Many thanks, আসুন আসুন! everything O. K.? একটু গলায় বলে ওঠে।
Yes! everything O. K. –দারোগাবাবু জবাব দিলেন।
আপনারা তা হলে একটু অপেক্ষা করুন। আমরা চট্ করে খাওয়া দাওয়া সেরে ready হয়ে নিচ্ছি। উঠুন শংকরবাবু, রাত হয়ে গেছে, চলুন খেতে যাওয়া যাক। চলুন।
সুব্রত ও শংকর দুজনে উঠে পড়ল।
রাত্রি গভীর হয়েছে। সুব্রত, শংকর, দারোগাবাবু তিনজনে নিঃশব্দে কালো কয়লার ওঁড়ো ও কঁকার ঢালা অপ্ৰশস্ত রাস্তাটা, যেটা বরাবর অফিসারদের কোয়ার্টারের দিকে চলে গেছে সেই রাস্তা ধরে প্ৰেতের মত এগিয়ে চলে। সকলেরই পায়ে রবার সু। কাঁকর কয়লা বিছান রাস্তা দিয়ে চললেও কোন শব্দ পাওয়া যায় না।
সকলে এসে বিমলবাবুর কোয়ার্টারের সামনে দাঁড়াল। এর মধ্যেই চারিদিকে কুয়াশা জমেছে। আশেপাশের সব কিছু আবছা অস্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিমলবাবুর কোয়ার্টারটা কুয়াশার ওড়না জড়িয়ে যেন আবছা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আগে সুব্রত ও তার পিছনে দারোগাবাবু ও শংকর পা টিপে টিপে বিড়ালের মত সন্তৰ্পণে বারান্দা অতিক্রম করে ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।–
ওকি! সুব্রত সবিস্ময়ে দেখল, দরজার দুপাশের দুটো ভেজান কবাটের ফাঁক দিয়ে ইষৎ ম্ৰিয়মান একটা আলোকরশ্মি যেন অতি সন্তৰ্পণে বাইরে উঁকি দিচ্ছে ভয়ে ভয়ে।
সুব্রত একবার চেষ্টা করলে দরজার ফাঁক দিয়ে কিছু দেখা যায়। কিনা। —কিন্তু কিছুই দেখা যায় না।
আঙ্গুলের চাপ দিতেই ভেজান দরজা আরো ফাঁক হয়ে গেল।
ঘরের এক কোণে একটা হ্যারিকেন জ্বলছে
প্রচুর ধূম উদগিরণ করে হ্যারিকেনের চিমনিটা কালো হয়ে ওঠায় আলো অত্যন্ত মলিন বলে মনে হয়।
প্রথমটায় সেই মলিন আলোয় সুব্রত কিছুই দেখতে পেল না; কিন্তু পরক্ষণেই ভাল করে দৃষ্টিপাত করতেই সুব্রত ভয়ংকর রকম চমকে উঠলো।
ওকি! সেই শালবনে দেখা পাগলটা না?
কে একজন উপুড় হয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। পাগলাটা সেই ভূপতিত দেহের ওপরে ঝুঁকে অত্যন্ত নীচু হয়ে কী যেন করছে।
ডান হাতে পিস্তলটা বাগিয়ে, বাঁ হাতে টর্চটা ধরে…বোতাম টিপাবার সঙ্গে সঙ্গেই সুব্রত আচমকা দরজা ঠেলে ঘরের মধ্যে লাফিয়ে পড়ল।
টর্চের তীব্র আলোর কাপ্টা মুখের ওপরে পড়তেই পাগল্পটা চমকে লাফিয়ে উঠলো।
কিন্তু একি। পাগলটার হাতে একটা উদ্যত পিস্তল।
সুব্রত থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
কে তুই? বল শীগগির কে তুই?
সহসা একটা উচ্চ রোলের হাসির প্রচণ্ড উচ্ছাসে সমগ্র ঘরখানি উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল।
পাগলাটা হাসছে।
হঠাৎ পাগলটা হাসি থামিয়ে স্বাভাবিক গলায় ডাকল, সুব্রত।
সুব্রত চমকে উঠল।
কে?–
ভয় নেই। আমি কিরিটী।
অ্যাঁ। কিরীটী তুই। একি বিস্ময়।
সঙ্গে সঙ্গে শংকরও বলে উঠল, কিরীটী তুই।
হ্যাঁ। কেন, এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে, আমি শ্ৰীহীন কিরীটি রায়।
কিন্তু ব্যাপার কী? মাটিতে পড়ে লোকটা কে?
সুব্রত কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল।
বিমলবাবুর মৃতদেহ।
কার? কার মৃতদেহ? অস্ফুটিকণ্ঠে সুব্রত চীৎকার করে উঠল।
কোলিয়ারীর সরকার বিমলবাবু। যাকে গ্রেপ্তার করবার জন্য তোমাদের আজকের রাত্রের এই দুঃসাহসিক অভিযান বন্ধু। চল বন্ধু। এবার বাসায় চল। … দারোগাবাবু আপনার সঙ্গে যে কনেস্টবল দুটি এনেছেন, এই মৃতদেহ তাদের জিম্মায় আজকের রাতের মত রেখে চলুন শংকরের বাংলোয় ফেরা যাক। চল। চল সুব্রত। … হাঁ করে দাঁড়িয়ে দেখছিস কী? … গাম ইলাস্টিক দিয়ে এক মুখ দাঁড়ি করে চুলকে চুলকে প্ৰাণ আমার ওষ্ঠাগত হবার জোগাড় হলো।
এর মধ্যে আবার কিন্তু কী হে ছোঁকরা। … চল। চল। রাত কত হলো তার খবর রেখেছিস? বাড়ীতে চল, ধীরে সুস্থে বলব।
তা হলে বিমলবাবু…
সুব্রতর কথা শেষ হলো না। কিরিটী বলে উঠল, আজ্ঞে না You are mistaken, বিমলবাবু খুনী নন।
তবে?
তবে আবার কি? অন্য লোক খুনী।
কে খুনী?
কাল সকালে বলব। এখন চল বাংলোয় ফেরা যাক।
কিন্তু আমার যে কেমন সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে কিরীটী? সুব্রত বললে।
অর্থাৎ তুমি একটি হস্তীমুখ। শোন, কানে কানে একটা কথা বলি।
সুব্রতর কানের কাছে মুখ নিয়ে চাপা স্বরে কিরীটী কি যেন ফিস ফিস করে বলতেই সুব্রত লাফিয়ে উঠলো, অ্যাঁ বলিস কি-আশ্চর্য! আশ্চর্য!!…
কিন্তু তার একটি ডান ও একটি বা হাত ছিল যন্ত্র স্বরূপ। কিরীটী বললে, এই হতভাগ্য বিমলবাবু হচ্ছে বঁ-হাত।
সে রাত্রে বাংলোয় ফিরে গরম জল করিয়ে কিরিটী ছদ্মবেশ ছেড়ে স্থির হতে হতে প্ৰায় আড়াইটা বেজে গেল।
১৫. রহস্যের মীমাংসা
ঝুমনকে ডেকে শংকর কিছু লুচি ও তরকারী করবার জন্য আদেশ দিতেই, কিরিটী বাধা দিলে, আরে ক্ষেপেছিস শংকর, এই রাত্রে মিথ্যে কেন ও বেচারীকে কষ্ট দিবি? তার চাইতে বল এক কাপ গরম গরম চা বানিয়ে দিক। আর তার সঙ্গে যদি কেক বা বিস্কিট কিছু থাকে তবে তাই দুচারটে দে, তাতেই হয়ে যাবে।
ঘরে কেক ছিল। কুমন একটা প্লেটে করে কয়েকটা plum cake ও এক কাপ চা এনে কিরীটির সামনে টিপিয়ে নামিয়ে রাখতে রাখতে বললে, দিই না সাহেব কয়েকটা লুচি ভেজে, কতক্ষণ লাগবে?
কিরীটী হাসতে হাসতে বললে, ওরে না না। তুই শুতে যা। এতেই আমার হবে, কাল যদি এখানে থাকি তো বেশ করে পেট ভরে খাওয়াস।
ঝুমন চলে গেল।
কিরীটী জামার পকেট থেকে চুরোট বের করে তাতে অগ্নি সংযোগ করে মৃদু টান দিতে লাগল।…
কিছুক্ষণ ধূমপান করবার পর প্রায়-ঠাণ্ডা চায়ের কাপটা তুলে নিতে নিতে বললে। Cold tea with a Burma Cigar;
Is a joy for ever।