দশম পরিচ্ছেদ
আর কি বলিব? আর কি বলিবার আছে? হে সর্ব্বজ্ঞ , সর্ব্ব-শক্তিমান ! এ দুর্ভাগ্যের হৃদয়ের কথা তুমি সব জান , প্রভো। যাহাকে আমি প্রাণের অধিক ভালবাসিতাম , তাহাকে একজন নৃশংসের হাতে এইরূপ উৎপীড়িত এবং অত্যাচারিত হইতে দেখিয়া আমার হৃদয়ে কি বিষের দাহন আরম্ভ হইয়াছিল , তুমি সব জান , প্রভো ! সেদিন যদি আমার সেই ভুল না হইত , যদি আমি ঠিক শশিভূষণকে হত্যা করিতে পারিতাম , তাহা হইলে বোধহয় , সুখে মরিতে পারিতাম। লীলাকে একজন নররাক্ষসের কবল হইতে উদ্ধার করিয়া মনে করিতে পারিতাম , আমার মৃত্যুতে একটা কাজ হইল। হায় ! মানুষ যা মনে করে , তাহার কিছুই হয় না। সেই সর্ব্বশক্তিমানের অঙ্গুলি হেলনে সমগ্র বিশ্ব সমভাবে শাসিত হইতেছে , সেখানে মানুষ মানুষের কি বিচার করিবে? তাঁহার এমনই রচনা কৌশল – পাপী নিজের হাতেই স্বীকৃত পাপের দণ্ডবিধান করিয়া থাকে।
দুগ্ধপোষ্য অপরিস্ফুটবাক্ শিশু ব্যাঘ্র-কবলিত হইয়া যেমন সে প্রথমে নিজের বিপদ বুঝিতে পারে না , বরং যতক্ষণ ব্যাঘ্র কর্ত্তৃক কোনরূপে পীড়িত না হয় , ততক্ষণ তাহার উল্লম্ফন , বীষণোজ্জ্বল চক্ষু , এবং দীর্ঘ লাঙ্গুলান্দোলনে বরং সেই শিশুর বিকলদন্ত মুখে , নধর অধরপুট দিয়া , কল্লোলিত শুভ্রহাস্যস্রোত প্রবাহিত হইতে থাকে। হায় ! স্বপ্নাবিষ্ট আমারও তেমনি দুঃখদারিদ্র্য ভীষণ , শোকতাপপূর্ণ , বিপদসঙ্কুল কঠিন সংসারের বক্ষঃশায়িত হইয়া কোন্ অজ্ঞাতমোহে অবিশ্রাম হাস্যতরঙ্গে উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিতে থাকি। তাহার পর যখন কোন অপ্রতিহত দুর্দ্দান্ত আঘাতে স্বপ্ন ভাঙিয়া যায় , তখন নিরবলম্বন এবং আশা-ভরসা-শূন্য হইয়া , হৃদয় শতধা বিদীর্ণ করিয়া উচ্চকণ্ঠে কাঁদিয়া উঠি।
( সমাপ্ত )