হ্যালো।
মাসীমা, আমি আপনার শিল্পী।
দুর্বা হাসতে হাসতেই বলে।
শিবানীও হাসতে হাসতে বলেন, এক্ষুনি ভারতী ঘরে পা দিয়েই বলছিল, হ্যাঁরে, দুর্বাকে ফোন কর। অমি বললাম, এই চিঠিটা পড়েই ফোন করছি।…
চিঠি পড়া শেষ হয়েছে নাকি…
চিঠি পড়ার পর তোমাকে যেই ফোন করতে যাচ্ছি, ঠিক তখনই টেলিফোন রিং বাজলো।
দেখেছেন মাসীমা, কি রকম টেলিপ্যাথি। যে মুহূর্তে আপনারা আমার কথা…
হ্যাঁ, মা, তাইতো দেখছি।
শিবানী মুহূর্তের জন্য থেমে বলেন, তুমি একটু ভারতীর সঙ্গে কথা বলো। তা নয়তো ও এখুনি আমার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করবে।
দূর্বা একটু হেসে বলে, আপনারা জীবনে কখনও ঝগড়া করেছেন?
না, করিনি কিন্তু এখন তোমার সঙ্গে একটু বেশি কথা বললেই ও ঠিক ঝগড়া করবে।
শিবানী থামেন, শুরু করেন ভারতী।
দুর্বা, তুমি তো সেদিন দেখেছ শিবানীর হ্যান্ড ফ্রী সেট।
হ্যাঁ, মাসীমা, দেখেছি।
তাই বলছি, তোমার সব কথাই শুনেছি। সত্যি বলছি, এই সন্ধ্যের পর তো আমাদের দুজনের হাতেই প্রচুর সময়। তাই তোমার সঙ্গে কথা না বলে আমরা থাকতে পারি না।
শিবানী ওদের কথার মাঝখানেই বলেন, তোমার সঙ্গে কথা বলা আমাদের নেশায় দাঁড়িয়ে গেছে।
দুর্বা বলে, রোজ আপনাদের সঙ্গে কথা না বললে আমারও একদম ভাল লাগে না।
ভারতী চাপা হাসি হেসে বলেন, তার মানে এই দুই বুড়ীকে তোমার একটু একটু ভাল লেগেছে?
একটু একটু মানে? দারুণ ভাল লেগেছে। আপনারা দুজনেই যেমন চার্মিং আর গ্রেসফুল, সেইরকমই অ্যাফেকশনেট। ভাল না লেগে পারে।
কিন্তু তুমি তো আমাদের দুজনকে একেবারে হিপানোটাইজ করেছ।
দুর্বা একটু জোরেই হেসে ওঠে। বলে, আমি কী পি. সি. সরকার যে আপনাদের হিপনোটাইজ করব?
না, মা, তুমি পি. সি. সরকার না; তোমার রূপ-গুণ-স্বভাব-চরিত্র আমাদের মুগ্ধ করেছে।
অত বললে ঠিক আমার অহংকার হবে।
আচ্ছা সুনন্দা কি করছে?
বাবা তো এখানে নেই। সুতরাং মা নিশ্চয়ই টি.ভি.তে সিরিয়াল দেখছে। সময় তো কাটাতে হবে।
সত্যিই তো ওকে সময় কাটাতে হবে।
মা দুপুরে একদম ঘুমুতে পারে না। সারা দুপুর গল্প-উপন্যাস পড়ে বলে সন্ধের পর আর পড়তে চায় না।
ঠিকই তো। সব সময় কি পড়তে ভাল লাগে?
বাবা কলকাতায় থাকলে কথায়-বার্তায় মা-র সময় কেটে যায় কিন্তু বাবা দিল্লী বা হায়দ্রাবাদ গেলেই…
সিরিয়াল দেখা শেষ হলে সুনন্দা যদি পারে তাহলে যেন একবার ফোন করে। চার-পাঁচদিন ওর সঙ্গে কথা হয় নি।
হ্যাঁ, হ্যাঁ, মা ঠিকই ফোন করবে।
হ্যাঁ, কিছুক্ষণ পরে সুনন্দাও ফোন করেন।
কী হলো? আমাদের দাদা এখানে নেই বলে টি, ভি, দেখছিলে?
কী করব বলো শিবানীদি? তোমাদের দাদা থাকলে তবু ঝগড়া-টগড়া করে বেশ সময় কেটে যায় কিন্তু…
বাজে কথা বলল না। দাদার সঙ্গে তোমার ঝগড়া হয়, এই কথা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে?
তোমাদের দাদা কি এমন মহাদেব যে তার সঙ্গে ঝগড়া হবে না?
শিবানী হাসতে হাসতে বলেন, সুনন্দা, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করো। দাদার কথা বলার সময় এখনও তত নতুন বউদের মত লজ্জায় তোমার সারা মুখ লাল হয়ে যায়।
ওনার কথায় সুনন্দা হো হো হেসে ওঠেন। বলেন, সত্যি তোমরা কলেজে প্রফেসরী করো বলে কত আজেবাজে কথাও কত সুন্দর করে বলতে শিখেছ দেখছি।
আর কিছু বদনাম দেবে না?
আচ্ছা, আচ্ছা, আর ঝগড়া করো না। এবার বলো ভারতীদি, কি কাছে আছে?
কাছে আছে মানে?
শিবানী মুহূর্তের জন্য চাপা হাসি হেসে বলেন, কাছে আছে মানে? ও তো প্রায় আমার ঘাড়ের উপর চেপে আছে। তোমার বা তোমার মেয়ের সঙ্গে যে এটুকু প্রাইভেট প্রাণের কথা বলব, সে সুযোগও আমার নেই।
সত্যি তোমরা দুজনে আছো ভাল।
এবার ভারতী বলেন, সুনন্দা, আমাদের দু’জনের তো আর কোনভাবে ভাল থাকার উপায় নেই।
সুনন্দা বলেন, কেন?
ঠাকুরপো তো অনেক দিন থেকে নিরুদ্দেশ আর আমার বুড়ো ভোলানাথ বাড়িতে ফিরেই মুখের সামনে একখানা বই নিয়ে ধ্যানস্থ। তাই…
অমন স্বামী পেয়ে বেঁচে গেলে ভারতীদি।
তাই নাকি?
আজ্ঞে হ্যাঁ।
.
এইভাবেই দিন যায়। কখনো কখনো সময় সুযোগ হলে ভারতী আর শিবানী ওদের ওখানে যান। এই মাস দুয়েকের মধ্যে দুর্বাও দু’বার সল্টলেকে ওদের কাছে এসেছে। তার মধ্যে একদিন সুনন্দাকেও সঙ্গে এনেছিল; তবে সেদিন ওরা বেশিক্ষণ থাকেনি। লেকটাউনে অসুস্থ ছোট মাসীকে দেখতে গিয়েছিল সুনন্দা মেয়ের সঙ্গে। বাড়ি ফেরার পথে মাত্র ঘণ্টা খানেক ছিল ভারতী আর শিবানীর কাছে।
সেদিনই ভারতী বলেছিলেন, সুনন্দা, আজ নিছকই বুড়ী ছুঁয়ে গেলে। এর পর এসে সারাদিন কাটাবে আমাদের কাছে।
হ্যাঁ, সত্যি, এর পর একবার সারাদিন কাটাবো তোমাদের সঙ্গে।
মনে থাকবে তো?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, মনে থাকবে।
প্রায় মাস খানেক পরের কথা। সেদিন রবিবার। অন্যান্য রবিবারের মত সেদিনও ভারতী আর শিবানী উল্টোডাঙায় মুচি বাজারে যাবার উদ্যোগ করছেন, ঠিক সেই সময় টেলিফোন।
হ্যালো!
মাসীমা, মা কথা বলবেন।
হ্যাঁ দাও।
সুনন্দা রিসিভার হাতে নিয়ে একটু হেসে বলে, শিবানীদি, আজ একটু চাল বেশি নিও। দুপুরে আমরা দুজনে যাব।
সত্যি তোমরা আসছো?
তবে কী ঠাট্টা করছি।
কখন আসবে?
ভাবছি, মোটামুটি, দশটার মধ্যে রওনা হয়ে…
তার মানে এগারোটার মধ্যে আসবে।
হ্যাঁ, তাই মনে হয়।
এসো, এসো, খুব আড্ডা দেওয়া যাবে।