গাড়িতে আসতে আসতে বলি, ওহে প্রেয়সী, আমি সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী; আমি তো কোন যুবতীর সঙ্গে এক ছাদের তলায় রাত কাটাই না।
প্রেয়সী চাপা হাসি হেসে বলৈ; বয়ফ্রেন্ড, আমি তো রাত্তিরে তোমার ওখানে থাকব না।
আমি গলা চড়িয়ে বলি, ও ভাই, তোমার বউ বিকাশদার সঙ্গে রাত কাটাতে এখানে এসেছে?
ওরা দুজনেই হো হো করে হেসে ওঠে। তারপর ভাইদা হাসতে হাসতেই বলে, ভাইয়া, তুই কি কিছুতেই বিকাশদাকে ভুলতে পারছিস না?
তোমার বউয়ের অসভ্যতার জনই তো ঐ হতভাগাকে ভুলতে পারি না।
যাইহোক প্রেয়সীকে দেখে মৃণালিনী মুগ্ধ হয়ে ওকে বলে, তোমার পাশে তো কোন বিখ্যাত হিরোইনও দাঁড়াতে পারবে না।
আমি বলি, মৃণালিনী, তোমার কি মাথা খারাপ হলো? এই অপদার্থ, কুৎসিত, ছলনাময়ীকে দেখে মুগ্ধ? তোমার কাণ্ড দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।
দুটো দিন অসম্ভব আনন্দে কাটে। তারপর ভাইদা চলে যায়। আমার আর মৃণালিনীর ডিউটি এক শিফট-এ পড়ছে না বলে প্রেয়সীরও সময় বেশ ভাল কাটে। তবে যখন শুধু আমি আর প্রেয়সী থাকি, তখন ও আমার সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠ হয়ে মেলামেশা করে যে আমি অস্বস্তিবোধ না করে পারি না। আবার খুব জোর করে বলতেও পারি না, আমার ভাল লাগে না। তবু আমি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলি না, ও ভাইদার স্ত্রী।
এইভাবেই একটা সপ্তাহ কাটে।
পরের সপ্তাহে পর পর দু’দিন ইমার্জেন্সিতে আমার নাইট ডিউটি পড়লো। বাড়ি ফিরে আসার পর প্রেয়সীর কত প্রশ্ন। সারারাত কি করে ডিউটি দাও? একটুও ঘুমুবার সময় পাও না? অত রাত্তিরে তো বিশেষ পেশেন্ট যায় না তবে ঘুমোত পারো না কেন?
আমি আর মৃণালিনী:দুইজনেই হেসে উঠি। আমি কিছু বলার আগেই মৃণালিনী বলে, দুর্বা, এমন কোনদিন যায় না, যেদিন কেস আসবে না। আর অ্যাকসিডেন্ট কেস হলেই আমাদের মতো সার্জেনকে দুতিনটে অপারেশন করতেই হবে।
অত রাত্তিরে অপারেশন করতে অসুবিধে হয় না?
না, না, কোন অসুবিধে হয় না।
সপ্তাহের শেষের দিকে পর পর দু’দিন মৃণালিনীর নাইট ডিউটি পড়লো।
সাড়ে ন’টার মধ্যেই মৃণালিনী হাসপাতালে রওনা হয়। তারপর প্রেয়সী বলে, বয়ফ্রেন্ড, আমি গা ধুয়ে চেঞ্জ করে আসি। তারপর আমরা এক সঙ্গে খাবো।
হ্যাঁ, তুমি বাথরুমে যাও।
প্রেয়সী যে পোষাকে বাথরুম থেকে বেরুলো, তা দেখে আমি অবাক। একে ঐ খাজুরাহোর জীবন্ত মূর্তি, তার উপর এই পাতলা ফিনফিনে মাইটি। ওকে এই পোষাকে দেখে যে কোন পুরুষ উন্মাদ হয়ে যাবে।
আমি ওকে দেখে একটু হাসি কিন্তু কোন মন্তব্য করি না। প্রেয়সী পাশের ঘরে গিয়ে চুল আঁচড়ে আমার সামনে এসে পঁড়িয়ে একটু হেসে দুহাত দিয়ে আমার মুখোনা ধরে দু’গালে চুমু খেয়ে বলে, এসো, বয়ফ্রেন্ড, খেয়ে নিই।
হ্যাঁ, চলো।
টুকটাক গল্পগুজব করতে করতেই আমরা খেয়ে নিই।
আমি শুয়ে পড়ার দু’পাঁচ মিনিট পরই প্রেয়সী আমার পাশে এসে বসে। আমার একটা হাত নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বলে, তুমি কি খুব টায়ার্ড? এখনই ঘুমোবে?।
আমি একটু হেসে বলি, সব স্বাভাবিক মানুষই তো রাত্তিরে ঘুমোয়।
কিন্তু বিশেষ বিশেষ সময় তো রাত জাগতে ইচ্ছে করে, তাই না?
আমি হাসতে হাসতেই বলি, নাইট ডিউটি ছাড়া মনের মত মেয়ে পেলে রাত জাগতে পারি কিন্তু সে রকম মেয়ে তো আজ পর্যন্ত পেলাম না।
সত্যি পাও নি?
পেলে তো জানতেই পারতে।
এইসব কথাবার্তা চলতে চলতেই ও আমার পাশে শোয়। আমার মাথায় মুখে হাত দিতে দিতে বলে, বয়ফ্রেন্ড, একটা কথা বলব, বিশ্বাস করবে?
কেন বিশ্বাস করবো না?
ও হঠাৎ উপুড় হয়ে শুয়ে কনুইয়ে ভর দিয়ে আমার মুখের সামনে মুখ নিয়ে বলে, তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার একটুও ভাল লাগে না।
সব সময় আমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে?
ও এক গাল হেসে বলে, হ্যাঁ।
দু’এক মিনিট আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর ও আমার বুকের উপর মুখ রেখে দুহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে। ওর এই নিবিড় আলিঙ্গন আমাকে চঞ্চল করে তোলে কিন্তু খুবই অস্বস্তি বোধ করি। বলি, প্রেয়সী, প্লীজ এভাবে জড়িয়ে ধরো না।
কেন?
তুমি বুঝতে পারছে না কেন বারণ করছি?
না তো।
তোমার এই খাজুরাহোর জীবন্ত মূর্তি আমার মত যুবককে জড়িয়ে ধরলে কি হয়, তা জানো না?
কি আবার হবে?
প্রেয়সী, প্লীজ ঠিক হয়ে শোও।
তোমার খারাপ লাগছে?
হ্যাঁ, খারাপ লাগছে।
তুমি মিথ্যে কথা বলছে।
কী করে জানলে?
তা বলব না কিন্তু জানি।
প্রেয়সী মুখ উঁচু করে মুহূর্তেই জন্য আমার দিকে তাকিয়েই আবার বুকের উপর মুখ রেখে বলে, তোমাকে জড়িয়ে যে আমার কি ভাল লাগছে, তা বলতে পারবো না।
আমি দু’হাত দিয়ে ওকে সরাবার যত চেষ্টা করি, ও তত বেশি আমাকে জড়িয়ে ধরে।
এইভাবে দু’পাঁচ মিনিট কাটার পর প্রেয়সী মুহূর্তের জন্য উঠে বসেই আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে উন্মাদিনীর মতো আমাকে চুম্বন করতে শুরু করে।
আমি কোন মতে ওর মুখোনা সরিয়ে দিয়ে বলি, তুমি কি শুরু করলে বলল তো? তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে?
ও সত্যি উম্মাদিনীর মতো আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, বয়ফ্রেন্ড, তোমার পায়ে পড়ি। আজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না। তোমাকে না পেলে আমি বাঁচব না। প্লীজ আজ আমাকে তুমি…
আমি আর সহ্য করতে পারি না। আমি এক ধাক্কায় ওকে সরিয়ে দিয়েই উঠে বসে সজোরে ওর গালে এক চড় মেরে বলি, গেট আউট ফ্রম মাই রুম।