• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
সোমবার, মে 12, 2025
  • Login
BnBoi.Com
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

নীল বসনা সুন্দরী – পাঁচকড়ি দে

Nil Bosona Sundari by Pachkori De

Countess.
This horrid fear-I can no longer bear it
For heaven’s sake, tell me, what has taken place.”
Coleridge :- The death of Walleustein, Act I-Seene IX.

প্রথম পরিচ্ছেদ
পরিচয়

এখন মজিদ খাঁর একটু পরিচয় আবশ্যক।
মজিদ খাঁর মাতাপিতা জীবিত নাই। অতি শৈশব হইতে তিনি মাতৃপিতৃহীন। মজিদের পিতার সহিত মনিরুদ্দীনের পিতার খুব হৃদ্যতা ছিল। মজিদের পিতা তেমন সঙ্গতিসম্পন্ন ছিলেন না, মৃত্যুকালে তিনি মনিরুদ্দীনের পিতার হস্তে প্রতিপালন ও রক্ষণাবেক্ষণের ভারসহ মজিদকে সমর্পণ করিয়া যানা্‌। মনিরুদ্দীনের পিতা একজন বড় জমিদার–পূর্ব্ববঙ্গে তাঁহার বিস্তৃত জমিদারী। বিশেষতঃ তিনি নিজে দয়ালু ও পরোপকারী ছিলেন। তিনি মজিদ খাঁর জন্য যথেষ্ট য্ত্ন লইয়াছিলেন, তাহা তাঁহার মৃত বন্ধুর পক্ষে আশাতীত। তাঁহার যত্নে এবং তত্ত্বাবধানে মজিদ খাঁ সুশিক্ষিত হইয়া উঠিলেন। বিশেষতঃ জমিদারী কাজ-কর্ম্মে মজিদ খাঁর অসাধারণ নৈপুণ্য প্রকাশ পাইতে লাগিল। মজিদ খাঁ শ্রমশীল, বুদ্ধিমানা্‌ এবং সচ্চরিত্র। মনিরুদ্দীনের পিতা তাঁহাকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করিতেন। জমিদারী সংক্রান্ত প্রায় সকল কাজই মজিদ খাঁ দেখিতেন। এমন কি মনিরুদ্দীনের পিতা তাঁহার সহিত পরামর্শ না করিয়া কোন কাজ করিতেন না; কিন্তু নিজের একমাত্র পুত্র মনিরুদ্দীন ঠিক ভিন্ন পথে চালিত হইলেন-একেবারে বিলাসীর অগ্রগণ্য হইয়া উঠিলেন; বিষয়-সম্পত্তি রক্ষার দিকে তাঁহার আদৌ দৃষ্টিপাত ছিল না। তাহার পর পিতার মৃত্যুতে যখন একেবারে অগাধ সম্পত্তি তাঁহার হাতে আসিয়া পড়িল, উদ্দাম যৌবনের আবেগে তিনি তখন ধূলিমুষ্টির ন্যায় স্বর্ণমুষ্টি উড়াইতে লগিলেন। মধুপূর্ণ মধুচক্র দেখিয়া অনেক মোসাহেবও আসিয়া জুটিল। মজিদের তাহা অসহ্য হইত; তিনি বন্ধুভাবে মনিরুদ্দীনকে অনেক বুঝাইতেন, কাজে কিছুই হইত না; কিন্তু ইহা লইয়াই ইদানীং মনিরুদ্দীনের সহিত মজিদের বনিবনাও হইল না। মজিদ স্বতন্ত্র বাটীতে উঠিয়া গেলেন। মনিরুদ্দীনেরও নিজের গন্তব্য পথের একটা অন্তরায় সরিয়া গেল মনে করিয়া, মনে মনে সন্তুষ্ট হইলেন। মজিদের সমক্ষে তাঁহার অনেক বিষয় কুণ্ঠা উপস্থিত হইতে-নির্ব্বিঘ্নভাবে যাহা-ইচ্ছা-তাহা করিতে পারিতেন না; কিন্তু এক বিষয়ে তাঁহার বড় অসুবিধা হইল। বৈষয়িক কাজ-কর্ম্মে তাঁহার কিছুমাত্র অভিজ্ঞতা ছিল না। মজিদের উপরেই তিনি নির্ভর করিতেন। যৌবনাবেগে মনিরুদ্দীনের চিত্ত একান্ত উদ্দাম ও উচ্ছৃঙ্খল হইয়া উঠিলেও তাঁহার প্রতি মজিদের যথেষ্ট আন্তরিকতা ছিল। মনিরুদ্দীনের পিতার স্নেহানুগ্রহে তিনি মনুষ হইয়াছেন, তাহা মজিদ সর্ব্বদা সর্ব্বান্তঃকরণে অনুভব করিতেন। ভিন্নস্থানে বাসা লইয়াও তিনি মধ্যে মধ্যে আসিয়া বৈষয়িক কাজ-কর্ম্ম দেখিয়া যাইতেন; সত্‍‌পথে টানিয়া আনিবার জন্য মনিরুদ্দীনকে উপদেশও দিতেন; কিন্তু মনিরুদ্দীন যতদূর নীচে নামিয়া পড়িয়াছেন, সেখান হইতে তাঁহাকে টানিয়া তুলিয়া আনা বড় শক্ত। একযাত্রায় পৃথকা্‌ ফল-উভয়ে সমবয়ষ্ক, বাল্যকালে এক বিদ্যালয়ে পাঠ করিয়াছেন, একসঙ্গে খেলা করিয়াছেন, একই ব্যক্তির স্নেহেলালিত-পালিত হইয়াছেন; এখন উভয়ের মতি উভয়বিধ পথে চালিত হওয়ায় উভয়ের মধ্যে পূর্ব্ব সদ্ভাব কিছু হ্রাস পাইয়া আসিল। পরে যাহা ঘটিবে, মনিরুদ্দীনের পিতা তাহা বুঝিতে পারিয়াই তিনি নিজের উইলে মজিদ খাঁ যাহাতে বার্ষিক ছয় শত টাকা প্রাপ্ত হন, তাহার সুবন্দোবস্ত করিয়া দিয়াছিলেন। অদ্যাপি মনিরুদ্দীন বিবাহ করেন নাই। তাঁহার পিতা কয়েকবার বিবাহ দিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, তখন মনিরুদ্দীন বাইজী ও সরাপ লইয়া একবারে উণ্মত্ত। অনেক বিবচনার পর পিতা সে সঙ্কল্প পরিত্যাগ করিয়াছিলেন।
মজিদ খাঁ এখন কলিঙ্গাবাজারের পূর্ব্বাংশে বৃদ্ধা হামিদার বাড়ীতে বাস করেন। সেখানে আরও চারি-পাঁচজন মুসলমান ভদ্রলোক বাস করিয়া থাকেন। তন্মধ্যে কেহ মোক্তার, কেহ সওদাগরী অফিসের কেরাণী, কেহ বা উমেদার-সে পরিচয় আমাদিগের নিষ্প্রয়োজন। মজিদ খাঁ কাহারও সহিত মিশেন না। তিনি হামিদার বাটীর দ্বিতলস্থ দুইটি প্রকোষ্ঠ ভাড়া লইয়া বাস করিতেছেন।
মজিদ খাঁর বয়ঃক্রম এখন আটাশ বত্‍‌সর। বয়সে যুবক হইলেও সকল বিষয়ে তাঁহার বৃদ্ধের অভিজ্ঞতা ছিল; তাঁহার ন্যায় সচ্চরিত্র যুবককে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত দেখিয়া বিস্মিত হইবার কথা; কিন্তু অনেক ভাল লোকেরও পতন হয়।
মজিদ খাঁ কিছু দীর্ঘাকৃতি-দেহের বর্ণ গৌর। মুখখানি সুন্দর-দেখিয়া তাঁহাকে বুদ্ধিমানা্‌ বলিয়া অনুমান হয়।
দেবেন্দ্রবিজয় যখন তাঁহার সহিত দেখা করিতে হামিদার বাড়ীতে উপস্থিত হইলেন, তখন তিনি টেবিলের উপরে হেঁট হইয়া একখানি ইংরাজী সংবাদপত্র মনে মনে পড়িতেছিলেন। তাঁহার মুখখানি মলিন, ললাটে চিন্তার রেখাবলী প্রকটিত, মস্তকের কেশ অবিন্যস্ত নহে, বিশৃঙ্খলভাবে কতক ললাটের উপরে আসিয়া পড়িয়াছে। চক্ষুঃপ্রান্ত কালিমাঙ্কিত; দেখিয়া বোধ হয়, মজিদ খাঁ যেন উপর্য্যুপরি তিনটা বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করিয়াছেন।
দেবেন্দ্রবিজয় কক্ষমধ্যে প্রবিষ্ট হইলে মজিদ খাঁ বিস্ময়পূর্ণদৃষ্টিতে তাঁহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন।

২.০২. দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ – আর এক রহস্য

প্রথমে দেবেন্দ্রবিজয়ই স্তব্ধতা ভঙ্গ করিলেন। বলিলেন, “আমি আপনার অপরিচিত-আমার নাম দেবেন্দ্রবিজয় মিত্র। আমি একজন ডিটেকা্‌টিভ-ইনা্‌স্পেক্টর।”
শুনিয়া মজিদের মলিনমুখ আরও মলিন হইয়া গেল। আর একবার দেবেন্দ্রবিজয়ের দিকে চকিত-দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া সংবাদ-পত্রখানা ফেলিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন। ব্যগ্রভাবে বলিলেন, “আসুন-আসুন, আপনার নাম দেবেন্দ্রবিজয় বাবু ! নাম শুনিয়াছি, আপনাকে দেখি নাই। তা’আজ এখানে কি মনে করিয়া ?”
দেবেন্দ্রবিজয় একখানি স্বতন্ত্র চেয়ার টানিয়া বসিয়া বলিলেন, “কোন একটা বিশেষ কারণে আমি আপনার নিকটে আসিয়াছি। বোধ করি, আপনি নিজে তাহা মনে মনে বুঝিতে পারিয়াছেন।”
মজিদ উভয় ভ্রূ সঙ্কুচিত এবং মস্তক সঞ্চালিত করিয়া বলিলেন, “কই, আমি কিছুই ত বুঝিতে পারি নাই।”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, “তবে আমিই স্পষ্টবাক্যে বুঝাইয়া দিই, মেহেদী-বাগানের খুনের তদন্তে আমি এখানে আসিয়াছি।”
কথাটা শুনিয়া সহসা মজিদের যেন শ্বাসরুদ্ধ হইল। স্তম্ভিতভাবে উঠিয়া দাঁড়াইলেন; মুখের পূর্ব্বভাব একেবারে পরিবর্ত্তিত হইয়া দারুণ উদ্বেগের চিহ্ণ ফুটিয়া উঠিল। তাড়াতাড়ি তিনি দেবেন্দ্রবিজয়ের তীক্ষ্ণদৃষ্টি হইতে মুখ ফিরাইয়া লইলেন। সংবাদপত্রখানা টেবিলের নীচে পড়িয়া গিয়াছিল; সেখানা তুলিয়া ধূলা ঝাড়িয়া নতমস্তকে ভাঁজ করিতে লাগিলেন। কিছু প্রকৃতিস্থ হইয়া শুষ্কহাস্যের সহিত জিজ্ঞাসা করিলেন, “খুনের তদেন্তে আমার কাছে আসিয়াছেন কেন ? আমি ইহার কি জানি ? আমার সহিত ইহার কি সংশ্রব আছে ? ”
একটু কঠিনভাবে দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন,”কি সংশ্রব আছে, আমি তাহাই জানিতে আসিয়াছি।”
মজিদ খাঁ অত্যন্ত তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে একবার দেবেন্দ্রবিজয়ের মুখের দিকে চাহিলেন। তাহার পর পকেট হইতে একটা চুরুট বাহির করিয়া অগ্নি সংযোগ করিলেন। এবং চুরুটে দুই-একটী টান দিয়া নিজের চেয়ারে ভাল হইয়া বসিলেন। অবিচলিতকণ্ঠে কহিলেন, “আপনি হেঁয়ালির ছন্দ ছাড়িয়া দিনা্‌।”
দেবেন্দ্রবিজয় সহাস্যে কহিলেন, “আপনার নিকটে এই হেঁয়ালি ছন্দের অর্থ দুরূহ নহে।”
মজিদ খাঁ বলিলেন, “অত্যন্ত দুরূহ-আপনার অভিপ্রায় স্পষ্টবাক্যে প্রকাশ করুন।”
উভয়ে বাগা্‌াযুদ্ধে নিপুণ। মজিদ এই খুন সম্বন্ধে এমন কিছু অবগত আছেন, যাহা দেবেন্দ্রবিজয় তাঁহার মুখ হইতে বাহির করিয়া লইতে চাহেন; কিন্তু মজিদ তাহা প্রাণপনে চাপিয়া যাইতে চেষ্টা করিতেছেন। উভয়ের মধ্যে যিনি অধিকতর দক্ষ, তাঁহারই জয়লাভ অবশ্যম্ভাবী। প্রথমে দেবেন্দ্রবিজয় বাগা্‌াযুদ্ধে অগ্রসর হইলেন। বলিলেন, “যে স্ত্রীলোকটি মেহেদী-বাগানে খুন হইয়াছে, সে আপনাদের মনিরুদ্দীনের রক্ষিতা-নাম দিলজান।”
“বটে ! আপনি ইহা কিরূপে জানিলেন ?” বলিয়া মজিদ অত্যন্ত চকিতভাবে দেবেন্দ্রবিজয়ের মুখের দিকে চাহিলেন।
দে। সে কথা এখন হইতেছে না। তবে এইমাত্র আপনি জানিয়া রাখুন, মেহেদী-বাগানে যে লাস পাওয়া গিয়াছে, তাহা দিলজানেরই। আপনি তাহাকে শেষ-জীবিত দেখিয়াছেন।
ম। বটে, এমন কথা !
দে। হাঁ, গত বুধবার রাত এগারটার পর মনিরুদ্দীনের বাড়ীতে আপনার সহিত দিলজানের দেখা হইয়াছিল।
ম। কে আপনাকে এমন সুচারু মিথ্যাকথা বলিয়াছে ? কে এমন সত্যবাদী ?
দে। গনির মা।
মজিদের ওষ্ঠাধর কুঞ্চিত হইল। বলিলেন, “আপনি ইতিমধ্যে সকল সংবাদই সংগ্রহ করিয়া ফেলিয়াছেন দেখিতেছি। এখন আপনি আমার কাছে কি জন্য আসিয়াছেন, প্রকাশ করুন। কিছু জিজ্ঞাসা করিবার থাকে, বলুন।”
দে। গত বুধবার রাত্রিতে মনিরুদ্দীনের বাড়ীতে দিলজানের সহিত আপনার দেখা হইয়াছিল ?
ম। হইয়াছিল-সন্ধ্যার সময়ে-রাত্রিতে নহে।
দে। গনির মা’র মুখে শুনিলাম, রাত্রেও আপনার সহিত দিলজানের সহিত আমার দেখা হয় নাই। আর কাহারও সহিত দেখা হইয়াছিল ?
ম। সে কথা আমি বলিব না; তাহাতে আপনার কোন প্রয়োজন নাই।
দে। রাগ করিবেন না-খুব প্রয়োজন আছে। আপনি বুঝিতে পারিতেছেন না-আপনার মাথার উপরে কি ভয়ানক বিপদা্‌ উপস্থিত। যদি আপনি সরলভাবে আমার সকল প্রশ্নের উত্তর না করেন, আমি আপনাকে এখনই বিপদা্‌গ্রস্ত করিতে পারি-তাহা জানেন ?
ম। তাহা হইলে আপনি দিলজানের হত্যাপরাধটা আমারা্‌ স্কন্ধে চাপাইতে মনস্থ করিয়াছেন দেখিতেছি।
দে। তাহা পরে বিবেচ্য। এখন বলুন দেখি, গত বুধবরে কেন আপনি মনিরুদ্দীনের বাড়ীতে গিয়াছিলেন ?
মজিদ নিজের বিপদের গুরুত্ব বুঝিতে পারিলেন। মনে মনে বড় বিরক্ত হইলেন। বিরক্তভাবে বলিলেন, “খুন করিবার উদ্দেশ্যে নহে; অন্য কাজ ছিল। মনিরুদ্দীনের সঙ্গে দেখা করিতে গিয়াছিলাম।”
“দেখা হইয়াছিল ?”
“না।”
“কেন ?”
“রাত নয়টার ট্রেনে তিনি ফরিদপুর যাত্রা করিয়াছিলেন।”
“মনিরুদ্দীনের সহিত যদি আপনার দেখা হয় নাই, কিরূপে আপনি জানিতে পারিলেন, তিনি ফরিদপুর-যাত্রা করিয়াছেন ?”
“দুই-একদিন পূর্ব্বে আমি তাঁহার মুখে শুনিয়াছিলাম, তিনি ফরিদপুর যাইবেন।”
“সৃজান বিবিকে সঙ্গে লইয়া ?”
“সে সম্বন্ধে আমি কিছুই জানি না। ফরিদপুরে তাঁহার জমিদারী; জমিদারীতে কাজকর্ম্ম দেখিতে যাইবেন, এইমাত্র আমি জানি।”
“আপনি কেন বুধবার রাত্রে তাঁহার সহিত দেখা করিতে গিয়াছিলেন ?”
“আমি তাঁহার বৈষয়িক আয়ব্যয়ের হিসাব রাখি। দুই-একটা হিসাব বুঝাইয়া দিতে গিয়াছিলাম।”
“সেদিন রাত্রিতে সেখানে কাহারও সহিত আপনার দেখা হয় নাই ?”
(ইতস্ততঃ করিয়া ) হইয়াছিল।
“হাঁ, কোন স্ত্রীলোকের সহিত কি।”
“হাঁ, কোন স্ত্রীলোকের সহিত।”
“দিলজান।”
“দিলজান নহে। আপনার অনুমান ভুল।”
“তবে কে তিনি ?”
“যিনিই হউন না কেন, আপনার এই খুনের মামা্‌লার সহিত তাঁহার কোন সংশ্রব নাই।
“তা’ না থাকিলেও তাঁহার নামটা আমার জানা দরকার; অবশ্যই আপনাকে তাহা প্রকাশ করিতে হইবে।”
“কিছুতেই নহে-আমি বলিব না।”
উভয়ের পরস্পরের মুখপ্রতি স্থিরদৃষ্টিতে চাহিয়া রহিলেন। দেবেন্দ্রবিজয় দেখিলেন, মজিদ কিছুতেই সেই স্ত্রীলোকের নাম প্রকাশ করিবেন না। তখন তিনি সে সঙ্কল্প পরিত্যাগ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপত্তি থাকে-নাম না বলিলেন; তবে সেই স্ত্রীলোকের সহিত আপনার কি বচসা হইয়াছিল, বলিতে কোন আপত্তি আছে কি ?
ম। আছে, সে কথায় আপনার কোন আবশ্যকতা নাই।
দে। কতক্ষণ সেই স্ত্রীলোকটি সেখানে ছিল ?
ম। প্রায় রাত্রি বারটা পর্য্যন্ত।
দে। সে বাহির হইয়া গেলে আপনি কতক্ষণ সেখানে ছিলেন ?
ম। আমিও তখনই চলিয়া আসি।
দে। বরাবর এখানে-আপনার এই বাড়ীতে ?
ম। না, এখানে ফিরিতে রাত হইয়াছিল।
দে। সেখান হইতে বাহির হইয়া আপনি আবার কোথায় গিয়াছিলেন ?”
ম। তাহা আমি আপনাকে বলিতে পারি না।
দে। আপনি না বলিতে পারেন, আমি বলিতে পারি-মেহেদী-বাগানে।

২.০৩. তৃতীয় পরিচ্ছেদ – আত্মসংযম

মজিদ বজ্রস্তম্ভিত হইয়া গেলেন । তীক্ষ্ণকণ্ঠে জুজ্ঞাসা করিলেন, “কে আপনাকে বলিল ?”
দে । সে কথা পরে হইবে । মোবারকের সহিত সেখানে আপনার দেখা হইয়াছিল কি ?
ম । দেখা হইয়াছিল ।
দে । আপনি বরাবর এখানে না আসিয়া মেহেদী-বাগানে তখন কোন্ অভিপ্রায়ে গিয়াছিলেন ?
মজিদ একটু চিন্তিত হইলেন । ক্ষণপরে, “রাত্রি অধিক হইয়াছিল; পাছে সেই স্ত্রীলোকটি অন্ধকার রাত্রিতে পথ ভুল করে, অথবা কোন বিপদে পড়ে মনে করিয়া, আমি তাহার অনুসরণে মেহেদী-বাগানে গিয়েছিলাম । অনেকক্ষণ সন্ধান করিয়া তাহাকে আর দেখিতে পাইলাম না । সেখান হইতে ফিরিবার সময়ে মোবারক-উদ্দীনের সহিত সাক্ষাৎ হয় ।”
দে । পথে বাহির হইয়া আপনি কি আর সেই স্ত্রীলোকটিকে একবারও দেখিতে পান নাই ?
ম । (নতমুখে) না,-আর তাহাকে দেখি নাই ।
দেবেন্দ্রবিজয় মনে মনে বুঝিলেন, কথাটা একেবারে মিথ্যা । মজিদের মুখের দিকে কঠিন দৃষ্টিনিক্ষেপপূর্ব্বক বলিলেন, “আমি আপনার নিকটে আমার সকল প্রশ্নের উত্তর পাইয়াছি; কিন্তু এখনও একটি বাকী আছে ।”
মজিদ বলিলেন, “কিছুই বাকী নাই; যাহা কিছু বলিবার সকলই আমি বলিয়াছি । যাহা অপ্রকাশ্য-তাহা বলি নাই । বলিতেও পারিব না ।”
দেবেন্দ্রবিজয় জিজ্ঞাসিলেন, “তাহা হইলে আপনি কিছুতেই সেই স্ত্রীলোকটির নাম বলিবেন না ?”
মজিদ দৃঢ়স্বরে কহিলেন, “কিছুতেই না ।”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “আপনি অস্বীকার করিলে চলিবে না-গনির মা দেখিয়াছে, সেই স্ত্রীলোক দিলজান ।”
মজিদ বলিলেন, “আমি ত আপনাকে পূর্ব্বেই বলিয়াছি, গনির মার ভ্রম হইয়াছে ।”
দেবেন্দ্রবিজয় দেখিলেন, সোজা অঙ্গুলিতে ঘৃত বাহির হইবে না । কর্ত্তৃত্বের তীক্ষ্ণকণ্ঠে কহিলেন, “আপনি জানেন, আমি মনে করিলে আপনাকে এখনই গ্রেপ্তার করিতে পারি ?”
মজিদ বলিলেন, “পারেন না । আমি কি করিয়াছি ?”
দেবেন্দ্রবিজয় দৃঢ়কণ্ঠে বলিলেন, “আপনিই দিলজানকে শেষ-জীবিত দেখিয়াছেন ।”
মজিদ বলিলেন, “আমি অস্বীকার করিব ।”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “অস্বীকার করিলে চলিবে না; গনির মা তাহা সপ্রমাণ করিবে ।”
অত্যন্ত বিরক্তির সহিত অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া মজিদ বলিলেন, “তাহাই তাহাকে করিতে বলিবেন ! ”
মজিদের এইরূপ অপূর্ব্ব আত্মসংযম ও দৃঢ়তা দেখিয়া দেবেন্দ্রবিজয় মনে মনে অত্য্ন্ত রুষ্ট হইলেন । বলিলেন, “আপনি বড় ভাল কাজ করিতেছেন না; আপনাকেই ইহার ফলভোগ করিতে হইবে ।”
মজিদ খাঁ সেইরূপ দৃঢ়স্বরে বলিলেন, “তাহাতে আমি রাজি আছি । যাহা আমি করিতেছি, ভাল কি মন্দ বিবেচনা করার ক্ষমতা আমার নিজের যথেষ্ট আছে; আপনার নিকটে সে পরামর্শ আমি চাহি না ।”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “তাহা হইলে আপনি গত বুধবার রাত্রিতে মনিরুদ্দীনের বাড়ী হইতে বাহির হইয়া নিজের বাসায় ফিরিবার পূর্ব্বে কোথায় গিয়াছিলেন, কি করিয়াছিলেন, সে সকল কথা কিছুতেই কি আমার কাছে প্রকাশ করিবেন না ?”
মজিদ বলিলেন, “কিছুতেই না ।”
দেবেন্দ্রবিজয় কহিলেন, “সময়ে আপনাকে সকলই প্রকাশ করিতে হইবে ।”
মজিদ বলিলেন, “যখন করিতে হইবে-করিব ।”
দেবেন্দ্রবিজয় উঠিলেন । মজিদের বিনত মুখের দিকে একবার তীক্ষ্ণদৃষ্টিক্ষেপ করিয়া বলিলেন, “সেই কথাই ভাল । আমি আপনাকে সহজে ছাড়িব না ।” বলিয়া তিনি সেই কক্ষ ত্যাগ করিয়া বাহিরে আসিলেন ।
পথিমধ্যে আসিয়া আপন মনে অস্ফুটস্বরে বলিলেন, “আমার অনুমান ঠিক, মজিদ বড় সহজ লোক নহে; খুনের সকল খবরই মজিদ জানে; কিন্তু সে সকল কথা সহজে তাহার কাছে পাওয়া যাইবে না-আমিও সহজে ছড়িব না; দেখা যাউক, কোথাকার জল কোথায় দাঁড়ায় । এখন মজিদকে নজরের উপরে রাখিতে হইবে, কিছুতেই চোখের বাহির করা হইবে না । ধূর্ত্ত শ্রীশ ছোঁড়াটাকে এইবার দরকার হইবে দেখিতেছি ।”

২.০৪. চতুর্থ পরিচ্ছেদ – সন্দেহ প্রবল হইল

দেবেন্দ্রবিজয় কিছুদূর গিয়াছেন, এমন সময়ে দেখিলেন, হামিদা বিবি একখানি কাগজে অঞ্চলাগ্রে বাঁধিতে বাঁধিতে বাটীর বাহির হইল| দেখিয়া দেবেন্দ্রবিজয় মনে করিলেন, খুব সম্ভব, ইহা মজিদের পত্র| দেখিতে হইবে, পত্রখানি কোন্ উদ্দেশ্যে, কাহার নামে, কোথায় যাইতেছে|
যেদিকে হামিদা বিবি যাইতেছিল, সেইদিক্কার পথে সহজে ঠাহর হয়; এমন জায়গায় অকটি টাকা ফেলিয়া দিয়া দেবেন্দ্রবিজয় কিছুদূরে গিয়া দাঁড়াইলেন| পথ চলিতে চলিতে হামিদা বিবি পথিমধ্যে সেই টাকাটিকে অভিভাবকশুন্য দেখিয়া তুলিয়া লইল| দেবেন্দ্রবিজয় দূর হইতে তাহা দেখিয়া হামিদা বিবির নিকটে ছুটিয়া আসিয়া বলিলেন, “কে রে মাগী তুই, দে আমার নোট দে-টাকা দে-আমার নোট আর টাকা হারিয়েছে|”
বৃদ্ধা হামিদা বিবি থতমত খাইয়া বাহির করিয়া দেবেন্দ্রবিজয়ের হাতে দিয়া বলিল, “এই বাবু, তোমার টাকা|”
দেবেন্দ্রবিজয় গলাবাজি করিয়া বলিলেন “নোট-আমার নোট কোথা? তুই মাগী নিয়েছিস্| চালাকি বটে! এখনই থানায় চালান্ দিব, জান না বটে?”
হামিদা বিবিও তদপেক্ষা গলাবাজি করিতে জানে| আঘাতপ্রাপ্ত কাংস্যপাত্রের ন্যায় তাহার কণ্ঠ ঝন্ঝন্ করিয়া উঠিল; বলিল, “আ মর্ মিন্সে! মর্বার অর জায়গা পাও না-পথের মধ্যে বেইজ্জৎ করতে এসেছ| তোমার নোট কোথা, তা’ আমি কি জানি?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “আমি নিজের চোখে তোকে নোট তুলে নিতে দেখেছি, এখন, ‘কি জানি’ বল্লে চল্বে না| ঐ যে মাগী, এরই মধ্যে আঁচলে বেঁধে ফেলেছিস্| বেশী চালাকী কর্লে এখনই পাহারাওয়ালা ডেকে হাজির করব|”
হামিদা বুড়ী রাগিয়া, চোখমুখ কপালে তুলিয়া, অস্থির হইয়া উঠিল, “আসুক না পাহারাওয়ালা-পাহারাওয়ালার নিকুচি করেছে! আমি সেই ভয়ে ম’রে গেলুম আর কি! আমি নোট নিয়েছি, এখানা কি তোমার নোট? চোখের মাথা একেবারে খেয়েছ? বলিয়া তাড়াতাড়ি আঁচল হইতে সেই পত্রখানা বাহির করিয়া ফেলিল|
“কই দেখি, কেমন নোট কি না, বলিয়া দেবেন্দ্রবিজয় সেই পত্রখানি হামিদা বিবির হাত হইতে টানিয়া লইলেন| পত্রখানি খামে বন্ধ না থাকায় দেবেন্দ্রবিজউের সুবিধা হইল| ভাজগুলি তাড়াতাড়ি খুলিয়া ফেলিয়া দেখিলেন, দুই-তিন ছত্রমাত্র লিপিবদ্ধ| খুলিতে-না-খুলিতে পাঠ শেষ হইয়া গেল| লিখিত ছিল:-
“জোহেরা,
আমি অত্য্ন্ত বিপদ্গ্রস্ত| অদ্য সন্ধ্যার পর তোমাদের বাগানে অতি অবশ্য আমার সহিত গোপনে দেখ করিবে-কথা আছে|
মজিদ”
দেবেন্দ্রবিজয় পত্রখানি হামিদাকে ফেরৎ দিয়া বলিলেন, “না গো, কিছু মনে ক’রো না-আমারই ভুল হয়েছে-তুমি ভাল মানুষের মেয়ে-তুমি কেন নোট নিতে যাবে? টাকাটি পেয়েছিলে, তখনই আমাকে ফেরৎ দিলে-তা’কিছু মনে ক’রো না|”
হামিদা বিবি দেবেন্দ্রবিজয়ের মিষ্টবাক্যে একেবারে দ্রবীভূত হইয়া গেল| পত্রখানি আঁচলে বাঁধিতে বাঁধিতে বলিল, “না মনে আর কর্ব কি? টাকা খোয়া গেলে সকলেরই গায়ের জ্বালা হয়-গায়ের জ্বালায় দু’কথা যাকে তাকে ব’লেও ফেলে-সে কথা কি আর মনে করতে আছে, বাপু?” বলিয়া হামিদা বিবি নিজের পথ দেখিল|
দেবেন্দ্রবিজয় চিন্তিতভাবে আপন মনে বলিলেন, “জোহেরার সহিত মজিদের কি কথা আছে? জোহেরার সহিত মজিদের বিবাহ হইবে, শুনিয়াছি| আজ সন্ধ্যার পর কোন্ অভিপ্রায়ে মজিদ গোপনে তাহার সহিত দেখা করিবে, তাহাও আমাকে দেখিতে হইবে; কিন্তু নিজের দ্বারা সে কাজ হইবে না-মজিদ আমাকে চিনে| শ্রীশের দ্বারা কাজটা যাহাতে ঠিক করিয়া লইতে পারি, সেই চেষ্টা দেখিতে হইবে|”

 ২.০৫. পঞ্চম পরিছেদ – বালক শ্রীশচন্দ্র

যাঁহারা আমার “মনোরমা” উপন্যাস পাঠ করিয়াছেন, তাঁহাদিগকে এই বুদ্ধিমান ছোক্‌রা শ্রীশচন্দ্রের পরিচয় দিতে হইবে না|
অদ্যাপি শ্রীশ, সুযোগ্য ডিটেক্‌টিভ দেবেন্দ্রবিজয়ের নিকটে প্রতিপালিত হইতেছে| এখন সে আরও কাজের লোক হইয়া উঠিয়াছে| ঝুনা নারিকেলের ন্যায় দেবেন্দ্রবিজয় বাহিরে যতই কঠিন হউন, কিন্তু তাঁহার হৃদয় মায়া-মমতায় পূর্ণ ছিল| তাঁহার পরম নারী-শত্রু জুমেলিয়ার মৃত্যু-সময়েও আমরা একদিন চক্ষুর্দ্বয় সজল দেখিয়াছিলাম| তিনি শ্রীশকে অত্যন্ত স্নেহ করেন| বালক শ্রীশও তাঁহার একান্ত অনুরক্ত| দেবেন্দ্রবিজয় তাহাকে যখন যাহা আদেশ করেন, শ্রীশচন্দ্র তাহা সুচারূপে সম্পন্ন না করিয়া ছাড়ে না|
শ্রীশের বয়স এখন পনের বৎসর| অতি শৈশবে সে মাতৃ-হীন হইয়াছে| মাতাপিতার কথা এখন আর তাহার মনেই পড়ে না| নিজের সম্বন্ধে যখন তাহার কোন চিন্তা উপস্থিত হয়, মনে হয়, সে আকাশ হইতে পড়িয়াছে, নয় মাটি ভেদ করিয়া উঠিয়াছে| তাহার পিতামাতা এমন কিছুই রাখিয়া যায় নাই-কোন চিহ্ণ নাই-যাহাতে তাহাদের কথা এই দীন বালকের মনে একবার উদয় হইতে পারে|
শৈশবকাল হইতে এই সংসারের অনেক দুঃখ-কষ্টের সহিত যুদ্ধ করিয়া নিরাশ্রয় বালক শ্রীশচন্দ্রের বুদ্ধিটা অত্যন্ত প্রখরতা লাভ করিয়াছিল| দেবেন্দ্রবিজয়ের আদেশমত সে কখন কোন সন্দেহজনক গাড়ীর পশ্চাতে ছুটিত, প্রয়োজনীয় খবরাখবর লইয়া আসিত, এইরূপ আরও অনেক কাজ শ্রীশ এমন আশর্য্যরূপে, অতি সত্বরে এবং অতি সহজে সুসম্পন্ন করিত যে, অনেক সময়ে দেবেন্দ্রবিজয়কেও বিস্ময়াপন্ন করিয়া তুলিত| দেবেন্দ্রবিজয় বুঝিতে পারিয়াছিলেন, কালে শ্রীশ একজন পাকা, নামজাদা গোয়েন্দা হইয়া দাঁড়াইবে| শ্রীশ যাহাতে কিছু লেখাপড়া শিখিতে পারে, তিনি এমন বন্দোবস্ত করিয়াও দিয়াছিলেন| পাছে শ্রীশ, বাবু বনিয়া যায় মনে করিয়া, কখনও তিনি তাহাকে ভাল কাপড়. জামা কি জুতা কিছুই পরিতে দিতেন না-সেদিকে তাঁহার বিশেষ দৃষ্টি ছিল| সকল সময়েই শ্রীশকে একখানি মোটা, খাটো কাপড় পরিয়া থাকিতে দেখা যাইত; অধিকন্তু একখানি ছোট লাল গাত্রমার্জ্জনী তাহার স্কন্ধে সতত শোভা পাইত| দেবেন্দ্রবিজয় মনে করিয়াছিলেন, শ্রীশের এখনকার মনের ভাব ঠিক রাখিতে পারিলে, কালে সে নিশ্চয়ই উন্নতি করিতে পারিবে|
অতি দ্রুতপদে সন্ধ্যার পূর্ব্বেই দেবেন্দ্রবিজয় ঘর্ম্মাক্ত কলেবরে বাটী ফিরিলেন| সারাদিন পরিশ্রমের পর তিনি অত্যন্ত ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছিলেন| গৃহিণী রেবতীসুন্দরী তাড়াতাড়ি আসিয়া, পাখা লইয়া ব্যজন করিতে বসিলেন| বলিলেন, “সেই কখন বাহির হইয়াছিলে, আর এতক্ষণের পর সময় হইল?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “কাজ ছিল”|
রে| সারাদিনই কি কাজ?
দে| আবার বাহির হইতে হইবে|
রে| আজ আর নয়, বোধ হয়|
দে| এখনই|
রে| তবে না আসিলেই হইত|
দে| সারাদিন ঘুরিয়া ঘুরিয়া অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছিলাম, তাই ঐ সুন্দর মুখখানি একবার দেখিতে আসিলাম| মনে আবার নূতন বল পাইলাম-যে কাজ বাকী আছে, তাহা এখন অনায়াসে শেষ করিতে পারিব|
রে| পরিহাস কেন?
দে| পরিহাস নয়-খুব সত্যকথা|
রে| খুব মিথ্যাকথা|
দে| না বিশ্বাস করিলে নাচার|
রে| আজ আর কোনখানে গিয়ে কাজ নাই|
দে| কেন?
রে| কেন আবার কি?
দে| না গেলে নয়| কাজ আছে|
রে| তবে আসা কেন?
দে| তা ত পূর্ব্বেই প্রকাশ করিয়াছি| এখন বল দেখি, শ্রীশ ছোঁড়াটা কোথা?
রে| কেন? তাকে আবার কেন?
দে| প্রয়োজন আছে|
রে| নীচের ঘরে বোধ হয় ব’সে আছে|
দেবেন্দ্রবিজয় উচ্চকণ্ঠে ‘শ্রীশ’ বলিয়া একবার হাঁক দিতেই, একেবারে দ্বিতলে-তাঁহার সম্মুখে শ্রীশচন্দ্রের আবির্ভাব|
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “কি খবর ?”
শ্রীশ বলিল, “আপনার একখানা চিঠি এসেছে|”
দে| কখন?
শ্রীশ| এই কতক্ষণ!
দে| কোথায় সে চিঠি?
শ্রীশ| শচীদাদার কাছে|
দে| তাহাকে এখন ডাক| আসিবার সময়ে যেন চিঠীখানা সঙ্গে লইয়া ফিরিয়া আসিল| শচীন্দ্রনাথ দেবেন্দ্রবিজয়ের ভাগিনেয়|

২.০৬. ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ – দ্বিতীয় পত্র

দেবেন্দ্রবিজয় শচীন্দ্রের নিকট হইতে পত্রখানি লইয়া, খুলিয়া ফেলিয়া তখনই পড়িতে আরম্ভ করিলেন|
“দেবেন্দ্রবিজয়!
এখনও তুমি তোমার সঙ্কল্প পরিত্যাগ করিলে না? ক্রমেই তুমি বাড়াবাড়ি আরম্ভ করিলে| তোমার নিতান্তই মতিচ্ছন্ন ঘটিয়াছে, দেখিতেছি|
মাথায় দুই এক ঘা লাঠী না পড়িলে, তুমি কিছুতেই সোজা হইতেছ না| কেন বাপু, আর মিছিমিছি জ্বালাও? তুমি যে আমাকে কখনও ধরিতে পারিবে, ইহা মনেও স্থান দিয়ো না| আমি তোমার মত অনেক গোয়েন্দা দেখিয়াছি, তোমার চোখের সাম্নে হত্যাকারী ঘুরিয়া বেড়াইতেছে-আর তুমি তাহাকে দেখিয়াও দেখিতে পাইতেছ না?
এতদিন গোয়েন্দাগিরি করিলে, সাধারণে সুনাম হইয়াছে; আর আমার কাছে তুমি একেবারে বোকা বনিয়া গেলে? কি লজ্জার কথা! এই তুমি পাকা ডিটেকটিভ্? এই তোমার নাম-ডাক? ছি-ছি-ধিক্-ধিক্? সত্যকথা বলিতে কি আমি তোমার মত নিরেট বোকা গোয়েন্দাকে গ্রাহ্যই করি না| আমি তোমাকে বার বার সাবধান করিয়া দিতেছি, আর বেশীদূর অগ্রসর হইয়ো না-একদিন ভারী বিপদে পড়িবে-এমন বিপদে পড়িবে, একদম্ এ জগৎ ছাড়িয়া যাইতে হইবে প্রিয়তম স্ত্রীর বৈধব্য যদি তোমার একান্ত প্রার্থনীয় হয়-তবে আমার উপদেশে কর্ণপাত করিবে না|
আমি তোমাকে একটা সৎপরামর্শ দিতে চাই-শুনিবে কি? তুমি যদি এই কেস্টা ছাড়িয়া দাও, এরূপে আমাকে আর বিরক্ত না কর-আমি তোমাকে কিছু টাকা দিতে পারি, হাজার টাকা-কি বল, মন উঠিবে? যদি রাজী হও, কাল ঠিক রাত নয়টার সময়ে গোলদীঘীর ভিতরে যেয়ো| আমি সেইখানে তোমার সঙ্গে দেখা করিব| আর যদি তুমি আমাকে ধরিবার জন্য লোক বন্দোবস্ত ক’রে রাখ-আমার দেখা পাইবে না| কেবল দেখা পাইবে না নহে, তাহা হইলে বুঝিবে, তোমার মৃত্যু সন্নিকটে| আমি আর তখন তোমাকে কিছুতেই ক্ষমা করিব না| আমি এখনও তোমাকে সাবধান করিয়া দিতেছি, আমার কাছে গোয়েন্দাগিরি ফলাইতে চেষ্টা করিয়ো না|

Page 3 of 10
Prev1234...10Next
Previous Post

মায়াবিনী – পাঁচকড়ি দে

Next Post

পাঁচকড়ি রচনাবলী – ২য় খণ্ড

Next Post

পাঁচকড়ি রচনাবলী - ২য় খণ্ড

আমাদের তুমুল হৈ-হল্লা - পূর্ণেন্দু পত্রী

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In