তুমি লিখেছি লাডাকে এখন মাইনাস ১০-১২ ডিগ্রী টেম্পারেচার। কলকাতার বাঙালী হয়ে আমাদের কল্পনাতীত। আমার তো ভাবতেও ভয় লাগছে। উলের আণ্ডারউয়ার, গ্লোভস, ক্যাপ ইত্যাদি নিতে ভুলে না। তুমি বার্লিন থেকে যে ওভারকোটটা এনেছ, সেটা অতি অবশ্য নেবে। আমি জানি তুমি ভাল থাকবে কিন্তু তবুও চিন্তা তো হবেই। তাই যদি পার লেতে পৌঁছবার পর একটা টেলিগ্ৰাম করে।
শেয়ে লিখেছিল, ৮ই মার্চ তোমার সঙ্গে দিল্লী যাবার পর খুব বেশী বেড়াবার সময় থাকবে কি? তুমি তো প্ৰায় সবকিছুই গুছিয়ে রেখেছ কিন্তু তবুও নতুন সংসার করার কিছু ঝামেলা তো থাকবেই। তাছাড়া তোমার ক’দিন বিশ্রাম চাই তা! এইত কংগ্রেস কভার করে। ফিরলে। এখন যাচ্ছে লাডাক। ফিরে এসেই পার্লামেণ্ট। তারপর কলকাতায় আসা-যাওয়া বিয়ে-থার জন্য তোমার কি কম পরিশ্রম হবে? সেজন্য দিল্লী গিয়ে আবার কোথাও যাবার আমার ইচ্ছে নেই।
তোমাকে আর এর মধ্যে দেখতে পাব না। সেই ২০শে ফাল্গুন রাত্রে একেবারে শুভমুহুর্তে তোমাকে দেখব! ভাবতেও তারী মজা व्लांटछ। cऊांभांद्र डांदेड डांक्ल व्लांशदछ ना? Í মেমসাহেবের চিঠি পাবার পরদিনই ভোরবেলায় পালামের এয়ার ফোর্স স্টেশন থেকে এয়ার ফোর্সের এক স্পেশ্যাল প্লেনে আমরা চলে গেলাম জম্মু। সেখান থেকে মোটরে উধমপুর। এক রাত্রি উধমপুরে কাটিয়ে পরদিন তোরবেলায়। জম্মু এয়ারপোর্টে এসে শুনলাম লেতে ভীষণ খারাপ আবহাওয়া। প্রভিং ফ্রাইটে একটা প্লেন গিয়েছে। যদি ঐ প্লেনটা ল্যাণ্ড করতে পারে, তাহলে সেই মেসেজ পাবার পর আমাদের প্লেন ছাড়বে। বেলা আটটা-সাড়ে আটটার মধ্যে আবহাওয়ার উন্নতি না হলে আজ আর যাওয়া হবে না।
সাড়ে আটটা পৰ্যন্ত কোন মেসেজ এলো না। প্রভিং ফ্লাইটে যেপ্লেনটি গিয়েছিল, সেটি ফেরত এলো নটা নাগাদ। কোর হেড কোয়াটার্স থেকে আমি হেড কোয়ার্টার্সে মেসেজ চলে গেল, ব্যান্ড ওয়েদার এ্যারাউণ্ড লে স্টপ প্রভিং ফ্লাইট ফেলড স্টপ প্রেস পার্টি হেলন্ড-আপ। আমিও আমার হেড কোয়াটার্সে একটা টেলিগ্রাম করলাম, লে। আণ্ডার ব্যান্ড ওয়েদার, স্টপ নো ফ্লাইট টু-ডে স্টপ।
উধমপুরে একটা অতিরিক্ত রাত্রিবাস ভালই কেটেছিল। দুপুরে একটা চমৎকার লাঞ্চ ছাড়াও সন্ধ্যায় আমাদের সম্মানে একটা ককটেল দিলেন কোর কমাণ্ডার নিজে। পরের দিন ভোরে রওনা হবার আগে আমরা ওয়েদার রিপোর্ট চেক-আপ করে জানলাম, লের আবহাওয়া ভালই। সুতরাং ফাস্ট সর্টির ফাস্ট এয়ারক্রাফটেই আমরা রওনা হয়ে জম্মু থেকে লে এলাম।
লে’তে পৌঁছবার পর একটু বিশ্রাম করে শহরে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে মেমসাহেবকে একটা আর্জেণ্ট টেলিগ্ৰাম করলাম, রিচড সেফলি।
লাডাকে আসার পর কলকাতার আর কোন খবর পেলাম না। সময়ও হতো না, সুযোগও হতো না। কলকাতার স্টেশন অত্যন্ত উইক। তাছাড়া এত ঠাণ্ডায় ব্যাটারীও ঠিক কাজ করে না। সুতরাং রেডিওতেও কলকাতার কোন খবর পেলাম না।
লেতে একদিন কাটাবার পর আমরা ফরোয়ার্ড এরিয়া দেখতে রওনা হলাম। কোথাও জীপ, কোথাও হেলিকপ্টার। সারাদিন ঘুরে বেড়াতাম চোদ-পনের হাজার ফুট উপরে হিমালয়ের মরু অঞ্চলে। বিকেল থেকে মধ্যরাত্ৰি পৰ্যন্ত কাটাতাম আমাদের বা অফিসারদের কোন-না-কোন মঙ্গোলিয়ান টেন্টে বোখারীর পাশে।
ফরোয়ার্ড এরিয়া ঘুরে লোতে ফেরার পর জানলাম, গত পাঁচদিন ধরে কোন প্লেন ল্যাণ্ড করে নি। ব্যান্ড ওয়েদার। আবহাওয়া কবে ভাল হবে, সে-কথা কেউ জানেন না। পরের দিনও ভাল হতে পারে, আবার আট দশদিনের মধ্যেও না হতে পারে। শীতকালে লাডাকের আবহাওয়া এমনিই হয়। চিন্তিত না হয়ে পারলাম না, কিন্তু চিন্তা করেও কোন উপায় ছিল না।
শহরে গিয়ে পোস্টাফিস থেকে মেমসাহেবকে একটা টেলিগ্ৰাম করে দিলাম, রিটাৰ্ণাড ফ্রম ফরোয়ার্ড এরিয়াস স্টপ ব্যাড ওয়েদার প্রোগ্রাম আনসার্টেন।
শেষপৰ্যন্ত এক সপ্তাহের পরিবর্তে, বারো দিন পর আবার পালামের মাটি স্পর্শ করলাম।
এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এলাম ওয়েস্টার্ন কোট। রিসেপশন কাউন্টারে আমার ঘরের চাবি চাইতেই বললো, ইওর সিস্টার-ইন-ল…ইজ দেয়ার।
সিস্টার-ইন-ল ?
অবাক হয়ে গেলাম। দিদি? মেজদি? কিন্তু ওঁরা এখন আসবেন কেন? বেড়াতে? একটা খবর তো পাওয়া উচিত ছিল। জরুরী কোন কাজে? লিফট্-এ উঠতে উঠতে অনেক কিছু ভাবছিলাম। আবার ভাবলাম বিয়ে নিয়ে কোন গণ্ডগোল হলো নাকি? না, না, তা কেমন করে সম্ভব।
ঘরে ঢুকতে গিয়েই মেজদিকে দেখে থমকে গেলাম। হঠাৎ মেজদিকে অমন বিশ্ৰীভাবে দেখে মনে হলো বোধহয় মেজদিরই চরম সর্বনাশ হয়ে গেছে। মনটা ব্যথায় ভরে গেল। এইত কমাস আগে বিয়ে হলো। এরই মধ্যে…
মেজদি আমাকে দেখেই হাউ-হাউ করে কেঁদে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ওর অপ্ৰত্যাশিত আগমন এবং ততোধিক অপ্ৰত্যাশিত কান্নায় আমি এমন ঘাবড়ে গেলাম যে আমার গলা দিয়ে একটি শব্দও বেরুতে চাইল না। মেজদি আমাকে ঐ ভাবে জড়িয়ে ধরে কতক্ষণ কেঁদেছিলেন তা আমার মনে নেই। তবে মনে আছে বেশ কিছুক্ষণ বাদে মেজদি হঠাৎ বলে উঠলেন, তুমি কিভাবে একলা একলা বাঁচবে ভাই?
একলা? একলা? আমি?
আমি এবার মেজদির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নিজেই ওরা দু’টো হাত চেপে ধরে জিজ্ঞাসা করলাম, মেমসাহেব কেমন আছে?
মেমসাহেবের নাম শুনে মেজদি আর থাকতে পারলেন না। আবার আমাকে দু’হাত দিয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে হাউ-হাউ করে কাঁদতে লাগলেন।