হঠাৎ, এ কথা বলছ কেন?
না, এমনি মনে হল বলে বলছি।
সবাইকে না জানলেও আমাকে তো জেনেছ।
নিশ্চয়ই কিছু জেনেছি।
যা জেনেছ তাতে কী তুমি খুশি?
আবার আমি হাসি। বলি, যা জেনেছি, যা পেয়েছি, তাতে কোন মেয়ে খুশি হবে না?
একটু চুপ করে থাকার পর তন্ময় জিজ্ঞাসা করল, চা খেয়েছ?
সরি! এখুনি তোমাকে চা দিচ্ছি।
চা এনে দিতেই তন্ময় হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করল, আজকেও তোমাকে কালকের মতো পাবো তো?
ঠিক কালকের মতো কি আজ হতে পারে? কাল কালই ফুরিয়ে গেছে; ঠিক কালকের মতো দিন তো কখনই ফিরতে পারে না।
এ কথা বলছ কেন? কাল কী তোমার ভালো লাগেনি?
কাল যখন তোমার সঙ্গে সমান তালে ঘুরেছি-ফিরেছি হেসেছি খেলেছি তখন নিশ্চয়ই ভালো লেগেছিল কিন্তু…
আমি কথাটা শেষ করি না। হঠাৎ থেমে যাই। মুখ নীচু করে বসে থাকি। তন্ময় আমার মখখানা আলতো করে তুলে ধরে জিজ্ঞাসা করল, কিন্তু বলেই থামলে কেন? এমনি।
আমি আবার মুখ নীচু করেই বসে রইলাম, কিন্তু ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মনের মধ্যে যে আনন্দ-উত্তেজনা, যে স্বপ্ন দানা বেঁধে উঠছিল তা হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ায় সত্যি কান্না পাচ্ছিল। আমি জীবনে একজনকেই মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছি। তাকে হারাবার পর আর কাউকে ভালোবাসতে না চাইলেও তন্ময়কে নিশ্চয়ই ভালো লেগেছিল। এই ভালো লাগা টিকে থাকলে হয়তো অতীতের দুঃখ ভুলে নতুন করে ভালো ভাবে বাঁচার কথা ভাবতাম। ভাবতাম কেন, বোধহয় মনে মনে ভাবতে শুরু করেছিলাম। আমার ও কথা হয়তো শুনতে তোমার খারাপ লাগছে, কিন্তু ভাই, কোনো দুঃখই তো মানুষ চিরকাল মনে রাখে না। মনের বেলাভূমিতে নিত্য-নতুন পলিমাটি জমতে জমতে অতীতের দুঃখ কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
মনে মনে এলোপাথাড়ি হাজার রকমের চিন্তা করছিলাম। তন্ময়ও বিশেষ কথাবার্তা বলল। বাথরুমে গেল। ফিরে এসেই বলল, কবিতা, দারুণ খিদে পেয়েছে। খেতে দেবে?
হ্যাঁ দিচ্ছি।
খাবার সময়ও বিশেষ কথাবার্তা হল না। ও একবার শুধু জিজ্ঞাসা করল, খেয়ে উঠেই বেরুবে?
আমি বললাম, না।
কেন?
টায়ার্ড। ঘুমোব।
খেয়ে উঠেই আমি শুয়ে পড়লাম। তন্ময়ও কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর আমার পাশে এসে শুয়ে পড়ল। আমি পাশ ফিরে শুয়েছিলাম। ও আমাকে জড়িয়ে ধরতেই বললাম, ঘুমোতে দাও।
কথাও বলবে না?
এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া এ রকম ভাবে জড়িয়ে থাকলে আমার ঘুমও আসবে না।
কাল রাত্রে ঘুমোলে কী করে?
কাল রাত্রে নিশ্চয়ই স্বাভাবিক ছিলাম না।
তন্ময় একটু হেসে বলল, যা-ই হোক কাল খুব এনজয় করেছি। সত্যি কবিতা, জীবনে এত আনন্দ কোনো দিন পাইনি।
আমার মুখে বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠলেও তন্ময় দেখতে পেল না। বললাম, সত্যি?
এই আনন্দ আর কোথায় পাবো?
এ প্রশ্নের জবাব কী আমার কাছে চাও?
তন্ময় হঠাৎ এক টানে আমাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, তোমার কি হয়েছে?
কিছু না।
কিন্তু ঘুম থেকে উঠেই দেখছি তুমি কেমন যেন গম্ভীর হয়ে রয়েছ।
আমি হেসে বললাম, ঘুমোতে দাও। সব ঠিক হয়ে যাবে।
বিকেলের দিকে ঘুম ভাঙতেই দেখি তন্ময় বিয়ার খাচ্ছে। আমাকে ঘুম থেকে উঠতে দেখেই ও হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করল, আর ইউ রেডি ফর ইভনিং প্রোগ্রাম?
মুহূর্তের মধ্যে মনে নানা চিন্তা এলো, গেল। তারপর মনে মনে ভাবলাম, স্বাভাবিক অবস্থায় নিশ্চয়ই সব কথা বলতে পারব না। সুতরাং…
হাসতে হাসতে বললাম, টয়লেট থেকে এসেই তৈরি হয়ে নিচ্ছি।
আমার কথা তন্ময় শুনেই খুশিতে লাফ দিয়ে উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। চুমু খেল।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, দশ মিনিট ধৈর্য ধর।
তারপর আমি একটু তৈরি হয়েই এক বোতল হুইস্কি বের করলাম।
তন্ময় অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, হুইস্কি বের করছ কেন? বিয়ার খাবে না?
বিয়ার খেয়ে কী নেশা হয়? ওতে শুধু আমেজ আসে।
কিন্তু…
ওকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই আমি হুইস্কির বোতল খুলোম। গেলাসে ঢালোম। তারপর দু-চারটে আইস-কিউব দিয়েই গেলাস তুলে ধরে বললাম, চিয়ার্স।
তন্ময় কি যেন ভাবছিল। হঠাৎ বিয়ারের জাগটা তুলে ধরে বলল, চিয়ার্স!
দু-তিন রাউন্ড হুইস্কি খাবার পরই আমি তন্ময়কে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করলাম, আমাকে তোমার ভালো লাগে?
তন্ময় হো হো করে হাসতে হাসতে বলল, তোমাকে ভালো লাগবে না এমন পুরুষ মানুষ আছে?
আর কাউকে আমার মতো ভালো লাগে না তো?
তুমি পাগল হয়েছ?
আমি দু হাত দিয়ে তন্ময়ের মখখানা জড়িয়ে ধরে বললাম, না, না, আমি পাগল হইনি। তুমি বল আর কাউকে আমার মতো ভালো লাগে কিনা।
এমন করে ভালো লাগার মতো মেয়ে কী আর কেউ আছে?
আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। ঠাস করে ওর গালে একটা একটা চড় মেরে বললাম, শিখাকেও আমার মতো ভালো লাগে না?
আমার কথা শুনেই তন্ময় মুহূর্তের মধ্যে বোবা হয়ে গেল। পাথরের মতো স্থির হয়ে রইল। আমি জোর করে ওকে চেপে ধরে বললাম, আমাকে তোমার বিয়ে করতেই হবে। হিয়ার অ্যান্ড নাউ। বিয়ে না করলে আমি তোমাকে এখান থেকে যেতে দিচ্ছি না।
জানো রিপোর্টার, তখন আমার মাথার ঠিক ছিল না। আরো অনেক কথা ওকে বলেছিলাম কিন্তু সব কথা আজ আর মনে পড়ছে না। শুধু মনে আছে বেশ কিছুক্ষণ বকাবকি করার পর ও বলেছিল, আমাকে বিয়ে করে তোমার লাভ নেই।
লাভ-লোকসানের কথা বাদ দাও। আমাকে তোমার বিয়ে করতেই হবে।