একদিন কথায় কথায় মৃণালিনী বলে, শুভ, তুমি না এলে আমি ঠিক এই চাকরি ছেড়ে চলে যেতাম।
কেন?
এখানে তো আমার একজনও বন্ধু নেই। হাসপাতাল থেকে এসে সব সময় কি মা-র সঙ্গে গল্প করতে ভাল লাগে?
ও না থেমেই বলে, তাছাড়া মা-র পক্ষে খুব বেশিক্ষণ কথা বলাও সম্ভব।
আমি একটু হেসে বলি, তোমাকে না পেলে আমিও যে কতদিন এখানে থাকতে পারতাম, তা জানি না।
মৃণালিনী লম্বা সোফায় একটা কুশন মাথায় দিয়ে শুয়েছিল আমার চোখের সামনে। আমি ওকে একবার খুব ভাল করে দেখে নিয়ে চাপা হাসি হেসে বলি, তোমার মত সুন্দরী যুবতী বান্ধবীকে এইভাবে নাইটি পরে সামনে শুয়ে থাকতে দেখে যে কি আনন্দ পাই, তা তো তুমি জানো না।
আমি না থেমেই বলি, আচ্ছা মৃণালিনী, এভাবে এই রাত্রে আমার এখানে আসতে তোমার ভয় করে না?
ও হো হো করে হেসে উঠে বলে, তোমাকে দেখে আমি ভয় পাবো? বলো, আমাকে দেখে তুমি ভয় পাও।
মুখে স্বীকার করি না কিন্তু সত্যি আমার ভয় হয়। বার বার মনে হয়, মৃণালিনীর রূপ, যৌবন, মাদকতা ও গভীর রাত্রিতে আমার কাছে থাকা, কোন অঘটন ঘটাবে না তো?
জানি না।
কিন্তু প্রেয়সী আমার দেহে, মনে যে আগুন জ্বালিয়েছে, তা যে আমাকে একটা নারীদেহের নিবিড় ও উষ্ণ সান্নিধ্য পাবার জন্য পাগল করে তুলেছে। আমি প্রেয়সীকে নিয়েই পাগল হতে চাই কিন্তু ও ভাইদার স্ত্রী। তাইতো আমি কখনই সীমা অতিক্রম করতে পারিনি, পারব না।
সবই বুঝি কিন্তু মনের আগুন, দেহের জ্বালা মিটবে কী করে?
আমি এখানে আসার পর প্রত্যেক রবিবার কলকাতায় ফোন করে সবার সঙ্গে কথা বলি। তখন প্রেয়সী নেহাতই মামুলি কথা বলে কিন্তু দুপুরের দিকে কথা বললেই একেবারে ভিন্ন সুর।
বয়ফ্রেন্ড, তুমি বিশ্বাস করো, তোমাকে একটু কাছে পেতে, একটু আদর করতে খুব ইচ্ছে করে।
ওহে নটী বিনোদিনী, কেন মিথ্যে কথা বলছো?
না, তাতাই, আমি মিথ্যে কথা বলছি না। তোমাকে আমার মনের কথাই বললাম।
হাজার হোক তুমি ভাইদার স্ত্রী। আমি কলকাতা গেলেই তো তুমি আমাকে কাছে পাও তখন আদর করলেই পারো। কে তোমাকে বাধা দিয়েছে?
না, না, অন্য কারুর সামনে তোমাকে আদর করবো না।
তাহলে চলে এসো এখানে।
সম্ভব হলে নিশ্চয়ই যেতাম।
আমি কখনই ওকে ইন্ধন যোগাই না কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এই কথাও স্বীকার করব, আমার প্রতি ওর দুর্বলতার ইঙ্গিত দেখে মনে মনে উৎসাহিতও হই, উত্তেজিতও হই।
এই ভাবেই কেটে যায় তিন-চার মাস।
.
সেদিন ইভনিং শিফট-এ আমার ডিউটি ইমার্জেন্সীতে, মৃণালিনীর ডিউটি সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে। দু’জনেরই ডিউটি শেষ হবার কথা দশটায় কিন্তু সাতটার পর পরই একটা বাস দুর্ঘটনার দশ-বারোজন গুরুতর আহত পেশান্ট হাজির হতেই শুধু আমি বা ইমার্জেন্সীর অন্য দু’জন সার্জেনকে না, মৃণালিনীকেও অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতে হলো। আমরা দুজনে হাসপাতাল থেকে বেরুলাম সাড়ে এগারোটায়।
লিফট-এ তিনতলায় উঠে মৃণালিনী ব্যাগ হাড়ে আবিষ্কার করলো যাবার সময় দরজার চাবি নিয়ে যেতে ভুলে গেছে। বলল, শুভ, এখন বেল বাজিয়ে মাকে ঘুম থেকে তুললে উনি সারা রাত্তির আর ঘুমুতে পারবেন না। তাই…
নো প্রবলেম। তুমি আমার ফ্ল্যাটে থেকে যাও।
হ্যাঁ, তাই থাকতে হবে।
ভিতরে ঢুকেই মৃণালিনী বলে, শুভ, আমি কিন্তু স্নান না করে ঘুমুতে পারবো না।
নো প্রবলেম। আমি সাবান-তোয়ালে দিচ্ছি।
আমি আমার পাশের বেডরুমের বাথরুমে আলো জ্বালিয়ে সাবান-তোয়ালে রেখে বলি, মৃণালিনী, যাও, স্নান করো। আমিও আমার বাথরুমে ঢুকছি।
হ্যাঁ, যাও।
আমি স্নান করে পায়জামা-গেঞ্জি পরে বেরুতে না বেরুতেই শুনতে পাই পাশের ঘর থেকে মৃণালিনী ডাকছে। তাড়াতাড়ি ঐ ঘরে ঢুকেই দেখি, বাথরুমের দরজা সামান্য একটু ফাঁক করে ও তাকিয়ে আছে।
ডাকছ কেন?
আমি কি পরে বেরুব?
ও মাই গড!
একটু হেসে বলি, আমার পায়জামা-কুর্তা পরবে?
তোমার পায়জামা কি আমার হয়?
মৃণালিনী সঙ্গে সঙ্গেই বলে, শুভ, তোমার ধুতি আছে?
হ্যাঁ, একটা আছে।
তাহলে ধুতি-কুর্তা আর পাউডার দাও তো।
শেষ পর্যন্ত মৃণালিনী যখন ধুতিকে লুঙির মত করে পরে আর গায় আমার ঢিলেঢালা আৰ্দির পাঞ্জাবি পরে আমার ঘরে আমার সামনে হাজির হলো, তখন আমি যেমন হাসি, তেমনই খুশি।
হাসছ কেন?
তোমার অসীম ঐশ্বর্য দেখে।
ও একবার আনত দৃষ্টিতে নিজেকে দেখে নিয়েই বলে, খুব খারাপ লাগছে? একটু বেশি ভাল লাগছে। আজ রাত্তিরে আর আমার ঘুম হবে না।
কেন?
মাঝে মাঝেই উঁকি দিয়ে তোমাকে দেখতে হবে না?
না দেখে থাকতে পারবে না?
অসম্ভব।
সত্যি?
হানড্রেড পার্সেন্ট সত্যি।
মৃণালিনী সঙ্গে সঙ্গেই দু’হাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতে করতে আমাকে নিয়ে আমার বিছানা লুটিয়ে পড়ে আর আমি?
প্রেয়সী আমার দেহ-মনের যে সুপ্ত কামনা-বাসনার আগুন-জ্বালিয়েছে, তারই জোয়ারে আমিও ভেসে গেলাম।
চোখ বুজে দু’জনে দু’জনকে জড়িয়ে শুয়েছিলাম। রোমন্থন করছিলাম সদ্য সমাপ্ত আনন্দ-মহোৎসবের স্মৃতি। এইভাবে কেটে গেল বেশ কিছু সময়।
তারপর মৃণালিনী ডাকল, শুভ।
বলো।
তুমি কিছু বলবে না?
শুধু বলব থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ।
ফর হোয়াট?
ফর এভরিথিং।
এভরিথিং মানে?
আমি একটু হেসে ওর চোখের পর চোখ রেখে বলি, এত আদর, ভালবাসা, আনন্দ দেবার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ জানাব না?