শিবানীদি, এখন রাখছি। একটু পরেই তো দেখা হবে, কী বলো।
কথা শেষ করেই শিবানী জানলার সামনে দাঁড়িয়ে গলা চড়িয়ে বলেন, এই ভারতী, শিগগির আয়। দারুণ খবর আছে।
এক মিনিটের মধ্যেই ভারতী শিবানীর কাছে এসে বলেন, কী দারুণ খবর আছে রে?
শিবানী কোন মতে হাসি চেপে বলে, তোর ভাবী বেয়ান আর ভাবী পুত্রবধূ আসছে।
সত্যি?
তবে কি তোকে মিথ্যে বলছি?
উনি মুহূর্তের জন্য না থেমেই বলেন, এক্ষুনি সুনন্দা ফোন করে বলল, এগারটার মধ্যে আমাদের এখানে পৌঁছবে।
ভারতী একটু চিন্তিত হয়ে বলেন, আজতো তোর দাদা আর বাবাইও বাড়ি আছে।
শিবানী একটু হেসে বলেন, ভালই তো! আজই সব দেখাশুনা হয়ে যাবে।
হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক।
আর সময় নষ্ট না করে চল বাজার থেকে ঘুরে আসি।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি নন্দকে গাড়ি বের করতে বলছি।
.
মেয়েকে নিয়ে সুনন্দা গাড়ি থেকে নামতেই ভারতী মুচকি হেসে গলা চড়িয়ে বলেন, এই শিবানী, শাঁখ বাজিয়ে মালা পরিয়ে সুনন্দাকে ঘরে নিয়ে যা।
সুনন্দাও হাসতে হাসতে বলে, ভারতীদি, যদি বেশি বাড়াবাড়ি করো, তাহলে আজ আমি বাড়িই ফিরব না।
শিবানী দুর্বার একটা হাত ধরে বলেন, শিল্পী, চলো, আমরা ভিতরে যাই। ওরা দু’জনে রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করুক।
হ্যাঁ, মাসীমা, সেই ভাল।
ওদের পিছন পিছনেই ভারতী সুনন্দাকে নিয়ে ভিতরে যান। সবাই মিলে ড্রইংরুমে বসতেই শিবানী বলেন, সত্যি বলছি ভারতী, তোমরা সারাদিনের জন্য এসেছ বলে খুব ভাল লাগছে। আজ আমরা প্রাণ ভরে আড্ডা দেব।
উনি মুহূর্তের জন্য না থেমেই ঠোঁটের কোনে হাসি লুকিয়ে বলেন, প্রতিদিন শুধু ভারতীর মুখ দেখতে কী ভাল লাগে?
দুর্বা সঙ্গে সঙ্গে দু’হাত দিয়ে ভারতীর গলা জড়িয়ে ধরে শিবানীর দিকে তাকিয়ে বলে, এমন সুইট আর লাভলি বন্ধুর মুখ দেখতেও ভাল লাগে না?
না।
এক নিঃশ্বাসেই শিবানী বলেন, ওকে দেখতে দেখতে টায়ার্ড হয়েছি বলেই তো তোমার সুন্দর মুখোনা দেখতে চাই।
ভারতীও দুর্বাকে বলেন, জানো মা, দিন রাত্তির শিবানীর মুখ দেখতে আমারও আর ভাল লাগে না। তাইতো তোমাকে একটু দেখার জন্য, কাছে পাবার জন্য চাতকের মত হা করে বসে থাকি।
সুনন্দা সঙ্গে সঙ্গে হাসতে হাসতে বলেন, এতই যখন আমার মেয়েকে তোমাদের কাছে পেতে ইচ্ছে করে, তখন তোমরা ওকে রেখে দিচ্ছো না কেন?
ওনার মুখের কথা শেষ হতে না হতেই ভারতী আর শিবানী এক সঙ্গে বলেন, হ্যাঁ, ওকে আমরা রেখেই দেব।
ওদের কথাবার্তায় দুর্বা লজ্জিত বোধ না করে থাকতে পারে না। ও উঠে দাঁড়িয়ে বলে, মা, আমি ভিতরে যাচ্ছি। তোমরা কথা বলল।
সারদা ট্রেতে চার কাপ কফি এনে ওদের তিন জনের হাতে দিতেই শিবানী বলেন, সারদা, মাসীমাকে প্রণাম করো।
সারদা ওনাকে প্রণাম করতেই সুনন্দা একটু হেসে বলেন, তোমার রান্না খেয়ে আমার মেয়ে তো প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
মাসীমা, আপনার মেয়ে এত ভাল যে রান্না খারাপ হলেও ও প্রশংসা না করে থাকতে পারবে না।
না, সারদা, তা বলো না।
শিবানী বলেন, সারদা, শিল্পী বোধহয় আমার ঘরে আছে। ওকে ওখানেই কফি দাও।
সারদা চলে যায়।
কফির কাপে দু’একবার চুমুক দিয়েই সুনন্দা বলে, শিবানীদি, সত্যি করে বলো তো কোন ছেলের খোঁজ পেলে কিনা।
শিবানী কোনমতে হাসি চেপে একটু গম্ভীর হয়ে বলেন, হাতে উপযুক্ত ছেলে না থাকলে কি সেদিন অত জোর দিয়ে বলতে পারতাম, মেয়ের বিয়ের জন্য তোমাকে চিন্তা করতে হবে না?
ভারতী কোন কথা বলেন না। মুখের সামনে হাত রেখে হাসি লুকিয়ে রাখেন।
সুনন্দা সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করেন, ছেলেটি আমার মেয়ের উপযুক্ত হবে তো?
তা তো হবেই।
ছেলেটি কত দূর লেখাপড়া করেছে? কি করে?
শিবানী ওনার একটা হাত ধরে বলেন, অত ব্যস্ত হচ্ছো কেন? পরে সবই বলব, সবই জানবে।
কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়েই সুনন্দা বলেন, দেখো শিবানীদি, মেয়েটা এত কাল পড়াশুনা করছিল বলে বিয়ের কথা বিশেষ চিন্তা করিনি কিন্তু ওর এম, এ. পরীক্ষা শেষ হতেই বিয়ের চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি।
উনি না থেমেই একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, তোমরা বিশ্বাস করো, মেয়েকে যতক্ষণ পর্যন্ত ভাল ছেলের হাতে তুলে দিতে না পারছি, ততক্ষণ আমি শান্তিতে…
শিবানী ওনার দুটো হাত ধরে বলেন, প্লীজ, তুমি অত চিন্তা করো না। তোমার মেয়ে ঠিকই ভাল ছেলের হাতে পড়বে।
হঠাৎ ভারতী প্রশ্ন করেন, আচ্ছা সুনন্দা, কী রকম ছেলের সঙ্গে দুর্বার বিয়ে দিতে চাও?
দেখো ভারতীদি, ছেলেটিকে যে ডাক্তার এঞ্জিনিয়ার বা কলেজের লেকচারার হতেই হবে, তেমন কোন কথা নেই। তবে ময়না স্পষ্ট বলে দিয়েছে, সে আই-এ-এস বা আই-পি-এস ছেলেকে বিয়ে করবে না।
ভারতী আর শিবানী হাসতে হাসতে বলেন, তাই নাকি?
সুনন্দাও একটু হেসে বলেন, আমার মেয়ে তো ওর বাবাকে সোজাসুজি বলে দিয়েছে, যারা পেট মেটা ক্যাবলা চণ্ডী কনস্টেবল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, তাদের আমি বিয়ে করব না।
ভারতী জিজ্ঞেস করেন, ওর বাবা কি বললেন?
ওর বাবা বললেন, ময়না, ওরাই তো দেশ চালায়।
সুনন্দা না থেমেই হাসতে হাসতে বলেন, আমার মেয়েও সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয়, ওরা দেশ চালাবে চালাক কিন্তু আমাকে চালাবার সুযোগ দেব না।
ভারতী উঠে দাঁড়ায়; বলেন, শিবানী, তোরা কথা বল। আমি দুর্বার কাছে যাচ্ছি। ও বেচারী অনেকক্ষণ একলা আছে।