মল্লিকাই জানায়!
মল্লিকা!
হ্যাঁ–একটা চিঠি দিয়েছিলাম তাকে-।
তারপর।
সে এখন শিলংয়ে ডাক্তারী করে। যাই হোক তারপর শোন-মৃগাঙ্কমোহন ডাঃ মল্লিকার সঙ্গে পরামর্শ করলেন ছেলে হলে মেরে ফেলতে হবে আর অন্যদিকে করালী দাঁইয়ের সঙ্গে গোপন পরামর্শ করে স্থির করে মৃগাঙ্কের দৃষ্টি থেকে বাঁচাবার জন্য সে দাইয়ের সাহায্যে সেই নবজাত শিশুটিকে আঁতুড় ঘর থেকে সরিয়ে ফেলবে-হত্যা করতে কিছুতেই দেবে না। যদি শশাঙ্কমোহনের ছেলে হয়, আর মেয়ে হলে তো ল্যাটাই নেই কোন।
তারপর?
এদিকে মৃগাঙ্কমোহনের প্রস্তাবে সম্মত হলেও ডাঃ মল্লিকা হাজার হলেও স্ত্রী-লোক মায়ের জাত-মনে মনে সে স্থির করে যদি ছেলেই হয় তো হত্যা করবে না, তাকে সরিয়ে ফেলবে-আর তাকে সাহায্য করবার জন্য দাইকে বলবে। দাই-মঙ্গলার ঐ কথা শুনে তো ভালই হলো। কারালীর সঙ্গে যে পরামর্শ হয়েছে সে কথা তাকে সে তখন বললে।
হাতের সিগ্রেটটা নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। একটা নতুন সিগ্রেটে অগ্নি সংযোগ করে আবার কিরীটী তার অর্ধসমাপ্ত কাহিনী শুরু করে।
যথা সময়ে সন্তান হলো-দাই মঙ্গলা ডাঃ মল্লিকার সঙ্গে পরামর্শ করে পূর্বাহ্নেই স্থির করে রেখেছিল ছেলে হলে সরিয়ে ফেলবে। কিন্তু ভগবানই হলেন ওদের সহায়-মেয়ে ও ছেলে দুই হলো।
তার মানে?
শ্ৰীলেখা, পানুর যমজ বোন।
সে কি!
হাঁ—আগে পানু পরে শ্ৰীলেখা জন্মায়। পানুর জন্মের প্রায় পয়ত্রিশ মিনিট পরে শ্ৰীলেখা জন্মায়। মৃগাঙ্গকে ডাঃ মল্লিকা জানাল শশাঙ্কর মেয়ে হয়েছে আর ছেলেটিকে সে সরিয়ে দিল দাইয়ের সাহায্যে মঙ্গলারই ঘরে।
মঙ্গলার ঘরে।
হাঁ, মঙ্গলার কোন সন্তানাদি ছিল না। সেই পানুকে বুকে তুলে নিল এবং মঙ্গলার বুকের মধ্যে পানু বড় হতে লাগল করালী ও মঙ্গলার তত্বাবধানে–
তারপর–
কিন্তু করালী বেশী দিন পানুকে মঙ্গলার কাছে রাখতে সাহস পায় না-সে তখন সরিয়ে দেয় পানু অর্থাৎ সুধীরকে হরমোহিনী আশ্রমে ডাঃ মল্লিকারই সাহায্যে। এবং সেখানে দিয়ে আসবার সময় করালী বুদ্ধি করে একটা কবচের মধ্যে ওর সত্যিকারের নাম ও পরিচয়টা লিখে হাতে বেঁধে দেয়। ঐ ঘটনার কিছুদিন পরেই মঙ্গলার মৃত্যু হয়। কারালীচরণ মধ্যে মধ্যে যেত হরমোনিহী আশ্রমে এবং সুধীরের খোঁজ খবর নিয়ে আসত—। পানু বা সুধীর বড় হতে লাগল অনাথ আশ্রমে আর শ্ৰীলেখা মা-বাবার কাছে। এমনি করেই চলছিল—তারপরই আকাশে দেখা দিল দুর্যোগের কালো মেঘ।
কি রকম? সুব্রত শুধায়।
কিরীটী আবার বলতে শুরু করে : ডাঃ মল্লিকা তারই ঠিকানা দিয়ে অনাথ বলে করালীর সাহায্যে পানুকে নিয়ে গিয়ে আশ্রমে ভর্তি করে দিয়েছিল আগেই বলেছি। হঠাৎ একদিন সুধীর আশ্রম থেকে অদৃশ্য হলো—সঙ্গে সঙ্গে আশ্রমের সুপারিনটেনডেন্ট চিঠি দিয়ে মল্লিককে কথাটা জানাল। ইতিমধ্যে মল্লিকার সঙ্গে মৃগাঙ্কর সমস্ত সম্পর্ক ছেদ হয়ে গিয়েছিল। মল্লিকা শিলংয়ে চলে গিয়েছিল সেও বলেছি। ডাঃ মল্লিকা সংবাদটা পেয়ে ভয় পেলে গেল এবং শ্ৰীপুরে সবকথা জানিয়ে করালীকে চিঠি দেয়।
চিঠি?
হ্যাঁ—সেই চিঠি দুৰ্ভাগ্যক্রমে পড়ল গিয়ে মৃগাঙ্কর হাতে সম্ভবতঃ ছয়বছর পরে অকস্মাৎ একদিন আর এই প্রথম মৃগাঙ্কের মনে সন্দেহ জন্মায় ঐ চিঠি পড়ে।
মৃগাঙ্ক করালীকে চেপে ধরে।
প্রথম লোভ দেখায়-তারপর ভয়-কিন্তু কিছুতেই মৃগাঙ্ক করালীকে যখন বাগে আনতে পারল না-সেই সময় শেষ চেষ্টা করার জন্য মৃগাঙ্ক এক রাত্রে করালীর ঘরে গিয়ে হাজির হলো।
মৃগাঙ্কর গায়ে ঐ সময় একটা কালো রঙের ওভারকোট ছিল—পাছে তাকে কেউ না দেখে হঠাৎ চিনে ফেলে।
তারপর আমার অনুমান দুজনার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় ও উত্তেজনার মুহূর্তে হয়ত ভোজালি দিয়ে করালীচরণকে আঘাত করে মৃগাঙ্কমোহন। এবং সম্ভবতঃ আঘাত খেয়ে পড়বার সময় করালী মৃগাঙ্ককে জাপটে ধরতে যায় বা কিছু, মৃগাঙ্কর জামার একটা বোতাম ছিঁড়ে করালীর মুঠির মধ্যে থেকে যায়।
করালীকে ঐ ভাবে নিষ্ঠুরের মত হত্যা করবার ইচ্ছা মৃগাঙ্কমোহনের ছিল কি ছিল না কে জানে, তবে করালীচরণ নিহত হলো মৃগাঙ্কমোহনের হাতেই, মৃত্যু ছিল বোধহয় তার মৃগাঙ্কমোহনের হাতেই। কিন্তু করালীর মৃত্যুতে মৃগাঙ্কমোহন ভয় পেয়ে গেল। এবং ভয় পেয়ে ব্যাপারটা হত্যা নয় আত্মহত্যা বলে চালাবার চেষ্টা করল। সেই কারণেই মৃতের হাতে ভোজলীটা গুজে দেয় এবং বারবার বলতে থাকে ব্যাপারটা হত্যা নয় আত্মহত্যা।
সুব্রত প্রশ্ন করে, মৃগাঙ্কমোহনকে কি তুই আগেই সন্দেহ করেছিলি?
হ্যাঁ—তবে প্রথমটায় নয়-কিছুদিন তদন্ত চালাবার পর–ওর প্রতি সন্দেহটা বদ্ধমূল হয়।
কেন?
চারটি কারণে তার উপরে আমার সন্দেহ জাগে। (১) করালীর হাতের মুঠিতে বোতাম-ঐ বোতামটার ব্যাপারে আমি রাজুকে অনুসন্ধান করতে বলি-বোতামটা ওকে দিয়ে। (২) রাজু খুঁজতে খুঁজতে মৃগাঙ্কমোহনের জামাটা আবিষ্কার করে,-মৃগাঙ্কমোহনেরই ঘরে একটা বইয়ের আলমারীর মধ্যে দালামোচড়া অবস্থায়। নিশ্চয়ই বইয়ের আলমারী জামা রাখার, বিশেষ করে অত দামী গরম কোট একটা রাখবার জায়গা নয়, সেটাও যেমন একটা সন্দেহের কারণ তেমনি বোতামটাও অবিশ্যি প্ৰথমে আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক করেছিল–দামী সৌখীন বোতাম সচরাচর বড় একটা চোখে পড়ে না। (৩) মৃগাঙ্কমোহনের করালীর মৃত্যুটা আত্মহত্যা প্রমাণ করবার বিশ্ৰী চেষ্টাটা। (৪) মৃগাঙ্কর চিঠির ভাঙ্গা ‘S’ ও ‘b’ টাইপ দুটো।