দুর্বা আবার একটু হেসে বলে, তোমার দেওয়া কলম তো দারুণ পয়া!
তা জানি না; তবে দু’বারই আমার দেওয়া কলম দিয়ে পরীক্ষা দিয়ে অভাবনীয় ভাল ফল করেছে।
তাহলে তো এবারও ও আশা করবে, তুমি ওকে নতুন কলম দেবে?
ও আশা করবে না ভাইয়া জানে, এটা ওর প্রাপ্য।
ওর কথা শুনে দুর্বার খুব ভাল লাগে।
দু’এক মিনিট চুপ করে থাকার পর বাবাই বলে, যদি পারো তুমি আরো দু’একটা দোকান দেখো।…
তুমি বলার সঙ্গে সঙ্গেই আমি মনে মনে ঠিক করেছি আগে অক্সফোর্ড বুক শপ-এ যাবো। ওখানে…
ভেরি গুড। ওখানেই তুমি সব চাইতে ভাল কলম পাবে।
তোমার আলমারী থেকেই টাকা নেব?
হ্যাঁ, হ্যাঁ।
দুর্বা একটু পরেই বলে, আমি এখান থেকেই একটা ট্যাক্সি নেব। দুই মা-কে কলেজে নামিয়ে দিয়ে সোজা পার্ক স্ট্রীট যাবো।
হ্যাঁ, সেই ভাল হবে।
রাত্র শোবার পর দুর্বা বলে, যদি আমাদের বিয়ের সময় তাতাই থাকতে পারত, তাহলে ঠিক আমি তোমার সঙ্গে যেতাম।
বাবাই একটু হেসে বলে, যেতাম মানে? ভাইয়া হুকুম করতো তোমাকে যাবার জন্য।
কয়েক মিনিট কেউই কোন কথা বলে না। তারপর দুর্বা আপনমনেই একটু হেসে বলে, সত্যি, তোমরা সবাই তাতাইকে কি অসম্ভব ভালবাসো।
ও এত ভাল যে ওকে ভাল না বেসে উপায় নেই। তাছাড়া আরো একটা কারণ আছে।
কি কারণ আছে?
ও আমাদের প্রত্যেককেই এমন বিচিত্রভাবে ভালবাসে যে আমরা প্রত্যেকেই মনে করি ও সব চাইতে আমার কাছের মানুষ।
বাবাই মুহূর্তের জন্য থেমেই বলে, এর পর তুমি দেখো, ভাইয়া তোমাকে এমন ভাবে ভালবাসবে, এমন ভাবে কাছে টানবে যে তুমি ওকে ছেড়ে থাকতে পারবে না।
তুমিও দেখো, আমিও ওকে এমন ভালবাসব যে ও নিজেও আমাকে ছেড়ে থাকতে চাইবে না।
ময়না, আমি খুব ভাল করেই জানি, তোমরা দু’জনের কেউই বেশি দিন ছাড়াছাড়ি করে থাকতে পারবে না।
কিন্তু বিয়ের সময় থাকতে পারেনি বলে ও রাগে-দুঃখে আমাকে দূরে সরিয়ে দেবে না তো?
ও রাগ-দুঃখ মান-অভিমান সবকিছুই করবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তোমাকে কিছুতেই ও দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না।
আবার একটু নীরবতা।
দুর্বা বলে, তুমি কি দিল্লী এয়ারপোর্ট থেকেই সোজা তাতাইয়ের কাছে যাবে?
না, না, তা যাবো না।
কেন?
আমাকে দেখলেই এত হৈ হৈ শুরু করবে যে সেদিনের পড়াশুনা বিশেষ হবে না।
না, তাহলে তোমার যেয়ে কাজ নেই। ফাইন্যালের ঠিক আগের দিনের পড়াশুনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমি সোমবার সকাল ন’টায় ওর হস্টেলে যাবে। তারপর পরীক্ষা শুরু হবার আগে পর্যন্ত ওর সঙ্গে থাকব।
তারপর?
বাবাই একটু হেসে বলে, পরীক্ষা শেষ হবার পর দু’ভাই কোন ফার্স্ট ক্লাস রেস্তোরাঁয় গিয়ে লাঞ্চ খেতে খেতে জমিয়ে আড্ডা দেব।
তারপর?
তারপর ওকে হস্টেলে নামিয়ে দিয়ে একটু আমাদের গেস্ট হাউস ঘুরেই সোজা এয়ারপোর্ট।
.
বাবাই দিল্লী যায় রবিবার সন্ধের ফ্লাইটে, ফিরে আসে পরের দিন রাত নটা নাগাদ।
ও বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই সবাই ওকে ঘিরে ধরেন। সুব্রতবাবু ভারতী ও শিবানী। দুর্বা ওদের পাশে এসে দাঁড়ায়।
সবারই প্রথম প্রশ্ন, তাতাই সোনার পরীক্ষা কেমন হলো?
বাবাই এক গাল হেসে বলে, আমার ভাইয়া কখনও পরীক্ষায় খারাপ করেছে?
ভারতী একটু বিরক্ত হয়েই বলেন, অত ভনিতা না করে বল আজকের পরীক্ষা কেমন হলো?
খুব ভাল, খুব ভাল, খুব ভাল।
ভারতী আর শিবানী সঙ্গে সঙ্গে দু’হাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়েই দু’চোখ বন্ধ করে ঈশ্বরের কাছে কি যেন প্রার্থনা করেন।
দুর্বা বলে, তুমি তাতাইয়ের হস্টেলে কখন গিয়েছিলে?
ন’টায়।
শিবানী প্রশ্ন করেন, তখন ও কি করছিল?
ভাইয়া তখন কাকু আর প্রফেসর রাও-এর ছবি প্রণাম করছিল।
তারপর?
ও ঘুরে দাঁড়াতেই আমাকে দেখে এক লাফে আমার গলা জড়িয়ে ধরেই আমার কোলে চড়ে…
শুনে সবার মুখেই হাসি।
সুব্রতবাবু হাসতে হাসতে বলেন, তোকে কাছে পেলে তাতাই সোনা পাগলামী না করে থাকতে পারে না।
শিবানী বলে, ওকে নির্মাল্য আর প্রসাদ…
হ্যাঁ, হ্যাঁ, দিয়েছিলাম।
বাবাই মুহূর্তের জন্য থেমে বলে, ভাইয়া নির্মাল্য আর প্রসাদ মাথায় ঠেকিয়ে প্রসাদ মুখে দিল আর নির্মাল্য পকেটে রাখলো।
দুর্বা বলে, তারপর?
আমি ওকে কলম দুটো দিতেই কপালে দুইয়ে এক গাল হেসে ভাইয়া বলল, আমি জানতাম, তুমি আসবে আর আমাকে নতুন কলম দেবে। তোমার কলম দিয়ে পরীক্ষা দিয়েই এতকাল ভাল রেজাল্ট হয়েছে।
দুর্বা আবার বলে, তারপর?
তারপর ওকে পরীক্ষায় হল পর্যন্ত এগিয়ে দিলাম। অন্য যেসব ছেলেমেয়ে। পরীক্ষা দিচ্ছে, তাদের সঙ্গে দু’চার মিনিট কথাবার্তা বলার পর আমাকে প্রণাম করে হলে ঢুকে গেল।
ভারতী সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করো, ওকে আশীর্বাদ করেছিলি?
অমি তো ভাইয়াকে মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করি না। বরাবর ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খাই। আজ সকালেও তাই করেছি।
দুর্বা বলে, পরীক্ষা শেষ হবার পর তাতাইকে নিয়ে খেতে গিয়েছিলে?
গিয়েছিলে মানে?
বাবাই একটু থেমে একটু হেসে বলে, ও হল থেকে বেরিয়েই আমাকে বলল, ভাইদা, আমাকে লাঞ্চ খাওয়াবে তো? হস্টেলের রান্না খেয়ে খেয়ে পেটে চড়া। পড়ে গেছে।
শিবানী জিজ্ঞেস করেন, তোরা কোথায় খেতে গেলি?
ডিপ্লোম্যাটিক এনক্লেভের পিছন দিকে হোটেল ডিপ্লোম্যাটে।
দুর্বা একটু হেসে বলে, ওকে ভাল করে খাইয়েছিলে?
শুধু ওকে কেন? দু’ভাই যেমন জব্বর খেয়েছি, তেমনি জব্বর আড্ডা দিয়েছি।