দুর্বা একটু হেসে বলে, তার মানে উনিও সার্জারীতে খুব ভাল?
ভারতী বেশ গর্বের সঙ্গেই বলেন, তাতাই সোনা বিখ্যাত সার্জেন হতে বাধ্য।
দুই ছেলের জন্যই আপনারা গর্ব করতে পারেন।
শিবানী বলেন, ছেলেদের জন্য ঠিক গর্ব করি না কিন্তু আমাদের নিশ্চয়ই ভাল লাগে।
ভারতী বলেন, তাতাই সোনার মত প্রাণবন্ত ছেলে হয় না। ও যখন এখানে আসে, ও যে আমাদের সবাইকে নিয়ে কি পাগলামী করে, তা তুমি ভাবতে পারবে না।
তাই নাকি?
আমাদের কথা তো ছেড়েই দিলাম, ও আমার বুড়ো ভোলানাথকে নিয়ে যে কখন কোথায় যাবে, তার ঠিক ঠিকানা নেই।
শিবানী হাসতে হাসতে বলেন, তাতাই গতবার ছুটিতে এসে কি কাণ্ড করেছিল, তা শুনলে তুমি অবাক হয়ে যাবে।
উনি কি করেছিলেন?
ও দাদাকে নিয়ে বেরুবার সময় বলল, মা, আমি জেঠুকে নিয়ে একটু ঘুরে আসছি। আবার হাওড়া স্টেশন থেকে ফোন করে বলল, মা, আমরা পুরী যাচ্ছি; কদিন পর ফিরব।
দুর্বা হাসতে হাসতে বলে, আচ্ছা ছেলে তো!
অন্য একটা ঘরে পা দিয়েই শিবানী বলেন, এটা ছেলের ঘর।
মাসীমা, তা আর বলে দিতে হবে না। দেয়ালের পোস্টারগুলো দেখেই বুঝতে পারছি।
ভারতী বুক শেলফ-এর উপর থেকে একটা ছবি তুলে দুর্বার হাতে দিতে বলেন, এই দেখো, আমাদের ছেলেদের ছবি।
আপনাদের দুটো ছেলেই তো বেশ দেখতে।
হ্যাঁ, তা বেশ দেখতে।
শিবানী আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন, এই হচ্ছে বাবাই সোনা আর এই হচ্ছে…
ওনার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে দুর্বা একটু হেসে বলে, তাতাই সোনা, তাইতো?
হ্যাঁ, মা।
চোখ দুটো দেখলেই মনে হয়, আপনাদের তাতাই সোনা বেশ দুষ্ট আছে।
ভারতী আর শিবানী প্রায় একই সঙ্গে বলেন, ঠিক ধরেছ।
ভারতী হাসতে হাসতেই বলেন, ছেলেটা দেখতে দেখতে কত বড় হলো, এম. এস. পড়ছে কিন্তু এখনও বাচ্চাদের মত দুষ্টমি করতে ওর-জুড়ি নেই।
খেতে বসেও কত কথা, কত গল্প হয়। খাওয়া দাওয়ার পরও কত কথা হয় ওদের।
একবার দুর্বা ভারতীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, মেলোমশাই কি করেন?
ভারতী একটু হেসে বলেন, উনি একটু বড় ধরনের মিস্ত্রিগিরি…
ওনাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই শিবানী বলে, চুপ কর ভারতী। দাদা মিস্ত্রিগিরি করেন, তাই না?
এবার উনি দুর্বার দিকে তাকিয়ে বলেন, দাদা গেস্টকিন-উইলিয়ামস্-এর চীফ ম্যানেজার-প্ল্যানিং।
তার মানে মেলোমশাই ইজ এ বিগ বস!
শিবানী সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন করেন, শিল্পী, তোমার বাবা কি করেন?
বাবা মেকানিক্যাল এঞ্জিনিয়ার। এখন চীফ জেনারেল ম্যানেজর-ওয়ার্কস।
তাইতো বাবাকে হরদম দিল্লী আর হায়দ্রাবাদ ছুটতে হয়।
তার মানে তোমার বাবা বেশ কৃতি পুরুষ।
কৃর্তি পুরুষ কিনা জানি না কিন্তু হি ইজ রিয়লী এ ভেরি গুড ম্যান, এ চামিং হাসব্যান্ড অ্যান্ড লাভলি অ্যাফেকশনেট ফাদার।
বেলা গড়িয়ে যায়; সূর্য ঢলে পড়ে। কফি খেতে খেতে ভারতী বলেন, শিবানী, চল, আমরা দু’জনে গিয়ে দুর্বাকে পৌঁছে দিই।
দুর্বা কফির কাপে চুমুক দিতে গিয়েও দেয় না; বলে, না, না, আপনাদের কাউকে যেতে হবে না। আমি একলাই যেতে পারব।
নিশ্চয়ই তুমি একলা যেতে পারে কিন্তু আমরাই তোমাকে পৌঁছে দেব।
দুর্বা আবার আপত্তি করে না কিন্তু শিবানী বলেন, আমাদের যদি যেতে ইচ্ছে করে, তুমি আপত্তি করবে কেন?
ও একটু হেসে বলে, আপনারা সব সময় আমাকে হারিয়ে দিচ্ছেন।
এর পর তুমি আমাদের বার বার হারিয়ে দিও।
রওনা হবার আগে ভারতী বলেন, চলো দুর্বা, আমার বাড়িটা দেখবে।
হ্যাঁ, মাসীমা, চলুন।
বাড়িটা দেখে বেরুতে বেরুতেই দুর্বা বলে, আপনাদের দুটো বাড়িতেই কোন বাহুল্য নেই। আজকাল অনেক বাড়িতেই এমন দামী দামী আর চকমকে-ঝকঝকে ফার্নিচার রাখে যে মনে হয়, কোন হোটেলে এসেছি।
মা, আমরা আবার কি বাহুল্য করব?
মাসীমা, আজকাল বহু বাড়িতেই লক্ষ্মী-সরস্বতী বিরাজ করেন কিন্তু সেই সব বাড়িতে রুচির পরিচয় বিশেষ পাওয়া যায় না।
হ্যাঁ, তা বলতে পারো।
ট্যাক্সি ধরার জন্য ওরা তিনজনে মোড়ের মাথার দিকে এগিয়ে চলেন।
শিবানী বলেন, শিল্পী, এই দুই বুড়ীর সঙ্গে সারাটা দিন কাটিয়ে কেমন লাগলো, তা তো বললে না।
মাসীমা, বিশ্বাস করুন, খুব ভাল লেগেছে, খুব আনন্দ পেয়েছি।
দুর্বা না থেমেই হাসতে হাসতে বলে, দেখবেন, এবার থেকে যখন-তখন আপনাদের কাছে এসে যাবে।
ওরা দুজনেই এক সঙ্গে বলেন, হ্যাঁ, মা, এসো খুব খুশি হব।
ওরা দুজনেই এক সঙ্গে বলেন, হ্যাঁ, মা, এসো খুব খুশি হব।
০৩. সকালে সংসারের টুকটাক দেখাশুনা
সকালে সংসারের টুকটাক দেখাশুনা বিধি ব্যবস্থা ছাড়াও খেয়েদেয়ে কলেজ যেতে হয়। তাছাড়া সল্টলেক থেকে বেথুন কলেজ যেতেও বেশ সময় লাগে। কোন কোনদিন তো ট্যাক্সিতেও ওদের যেতে হয় ঠিক সময়ে পৌঁছবার জন্য। তাই ইচ্ছা থাকলেও সময় হয় না।
তাছাড়া আরো একটা ব্যাপার আছে।
এতো গ্যাস সিলিন্ডার পাঠাবার জন্য ফোন করা না যে কনজিউমার নাম্বার বলে দিলেই কথা বলা শেষ। দুর্বা আর সুনন্দার সঙ্গে কথা বলতে হলে হাতে বেশ একটু সময় চাই। ওদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলে তো দু-পাঁচ মিনিটে শেষ করা যায় না। তাছাড়া ইচ্ছাও করে না অত তাড়াতাড়ি রিসিভার নামিয়ে রাখতে।
কথা হয় সন্ধ্যের পর এবং সব সময় শিবানীর বাড়ি থেকে। সুব্রতবাবু ও বাবাই এখনই যেন কিছু সন্দেহ করতে না পারে, তার জন্যও সতর্ক থাকতে হয়।