আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, বিল, হ্যাঁ, ফাঁইভ মিলিয়নই পাঠাচ্ছি। পনের মিনিট পরই সিটি ব্যাঙ্কে গেলে হিলারী বৌদি টাকাটা পেয়ে যাবে। এই টাকা কখনই। তোমাকে ফেরত দিতে হবে না। হাজার হোক তুমি আমার বন্ধু আর হিলারী বৌদি কলকাতার বেথুন কলেজে বড়মা-র কাছে পড়েছে।
বলো বড়মা, তোমার ছেলে হিসেবে ঠিক কাজ করিনি?
তিন কোটি ছাপান্ন হাজার প্রণাম।
–তোমার তাতাই সোনা
পর্ণা চিঠি পড়া শেষ হতেই হো হো করে হেসে ওঠেন।
নমিতা হাসতে হাসতে বলেন, সত্যি ভারতী, ছেলেটা তো দারুণ ইন্টারেস্টিং।
ভারতীও হাসতে হাসতে বলেন, তাই সোনা মাঝে মাঝেই এইরকম চিঠি লেখে। ওর এর আগের চিঠিটাও খুব মজার ছিল।
কি লিখছিল?
দাঁড়া, হাতড়ে চিঠিটা বের করতেই পর্ণা বলে, আমাকে দিন; আমি পড়ছি।…বড়মা, বড়মা,ভীষণ ব্যস্ত। এখুনি অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতে হবে। শুধু হেডলাইন গুলো লিখেছি-দিল্লী ইউনিভাসিটি, মিরান্ডা আর লেডি শ্রীরাম কলেজের ৬০৪ জন পরমা সুন্দরী ছাত্রী, ৩৭ জন যুবতী অধ্যাপিকা আর সর্বসাকুল্যে ১২৭ টি M.B.B.S. আর M.D/ M.S. পাশ করা ধনীর দুলালী আমাকে বিয়ে করার জন্য বিখ্যাত রামলীলা ময়দানে প্রজাপতি যজ্ঞ শুরু করেছে। কিন্তু আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি আমাকে বিয়ে করতে না পারলে মাধুরী দীক্ষিত আত্মহত্যা করবে। তাছাড়া আমি বলেছি, ওকে বিয়ে করব।
বলো বড়মা, তোমার ছেলে হয়ে আমি কি মাধুরীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি?
ওয়ান মিলিয়ান অ্যান্ড ওয়ান প্রণাম।
–তোমার তাতাই সোনা
কখন যে ঘণ্টা পড়েছে আর কখন যে শিবানী ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তা কেউ টেরও পাননি।
শিবানী সঙ্গে সঙ্গে বলেন, ভারতী, তুই তাতাইয়ের চিঠি ওদের দেখালি কী করে?
নমিতা বলেন, শিবানী, তোর ছেলে তো দারুণ ইন্টারেস্টিং!
পর্ণা বলেন, সত্যি ভারী মজার চিঠি লেখে তোমার ছেলে। ওর চিঠি পড়ে তো আমরা হাসতে হাসতে…
ওকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই শিবানী ব্যাগ থেকে একটা পোস্টকার্ড বের করে বলেন, কলেজে যাবার জন্য বেরুচ্ছি, ঠিক তখনই ওর এই পোস্ট কার্ড পেলাম।
পর্ণা বলেন, দেখি, দেখি, কি লিখেছে।
দ্যাখ।
শিবানী পোস্টকার্ড ওর হাতে দিয়েই বলেন, এটা কোন চিঠি লেখার ছিরি।
সে কথায় কান না দিয়ে পর্ণা জোরে জোরে পড়ে—
আমার গ্রেট বড়মা, তুমি আমাকে বড্ড ভালবাসো।
–তোমার তাতাই সোনা
মা মাগো, তুমি আদর দিয়ে দিয়ে আমার মাথাটা খেয়েছ।
–তোমার তাতাই সোনা
পর্ণা আর নমিতা হো হো করে হেসে ওঠেন।
শিবানী বলেন, তোমরাই বলল, হাজার মাইল দূর থেকে ছেলে এইরকম চিঠি লিখলে কোন মায়ের ভাল লাগে?
ভারতী সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়েই বলেন, শিবানী, এখন চল তো বাড়ি যাই। তোর জন্য অনেকক্ষণ বসে আছি।
হ্যাঁ, চল।
.
দিল্লী আর হায়দ্রাবাদ ঘুরে ছ’দিন পর কলকাতা ফিরলেও বাড়িতে গেলেন। মিঃ চৌধুরী এয়ার পোর্ট থেকে তারাতলায় ফ্যাক্টারী ঘুরে বাড়ি ফিরলেন প্রায় আটটা নাগাদ।
দুর্বা বলে, বাবা, তুমি খুব টায়ার্ড, তাই না?
খুব না হলেও একটু ক্লান্ত লাগছে।
উনি মুহূর্তের জন্য থেমে বলেন, হায়দ্রাবাদের ফ্যাক্টারীর এক্সপ্যানসান হবে কিন্তু কতকগুলো সমস্যার জন্য সব আটকে ছিল। তাই সকাল থেকে টানা চার ঘণ্টা মিটিং করেছি অঙ্কু গভর্নমেন্টের ইন্ত্রী সেক্রেটারি আর স্টেট ব্যাঙ্ক অব হায়দ্রাবাদের এক ডিরেক্টরের সঙ্গে।
সুনন্দা প্রশ্ন করেন, তারপর কি খেয়েদেয়ে রেষ্ট নিতে পেরেছিলে?
রেষ্ট নেব কী করে? ফ্যাক্টারীতে কি কম কাজ ছিল?
মিঃ চৌধুরী আরো বলেন, ফ্লাইটটা যে ধরতে পেরেছি, সেটাই আমার ভাগ্য।
সুনন্দা বলেন, চা শেষ করেই বাথরুমে যাও। ভালভাবে চান করলে ক্লান্তিভাব অনেক কমে যাবে।
হ্যাঁ, যাচ্ছি।
চান-টান করার পর মিঃ চোধুরী ড্রইংরুমে বসেই সুনন্দার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলেন, রাত্রে কি খাওয়াবে?
সুনন্দা জবাব দেবার আগেই দুর্বা বলে, রাত্রে তুমি তোমার প্রিয় খাবারই খেতে পাবে।
প্রিয় মানে?
সুনন্দা বলেন, রাত্রে ফ্রয়েড রাইস আর খুব বড় বড় চিংড়ির মালাইকারী… লাভলি।
এবার উনি চাপা হাসি হেসে বলেন, রাত্রে তোমাকে শুধু লাভলি খাবারই খাওয়াবো না, একটা দারুণ ভাল খবরও শোনাবো।
কী দারুণ ভাল খবর?
আগে খেয়ে দেয়ে নাও, তারপর বলব।
না, না, এখুনি বলল, কি দারুণ ভাল খবর।
এখনি বলতে হবে?
হ্যাঁ, এখনি বলতে হবে।
ঠিক আছে; তাহলে শোনো।
দুর্বা সঙ্গে সঙ্গে ওখান থেকে চলে যায়।
সুনন্দার কাছে সবিস্তারে সবকিছু শোনার সঙ্গে সঙ্গেই মিঃ চৌধুরী আনন্দে খুশিতে চিৎকার করেন, হোয়াট এ গ্রেট নিউজ! বিলিভ মী সুনন্দা, আমি জানতাম, ভাল ছেলের সঙ্গেই ময়নার বিয়ে হবে কিন্তু স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি, এত ভাল পাত্র এত সহজে পাওয়া যাবে।
উনি সঙ্গে সঙ্গে গলা চড়িয়ে হাঁক দেন, ময়না, কাম হিয়ার।
দুর্বা ধীর পদক্ষেপে ওনার কাছে গিয়েই বলে, বাবা, ডাকছো কেন?
মিঃ চৌধুরী দু’হাত দিয়ে মেয়ের মুখোনা ধরে চোখ দুটো বড় বড় করে বলেন, মা, এত ভাল ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে খুব ভাল লাগছে।
উনি এক নিঃশ্বাসেই বলেন, ছেলেটাকে তোর সত্যি পছন্দ হয়েছে তো?
দূর্বা, বিন্দুমাত্র উত্তেজিত না হয়ে বলে, হ্যাঁ, বাবা, ঐ ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে হবে বলে আমি খুশি কিন্তু তার চাইতে অনেক বেশি খুশি ছেলেকে আর দু’জন মা পেয়ে।