আই ডু রিয়ালাইজ দ্যাট।
আপনি একটু দেখবেন…
নিশ্চয়।
গুরুত্বপূর্ণ ডিপ্লোম্যাটদের বদলি করে দিল্লি এনে তাদের ব্রিফিং করা হয় নানা বিষয়ে। এর প্রয়োজন আছে, গুরুত্বও আছে। কিন্তু দু চারদিনের ব্রিফিং-এর জন্য সরকারি অর্থে দু-এক মাস ভারত ভ্রমণ ও আত্মীয় বন্ধুদের সঙ্গে দেখাশুনা করাই চলতি রেওয়াজ। কেউই আপত্তি করেন না-কারণ যিনি আপত্তি করবেন, তিনিও এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে চান না।
অ্যাম্বাসেডর নিশ্চয়ই দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কারণ ট্রান্সফার অর্ডারে প্রচলিত রীতির ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেল, অ্যাজ সুন আজ হি কমপ্লিটস্ হিজ রাউন্ড অফ ব্রিফিং হিয়ার, হি সুড প্রসিড টু লন্ডন টু জয়েন হিজ নিউ পোস্ট। অর্থাৎ ব্রিফিং শেষ হলেই লন্ডন যেতে পারে।
এরপর পরই অ্যাম্বাসেডর নিজেই একদিন তরুণকে টেলিফোন করলেন, দিল্লিতে তোমার কদিন লাগবে?
তিন-চারদিন। খুব বেশি হলে এক সপ্তাহ।
তুমি কি তারপর একটু ঘোরাঘুরি করবে?
না স্যার, তেমন কোনো প্ল্যান নেই।
তাহলে তুমি আমার একটা উপকার করবে?
নিশ্চয়ই স্যার। একথা আবার জিজ্ঞাসা করছেন?
আমার ছোট মেয়ে যমুনাকে চেন তো?
খুব চিনি, স্যার।
যমুনা অ্যাম্বাসেডরের ছোট ভাইয়ের কাছে থেকে বোম্বে ইউনিভার্সিটিতে পড়ছিল। ওকে লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিকসে ভর্তি করার চেষ্টা চলছিল, তাও তরুণ জানে।
অ্যাম্বাসেডর আবার বললেন, আমার ছোট ভাই গত মাসে হঠাৎ বদলি হয়ে মাদ্রাজ চলে গেছে। ওর স্ত্রী ছেলেমেয়েরা বোম্বেতেই আছে। যমুনার অ্যাডমিশন ফাইন্যাল হয়ে গেছে কিন্তু ও চলে আসার আগে আমার বুড়ো শ্বশুর-শাশুড়ি একটু ওকে দেখতে চান।
স্যার, ওঁরা তো দিল্লিতেই থাকেন?
হ্যাঁ। তাই বলছিলাম তুমি যদি যাবার সময় বোম্বে হয়ে যেতে…
নিশ্চয়ই।
আর ফেরার সময় যমুনাকে নিয়েই এখানে চলে এলে…
কিছু চিন্তা করবেন না, স্যার।
সব কথাবার্তা হবার পর অ্যাম্বাসেডর যমুনাকে চিঠি লিখে জানালেন, আংকেল তরুণ মিত্রের সঙ্গে দিল্লি যাবে এবং ওরই সঙ্গে এখানে চলে আসবে।…
তরুণ বন্দনাকে জানাল, দিল্লিতে যাব, তবে মাত্র সপ্তাহ খানেকের জন্য। তারপর এখানে কদিন থেকেই লন্ডনে চলে যাব। কেনসিংটন গার্ডেনে আমাকে অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়া হবে। বিকাশ যেন রঙ্গস্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাপার্টমেন্টটা ঠিক করে রাখে।
অসহ্য অস্বস্তিভরা দিনগুলি যেন কাটছিল না তরুণের। এই ট্রান্সফার হওয়া নিয়ে তবু কয়েকটা দিন কেটে গেল।
আবার সেই দুশ্চিন্তা মাথায় এলো। অফিসে, পার্টিতে সময়টা তবু কাটে কিন্তু এই হান্স কোয়ার্টারের নির্জন অ্যাপার্টমেন্টে এলেই যত আজব চিন্তা মনের মধ্যে ভিড় করে। ঢাকার কথা মনে পড়ে।
মাথাটা আবার ঘুরে ওঠে, শরীরটা ঝিমঝিম করে।
এরই মধ্যে হাবিবের চিঠি এলো, ফরেন সেক্রেটারি স্বয়ং কেসটা ডিল করছেন এবং আমার কাকা বলছিলেন যে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সব খবর পাওয়া যাবে।
ভালো কথা। কিন্তু তাতে কি মন ভরে? দুশ্চিন্তা যায়?
ঠিক পরের দিনই আবার দেশাই-এর চিঠি এলো।…ডি-আই-জির রিপোর্টের কপি আজই আমরা পেলাম। দীর্ঘ রিপোর্ট। আজই ডিপ্লোম্যাটিক ব্যাগে দিল্লি পাঠানো হলো বলে কপি করা সম্ভব হলো না। তবে ওই রিপোর্টের মেন সামারিতে বলা হয়েছে যে, লেট রবীন্দ্রনাথ শুহের কন্যা কুমারী ইন্দ্রাণী গুহ মর্ডান হিস্ট্রিতে এম-এ পড়ার জন্য ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডমিশন নেয়, কিন্তু সিক্সথ ইয়ারে ওঠার পরই পড়া ছেড়ে দেয়।…
…এম-এ ক্লাসে ভর্তি হবার জন্য ইন্দ্রাণীর আবেদনপত্রটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ইউনিভার্সিটির অ্যাডমিশন রেজিস্টারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।…।
দেশাই-এর চিঠি পড়তে পড়তে উত্তেজিত হয়ে ওঠে তরুণ। কি? কি খবর জানা গেল :
…প্রথম কথা জানা গেল তার বাবা জীবিত ছিলেন না। দ্বিতীয় কথা সে অবিবাহিতা ছিল।…
অবিবাহিতা? তরুণ যেন একটু আশার আলো দেখতে পায়।
…তৃতীয় কথা তার অভিভাবকের নাম লেখা আছে আজিজুল ইসলাম, প্লিডার।…
আজিজুল ইসলাম? পুরনো দিনের ঢাকার স্মৃতি তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকে তরুণ। চিঠি পড়া বন্ধ করে আপন মনে বার বার বলে-আজিজুল ইসলাম!
…রিলেশন সিপ উইথ দি গার্ডিয়ানের ঘরে লেখা আছে, আংকেল।…
দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটটা বেশ জোর করে কামড়ে ধরে তরুণ বলে, আংকেল? তবে কি ইন্দ্রাণী কোনো আশ্রয় পেয়েছিল?
…বার লাইব্রেরিতে খোঁজ-খবর করে জানা গেছে যে মিঃ আজিজুল ইসলাম হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। তবে সঠিক সময়টা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। মিস গুহ এক বছর এম-এ পড়ার পরই কেন আর পড়লেন না, তা জানা যায়নি। প্রথমে সন্দেহ হয় যে হয়তো বিয়ে…
তরুণ প্রায় আঁতকে ওঠে, বিয়ে? তাহলে শেষ পর্যন্ত।
চিঠিটা হাতে করে উদাস দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিজের অস্তিত্বটা যেন নিজেই বুঝতে পারে না। বেশ কিছুক্ষণ পরে আবার চিঠিটা পড়তে শুরু করে।
…বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু অনুসন্ধানের ফলে জানা গেছে যে ঠিক ওই সময়েই মিস গুহের নামে একটা ইন্টারন্যাশনাল পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। ঠিক কি কারণে ও কোন দেশে উনি যান, তা খোঁজ করা হচ্ছে। আজিজুল ইসলাম সাহেব মারা যাবার পর ওর একমাত্র ছেলে ঢাকার বাড়ি বিক্রি করে দেন ও কিছুকালের মধ্যেই পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন। মিস গুহ ওরই সঙ্গে বিদেশ যান কিনা, তার কোনো রেকর্ড ঢাকা এয়ারপোর্ট বা ইমিগ্রেশান পুলিশের কাছে নেই। করাচিতে অনুসন্ধান করলে নিশ্চয়ই সেসব খবর পাওয়া যাবে।