আই অ্যাম সিওর ইন্টারন্যাশনাল আফেয়ার্সে ইন্ডিয়া ইউনিক রোল প্লে করবে।
নন্দা ছোট্ট উত্তর দেয়, আন্তর্জাতিক ব্যাপারে আজকাল সব দেশ…।
দিন কয়েকের মধ্যেই দুজনের আলাপ বেশ জমে উঠল ও একই সময় ডিনার খাওয়া শুরু হলো।
একদিন ভদ্রলোক যেন একটু তাড়াহুড়ো করে কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে উঠে গেলেন। এক্সকিউজ মী, সিঙ্গাপুর থেকে একটা টেলিফোন আসার কথা!
ভদ্রলোক চলে যাবার পর নন্দার খেয়াল হলো ভদ্রলোকের সিগারেট, লাইটার আব পার্স ডিনার টেবিলে পড়ে আছে। কফি খাওয়া শেষ করে নন্দা তিনটিই হাতে তুলে নিয়ে ভদ্রলোকের ঘরে গিয়ে ফেরত দিল।
মেনি মেনি থ্যাঙ্কস্! পার্সে অনেকগুলো ডলার আছে। অন্য কোথাও ফেললে আর উপায় ছিল না।
নন্দা জানতেন, দিল্লি থেকে পিকিং-এ ও পিকিং থেকে দিল্লিগামী ডিপ্লোম্যাটিক ব্যাগের দেখাশুনা ও লেনদেনের দায়িত্ব যে কুটনীতিবিদদের উপর থাকবে, তাদের এমন টোপ অনেকেই গেলাতে চাইবে।
প্রলোভন কি শুধু বাইরে থেকে আসে? বিদেশ-বিভুইতে সব মানুষেরই কিছু কিছু শৈথিল্য দেখা দেয়। সেটা আশ্চর্যের কিছু নয়। পটুয়াটোলার গিরীশবাবুর মতো লোকও পুজোর ছুটিতে সপরিবারে বেনারস বেড়াতে গেলে দু-একদিন গান-বাজনা শোনার জন্য রাত করে ধর্মশালায় ফিরলে তাতে কেউ কিছু মনে করত না। কারুর বা আহার-বিহারের তীব্র শাসনে শৈথিল্য দেখা যায়। কলকাতায় যারা চা-সিগারেট খায় না, তারাই বিলেতে গিয়ে বাঁদরের মতো মদ গেলে। পরিচিত সমাজ-জীবন থেকে মুক্তি পেলে সব মানুষই বেশ একটু পাল্টে যায়। প্রথম প্রথম ফরেন পোস্টিং পেলে অনেক ডিপ্লোম্যাট আত্মগরিমায় বিভোর হয়ে পড়ে, শৈথিল্য দেখা দেয় দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে। শৈথিল্য দেখা দেয় আরো অনেক কারণে। তবে সুন্দরী যুবতীর খপ্পরে পড়লে কথাই নেই।
মে আই কাম ইন?
দরজা একটু ফাঁক করে একজন ছিপছিপে সুন্দরী ভারতীয় মেয়ে এমন অপ্রত্যাশিতভাবে প্রশ্ন করতে চমকে গেল থার্ড সেক্রেটারি সেনগুপ্ত। মুহূর্তের জন্য মনের মধ্য দিয়ে একটা আনন্দ তরঙ্গের ঢেউ খেলে গেল।
একঝলক দেখে নিয়ে সেনগুপ্ত উত্তর দিল, ইয়েস প্লিজ।
মেয়েটি ঘরে ঢুকে হাত থেকে বড় ট্রাভেলিং ব্যাগটা নামিয়ে রেখে প্রশ্ন করল, এক্সকিউজ মী, আর ইউ মিঃ সেনগুপ্তা?
দ্যাটস রাইট।
এবার পরিষ্কার বাংলায়, নমস্কার।
সেনগুপ্ত চেয়ারে বসে রইল কিন্তু মনটা আনন্দে উল্লাসে উচ্ছাসে নেচে উঠল। ছত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলল, নমস্কার।
মেয়েটি একটু হাসল। বলল, বসতে পারি?
সৌজন্য দেখাতে ত্রুটি হবার জন্য লজ্জিত হল ডিপ্লোম্যাট সেনগুপ্ত। আই অ্যাম সরি, বসুন, বসুন।
ইউরোপে এই হচ্ছে সেনগুপ্তের প্রথম পোস্টিং। রেঙ্গুনে থাকার সময় ভারতীয়দের সান্নিধ্য-লাভ এত দুর্লভ ছিল না কিন্তু বেলজিয়ামে এই একটা বছর ভারতীয় সান্নিধ্য লাভ প্রায় একেবারেই হয়নি। লন্ডনে ইন্ডিয়ান হাই-কমিশনে যাঁরা চাকরি করেন, তারা ভারতীয় দেখলে বিরক্ত হন। ব্রাসেলস, দি হেগ বা স্ক্যান্ডেনেভিয়ার অন্যত্র যাঁদের চাকরি করতে হয়, তারা ভারতীয় দেখলে খুশি হন। বাঙালি বা বাংলা কথা জানা লোক তো দূরের কথা! বেলজিয়ামের স্পেশ্যাল স্টিল কেনার জন্য যে ডেলিগেশন এসেছিল তাতে একজন বাঙালি ছিলেন। ব্রাসেলস্-এর। ইন্ডিয়ান এম্বাসিতে কাজ করতে গিয়ে আর কোনো বাঙালির সাক্ষাৎ পায়নি সেনগুপ্ত। বহুদিন বাদে একজন বাঙালি মেয়ের আবির্ভাবে সেনগুপ্ত সত্যি নিজেকে ধন্য মনে করল।
কতদিন পর বাংলা কথা বললাম জানেন?
সেনগুপ্তের সাধারণ বুদ্ধির জোরেই একথা জানা উচিত ছিল যে এ প্রশ্নের উত্তর সদ্য পরিচিত মেয়েটির পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবুও।
অনেকদিন পর।
অ্যাট-লিস্ট ছমাস হবে।
কেন, ব্রাসেলস্-এ বাঙালি নেই?
শুনেছি কয়েকজন আছেন, তবে এখনও কারুর সঙ্গে দেখা হয়নি, আক্ষেপ করে সেনগুপ্ত জানাল।
সেই হলো শুরু। তারপর! অসংখ্য ভারতীয় যুবক-যুবতীর মতো চিত্রলেখা সরকারও পড়াশুনা করার আশায় লন্ডন গিয়ে শেষ পর্যন্ত চাকরি নি। দেখতে দেখতে বছর তিনেক কেটে গেছে লন্ডনে। গত বছর একদল ইন্ডিয়ান ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কোচে করে কন্টিনেন্ট ঘুরেছে কিন্তু ঠিক মন ভরেনি। ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, জার্মানী দেখেই ফিরে গিয়েছে। তাছাড়া এমন গ্রুপে নানা ধরনের বিচিত্র ছেলেমেয়ে থাকে এবং দু-চারজনের ব্যবহার সহ্য করাই দায়। বিশেষ করে মিউনিখে বেভেরিয়ান ফোক্ ডান্স দেখতে গিয়ে প্রদীপ সরকার, বড়াল ও রায়চৌধুরীর…।
বিশ্বাস করুন মিঃ সেনগুপ্ত, ওদের ওই বড় বড় জাগে করে দু-তিনবার বিয়ার খাবার পর এমন বিশ্রী অসভ্যতা শুরু করল যে কি বলব।
হাসতে হাসতে এক গাল সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে সেনগুপ্ত বললো, আপনাদের মতো ইয়ং অ্যান্ড অ্যাট্রাকটিভ মেয়েরা সঙ্গে থাকলে বেভেরিয়াতে গিয়েও ছেলেরা একটু মাতামাতি করবে না?
সিগারেটের ধোঁয়া গোল গোল পাক খেয়ে ঘুরতে ঘুরতে কোথায় মিলিয়ে গেল। হঠাৎ নটরাজন ঘরে ঢুকে সেনগুপ্তকে একটা চিঠি দিয়ে বলল, হিয়ার ইজ এ ক্লোজড লেটার ফর ইউ।
ক্লোজড লেটার বাট কান্ট এক্সপোজ এনিথিং, হাসতে হাসতে পাল্টা জবাব দেয় সেনগুপ্ত।
নটরাজন কথার মোড় ঘুরিয়ে বলে, অ্যাম্বাসেডর কাল এগারোটায় আমাদের মিট করছেন, জান তো? জানি।