মহম্মদ। তার পর।
আবদুল। সে লোকটা কোন গতিকে এই ব্যাপার দেখতে পায়। আমরা জহরতের সিন্দুক নিয়ে একেবারে সেইরাত্রেই ফতেপুর সিকরিতে এসে একটা ভাঙ্গা বড় বাড়ীর মধ্যে পুতে ফেলি। ফতেপুর সিকরিতে ত জানেন,কত বাড়ী ঘর দোর আছে। জায়গাটা পাছে মনে না থাকে বলে, সেই যায়গার চারখানা নক্সা করে আমরা চারজনের কাছে রাখি। চারজনের সাক্ষর সেই চারখানা কাগবেই ছিল। আমরা জানতে পারি নাই যে, সেই লোকটা আমারে দেখেছিল। আমাদের সঙ্গ নিয়েছিল। সে অন্ধকারে আমাদের সঙ্গে সনে এসে আমাদের বাড়ী দেখে যায়। পাছে, আমরা তাকে দেখতে পাই বলে, ভয়ে যেখানে আমরা জহরতের সিন্দুক পুতে রাখি তা দেখতে পায় নাই।
মহম্মদ। তার পর?
আবদুল। সেই বেটা তার পরদিন পুলিশে সব কথা বলে দেয়। দু দিন যেতে না-যেতে পুলিশ এসে আমাদের গ্রেপ্তার করে। আমরা হাজতে যাই। বিচারের সময়ে আমরা সমস্তই অস্বীকার করি। মোকদ্দমায় জহরতের কথাও উঠে,—কিন্তু সেই লোকের সঙ্গে যে অহত ছিল, তা কেউ বল্তে পারে না। এমন কি তার সঙ্গের লোকলও কিছু জাত না।
মহম্মদ। হাঁ, জানি বিচারে তোমাদের চার জনের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়েছিল।
আবদুল। হাঁ,–আমরা চারজনে দ্বীপান্তরে যাই। কোন গতিকে মুখের মধ্যে করে নক্সা চারখানা আমরা চারজনে সঙ্গে নিই। অভ্যাস কলে গলার ভেতরেও অনেক জিনিষ রাখা যায়, তা ত জানেন।
মদ। খুব জানি।
আবদুল। আন্দামানে তিন-চার বৎসর থাবার পর আগ্রার ডাক্তার বাবু সেখানে যান। তিনি আমাদের জহরতের কথা সত্য কি না জিজ্ঞাসা করেন, আমাদের আর দেশে যাবার আশা নাই দেখে, আমরা সব কথা তাকে বলি। যদি তিনি টাকা খরচ করে বা যেমন করে হয় আমাদের খালাস করতে পারেন, তা হলে যেখানে জহরত আছে, তা বলে দিব, আর তাকে একটা ভাগও দিব স্বীকার করি। তিনি সেদিন আর কিছু বলেন না। কিন্তু তার পর তার বিশেষ বন্ধু কমিসরিয়েট বাবুকে নিয়ে এলেন। আমরা ছয়জনে অনেক পরামর্শ করলেম। তারা ভগবানের কাছে শপথ কলেন যে, জহরত বেচে টাকা নিয়ে যেমন করে হয় তারা আমাদের চারজনকে খালাস কবেন। তার পর যে টাকা থাকবে, তা আমরা ছয় জনে ভাগ করে কে। তারা দুজনই ছুটির দরখাস্ত কলেন। কিন্তু ডাক্তার বাবু সে সময়ে ছুটি পেলেন না। কমিসরিয়েট বাবু ছুটি পেলেন। আমরা একখানা নক্সা তাকে দিলাম। তিনি দেশে রওনা হলেন।
গোবিন্দ। তার পর। আবদুল। তার পর তার আর কোন খবর পেলাম না। তিনি ক্তার বাবুকেও কোন চিঠী লিখলেন না। ডাক্তার বাবু খবর পেলেন যে, তিনি দেশে ফিরেই বড় ব্যারামে পড়েছেন। আবার ছুটি নিয়েছেন। তখন ডাক্তার বাবু বলেন, বোধ হয়, তিনি ব্যারামে পড়ে জহরতের সন্ধান করুতে পারেন নাই। আমি এখন ছুটি পেয়েছি, আমি গিয়ে জহরতের তল্লাস করব। তিনি আমাদের খালাস করবার জন্য শপথ করায়, আমরা আর একখানা নক্সা তাকে দিলাম। তিনি দেশে গেলেন। কিন্তু মাসের পর মাস কেটে গেল, তবু তারও কোন সংবাদ পেলাম না। শুলাম, তিনি নাকি মরে গেছেন; কিন্তু আমাদের মনে বিশ্বাস হল যে, তারা আমাদের ফাকী দিয়েছেন। আমাদের খালাসের চেষ্টা না করে দুজনে জহরত বা করে নিয়েছেন। আমরা চারজনে শপথ করলেম, যদি কখনও দেশে যেতে পারি, এর প্রতিফল দিবই দিব।
অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ।
আবদুল বলিল, এই রকমে আরও অনেক দিন কেটে গেল। এমন সময়ে এই আন্দামানী টাঙ্গাকে আমি বাঁচাই। আমি একটা ঔষধ জানতেম, টাঙ্গা জঙ্গলে পড়ে মৰূছে দেখে, আমি তাকে ঔষধ দিয়ে বাচাই। তখন তার সঙ্গে আন্দামান থেকে কোন গতিকে পালাবার পরামর্শ করতে থাকি। সে আমার জন্য প্রাণ দিতেও স্বীকার করে। তার একটা ভোঙায় চড়ে কিছু খাবার আর জল নিয়ে আমরা দুজনে আন্দামান হতে পালাই। অনেক কষ্ট শেষে দেশে পৌঁছাই, সে সব বলতে গেলে অনেক কথা।
গোবিন্দ। সে সকল কথা আমাদের এখন শশাবার দরকার নাই। এখন দেশে এসে কি করলে তাই বল।
আবদুল। দেশে এসে প্রথমেই ফতেপুর শিরিতে গেলাম,–কিন্তু দেখলাম জহরত নাই। কে আগেই নিয়ে গেছে। কার নিয়ে গেছে তা বুঝতে দেরী হল না। যেমন করে হয়, যে দুজনে আমাদের ফাকী দিয়েছে, তাদের রক্ত দেখতে হবে। সন্ধান নিয়ে জানলেম, ডাক্তার নিরুদ্দেশ হয়েছে,–তার কোন খবর নাই।
গোবিন্দ। তার পর?
আবদুল। তার পর কাশী গিয়ে কমিসরেট বাবুর সন্ধান নিলেম। গুনলেম, তিনি আগ্রায়। যেদিন তাঁর সন্ধানে আমি তার জানলায় উঁকি মারি, সেইদিনই তার মৃত্যু হয়। মুরদ পোড়াতে নিয়ে গেলে, আমি জহরতের সন্ধানে তার ঘরের ভিতর যাই। কোন সন্ধান না পেয়ে চারি সাক্ষর লিখে চলে আসি।
মহম্মদ। তার পর?
আবদুল। হাঁ,–তার পর তাঁর ছেলেদের ওপর নজর রাখি। জাতে, পাই তারাও তাদের বাপ কোথায় জহরত লুকিয়ে রেখে গেছে জানে না। নানা জায়গায় খুঁজছে। একদিন জানতে পারলেম, তারা জহরতের সিন্দুক খুঁজে পেয়েছে। দুই ভাইয়ে তাই নিয়ে ঝগড়া করে। এক ভাই আর এক জায়গায় চলে গেছে। যে ঘরে সিন্দুক আছে, তাও সন্ধান নিয়ে জানতে পারি। তখন সেই জহরতের সিন্দুক যে আমাদের যথার্থ হকের ধন তাই ঘটাবার চেষ্টায় থাকি।
গোবিন্দ। তার পর?
আবদুল। সব খবর নিয়ে টাঙ্গাকে ছাদ দিয়ে পাঠিয়ে দিই। সে জলী,বাঁদরের মত সবধানে উঠতে পারে, যেতে পারে। তাতে ছোট-বেঁটে বীর। আহা, সে আমাকে বড় ভালবাসত। আপ নারা তাকে গুলি করে অন্যায় করেছেন।