আজ্ঞে, দারোগাবাবু আপনার নামে একটা চিঠি দিয়েছেন।
একটা মোটা মুখবন্ধ On His Majestys Service খাম লোকটা সুব্রতর দিকে এগিয়ে ধরল।
সুব্রত খামটা হাতে করে ঘরে ঢুকতেই শংকর বললে, কী ব্যাপার সুব্রতবাবু?
দারোগাবাবু একটা চিঠি পাঠিয়েছেন। ভাল কথা, দেখুন তো লোকটা চলে গেল নাকি?
কেন?
তাড়াতাড়ি চাকরিটাকে জিজ্ঞাসা করুন।
এই ঝুমন। শংকর ডাকল।
বাবু। … ঝুমন দরজার ওপরে এসে দাঁড়াল।
চৌকিদারটা কি চলে গেছে?
আজ্ঞে না। চুটিয়া খাচ্ছে।
তাকে একটু দাঁড়াতে বল।
কুমন চলে গেল।
ব্যাপার কী? … শংকর সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে সুব্রতর মুখের দিকে তাকাল।
এই লোকটার হাতেই দারোগাবাবুকে শাল-বনের খুন সম্পর্কে একটা খবর দিয়ে দিন না। তা হলে আর লোক পাঠাতে হয় না।
ঠিক বলেছেন।
শংকর তাড়াতাড়ি একটা চিঠির কাগজে সংক্ষেপে শালবনের খুন সম্পর্কে যতটা সুব্রতর কাছে শুনেছিল লিখে চৌকিদারের হাতে দিয়ে দিল দারোগাবাবুকে গিয়ে দেবার জন্য।
চৌকিদার চলে গেল।
সুব্রত খামটা খুলে দেখলে গোটা তিন-চার পুলিশ মর্গের রিপোর্ট ও তার সঙ্গে ছোট্ট একটা চিরকুট।
সুব্রতবাবু!
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাঠালাম। কাজ হয়ে গেলে যত তাড়াতাড়ি পারেন ফেরত দিলে সুখী হবো। আর দয়া করে কিরীটীবাবু এলে একটা সংবাদ দেবেন। কতদূর এগুলো? নমস্কার।
কিসের চিঠি সুব্রতবাবু? শংকর প্রশ্ন করল।
এখানে ইতিপূর্বে যে সব ম্যানেজার মারা গেছেন তঁদের ময়না তদন্তের রিপোটি।
ঠাকুর এসে বললে, খাবার প্রস্তুত।
দুজন উঠে পড়ল।
খাওয়া দাওয়ার পর, সুব্রত মাথার ধারে একটা টুলের ওপরে টেবিল ল্যাম্পটা জুলিয়ে কম্বলে গা ঢেকে শুয়ে পড়ল।
তারপর আলোর সামনে রিপোর্টগুলো খুলে এক এক করে পড়তে লাগল।
মৃত্যুর কারণ প্রত্যেকেরই এক; প্রত্যেকেরই শরীর তীব্র বিষের ক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে মৃত্যু হয়েছে এবং প্রত্যেকেরই গলার পিছন দিকে যে ক্ষত পাওয়া গেছে, সেখানকার টিসু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেখানকার টিসুতেও সেই বিষ ছিল। সিভিল সার্জেনের মতে সেই ক্ষতই বিষ প্রবেশের পথ। … তা হলে বোঝা যাচ্ছে ময়না তদন্তের রিপোর্ট থেকে যে, নিছক গলা টিপেই খুনগুলো করা হয়নি। ময়না তদন্তের রিপোর্টের সঙ্গে Chemical Examiner দের কোন report নেই। তাহলে জানা যেত কী ধরনের বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল। তবে এটুকু বেশ স্পষ্ট বোঝা যায়, বিষ অত্যন্ত তীব্র শ্রেণির।
কিন্তু প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির গলার পিছন দিকে যে চারটি করে কালো কালো ছিদ্র বা ক্ষত পাওয়া গেছে সেগুলোর তাৎপর্যকী? কী ভাবে সেগুলো হলো? কেনই বা হলো? সুব্রত চিন্তামগ্ন হয়ে পড়ল।
১২. আরো বিস্ময়
এক সময় সুব্রতর মনে হলো, এমনও তো হতে পারে কোন একটা গভীর উদ্দেশ্য নিয়ে এইভাবে পরপর খুন করা হচ্ছে। কিন্তু তা হলেই বা সে উদ্দেশ্যটা কী?
সুব্রত চিঠির কাগজের প্যাড়ুটা টেনে নিয়ে কিরীটীকে চিঠি লিখতে বসল।
কিরীটী।
গত কালকের সমস্ত সংবাদ দিয়ে তোকে একখানা চিঠি দিয়েছি।
ভেবেছিলাম আজ আর বুঝি তোকে চিঠি দেওয়ার মত কোন প্রয়োজনই থাকবে না; কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কতকগুলো ব্যাপারে পরামর্শ নেওয়া আমার একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আজ আবার অতর্কিতভাবে এক হতভাগ্য সাঁওতাল কুলী আমাকে খুন করতে এসে নিজে অদৃশ্য এক আততায়ীর হস্তে প্ৰাণ দিয়েছে।
এই শত্রুর দেশে কে আমার এমন বন্ধু আছেন বুঝলাম না যিনি অলক্ষ্যে থেকে এভাবে আমার প্রাণ বাঁচিয়ে গেলেন।
এ ব্যাপারটার যে explanation আমি আমার মনে মনে খাড়া করেছি, আসলে হয়ত মোটেই তা নাও হতে পারে; হয়ত এটা আগাগোড়াই সবটা আমার উর্বর মস্তিষ্কের নিছক একটা অনুমান মাত্র। কিম্বা হয়ত এমনও হতে পারে তাদেরই দলের কেউ তার উপরে হিংসা পোষণ করে বা অন্য কোন গৃঢ় কারণ বশতঃ তাকে খুন করে গেছে অলক্ষ্যে থেকে। তবে ময়না তদন্তের একটা রিপোর্ট আজ কিছুক্ষণ আগে দারোগাবাবু, দয়া করে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন, তাতে দেখলাম, হতভাগ্য ম্যানেজারদের মৃত্যুর কারণ বিষ।…
মাইনের মধ্যকার ব্যাপারটা এখনও জানা যায় নি। তবে রিপোর্ট দেখে মনে হয় দশজনই খুন হয়েছে।
বুঝতে পারি না এরকম নৃশংসভাবে একটার পর একটা খুন করে কী লাভ থাকতে পারে খুনীর। আর ম্যানেজারগুলো তো তৃতীয় পক্ষ। তাদের নিজস্ব কী এমন interest খনি সম্পর্কে থাকতে পারে যাতে করে তাদের এভাবে খুন হওয়ার ব্যাপারটাকে explain করা যেতে পারে।
তবে কী আসল ব্যাপারটা আগাগোড়াই একটা হুমকি বা চাল?
যা হোক এখন পর্যন্ত তোর বন্ধুটি নির্বিঘ্নে সুস্থে ও বহাল তবিয়তে খোস মেজাজেই আছেন। খবর কী? রাজুর খবর কী? মা কেমন আছেন?
তোদের সুব্রত।
পরদিন সকালে সুব্রতর যখন ঘুম ভাঙ্গল, চারিদিকে একটা ঘন কুয়াশার যবনিকা দুলছে।
শংকর খানিক আগেই শয্যা থেকে উঠে মাইনের দিকে চলে গেছে; কেননা আজ থেকে আবার মাইনের কাজ শুরু হবার কথা।
ঝুমন চায়ের জল চাপিয়ে দু। দুবার সুব্রতর ঘরের কাছে এসে ফিরে গেছে, সুব্রত নিদ্রিত দেখ
শয়ন ঘর থেকে বের হয়ে সুব্রত ডাকল, ঝুমন।
সাব, ঝুমন সামনে এসে দাঁড়াল।
কী রে, তোর চা ready তো?
ঝুমন হাসতে হাসতে জবাব দিল, জি সাব?
ম্যানেজারবাবু কোথায়?
খাদে গেছেন হুজুর।
চা খেয়ে গেছে? আজ্ঞে না। বলে গেছেন। আপনি ঘুমিয়ে উঠলে তিনি এর মধ্যে ফিরে আসবেন, তারপর এক সঙ্গে দুজনে চা খাবেন।