প্রথম পরিচ্ছেদ
যোগেশচন্দ্রের কথা
একজন পুরাতন পাকা নামজাদা গোয়েন্দা বলিয়া বৃদ্ধ অক্ষয়কুমারের নামের ডাক যশঃ খুব। আমি এখন তাঁহারই সাহায্য গ্রহণ করা যুক্তিযুক্ত বোধ করিলাম। সেদিনই বৈকালে আমি অক্ষয়বাবুর বাড়ীতে গেলাম।
বৃদ্ধ তখন বাহিরের ঘরে তাঁহার কিঞ্চিদধিক পঞ্চমবর্ষীয় পৌত্রটিকে জানুপরে বসাইয়া ঘোটকারোহণ শিক্ষা দিতেছিলেন। আমাকে দ্বারসমীপাগত দেখিয়া অক্ষয়বাবু তখনকার মত সেই শিক্ষা-কার্য্যটা স্থগিত রাখিলেন। এবং আমাকে উপবেশন করিতে বলিয়া, রামা ভৃত্যকে শীঘ্র এক ছিলিম তামাকের জন্য হুকুম করিলেন। বলা বাহুল্য, অতি সত্বর হুকুম তামিল হইল।
তাহার পর বৃদ্ধ ধূমপানে মনোনিবেশ করিয়া, একটির পর একটি করিয়া ধীরে ধীরে আমার সকল পরিচয় গ্রহণ করিতে লাগিলেন। পরে আমি শশিভূষণ সংক্রান্ত সমুদয় ঘটনা তাঁহাকে বুঝাইয়া বলিলাম। এবং স্বীকার করিলাম, শশিভূষণকে নির্দ্দোষ বলিয়া সপ্রমাণ করিতে পারিলে আমি তাঁহাকে এক হাজার টাকা পুরস্কার দিব।
অক্ষয়বাবু অত্যন্ত মনোযোগের সহিত আমার কথাগুলি শুনিলেন। শুনিয়া অনেকক্ষণ করতললগ্নশীর্ষ হইয়া কি ভাবিতে লাগিলেন। আমাকে কিছুই বলিলেন না, বা কোন কথা জিজ্ঞাসাও করিলেন না।
তাঁহাকে সেইরূপ অত্যন্ত চিন্তিতের ন্যায় নীরবে থাকিতে দেখিয়া শেষে আমি বলিলাম, ” কিছু জিজ্ঞাসা করিবার থাকে বলুন, আমার মনের স্থিরতা নাই – হয়ত ঘটনাটা একটানা বলিয়া যাইতে কোন কথা বলিতে ভুল করিয়া থাকিব; সেইজন্য বোধহয়, আপনি কিছু গোলযোগে পড়িয়াছেন।”
” না, গোলযোগ কিছু ঘটে নাই,” হুকা রাখিয়া, ভাল হইয়া বসিয়া অক্ষয়বাবু বলিলেন, ” আমি বেশ ভালরূপেই বুঝিতে পারিয়াছি। সেজন্য কথা হইতেছে না; তবে কি জানেন, কাজটা বড় সহজ নয়; সহজ না হইলেও যাহাতে সহজ করিয়া আনিতে পারি, সেজন্য চেষ্টা করিব। তার আগে আপনাকে একটি বিষয়ে আমার কাছে স্বীকৃত হইতে হইবে, আর আমার দুইটি প্রশ্নের ঠিক উত্তর করিবেন।”
আমি বলিলাম, ” দুইটি কেন – আপনার যাহা কিছু জিজ্ঞাসা করিবার থাকে, জিজ্ঞাসা করুন, আমি এখনই উত্তর দিব, তবে কোন্ বিষয়ে আমাকে স্বীকৃত হইতে হইবে তাহা পূর্ব্বে না বলিলে, আমি কি করিয়া বুঝিতে পারিব যে, আমার দ্বারা তাহা সম্ভবপর কি না। আমার দ্বারা যদি সে কাজ হইতে পারে, এমন আপনি বোধ করেন, তাহা হইলে তাহাতে আমার অন্যমত নাই জানিবেন।”
” সে কথা মন্দ নয়,” বলিয়া অক্ষয়বাবু একটু ইতস্ততঃ করিলেন। তাহার পর বলিলেন, ” আমি যে বিষয়ে আপনাকে স্বীকৃত হইতে বলিতেছি, তাহা এমন বিশেষ কিছু নহে, আপনি মনে করিলেই তাহা পারেন; আজ-কালকার যে বাজার পড়িয়াছে, তাহাতে সেটা যে নিতান্ত অনাবশ্যক, তাহা নহে। আপনি যে হাজার টাকা পুরস্কারস্বরূপ দিতে চাহিতেছেন, সেইটে এমন একটা লেখাপড়া করিয়া যেকোন একজন ভদ্রলোকের নিকটে আপনাকে গচ্ছিত রাখিতে হইবে যে, পরে যদি আমি কৃতকার্য্য হইতে পারি, সে টাকা আমিই তাহার নিকট হইতে গ্রহণ করিব। আপনার কোন দাবী-দাওয়া থাকিবে না।”
আমি। আমি সম্মত আছি, ইহাতে আমার অমত কিছুই নাই। এখন আপনার দুইটি প্রশ্ন কি বলুন।
তিনি। প্রথম প্রশ্নটা হচ্ছে এই – ঠিক কথা বলিবেন, গোপন করিলে কোন কাজ হইবে না – শশিভূষণ যে নির্দ্দোষ, একথা কি আপনি বিশ্বাস করেন?
আমি। নিশ্চয়ই। আমি তার দুশ্চরিত্রতার জন্য তাহাকে অন্তরের সহিত ঘৃণা করে থাকি। যদি তাহাকে এই হত্যাপরাধে দোষী বলিয়া তিলমাত্র আমার মনে সন্দেহ থাকিত, তাহা হইলে তাহার মুক্তির জন্য একটি অঙ্গুলি সঞ্চালন করা দূরে থাক্, তখনই আমার হাত কাটিয়া ফেলিয়া দিতাম।
অক্ষয়। বটে। তারপর দ্বিতীয় প্রশ্ন এই – আপনি কি কেবল শশিভূষণ যাহাতে নিরপরাধ বলিয়া সপ্রমাণ হয়, তাহাই চাহেন; না যাহাতে তাহার স্ত্রীর হত্যাকারীও সেই সঙ্গে ধরা পড়ে, তাহাও আমাকে করিতে হইবে?
আমি। ক্ষমা করিবেন, আমি আপনার এ প্রশ্নের ভাবার্থ কিছু বুঝিতে পারিলাম না।
অক্ষয়। ইহাতে না বুঝিতে পারিবার কিছুই নাই; একটু ভাবিয়া দেখিলেই বেশ বুঝিতে পারিবেন। এই আমিই আপনাকে বুঝাইয়া বলিতেছি; কথাটা কি জানেন, প্রকৃত হত্যাকারীকে ধৃত করা বড় সহজ কাজ নহে। এবং আমি মনে করিলেই সে আসিয়া ধরা দিবে না; বড় শক্ত কাজ – কোন নিরপরাধ লোকের স্বপক্ষে প্রমাণ সংগ্রহ করা সে তুলনায় অনেক সহজ।
তাঁহার কথায় আমার একটু হাসি আসিল। আমি বলিলাম, ” বুঝিয়াছি, আমি যে হাজার টাকা দিতে প্রতিশ্রুত হইয়াছি, তাহা আপনি শশিভূষণের নিরপরাধ সপ্রমাণ করিবারই পারিশ্রমিকের যোগ্য বিবেচনা করেন; কিন্তু আমার যেরূপ অবস্থা, তাহাতে উহার বেশী আর উঠিতে পারিব না। তবে আমি এইমাত্র বলিতে পারি, হত্যাকারীকেই ধৃত করুন, বা শশিভূষণকেই উদ্ধার করুন, আপনি ঐ হাজার টাকা পাইবেন।”
অক্ষয়বাবু বলিলেন, ” তা বেশ, পরে এইসব নিয়ে একটা গোলযোগের সৃষ্টি করিবার অপেক্ষা আগে হইতে একটা ঠিকঠাক্ বন্দোবস্ত করিয়া রাখা ভাল। যাক্, আপনাকে আমার আর কিছু জিজ্ঞাসা করিবার নাই।”
সেইদিন এই পর্য্যন্ত।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
ইহার চারদিন পরে একদিন অক্ষয়কুমারবাবু নিজেই আমার বাড়ীতে আসিয়া উপস্থিত। সেদিন যেন তাঁহাকে কেমন একটু রুষ্টভাবযুক্ত দেখিলাম। আমি কোন কথা বলিবার পূর্ব্বেই তিনি বলিলেন, ” যা মনে করা যায়, তা ঠিক হয় না – কে জানে মহাশয়, টাকার লোভ দেখাইয়া আপনি এমন একটা ঝঞ্ঝাটে কাজ এই বুড়োটারই ঘাড়ে চাপাইবেন।”
আমি বলিলাম, ” কেন, কি হয়েছে? আপনাকে আজ যে বড় বিরক্ত দেখিতেছি।”
তিনি বলিলেন, ” আর মহাশয়, বিরক্ত, গায়ের রক্ত শুকাইলেই বিরক্ত হইতে হয়।”
আমি বলিলাম, ” এই তিন-চারদিনের মধ্যে আপনি কি কিছুই ঠিক করিয়া উঠিতে পারেন নাই?”
অক্ষয়বাবু বলিলেন, ” করিব কি আর মাথামুণ্ডু ! আমার ত খুব মনে লাগে, শশিভূষণ ঐ কাজ করে নাই; এটা খুবই সম্ভব। তাহা হইলেও শশিভূষণ কিন্তু ইহার ভিতরে আছে। তাহারই পরামর্শে এই হত্যাকাণ্ড হইয়াছে, এমন কি সেই সময়ে শশিভূষণ উপস্থিতও ছিল।”
” আমি আপনার কথা ভাল বুঝিতে পারিলাম না। সম্ভব, আপনি ইহার এমন কোন নির্দ্দিষ্ট প্রমাণ পাইয়া থাকিবেন।”
” প্রমাণ আর কি, একজন ত স্পষ্ট স্বীকার করিতেছে, শশিভূষণ সেইদিন রাত্রে যখন তাহার নিকটে বিদায় লইয়া আসে, তখন সে তাহার স্ত্রীকে হত্যা করিবে বলিয়া তাহার কাছে স্বীকার করিয়াছিল। এই কথা এখন আবার সে পুলিসের কানেও দিতে চায়।”
আমি চমকিয়া উঠিলাম, বলিলাম, ” কে সে?”
অক্ষয়। সেই মোক্ষদা, এখন শশিভূষণ যাহার ঘাড়ে এই খুনের অপরাধটা চাপাইবার চেষ্টা করিতেছে। বোধহয়, তুমি এখনও শোন নাই, সেই হত্যারাত্রে মোক্ষদাও শশিভূষণের বাড়ী পর্য্যন্ত তাঁর পিছনে পিছনে এসেছিল।
আমি। কি আশ্চর্য্য ! আপনি সেই মোক্ষদার কথা বিশ্বাস করিলেন?”
অক্ষয়। বিশ্বাস করার অভ্যাসটা আমার আদৌ নাই। সেটা পুলিস-কর্ম্মচারীদের বড় একটা আসেও না। তবে কি জানেন, সে যদি এখন সেই সব কথা প্রকাশ করিয়া দেয়, তাহা হইলে শশিভূষণের দোষটা আরও ভারী হইয়া উঠিবে।
শশিভূষণকে বাঁচাইতে হইলে মোক্ষদার মুখটা আগে বন্ধ করা চাই।
আমি। তা কেমন করিয়া হইবে? এইসব পুলিসের হাঙ্গামে জড়াইবার ভয়ে যদি না সে নিজেই চুপ করে, তবে আমার কোন উপায়ে তাহার মুখ বন্ধ করিব?”
অক্ষয়। ” টাকা – টাকা – টাকাতে সব হয়। নিশ্চয় কাজ উদ্ধার হইবে – এইসব নিয়ে দিনরাত মাথা ঘামিয়ে আমি আমার সমুদয় চুল পাকাইয়া ফেলিলাম। আপনি এক কাজ করুন; আপনি নিজে গিয়ে একবার তার সঙ্গে দেখা করুন; কি করিলে এখন ভাল হয়, তখন আপনি সেটা নিজেই ঠিক করিতে পারিবেন।”
আমি। আমি? মোক্ষদার সঙ্গে !
অক্ষয়। তাহা ভিন্ন আর উপায় কি? তাহার নিজের মুখে এবং আপনার নিজের কানে শুনিলে হয়ত আপনার মনের সন্দেহটা অনেকটা কাটিয়া যাইতে পারে। বলিতে কি, আমার মনে আপাততঃ আর কোন সন্দেহ নাই – অনেকটা কৃতনিশ্চয় হইতে পারিয়াছি; কিন্তু এ সময়ে যদি আপনি তাহার সহিত দেখা না করেন কাজটা বড় ভাল হইবে না। এমন সময়ে আপনি যে ইহাতে আপত্তি করিবেন, তা আমি আগে একবারও মনে ভাবি নাই।
আমি সন্দেহোদ্বেলিত হৃদয়ে, জড়িতকণ্ঠে বলিলাম, ” না – না আমার আপত্তি কি – মোক্ষদার সহিত কোথায় দেখা করিতে হইবে? তাহার বাড়ীতে? সে কি আসিবে না?”
অক্ষয়কুমারবাবু ক্ষণেক একমনে অবনতমস্তকে কি চিন্তা করিলেন। তাহার পর বলিলেন, ” তাতে বোধ-হয়, সে রাজী হইবে না। আচ্ছা, আমি অর একটা উপায় দেখিব – আপনি এক কাজ করিবেন; আমি বালিগঞ্জে একখানি নূতন বাগান কিনিয়াছি, সেই বাগানে কাল সন্ধ্যার কিছু পূর্ব্বে একবার যাইবেন; সেইখানে আমি মোক্ষদার সহিত আপনার দেখা করাইয়া দিব। কেমন, ইহাতে আপনি সম্মত আছেন? সেখানকার অনেকেই সেই বাগান চেনে; আমার নাম করিয়া জিজ্ঞাসা করিলে যে কেহ আপনাকে বাগানটা দেখাইয়া দিতে পারিবে।”
আমি বলিলাম, ” মোক্ষদা কি আপনার সে নূতন বাগানে যাইবে?”
অক্ষয়বাবু বলিলেন, ” এখন আমি কিরূপে সে কথা ঠিক করিয়া বলিব? তবে যেমন করিয়া হউক, যাহাতে মোক্ষদাকে সেখানে লইয়া যাইতে পারি, সেজন্য বিশেষ চেষ্টা করিব। এ পর্য্যন্ত আমি কোন বিষয়ে বিশেষ চেষ্টা করিয়া কখনও অকৃতকার্য্য হই নাই।”
আমি অক্ষয়কুমারবাবুর নূতন বাগানে প্রাগুক্ত নির্দ্দিষ্ট সময়ে যাইতে সম্মত হইলাম।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
পরদিন অপরাহ্ণে আমি বালিগঞ্জে গিয়া, অক্ষয়বাবুর নূতন বাগান অনুসন্ধান করিয়া বাহির করিলাম। তখন সূর্য্যাস্তের স্বর্ণচ্ছায়া মিলাইয়া যাইতে আর বড় বিলম্ব ছিল না। পশ্চিম আকাশে দূরব্যাপী জলদপর্ব্বতান্তবর্ত্তিনী কনককিরণচ্ছটা এক কোন অপূর্ব্বদৃষ্টা মহিয়সী দেবীপ্রতিমার মত দাঁড়াইয়া আছে। এবং তাহার লাবণ্যোজ্জ্বলদেহস্খলিত সোনালী অঞ্চল যেন প্রতিক্ষণে কম্পিত ও বায়ুচঞ্চল হইয়া উঠিতেছে। কি এক অপ্রত্যাশিতপূর্ব্ব বিপুল পুলক-প্লাবনে সমগ্র বিশ্ব ভরিয়া গিয়াছে। এবং বিশ্ব-পৃথিবীর অনন্ত জনপ্রাণী সেই বিরাট দৃশ্যের সম্মুখে স্তম্ভিত হইয়া আছে। আর আমার হৃদ্পিণ্ড ভেদ করিয়া একটা মর্ম্মাহত ব্যাকুল কাতরতা পিঞ্জরাবদ্ধ পক্ষীর ন্যায় বক্ষঃপঞ্জরে দুর্দ্দান্তবেগে প্রতিনিয়ত আঘাত করিতেছে। আজ মাতৃহৃদয়া শান্তিদেবী যেন চরাচর সমুদয় তাঁহার নিভৃত ক্রোড়ে টানিয়া লইয়াছে, আর সন্তাপদগ্ধ আমি সেই মাতৃস্বর্গ হইতে পৃথিবীর কোন অজানা দূরতম প্রদেশে একাকী স্খলিত হইয়া পড়িয়াছি।
আমি উদ্যানে প্রবিষ্ট হইয়াই দেখিলাম, অক্ষয়কুমারবাবু একটি ফ্ল্যালেনের চায়না কোট্ গায়ে দিয়া উদ্যানে পদচারণা করিতেছেন। তাঁহার ভাবে তাঁহাকে বিশেষ কিছু চিন্তিত বোধ হইল। আমি তাঁহার সমীপবর্ত্তী হইলেই তিনি আমার দিকে একটা চকিত দৃষ্টিক্ষেপ করিয়া বলিলেন, ” এই যে আপনি আসিয়াছেন, আমি আপনাকে ডাকিবার জন্য এইমাত্র লোক পাঠাইব, মনে করিতেছিলাম।”
আমি। আমি কি বড় বিলম্ব করিয়াছি?
অক্ষয়। না, আপনি ঠিক সময়েই আসিয়াছেন।
আমি। মোক্ষদার কি হইল?
অক্ষয়। সে অনেকক্ষণ আসিয়াছে।
এই বলিয়া অক্ষয়বাবু একটি দ্বিতল বাড়ীর দিকে অঙ্গুলী নির্দ্দেশে আমাকে বুঝাইয়া দিলেন যে, তন্মধ্যে তখন মোক্ষদা অবস্থান করিত্যেছে।
বাড়ীখানি উদ্যানের মধ্যে, আমরা যেখানে দাঁড়াইয়া কথোপকথন করিতেছিলাম, তাহার অদূরে। অক্ষয়বাবুর নূতন উদ্যানের মধ্যে সেই বাড়ীখানির অবস্থা নিতান্ত জীর্ণ এবং অত্যন্ত পুরাতন দেখিলাম। শরাহত ক্ষতবিক্ষতাঙ্গ অভিমন্যুর ন্যায়, সেই ইষ্টকদন্তবিকশিত, মান্ধাতার সমসাময়িক অতি জীর্ণ বাড়ীখানাকে অগণ্য, প্রোথিত বংশরথিবৃন্দপরিবেষ্টিত, এবং তাহার চতুর্দ্দিকে চুন সুর্কী ও বালির প্রচুর ছড়াছড়ি দেখিয়া বুঝিলাম, সেই বহুদিনের পুরাতনকে এখন রাজমিস্ত্রীর সাহায্যে নবীকৃত করা হইতেছে। অক্ষয়বাবু আমাকে সেই বাড়ীর দিকে লইয়া চলিলেন।
উদ্যানস্থ অট্টালিকা যেরূপভাবে নির্ম্মিত হইয়া থাকে, ইহাও সেই ধরনের। সম্মুখে একটি বৃহৎ হল্ঘর এবং তাহার দুই পার্শ্বে কক্ষশ্রেণী। সমতল পৃথিবী হইতে গৃহতল প্রায় পাঁচ হাত উচ্চে। সেজন্য অলিন্দের দুইটি স্তম্ভের মধ্যবর্ত্তী হইয়া একটি সোপানশ্রেণী আছে। দেখিলাম, সেই নবসংস্কৃত সোপানাবলী সবে মাত্র বিলাতীমাটি দ্বারা আবৃত এবং মার্জ্জিত হইয়াছে। অক্ষয়বাবু পায়ের জুতা হাতে করিয়া উপরে উঠিতে লাগিলেন, আমিও তাঁহার দেখাদেখি জুতা খুলিয়া অতি সন্তর্পণে উঠিলাম; কিন্তু তাঁহার মত আমি ততটা সাবধান হইতে না পারায়, পায়ের চাপ লাগিয়া বিলাতীমাটি স্থানে স্থানে বসিয়া গেল। যদিও অক্ষয়বাবু তাহা দেখিয়াও দেখিলেন না; কিন্তু আমি মনে মনে কিছু অপ্রস্তুত হইলাম।