এর মধ্যে টেলিফোন বেজে ওঠে।
হ্যালো! কে কাকু!
কী করছ?
সুপর্ণা আর আরতি এসেছে। ওদের সঙ্গে গল্প করছি।
নো বয় ফ্রেন্ড?
আমি হাসতে হাসতে বলি, নো দেয়ার ইজ নো বয় ফ্রেন্ড।
আমার সব বান্ধবীদের সঙ্গেই কাকুর খুব ভাব। আমার কথা শুনেই ওরা বুঝতে পারে, কাকুর ফোন। আরতি তাড়াতাড়ি উঠে এসে রিসিভারের সামনে মুখ দিয়ে বলে, কাকু, সিনেমা দেখাবেন না?
কাকু আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, কে সিনেমা দেখার কথা বলল?
আমি বললাম, আরতি।
আর কেউ আছে?
সুপর্ণাও আছে। ওদের বলে দাও রবিবার দুপুরে আমাদের সঙ্গে খাবে ও সিনেমা দেখবে।
এ রকম আনন্দ, হৈ-হুঁল্লোড় আমরা মাঝে মাঝেই করি। কখনও কখনও ছুটির দিনে আমি আর কাকু কোথাও আশে-পাশে ঘুরে আসি।
যাই হোক ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে এসে আমি আর কোথাও যাই না। একটু বিশ্রাম করে দু-এক ঘণ্টা পড়াশুনা করি। কাকু অফিস থেকে বেরিয়ে অফিসের কাজে সলিসিটার অ্যাডভোকেটদের চেম্বার ঘুরে সাড়ে সাতটা আটটায় বাড়ি ফিরলেই আমি চা-টা দিই। একটু গল্প করি। তারপর উনি স্নান করতে গেলে আমি কোনো কোনোদিন সামান্য কিছু রান্নাবান্না করি।
এরপর কাকুর ড্রিঙ্ক করার পালা। এখন আর কাকুকে কিছু করতে হয় না। আমিই বোতল থেকে গেলাসে হুইস্কি ঢালি, সোড়া মিশিয়ে ওকে দিই। ওকে সাহচর্য দেবার জন্য আমিও এক গেলাস অরেঞ্জ স্কোয়াস বা অন্য কোনো সফট ডি নিই। তারপর কাকু হুইস্কির গেলাসটা একটু উঁচু করে ধরে বলেন, চিয়ার্স। ফর আওয়ার লাস্টিং ফ্রেন্ডশিপ!
আমি মাথা নত করে হাসি মুখে কাকুর শুভ কামনা গ্রহণ করি।
দু-এক ঘন্টা সময় কেটে যায়।
তারপর আমরা খাওয়া-দাওয়া করে শুয়ে পড়ি।
এইভাবেই দিনগুলো বেশ কাটছিল। দেখতে দেখতে কটা মাস পার হয়ে গেল।
.
সেদিন কাকুর জন্মদিন। কাকু অফিস থেকে ফিরেই আমার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললেন, আজ তুমি এই শাড়িটা পরলে আমি খুব খুশি হব।
নিশ্চয়ই পরবো।
এখুনি পরে এসো।
স্ট্যাডিতে গিয়ে প্যাকেট খুলে দেখি, বেশ দামি মাইসোর সিল্কের শাড়ি। পরলাম। তারপর আমার কিনে আনা উপহারটা কাকুকে দিয়ে প্রণাম করতেই উনি আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন, এ বটল অফ স্কচ! লাভলি!
আমি ওকে প্রণাম করে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই উনি দুহাত দিয়ে আমার মখখানা ধরে কপালে স্নেহচুম্বন দিয়ে বললেন, গড ব্লেস ইউ।
তারপর কাকু স্নান করে আসতেই ওর গেলাসে নতুন স্কচের বোতল থেকে হুইস্কি ঢালতেই উনি দুহাত ধরে বললেন, কবিতা, আজ আমার একটা অনুরোধ রাখতে হবে।
বলুন কি অনুরোধ?
আজ আমার সঙ্গে তোমাকেও একটু ড্রিঙ্ক করতে হবে।
এই পৃথিবীর সমস্ত আপনজনকে হারাবার পর যার স্নেহচ্ছায়ায় আমি আশ্রয় পেয়েছি, সেই কাকুর জন্মদিনে আমি কিছুতেই তার অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারলাম না। বললাম, করব।
কাকু নিজেই দুটো গেলাসে হুইস্কি-সোডা ঢেলে আমার হাতে একটা গেলাস তুলে দিতেই
আমি বললাম, চিয়ার্স!
চিয়ার্স!
গেলাসে এক চুমুক দিয়েই বললাম, এ এমন কি মধু যে আপনি রোজ রোজ খান? আস্তে আস্তে একটু একটু করে খাও। দেখবে কি ভালো লাগছে।
ঘণ্টা খানেকের চেষ্টায় এক পেগ শেষ করেই আমি দুজনের খাবার নিলাম। কাকু আবার দুটো গেলাস ভরে ডাইনিং টেবিলে আসতেই আমি বললাম, আবার!
আজ আমাকে দুঃখ দিও না কবিতা।
.
কথায় বলে, লোকে অনুরোধে পেঁকি গেলে। আমিও কারুর অনুরোধে সেদিন দু পেগ হুইস্কি খেলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওই নতুন মাইসোর সিল্কের শাড়ি পরেই আমি শুয়ে পড়লাম।
তখন কত রাত জানি না। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যেতেই দেখি, কাকু আল্তো করে আমার বুকের ওপর হাত রেখে আমার পাশে অসহায় শিশুর মতো অকাতরে ঘুমুচ্ছেন। মুহূর্তের জন্য চমকে উঠলেও কিছুটা নেশার ঘোরে, কিছুটা ঘুমের ঘরে আমি ওকে কিছুই বলতে পারলাম না। আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
০৬. পরের দিন ভোরবেলায়
পরের দিন ভোরবেলায় ঘুম ভাঙতেই কাকুকে আর আমার পাশে দেখলাম না। দেখি, উনি ওর বিছানাতেই ঘুমুচ্ছেন। মনে মনে ভাবলাম, হয়তো নেশার ঘোরে আমার পাশে শুয়েছিলেন। তারপর নেশা কেটে যাবার পর ভোর রাত্রের দিকে হয়তো ঘুম ভাঙতেই উনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমার পাশ থেকে নিজের বিছানায় চলে যান। তাই কাকুকে অপরাধী ভাবতে পারলাম না।
এই সঙ্গে সঙ্গে আর একটা কথা আমি নিশ্চয়ই স্বীকার করব। কাকু যখন আমাকে জড়িয়ে শুয়েছিলেন, তখন আমার খারাপ লাগেনি; বরং একটা নিশ্চিন্ত আশ্রয়ের স্বাদ পেয়ে ভালোই লেগেছিল। বাঙালি মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েরা স্বীকার করবে না কিন্তু এ সব কথা সর্বৈব সত্য যে যৌবনে পুরুষের স্পর্শ মেয়েদের ভালোই লাগে। বিশেষ করে সে পুরুষ যদি ঘৃণার পাত্র না হয়, তাহলে খারাপ লাগার কোনো প্রশ্নই নেই।
দিনগুলো আগের মতোই কেটে যাচ্ছে। কাকুর ব্যবহারে মুহূর্তের জন্যও কোনো অমার্জিত ভাব দেখতে পাই না। মনে মনে ওর প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। তারপর আবার একদিন মাঝরাত্রে কাকুকে আমার পাশে আবিষ্কার করলাম। সেদিন আমি নেশা করিনি। ঘুম ভাঙতেই সঙ্গে সঙ্গে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম না। দেখি, আগের দিনের মতোই উনি আমার বুকের পর আলতো করে হাত রেখে অঘোরে ঘুমুচ্ছেন। আমি আস্তে ওর হাতটা সরাতেই উনি আমার গলা জড়িয়ে ধরলেন। আমি অনেকক্ষণ জেগে জেগে আবছা আলোয় ওর দিকে চেয়ে রইলাম। বিশ্বাস কর ভাই, আমি ওকে খারাপ ভাবতে পারলাম না; রবং কাকুর প্রতি আমার দারুণ মায়া হল। ভোরবেলায় ঘুম ভাঙতেই আমি অবাক। দেখি, আমিই কাকুকে জড়িয়ে শুয়ে আছি।