ও মুখ তুলে মিঃ চৌধুরীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, বাবা, তুমি বিশ্বাস করো, এই তিনজনের কোন তুলনা হয় না।
ময়না, তোর কথা শুনে খুব ভাল লাগছে।
মিঃ চৌধুরী সঙ্গে সঙ্গেই সুনন্দার দিকে তাকিয়ে বলেন, তোমরা মাঝে মধ্যে ওদের টেলিফোন করো তো?
ওনার কথা শুনে সুনন্দা হাসতে হাসতে বলেন, করি মানে? সারাদিন কতবার টেলিফোন আসছে আর কতবার আমরা করছি, তার কি ঠিক-ঠিকানা আছে।
তাই নাকি?
তবে কী?
সুনন্দা না থেমেই বলেন, দাদা, ভারতীদি আর শিবানীদি এখন কত খুটিনাটি ব্যাপারেও যে ময়নার পরামর্শ নেন, তা তুমি ভাবতে পারবে না।
মিঃ চৌধুরী হো হো করে হেসে উঠেই প্রশ্ন করেন, খুটিনাটি ব্যাপারে মানে? দুর্বা একটু হেসে বলে, পরশু দিনের কথা তোমাকে বলি।
পরশু কি হয়েছিল?
.
অফিসে পৌঁছবার একটু পরই ছেলে আমাকে ফোন করলো।–
মা জননী, তুমি এখন বাড়ি আছে তো?
হ্যাঁ, আছি।
তুমি কোথাও বেরুবে কি?
না, না, আমি কোথাও বেরুব না।
ভালই হলো। ছেলে, তুমি কি আসবে?
না, মা জননী, আমি আসব না। আমি কিছু টাকা দিয়ে আমার ড্রাইভারকে তোমার কাছে পাঠিয়েছি। তোমাকে আমার একটা কাজ করতে হবে।
তুমি বলো, কি করতে হবে।
আমার যে টেকনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্ট তিনিও একজন ভাল এঞ্জিনিয়ার। অফিসে এসে মনে পড়লো, আজ তার মেয়ের বিয়ে।
মেয়েটির জন্য প্রেজেনটেশান কিনতে হবে?
হ্যাঁ, মা জননী।
তুমি কি জানো, মেয়েটি কি করে বা কতদূর লেখাপড়া…।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, মেয়েটি ডাক্তারী পাশ করেছে গত বছরেই বিয়ে করছে ওরই এক সহপাঠী বন্ধুকে।
ছেলে, তাহলে তো মেয়েটিকে একটা ভাল শাড়িই দিতে হবে।
হ্যাঁ, মা জননী, তা তো দিতেই হবে।
ঠিক আছে, ড্রাইভার এলেই আমি দোকান গিয়ে শাড়ি কিনে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
মা জননী, তোমার একটু কষ্ট হবে কিন্তু…
কষ্ট আবার কি? ছেলে বিয়ে বাড়ি যাবে আর আমি একটা শড়ি কিনে দিতে পারবো না?
শুনে মিঃ চৌধুরী, একটু হাসেন।
সুনন্দা স্বামীকে বলেন, তুমি তো মাত্র একটা ঘটনা শুনলে। এখন ওদের সব ব্যাপারেই ময়নার সাহায্য, ময়নার পরামর্শ চাই।
এখন বলল, আমাকে কবে ওদের ওখানে নিয়ে যাবে।
মিঃ চৌধুরী না থেমেই বলেন, মনে হচ্ছে। এখনই ছুটে যাই ওদের কাছে। ওনার কথায় মা আর মেয়ে হেসে ওঠে।
সুনন্দা বলেন, কালই আমি ওদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করবো, কবে তোমাকে নিয়ে ওখানে…
ইয়েস! ডোন্ট ডিলে!
.
ওরা গাড়ি থেকে নামতেই সুব্রতবাবু এক গাল হেসে অভ্যর্থনা করেন, আসুন, ভাই, আসুন।
উনি না থেমেই বলেন, এসো বৌমা, এসো মা জননী।
ভারতী আর শিবানী পাশেই ছিলেন।
শিবানী দুর্বার একটা হাত ধরে বলেন, শিল্পী, চলো ভিতরে যাই। ভারতী, তুই আমার দুই দাদা আর সুনন্দাকে নিয়ে আয়।
ভারতী বলেন, আমরা তোর পিছন পিছনই আসছি।
ওরা সবাই শিবানীর ড্রইংরুমে ঢুকতেই দূর্বা ওর বাবার একটা হাত ধরে একটু এগিয়ে যায়। সামনের মালা দেওয়া ছবিটা দেখিয়ে ও বলে, বাবা, এই হচ্ছে কাকুর ছবি।
মিঃ চৌধুরী অপলক দৃষ্টিতে দু’এক মিনিট ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই বলেন, দুটো চোখ দেখলেই বোঝা যায়, উনি কত ব্রিলিয়ান্ট ছিলেন।
হ্যাঁ, বাবা, ঠিক বলেছ।
দূর্বা মুহূর্তের জন্য থেমেই বলে, কাকুর মুখের দিকে তাকালেই স্পষ্ট বোঝা যায়, তিনি শুধু সুন্দর ছিলেন না, অসাধারণও ছিলেন।
ময়না, যাঁরা অসাধারণ, তাঁদের চোখে-মুখে সৌন্দর্য ফুটে উঠবেই।
ঘরের অন্যান্যরা চুপ করে দাঁড়িয়ে।
দুর্বা আবার ওর বাবার হাত ধরে বলে, কাকুর ঘর দেখবে, এসো।
মিনিট দশেক পর দুর্বা ওর বাবাকে নিয়ে ড্রইংরুমে আসতেই সুব্রতবাবু হাসতে হাসতে মিঃ চৌধুরীকে বলেন, দেখছেন তো ভাই, আপনার মেয়ে আমাদের দুটো বাড়ির উপর কেমন একচ্ছত্র অধিকার বিস্তার করেছে?
মিঃ চৌধুরীও হাসতে হাসতে বলেন, ময়নার কাণ্ড দেখে তো তাই মনে হলো।
ঠিক সেই সময় সারদা সবার কফি নিয়ে হাজির। ওকে দেখেই দুর্বা বলে, সারদা মাসী, আমার ইলিশ হয়েছে তো?
তুমি আসছো আর ইলিশ হবে না, তাই কখনো হয়?
সুনন্দা সঙ্গে সঙ্গে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলেন, দেখছ, তোমার মেয়ের কাণ্ড?
মিঃ চৌধুরী হাসতে হাসতে সুব্রতবাবুকে বলেন, দাদা, আমার মেয়ে কি আপনাদের সবাইকেই হাতের মুঠোয়…
ওনাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই সুব্রতবাবু বলেন, ভাই, আমরা এখন পরাজিত সেনাপতি, উই আর প্রিজনার্স অব ওয়ার। আপনার মেয়ের কথা না। শুনে তো উপায় নেই আমাদের।
মিঃ চৌধুরী একটু হেসে বলেন, ময়নাকে নিয়ে আপনারা বেশ নাটক জমিয়েছেন দেখছি।
ভারতী বলেন, নাটক বলে নাটক।
কফি খেতে খেতেই টুকটাক কথাবার্তা হয়। সুনন্দা স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলেন, বাবাই তো অফিসের কাজে বোম্বে গিয়েছে তুমি ওর ছবি দেখবে?
হ্যাঁ, দেখাও।
শিবানী সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি ওর ছবি আনছি।
উনি তাতাইয়ের ঘর থেকে বাবাইয়ের ছবি এনে মিঃ চৌধুরীর হাতে দিয়ে বলেন, দাদা, বাবাইসোনার ছবি দেখুন।
ছবিটা হাতে নিয়ে দু’এক মিনিট ভাল করে দেখেই একটু হেসে বলেন, খুবই সুন্দর দেখতে।
ভারতী সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, দাঁড়ান, আমাদের ছোট ছেলের ছবি নিয়ে আসি।
তাতাইয়ের ছবি দেখতে দেখতেই মিঃ চৌধুরী একটু হেসে বলেন, একেও দেখতে খুব সুন্দর কিন্তু চোখ দুটো দেখলেই মনে হয় একটু দুষ্টু আছে।