সুব্রতর হাতে তীরটা দেখে শংকর সবিস্ময়ে বললে, ওটা আবার কী? কোথায় পেলেন?
সুব্রত তীরটা গভীর মনোযোগের সঙ্গে পরীক্ষা করতে করতেই মৃদু স্বরে জবাব দিল, মাঠের মধ্যে কুড়িয়ে পেলাম।
মাঠের মধ্যে তাঁর কুড়িয়ে পেলেন? তার মানে? শংকর বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন করল।
মানে আবার কী? কেন মাঠের মধ্যে একটা তাঁর কুড়িয়ে পেতে নেই নাকি?
শংকর এবারে হেসে ফেলল, তা তো আমি বলছি না; আসল ব্যাপারটা কী তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
আমার কী মনে হয় জানেন? সুব্রত বললে শংকরের মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ।
কী?
এই তীরের ফলায় নিশ্চয়ই কোন তীব্ৰ বিষ মাখান আছে এবং সে বিষ সাধারণ কোন সুস্থ মানুষের শরীরের রক্তে প্ৰবেশ করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু অবধারিত।
কি বলছেন সুব্রতবাবু?
শংকর জিজ্ঞাসু সুব্রতর মুখের দিকে তাকাল।
মনে হওয়ার কারণ আছে শংকরবাবু। সুব্রত গভীর স্বরে বললে।
বুঝতে পারছি না। ঠিক আপনার কথা সুব্রত বাবুকোন এক হতভাগ্যের উদেশে এই বিষাক্ত তাঁর নিক্ষেপ করে তার জীবনের ওপরে attempt করা হয়েছিল।
সর্বনাশ বলেন কী?
হ্যাঁ, কিন্তু তার আগে অর্থাৎ বিস্তারিত ভাবে আপনাকে সব কিছু বলবার আগে এক কাপ চা-দীর্ঘ পথ হেঁটে গলাটা শুকিয়ে গেছে।
O! Surely! এক্ষুনি। বলতে বলতে শংকর সামনের টেবিলের ওপরে রক্ষিত কলিং বেল টিপল।
ভৃত্য এসে খোলা দরজার ওপরে দাঁড়াল। সাহেব আমাকে ডাকছেন?
এই শীগগির সুব্রতবাবুকে এক কাপ গরম চা এনে দে।
আনছি। সাহেব। ভূত্য চলে গেল। ভৃত্যকে চায়ের আদেশ দিয়ে সুব্রতর দিকে তাকিয়ে শংকর দখলে, চেয়ারের ওপরে হেলান দিয়ে চোখ বুজে সুব্রত গভীর চিন্তামগ্ন হয়ে পড়েছে।
১১. ময়না তদন্তের রিপোর্ট
টেবিলের ওপর সুব্রতর আনীত তীরটা পড়েছিল। শঙ্কর সেটা টেবিলের উপর থেকে হাত বাড়িয়ে তুলে নিয়ে দেখতে লাগল।
তীরটা ছুঁড়ে কোন এক হতভাগ্যের life-এর ওপর নাকি attempt করা হয়েছিল। কে attempt করল? কার life-এর ওপরেই বা attempt করল? কেনই বা attempt করল? আশ্চর্য!
সহসা একসময় সুব্রত চোখ খুলে সামনের দিকে তাকিয়ে শংকরের হাতে তীরটা দেখতে পেয়ে চমকে বলে উঠলো, আরে সর্বনাশ!! করছেন কী? তারপর কি একটা বিপরীত কাণ্ড ঘটিয়ে বসবেন। রাখুন, রাখুন, তীরটা রেখে দিন। কে জানে কী ভয়ঙ্কর বিষ তীরের ফলায় মাখান আছে।
শংকর একপ্রকার থতিমত খেয়ে তীরটা টেবিলের ওপরে নামিয়ে রাখল। এমন সময় তৃত্য গরম চায়ের কাপ হাতে ঘরে ঢুকে কাপটা টেবিলের ওপরে সুব্রতর সামনে নামিয়ে রেখে নিঃশব্দে কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল। সুব্রত ধূমায়িত চায়ের কাপটা তুলে চুমুক দিল।
আঃ! একটা আরামের নিঃশ্বাস ছেড়ে সুব্রত শংকরের মুখের দিকে তাকল, ওই যে তীরটা দেখছেন শংকরবাবু, একটু আগে কোন এক অদৃশ্য আততায়ী ওটা ছুঁড়ে আমাকে ভবপারাবারে পাঠাতে চেয়েছিল।
বলেন কি? শংকর চমকে উঠল।
আর বলি কি? খুব বরাত এ যাত্রায় বেঁচে যাওয়া গেছে। শুধু এক বার নয়, দুবার তাঁর ছুঁড়ে আমার জীবন সংশয় ঘটানর সাধু প্রচেষ্টা করেছিল।
তারপর?
আতঙ্কে শংকরের সর্বশরীর তখন রোমাঞ্চিত।
তারপর আর কী? দুটোর একটা attempt ও successful হয় নি–প্রমাণ এখনও শ্ৰীমান সুব্রত রায় আপনার চোখের সামনেই স্ব-শরীরে বর্তমান।
তা যেন হলো-কিন্তু এ যে ব্যাপার ভয়ানক দাঁড়াচ্ছে ক্ৰমে সুব্রতবাবু। শেষকালে কি এলোপাথাড়ি হাতের সামনে যাকে পাবে তাকেই মারবে।
মারতে পারুক ছাঁই না পারুক সাধু প্রচেষ্টার অভাব যে হবে না, একথা কিন্তু হলফ করে বলতে পারি মিঃ সেন। সুব্রত বললে।
কিন্তু এ ভাবে একদল ভয়ঙ্কর অদৃশ্য খুনেদের সঙ্গে কারবার করাও তো বিপজ্জনক। মুখোমুখী এসে দাঁড়ালেও না হয় এদের শক্তি পরীক্ষা করা যেতো। কিন্তু এ গরিলা যুদ্ধের মত।
মেঘনাদ যিনি তিনি হয়ত সামনা সামনি দাঁড়িয়েই কল টিপছেন; আর কতকগুলো পুতুলকে কোমরে দড়ি বেঁধে যখন যেমন যে দিকে নাচাচ্ছেন তেমনি নাচছে; সুব্রত বলে।
কিন্তু মেঘনাদটি কে? শঙ্কর সুব্রতর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলে।
আরে মশাই সেটাই যদি জানা যাবে। তবে এত হাঙ্গামাই বা আমাদের পোহাতে হবে কেন? সুব্ৰত হাসতে হাসতে জবাব দিল।
তারপর সহসা হাসি থামিয়ে যথা সম্ভব গভীর হয়ে সুব্রত বললে, আজ আবার একটি হতভাগ্য প্ৰাণ নিতে এসে প্ৰাণ দিয়েছে।
সে কি!…
হাঁ। বেচারা আমাকে মারতে এসে নিজে প্ৰাণ দিয়েছে; সুব্রত বললে।
বলেন কী? … তা কেমন করে জানলেন?
হতভাগ্যের মৃতদেহ এখনও শালবনের মধ্যে পড়ে আছে।
পুলিশে একটা খবর দেওয়া তো দরকার। শংকর বললে।
তা দরকার বই কি। পুলিশ জাতটা বড় সুবিধার নয়। আগে থেকে সংবাদ একটা দিয়ে রাখাই আমার মতে ভাল; কেননা নয় কে হয় ও হয় কে নয় করতে তাদের জোড়া আর কেউ নেই।
কিন্তু এত রাত্রে কাকে থানায় পাঠান যায় বলুন তো? Bus তো সেই রাত্রে দেড়টায়। … ধারে কাছে তো থানা নেই? সেই একদম কাতরাসগড়, নয় তেঁতুলিয়া হল্টে।–তা ছাড়া ব্যাপার ক্রমে যা দাঁড়াচ্ছে, কোন চেষ্টাকেই যেন আর বিশ্বাস করা যায় না।
কিন্তু থানায় লোক পাঠাতে আর হলো না; তৃত্য এসে সংবাদ দিলে থানার দারোগাবাবুর কাছ থেকে একজন লোক এসেছে; সুব্রতবাবুর সঙ্গে দেখা করতে চায়।
আমার সঙ্গে? সুব্ৰত উঠে দাঁড়াল।
বাইরে এসে দেখলে, একজন চৌকিদার অপেক্ষা করছে।
তুমি? সুব্রত প্রশ্ন করলে।