সামনের মূর্তি দেখে আমার শরীরের প্রতি অণু পরমাণুতে দাউ দাউ করে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে। এক একটি মুহূর্তে মনে হয় আমি বোধহয় আর নিজেকে সংযত রাখতে পারবো না; মনে হয় কোন ন্যায়-অন্যায় বোধ আমার এই কামনার আগুন নেভাতে পারবে না।
না, না, আর সহ্য করা যায় না।
আমাকে ঝাঁপিয়ে পড়তেই হবে, এই খাজুরাহোর জীবন্ত রম্ভা উর্বশীর যৌবন সুধা উপভোগ না করে আমি বাঁচতে পারবো না।
হঠাৎ মাথাটা ঘুরে ওঠে। নিজেই যেন নিজের গালে সজোরে থাপ্পড় মারি।
ছি! ছি! আমি কি ভাবছি? আমার প্রাণপ্রিয় ভাইদার স্ত্রীর সম্মান রাখতে জানি না?
না, না, এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারবো না। অসম্ভব অকল্পনীয়। কিন্তু তবুও কি একটা মোহে আমি তখনো অপলক দৃষ্টিতে ওর দিতে তাকিয়ে থাকি।
হঠাৎ দুর্বা আমার সঙ্গে হ্যান্ডসেক করার জন্য হাত মেলাতেই মনে হলো হাজার হাজার ভল্টের বিদ্যুৎ প্রবাহ আমার সারা শরীরের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেল।
কী আছে এই মেয়েটির মধ্যে? গন্ধে স্পর্শে দর্শনে এই উম্মাদনা?
মনে মনে বলি, ঈশ্বর, কি উপাদান দিয়ে তুমি এই নারীকে সৃষ্টি করেছ?
এই সর্বনাশী আমার দু’গালে চুম্বন করতেই মনে হলো যেন সারা পৃথিবী টলমল করে উঠলো।
আবার এই ছলনাময়ী নারী আমার দু’হাত ধরে গেয়ে ওঠে–আমি রূপে তোমায় ভোলাব না, ভালোবাসায় ভোলাব…।
আচ্ছা, এইসব মিথ্যে কথা বলে আমার সর্বনাশ করার কি দরকার? তুমি আমাকে ভালবাসবে, সে কথাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
আমি মনে মনে না হেসে পারি না। মুখে বলতে পারি না কিন্তু মনে মনে বলি, সেই সৃষ্টির আদিমততম কাল থেকে তোমরা তোমাদের রূপ-যৌবনের পসরা সাজিয়ে পুরুষকে প্রলুব্ধ করে চলেছ, ভালবাসার অভিনয় করে পুরুষদের এক অলীক আনন্দময় জগতে নিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিশ্বাসঘাতকতা করতে দ্বিধা করেনি। মূর্খ পুরুষ যুগ যুগ ধরে তোমাদের কামনা-বাসনার আগুনে ঝাঁপ দিয়ে নিজেরাই পুড়ে মরেছে। তোমরা পুরুষকে আনন্দও দাও না, শান্তিও দাও না। যে ঔদার্য মহত্ত থাকলে নিজেকে অন্যের জন্য বিলিয়ে দেওয়া যায়, নিজেকে নিঃশেষ করে দেওয়া যায়, তা তোমাদের নেই। প্রেমের খেলায় পুরুষ চিরকাল ব্যর্থ, পরাজিত, সর্বশান্ত হয়েছে। আর তোমরা? সতী-সাধ্বীর ধবজা উড়িয়ে অন্য পুরুষকে দিয়ে নিজের কামনা বাসনার জ্বালা মিটিয়েছ।
দূর্বা! তুমিও তো এদেরই উত্তরসুরী, তাই না?
.
এক সপ্তাহ কলকাতায় কাটিয়ে দিল্লীতে ফিরেই প্রফেসর রাও-এর কাছে যাই। উনি যথারীতি এক গাল হেসে বলেন, ইয়েস মাই ডিয়ার বয়, কলকাতায় গিয়ে নিশ্চয়ই খুব আনন্দ করেছ?
হ্যাঁ, স্যার।
তোমার মা-ষড়মা-জ্যেঠু-ভাইদাও নিশ্চয়ই তোমাকে কাছে পেয়ে খুব খুশি হয়েছেন?
হ্যাঁ, স্যার।
গুড!
উনি মুহূর্তের জন্য থেমেই বলেন, শুভ, দেখো তো ফ্ল্যাঙ্কে কফি আছে কিনা। যদি কফি থাকে, তাহলে তুমি এক কাপ নাও, আমাকেও এক কাপ দাও।
প্রফেসর রাও কফির কাপে চুমুক দিয়েই বলেন, তোমাদের ব্যাচের অধিকাংশ ছেলেমেয়েই দিল্লী ছেড়ে চলে গেছে পরীক্ষার পরপরই। শুনছিলাম, দু’চারজন বিদেশ যাবার তোড়জোড় করছে। অন্যেরা নিশ্চয়ই মোটা মাইনের ভাল চাকরির চেষ্টা ব্যস্ত।
আমি চুপ করে ওনার কথা শুনি। কোন কথা বলি না।
শুভ, আমি চাই না, তুমি এখুনি কোন চাকরি নিয়ে এখান থেকে চলে যাও। আমি চাই তুমি কয়েক মাস আমার সঙ্গে কাজ করো।
শুনে আমি খুশি হই। বলি, হ্যাঁ স্যার, আমিও তাই চাই।
ইনস্টিটিউটের গভর্নিং বডি তোমাকে এখানেই চাকরি দিতে চায় কিন্তু যদি এখনই চাকরি করতে না চাও, তাহলে তোমাকে ফ্রী অ্যাকোমোডিশেন আর মাসে মাসে দশ হাজার টাকা অ্যালাউন্স দেবে।
উনি মুহূর্তের জন্য থেমে বলেন, আশা করি, তোমার কোন অসুবিধে হবে না।
আমি একটু হেসে বলি, স্যার, আমি অত টাকা দিয়ে কী করবো?
তুমি প্রতি মাসে মা-বড়মাকে তো কিছু পাঠাবেই। তাছাড়া যা পাবে, জমাবে। ভবিষ্যতে নিজে কিছু করলে জমানো টাকা খুবই কাজে লাগবে।
প্রফেসর রাও কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বলেন, বোধহয় গভর্নমেন্টও তোমার জন্য কিছু করার কথা ভাবছে।
আমি হাসতে হাসতে বলি, স্যার, যা হচ্ছে বা ভবিয়্যতে হবে, সবই তো আপনার কৃপায়…
না, না, আমি কিছু করিনি তুমি নিজের গুণেই অনেক কিছু পাবে।
পরদিন থেকেই শুরু হলো আমার কর্মজীবনের প্রথম পাঠ।
সপ্তাহে তিন দিন আউটডোর, তিন দিন ইমার্জেন্সী তাছাড়া প্রতিদিনই অপারেশন। কোনদিন একটা, কোনদিন তিনটে। শুধু তাই না। সঙ্গে সঙ্গে চলে প্রফেসরের নির্দেশ মতো পড়াশুনা।
না, এখানেই আমার দৈনন্দিন কাজ বা কর্তব্য শেষ হয় না। প্রফেসর রাও নিজে যখন অপারেশন করেন, তখন আমাকে তার প্রধান সহকারীর কাজ করতে হয়।
অপারেশন থিয়েটারে অনেক নার্স কাজ করেন। অধিকাংশই মধ্যবয়সী; তবে পাঁচ-সাতজন নার্স যুবতী। ললিতা তেওয়ারী শুধু, সর্বকনিষ্ঠা না, সব চাইতে মজাদার মেয়ে। সব সময় মুখে হাসি, ও যেন সব সময় প্রজাপতির মত উড়ে বেড়ায়; হাজার কাজের চাপ থাকলেও ও হাসতে হাসতে সব সামলে নেয়। তাছাড়া টিকা-টিপ্পনী দেবার ওস্তাদ।
সেদিন প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে লিভারের একটা খুবই জটিল অপারেশনের পর আমরা তিন-চারজন ডাক্তার আর চার-পাঁচজন নার্স কফি খাচ্ছি। তার মধ্যে ললিতাও ছিল। কফি খেতে খেতেই আমরা টুকটাক কথা বলছিলাম। ঐ সব কথাবার্তার মধ্যেই হঠাৎ ললিতা মিসেস তলোয়ারকে বলে, তুমি জানো ব্যাচেলার শশুরের ঘর-জামাই হবার জন্য ডক্টর ব্যানার্জী দিনরাত পরিশ্রম করছে?