হ্যাঁ, ওগুলো মিসরের মমী, কাঠামোটা আছে, আসল বস্তুটাই না। কি? মধু আর গন্ধ। বলে মৃদু হাসে মাধুরী।
একটা দোকানে নানা রকম জীবন্ত মাছ সাজানো রয়েছে শোকেসে, শৈবালের ভেতরে ভেতরে তারা সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে, বড়দা দেখে বললো, নিবি মাধু? সাজিয়ে রাখবি তোর ঘরে।
বড়দা, এই বন্দী জীবন দেখলে আমার কান্না পায়, কতটুকু জায়গায় ওরা ঘুরছে?
নিরুপায় বড়দা আর কি করবে? ধনী ব্যবসায়ীর ছেলে, নিজেও ব্যবসাদার অসংখ্য লোক চেনে তাকে। পথে কত ব্যক্তি নমস্কার জানায় তার ইয়ত্তা নেই। পাশে মাধুরী বসে থাকে, তাকেও নমস্কার জানায় সকলে। মাধুরী বলে
তোমার সঙ্গে বেড়াতে বেরুলে বিস্তর সেলাম পাওয়া যায় বড়দা।
হ্যাঁ, কেন? তোর খারাপ লাগে নাকি?
না, শিবের কাছে যে সব ভূত থাকে, মানুষ কেন তাদের পূজা করে তা বোঝা যায়, হাসে মাধুরী কথা বলতে বলতে
বড়দা এবং আর সবাই জানে ওর কথা কইবার ধরন চুপ করে থাকে। বাড়ি ফিরে মাধুরী দেখে ছোটদার আসর গরম এবং সে আসা মাত্রই ডাক আসে। শেষে মাধুরী অতিষ্ঠ হয়ে বৌদিকে বলে।
বাড়িটা একেবারে গড়ের মাঠ হয়ে উঠলো পালাতে হবে দেখছি।
অত কষ্ট করে কাজ কি? কারো সঙ্গে গেথে যা বড়বৌদি বললো।
গেঁথে যাবো। আমি কি পুঁতির মালা নাকি। মাধুরীর চোখ মুখ গম্ভীর।
পুঁথির মালা কে বলেছে। মুক্তার মালাই হবি—
মোটেই না, আমি হারের মালা গাঁথবোই কাকে, পরাবোই বা কাকে বলে।
কিন্তু সেদিন কথা হয়েছে, তুই অবিলম্বে কাউকে ভালবাসবি, কথা রক্ষা কর। ভালো তো বেসেছি ঐ গাছ পাতা পাথর কাক কোকিল চিল গাংচিল, তারপর মাধুরী দিল হেসে, আরো কত কি
ও ভালবাসাকে প্রেম বলে না তুই বলেছিলি প্রেম পত্নবি—পড় শ্রীঘ্র।
ওহো, প্রেমে কিন্তু পড়তে পারছিনে বৌদি, কণ্ঠ এমন করুণ করলো মাধুরী যে বৌদি আর হাসি চাপাতে পারলো না, কিন্তু মাধুরী বলে চলেছে–
আমি তোমার গলায় দড়ি বেঁধে প্রেম সাগরে ডুবতে যাবো
মাধুরী বৌদির গলায় আঁচলটা জড়িয়ে টানছে। বৌদি অতিষ্ট হয়ে বললো, থাম রে পড়ে যাবি ভাই, কিন্তু ছোটদি শোন, বড়বৌ অকস্মাৎ গম্ভীর হলো।
বলো, আদেশ করো না পালন করতে পারবো না..
না, আদেশ তোকে যে করবে তারই কথা বলছি
হেন জন জন্মে এই নাই এ ত্রিভুবনে থিয়েটারী ঢং এ বললো মাধুরী।
ঠিক জন্মেছে, আজ কথাটা আমি পরিষ্কার করে নিতে চাই, তোর বড়দার আদেশ বিয়ে করতে চাইবার কি তোর কারণ? আমাদের দেশী প্রথা মতন কেউ তোকে দেখতে আসবে, এ তুই চাসনে আর আবার বিলেতী ঢং–এ কাউকে পছন্দ করবি তাও হচ্ছে না, এতো সুযোগ সুবিধে আমরা করে দিচ্ছি তবু তোর মতলবটা কি খুলে বল।
দেশী প্রথায় আমার শ্রদ্ধা নেই। আমাকে দু’মিনিট দেখে কেউ অপর কারো জন্য নির্বাচন করবে এ আমি মেনে নিতে পারি না, আর বিলাতি প্রথার তোমরা বাধা
আমরা? বিস্ময়ে চোখ কপালে উঠলো বৌদির।
হ্যাঁ তোমরা, কতগুলি শিংওয়ালা ভেড়া ঘরে এনে তোমরা লড়াই দেখছো, এদিকে ওদের শিং এর ঠোকাঠুকিতে আমি বেচারা যাই যাই অবস্থা। তোমাদের মায়া মমতা কিছু নেই আমার উপর! নাকি স্বয়ম্বরের দিন যে ওদের মধ্যে লড়াই এ যে জিতবে, তাকে আমি মালা দিব। ওদের বিদেয় কর দোহাই তোমার। আচ্ছা, কিন্তু তারপর তোর মালাটা পাবে
মালা এখনো আমার গাঁথা হয়নি, বলে গেল মাধুরী?
উনিশ বছরে মেয়ে। ফুটন্ত যৌবন ওকে ঘিরে ধরেছে। বড়বৌদি দেখলো বাড়ি সকলের স্নেহের পুতুল ওকে কি করে সুখী করা যায়। নিঃশ্বাস ফেলে বড়বৌদি স্বামীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
কি ব্যাপার? অমনকরুণ দেখাচ্ছে তোমায়?
মাধু সম্বন্ধে আমি খুব ভাল বুঝছি না। মহীনকে ও ভুলতে পারছে না! আর তোমাদের এ সব বন্ধু বান্ধব কেউ ওর মন জয় করতে পারবে বলে মনে হয় না। ওদের বিদেয় কর মেয়েটা খামোখা মনঃকষ্ট পাচ্ছে। এভাবে চললে ওর শরীর ভেঙ্গে যাবে….
কি তাহলে করা যায়, বলে বড়দা উঠে বসল ভাল হয়ে। তুমি কি মহীনের কথাও তুলেছিলে ওর কাছে।
না, ওর কথা আমরা মোটেই আলোচনা করতে চাই না মাধুরীর সঙ্গে। সে গেছে যাক—
কিন্তু মাধুরী যে ওকে ভুলতেই পারছে না বলছে?
হ্যাঁ, ভুলবার অবসর কে দিচ্ছ তোমরা? এই ভেড়ার গোয়ালের আওয়াজ ওকে মহীনের শান্ত গম্ভীর চরিত্রটা স্মরণ করিয়ে দেয় বার বার। মাধুরী নদীর মতন মহীন ছিল গম্ভীর সমুদ্রের মতন, ওদের মিলন হলে–বড়বৌদি কেঁদে ফেললো–
মহীনকে কি আবার খুজবো তাহলে? বড়দা প্রশ্ন করলো।
না, খোজা ঠিক হবে না। মহীনকে আমি যতখানি জেনেছি, তাতে মনে হয় কোন কারণ ছাড়া সে চলে যায়নি, কারণ সেই মাধুরীকে গভীর ভাবে ভালবাসে?
তাহলে চলে সে গেল কেন? আমি তো খুঁজেই পাচ্ছিনে কি এর কারণ? ওদিক দিয়ে ভেবে লাভ নেই। যে ভাবে সে গেছে, তাতে মনে হয়, না গিয়ে তার উপায় ছিল না। মাধুরীকে ভুলবার জন্য পথ দেখাতে হবে।
কি বল।
ও দমদমার বাগানে কি সব করতে চায়, করে দাও। দিন কতক কাটাক ক্লান্ত হয়ে পড় ক ঐ সব ব্যাপারে–মন সঙ্গীর অভাবটা অনুভব করুক তখন নিজেই বেরিয়ে আসবে ওসব ছেড়ে।
কিন্তু যদি ঐ কাজ নিয়ে মেতে যায়?
যায় তো যাবে। আমরা চাই ও সুখী হোক–ওতেই যদি সুখ থাকে তো থাকবে।
এ পর্যন্ত কথা কয়ে বড়বৌদি নিজের কাছে চলে গেল। বড়দা কিছুক্ষণ ভাবলো মাধুরী সম্বন্ধ্যে। দমদমার বাগানে কি করবে তার প্ল্যান মাধুরী আগে দিয়েছে বড়দাকে সেইটা আবার দেখলো। সুন্দর সুবিস্তৃত পরিকল্পনা মাধুরীর মন্দ কি? তাই করুক কিছুদিন। নইলে। অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে সারা বাড়িটায় ওই হোল বেশি আতঙ্ক।