বুঝেছি।
আরো একটা সপ্তাহ এইভাবে কেটে গেল।
ভারতী আর ধৈর্য ধরতে পারেন না।
শিবানীর ঘরে ঢুকেই ভারতী বলেন, হারে, আজ এখুনি তোর এখান থেকে দুর্বাকে ফোন করব। আর দেরি করতে পারছি না।
শিবানী এক গাল হেসে বলেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, কর। আর তোকে দেরি করতে হবে না।
.
হ্যালো, আমি ভারতী সরকার কথা বলছি।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, মাসীমা, বলুন। আমি দুর্বা।
তাই বলি, এত মিষ্টি কণ্ঠস্বর কার।
দুর্বা একটু হাসে। বলে, আপনি এতদিন পর ফোন করলেন কেন? আমি তো কবে থেকে ভাবছি আপনার টেলিফোন আসবে।
ভাবছিলাম, তোমাকে বেশি বিরক্ত করা ঠিক হবে না।
প্লীজ মাসীমা, ওকথা বলবেন না। আপনি রোজ দু’বেলা ফোন করলে আমি। খুশি হবো।
মা, অত লোভ দেখিও না। আমি কিন্তু সত্যি সত্যি দু’বেলা ফোন করা শুরু করে দেব।
হ্যান্ড-ফ্রী সেট। তাই রিসিভার হাতে তুলে নিতে হয়নি ভারতী দেবীর। উনি কথা বলছেন, শুনছেন হাত গুটিয়ে বসে থেকেই। শিবানী দেবী ওদের দুজনের কথাই শুনছেন আর হাসছেন।
মাসীমা, আপনি ফোন করলে সত্যি আমি খুশি হবো।
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই ফোন করব কিন্তু কবে তোমার গান শুনতে আসব?
আপনি কাল এলে কালই শোনাবো। কাল না এলে, যেদিন ইচ্ছে আসুন। গান গাইতে, গান শোনাতে আমার ভালই লাগে।
ঠিক আছে, আমি দু’চার দিনের মধ্যেই আসছি।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, আসুন।
তবে আমি একলা আসব না। আমি আমার সব চাইতে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বোন শিবানীকে সঙ্গে নিয়েই আসব।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, শিবানী মাসীমাকেও নিয়ে আসবেন।
এবার ভারতী বলেন, দুর্বা, তোমার মা কি কাছাকাছি আছেন?
মা তো এখন বাড়ি নেই। সামনের বাড়ির ঠাকুমার শরীর খারাপ, তাই মা ঠাকুমাকে দেখতে গিয়েছেন।
ও!
উনি মুহূর্তের জন্যে থেমে বলেন, তাহলে মাকে বলল, আমি ফোন করেছিলাম।
সে তো বলবই।
তাহলে এখন রাখি?
হ্যাঁ, রাখুন তবে তাড়াতাড়ি আসবেন।
হ্যাঁ, মা, তাড়াতাড়িই আসব।
ওদের দুজনের কথা শেষ হতেই শিবানী বলেন, দুর্বা তো ভারী সুন্দর কথা বলে।
দুর্বার কথাবার্তার মধ্যে বেশ একটা আন্তরিক ভাব আছে, তাই না?
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস।
হাজার হোক সল্টলেক থেকে কক্সবা; দীর্ঘ পথ। সুতরাং ভারতী ঠিক করলেন, রবিবার বিকেলে যাবেন। সে খবর জেনে দুর্বা আর ওর মা–দুজনেই খুশি।
ওদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেই ভারতী হাজির শিবানীর কাছে।
হ্যাঁরে শিবানী, একটু আগেই আমি দুর্বা আর ওর মা-কে বললাম, রবিবার বিকেলে আসছি।
রবিবার কেন? আমি তো ভেবেছিলাম, তুই কাল-পরশুই যাবি।
দ্যাখ শিবানী, হাজার হোক বর্ষা কাল। দু’একদিন বৃষ্টি হচ্ছে না ঠিকই কিন্তু যখন-তখন তো বৃষ্টি হতে পারে।
তা তো পারেই।
রবিবার তো তোর দাদার অফিস নেই। সুতরাং গাড়িটা পাওয়া যাবে।
তা ঠিক।
তাছাড়া আমাদের এখান থেকে কসবা অনেকটা পথ। টাক্সি পাব কি পাবো না, তার তো ঠিক নেই। তাই…
এমনি দিনে পাওয়া গেলেও একটু-আধটু বৃষ্টি হলেই ট্যাক্সি পাওয়া সত্যি…
হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেই জন্যেই তো রবিবার যাবো।
ঠিক আছে।
আমরা চারটে নাগাদ স্টার্ট করব তাহলে পাঁচটা নাগাদ দুর্বাদের ওখানে পৌঁছব। তারপর সুবিধে মতন…
শিবানী একটু হেসে বলে, হ্যাঁ, সেই ভাল।
শুক্রবার।
হারে শিবানী, তুই বল তো কি হাতে করে দুর্বাদের বাড়ি যাব।
দু’জনেই মিষ্টি নেব না।
হ্যাঁ, শুধু মিষ্টি নিয়ে যাওয়ার চাইতে দু’রকম জিনিষ নিয়ে যাওয়াই ভাল।
ভারতী সঙ্গে সঙ্গেই বলেন, বলতে কি কি নিয়ে যাওয়া যায়।
শিবানী একটু ভেবেই বলেন, আচ্ছা ভারতী, যদি আমরা কে. সি. দাশ থেকে কিছু ভাল মিষ্টি নেওয়া ছাড়া পার্ক স্ট্রীটের কোয়ালিটি বা ওয়েসিস থেকে কিছু ভাল কাবাব-টিক্কা-চিকেন পাকৌড়ার মতো কিছু নিয়ে যাই…
খুব ভাল আইডিয়া।
.
দরজা খুলে মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলাকে দেখেই ভারতী হাত জোড় করে বলেন, নমস্কার! আমি ভারতী সরকার আর…
ভদ্রমহিলা একটু হেসে বলেন, উনি নিশ্চয়ই শিবানীদি?
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন।
আপনারা ভিতরে আসুন।
ভারতী আর শিবানী বারান্দায় উঠতে না উঠতেই দুর্বা লাফাতে লাফাতে এসে হাজির। দুজনকেই পায় হাত দিয়ে প্রণাম করে। সঙ্গে সঙ্গে এক গাল হেসে বলে, আপনারা এসেছেন বলে আমার খুব ভাল লাগছে।
ড্রইংরুমে পা দিয়েই শিবানী ওয়েসিসের প্যাকেটটা দুর্বার হাতে দিয়ে একটু হেসে বলেন, শিল্পী, এই নাও।
ভারতী কে. সি. দাশের প্যাকেটটা তুলে দেন দুর্বার মা-র হাতে। উনি বলেন, কি করেছেন বলুন তো আপনারা! এত কিছু…
দুর্বা বলে, ও মা! মনোরমা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের দই-মিষ্টি আর সিঙাড়া খেয়ে খেয়ে মুখে আরুচি ধরে গেছে। মাসীমারা কে. সি. দাশ-ওয়েসিসের খাবার দাবার এনে ভালই করেছেন।
ওর কথা শুনে ভারতী আর শিবানী হাসেন।
দুর্বার মা ওদের বলেন, দেখছেন, আমার মেয়ে কি অসভ্য।
দুর্বা সঙ্গে সঙ্গে বলে, মা, কি অসভ্যতার মত কথা বলেছি? সত্যি করে বলল তো, মনোরমার দই-মিষ্টি-নোনতা খাবার খেতে তোমার ভাল লাগে?
ও মুহূর্তের জন্য থেমে বলে, মাসীমারা কি ইনকাম ট্যাক্স অফিসার যে ওদের কাছ থেকে সত্যি কথাটা লুকোতে হবে?
ওর কথা শুনে ভারতী আর শিবানী না হেসে পারেন না।
যাইহোক টুকটাক কথাবার্তা গল্পগুজব করতে করতে চা-টা খাওয়া শেষ হতেই শিবানী দুর্বার দিকে তাকিয়ে বলেন, শিল্পী…
দুর্বা হো হো করে হেসে উঠে বলে, আপনি কি সত্যি আমাকে শিল্পী বলে ডাকবেন?