যাঁরা মেমসাহেবের কথা জানেন, তাদের অনেকেই আমাকে বিয়ে করবার পরামর্শ দেন। বলেন, পাগলামি করো না ভাই, বিয়ে কর। যে গেছে সে আর কখনও ফিরবে না। নিজের জীবনটাকে নিয়ে কেন ছিনিমিনি খেলছ? বিয়ে করার কথা সবাই বলেন, বলে না। শুধু গজানন। বিয়ের কথা শুনলে ও রেগে আগুন হয়ে যায়। বলে, ‘ওরা কি ভালবাসতে জানে? ওদের মাথায় শুধু স্মৃর্তি করার মতলব। আমার হাতদুটো চেপে ধরে বলে, “না, না, ছোটোসাব, তুমি বিয়ে করলে স্বৰ্গে গিয়েও বিবিজী শান্তিতে থাকতে পারবে না।”
আমি কোন জবাব দিই না। চুপ করে বসে থাকি। গজাননও একটু চুপ করে থাকে। তারপর বলে, “ছোটোসাব, যদি তুমি বিয়ে কর, তাহলে আমাকে একটু আগের থেকে খবর দিও। আমি থাকতে অন্য মেয়েকে এই সংসারে আনতে পারবে না।
দোলাবৌদি, শুনলে আমার সেই কালো মেমসাহেবের কাহিনী? কেমন লাগল? যাকে নিয়ে তোমরা এতদিন লুকিয়ে-চুরিয়ে ফিসফিস করেছ, যাকে নিয়ে অনেকে আমার আড়ালে সমালোচনা করেছ, এই হলো সেই মেমসাহেবের ইতিহাস।
আমার তুমি আমার বিয়ে দিতে চাও, ভাল কথা। কিন্তু ঐ হতচ্ছাড়ী পোড়ামুখীর শূন্য আসন পূর্ণ করার মত কাউকে পাবে কি? আমার ঐ গ্ৰীন পার্কের সংসারে এসে সুখী হবে এমন মেয়ে কোথায় আছে বলতে পার? ঐ রকিং চেয়ারে বসে বই পড়বে, ঐ অর্গ্যানে গান গাইবে, ঐ ড্রইংরুমে বসে গল্প করবে, ঐ বেডরুমে শুয়ে আমাকে আদর করবে, এমন সাহস কোন মেয়ের হবে?
টেনিসনের দুটো লাইন মনে পড়ছে
“Time marches on but
memories stays.
Torturing silenty the rest
of our days.”
সেই স্মৃতির জ্বালা বুকে নিয়েই বোধহয় আমার বাকী দিনগুলো কাটবে। তাই না?
তোমাদের বাচ্চু।