একটু পরেই উনি প্রশ্ন করেন, ছেলেদের নাম কে রেখেছে?
ওদের দুজনের নামই ঠাকুরপোর দেওয়া।
উনি ভুরু কুঁচকে বলেন, তোদের কাছেই শুনেছি, শিবানীর ছেলে হবার আগেই তোর দেওর মারা যায়।
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছিস।
তাহলে সে ছেলের নাম রাখলে কী করে? ভারতী একটু হেসে বলেন, শিবানী প্রেগন্যান্ট হবার পরই ঠাকুরপো বলেছিল, ছেলে হলে নাম হবে…
আই সী।
নমিতা আবার চুপ করেন কিন্তু দুতিন মিনিট পরই প্রশ্ন করেন, তোরা তো সরকার।
হ্যাঁ।
কিন্তু শিবানী কি বিয়ের আগে ব্যানার্জী ছিল বলে এখনও…
ভারতী হাসতে হাসতে বলেন, না, না, শিবানী মুখার্জী পরিবারের মেয়ে।
তবে তুই সরকার আর তোর ঠাকুরমা ব্যানার্জী হলো কেমন করে?
ভারতী একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, আমার স্বামী আর ঠাকুরপো এক মায়ের ছেলে না হলেও ওরা আপন ভাইয়ের চাইতে শত গুণ বেশি আপন ছিল।
উনি একটু হেসে বলেন, আর ঠাকুরপো ছিল আমার আদরের স্নেহের ছোট ভাই, হি ওয়াজ মাই ডিয়ারেস্ট অ্যান্ড ক্লোজেস্ট ফ্রেন্ড। তুই বিশ্বাস কর নমিতা, অমন ভাই বন্ধু পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।
বুঝেছি।
এতক্ষণ চুপ করে থাকার পর পর্ণা মুখার্জী একটু হেসে ভারতাঁকে বলেন, তোমাকে আর শিবানীদিকে দেখেশুনে মনে হয়, তোমরা যেন যমজ বোন!
তার চাইতেও বেশি।
হ্যাঁ, সত্যিই বেশি।
হ্যাঁ, সত্যিই তাই মনে হয়।
একটু থেমেই পর্ণা আবার বলেন, আমাদের ইকনমিক্স ডিপার্টমেন্টের লেখা তো তোমাদের সল্টলেকেই থাকে।
হ্যাঁ, ও তো মাঝে মাঝেই আমাদের বাড়ি আসে।
হ্যাঁ, লেখা বলেছে।
পর্ণা না থেমেই বলেন, লেখার কাছে শুনেছি, তোমার স্বামী বুঝি শিবানীদিকে অত্যন্ত স্নেহ করেন।
ভারতী চোখ দুটো বড় বড় করে সারা মুখে খুশির হাসি ছড়িয়ে বলেন, পর্ণা, তুমি ভাবতে পারবে না, ওদের দুজনের সম্পর্ক। শিবানী ওর দাদাকে ঠিক নিজের বাবার মতই শ্রদ্ধা করে আর আমার স্বামী ওকে নিজের মেয়ের মতই স্নেহ করে।
পর্ণা একটু হেসে বলেন, হ্যাঁ, লেখাও একই কথা বলছিল।
দাদার কথা শিবানীর কাছে বেদবাক্য আর শিবানী যদি ওনাকে কিছু বলতে বলে বা কোন ব্যাপারে কোন মতামত দেয়, তাহলে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর বারণ করলেও উনি বৌমার কথাই মেনে নেবেন।
নমিতা আর পর্ণা দুজনেই প্রায় এক সঙ্গে বলেন, সত্যি, আজকাল এইরকম সম্পর্কের কথা ভাবাই যায় না।
মনোরমা তিন জনকেই চা দেয়।
চা খেতে খেতেই নমিতা প্রশ্ন করেন, হারে ভারতী, তোর ছেলে তো আই-আই-টি থেকে পাশ করেছে তাই না?
হ্যাঁ।
তার মানে বি. টেক?
না; ও মাস্টার্স করে এম. টেক হয়েছে।
সে তো দারুণ ব্যাপার!
পর্ণা সঙ্গে সঙ্গেই বলেন, দারুণ বলে দারুণ ব্যাপার। আই-আই-টি’তে ভর্তি হওয়াই লটারীর ফার্স্ট প্রাইজ পাওয়ার চাইতে কঠিন; তার উপর এম. টেক।
ও একবার খুব জোরে নিঃশ্বাস ফেলে হাসতে হাসতে বলেন, আই-আই টি’র এম. টেক, তো পৃথিবীর যে দেশে যাবে, সেখানেই ভাল চাকরি পাবে।
নমিতা বলেন, হ্যাঁ, পর্ণা, ঠিকই বলেছ। আমার এক ভাসুরপো খড়গপুর আই আই-টি’ থেকে এম. টেক, করে এখন আমেরিকায় খুব ভাল চাকরি করছে।
উনি মুহূর্তে জন্য থেমেই বলেন, অচ্ছা শিবানীর ছেলে তো ডাক্তারী পড়ছিল; ও কি পাশ করেছে?
ভারতী বলেন, ও এখন এম. এস. করছে। আর মাস ছয়েকের মধ্যেই পাশ করে বেরুবে।
ও কি কলকাতাতেই পড়ছে?
না, দিল্লীতে।
নমিতা না থেমেই বলেন, তার মানে অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল ইনিস্টিটিউটে?
হ্যাঁ।
শুনেছি, ওখানে চান্স পাওয়া খুবই কঠিন।
হ্যাঁ ঠিকই শুনেছিস।
ভারতী একটু হেসে বলেন, ওখানে এম. বি. বি. এস-এ মাত্র পঞ্চাশটা সীট। ভর্তি হবার জন্য সারা দেশ ছাড়াও বাংলাদেশ নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মালোশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও আরো কয়েটা দেশ থেকে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে ভর্তি হবার জন্য পরীক্ষা দেয়।
বাপরে বাপ!
শিবানীর ছেলে তাতাই শুধু ওখান থেকে ভালভাবে এম. বি. বি. এস. পাশ করেনি; সার্জারিতে হাইয়েস্ট নম্বর পেয়ে প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল পেয়েছে।
বলিস কিরে?
তোরা দেখিস, ও ওখান থেকে এম. এস. পাশ করার পর ঠিক ঠাকুরপোর মতই বিখ্যাত সার্জেন হবে।
যে ছেলে পেটে থাকতে শিবানী বিধবা হয়েছিল, সেই ছেলে ওর বাবার মতই সার্জেন হতে চলেছে শুনেও ভাল লাগছে।
পর্ণা বলেন, শিবানীদি পসথুমাস ছেলের মা হয়েও এবার একটু হাসতে পারবে।
ঘণ্টা পড়তে এখনও কয়েক মিনিট দেরি আছে দেখেই নমিতা বলেন, হারে ভারতী, ছেলে শিবানীকে চিঠি লিখে?
ভারতী সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ খুলেই একটু হেসে বলেন, দাঁড়া, তাতাই সোনার চিঠি দেখাচ্ছি।
ও তোকেও চিঠি দেয়?
ও একবার আমাকে লেখে একবার শিবানীকে…! হ্যাঁ, হ্যাঁ পেয়েছি।
চিঠিটা বের করেই নমিতার হাতে দিয়ে বলেন, নে, পড়ে দেখ।
চিঠি পড়েই উনি হো হো করে হেসে ওঠেন।
পর্ণা বলেন, নমিতাদি, হাসছেন কেন?
পড়ে দ্যাখ।
পর্ণা চিঠিটা হাতে নিয়েই জোর করে পড়তে শুরু করেন-আমার গত জন্মের এই জন্মের, আগামী পাঁচ শ’ এক জন্মের বড়মা, আজ গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া গেজেট বেরিয়েছে, তুমি তোমার ৭১২ কোটি ৯১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬১৩ টাকা আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করেছ। ব্যস! কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ইন্টারনেটে সে খবর ছড়িয়ে পড়েছে সারা পৃথিবীতে। তার ঠিক কয়েক মিনিট পরই বিল ক্লিনটন আমাকে ফোন করে বলে, হাই শুভ, তুমি তো জানো, দু’চারটে ছুকরীর সঙ্গে ফস্টিনস্টি করে বেশ কয়েকটা মামলায় ফেসে গিয়েছি। তুমি কি আমাকে চার-পাঁচ মিলিয়ন ডলার দু’বছরের জন্য ধার দিতে পারো?