কী ভাঙ্গিয়া রূপা খুলিয়া লইল। পরিশেষে অগ্নি জ্বালিয়া ভগ্ন শিবিকা দাহ করিয়া দস্যুতার চিহ্নমাত্র লোপ করিল।