কম্বল-সম্বল যথা দরবেশ কাঁপে চুপে চুপে–
আমরা ভীষণভাবে চমকে তাকিয়ে দেখি, ক্যাবলা। করমচর করে পরমানন্দে কী চিবুচ্ছে।
টেনিদা বাঘাটে গলায় বললে, খামকা অমন করে ষাঁড়ের মতো চ্যাঁচালি যে ক্যাবলা?
ক্যাবলা বললে, এমনি।
এমনি। ভেংচি কেটে টেনিদা বললে, একেবারে পিলেসুদ্ধ চমকে গেল। খাচ্ছিস কী?
–কাজুবাদাম।
হাত বাড়িয়ে টেনিদা বললে, আমার ভাগ দে।
—নেই। খেয়ে ফেলেছি।
খেয়ে ফেলেছিস? টেনিদা গজ গজ করতে লাগল : এই জন্যই দেশের কিচ্ছু হয় না।
হাবুল সেন বলল, হইবও না। আমারেও দ্যায় নাই।
টেনিদা হাবুলকে চড় মারতে গেল : এটা এমন বক্তিয়ার হয়েছে না যে কোনও সিরিয়াস কথা এর জন্য বলার জো নেই। ওয়েল ক্যাবলা—এখন কম্বলের কী করা যায় বল তো?
ক্যাবলা বাদাম চিবুতে চিবুতে, কিছুই করা যায় না। করার দরকার নেই।
–মানে?
-–মানেটা বুঝিয়ে দিচ্ছি, এসো। চলো সবাই আমার সঙ্গে।
বেশি দূর যেতে হল না। আমাদের পাড়াতেই একটুকুরো পোড়ো জমি, কারা যেন বাড়ি টাড়ি করছে। তিন-চারটে ছেলে সেখানে ইট পেতে একটা টেনিস বল নিয়ে ক্রিকেট খেলছে। তাদের একজনের মাথায় একটা ভাঙা শোলা-হ্যাট, সে চিৎকার করে বল দিচ্ছিল—এই সোবার্স বল দিচ্ছেন, ব্যারিংটন আউট হয়ে গেলেন–
আমি, হাবুল আর টেনিদা চোখ গোল করে বললুম :ওই তো কম্বল!
ক্যাবলা বললে, নির্ঘাত।
আমি বলুম, ও এখানে কী করে এল?
–তার মানে, ও কোথাও যায়নি। এখেনেই ছিল।
—এখানেই ছিল?—টেনিদার মুখটা হালুয়ার মত হয়ে গেল। তা হলে নিরুদ্দেশ হল কী করে? ওর কাকা যে বললেন, কম্বল নিশ্চয় চাঁদে চলে গেছে?
ক্যাবলা বললে, চাঁদে ঠিক যায়নি, চাঁদের রাস্তায় খানিকটা গিয়েছিল।
—চাঁদের রাস্তায়?–হাবুল একটা হাঁ করল :রকেট পাইল কই?
–রকেটের দরকার হয়নি। ক্যাবলা মিটমিটি করে হাকল : চিলেকোঠার ঘরে লুকিয়েছিল দিন কতক।
–অ্যাঁ!—আমরা তিনজনে খাবি খেলুম।
–হুঁ, সব খবরই আমি যোগাড় করে এনেছি। এই দশাসই মাস্টার খগেন মাশ্চটকের হাত থেকে বাঁচবার জন্যে কম্বলের কাকিমাই সে ব্যবস্থা করেছিলেন। কাকা তো বসে আছেন প্রেস নিয়ে, বাড়ির ভিতরে কতটুকু যান, কীই বা খবর রাখেন। আমরা যখন কম্বলের খোঁজে চাঁদনি-ধোপাপুকুর-মহিষাদল ছুটে বেড়াচ্ছি, তখন শ্রীকম্বল কাকিমার আদরে দিব্যি চিলেকোঠার ঘরে খেয়ে-দেয়ে মোটা হচ্ছেন। সেই প্রথম দিনে আমাদের দিকে কে পচা আম ছুঁড়েছিল—এবার বুঝতে পারছ টেনিদা।
—বিলক্ষণ!—টেনিদা হুঙ্কার করল : ওই হতভাগাই চিলেকোঠা থেকে আমার নাকটাকে পচা আমের টার্গেট করেছিল।
টেনিদার হুঙ্কারেই কি না কে জানে কম্বল আমাদের দিকে ফিরে তাকাল। আর তাকিয়েই বিকট ভেংচি কাটল একটা। স্বভাব যাবে কোথায়! এবার আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলুম ভাউয়া ব্যাং কাকে বলে! ভাউয়া ব্যাং না হলে অমন ভেংচি কেউ কাটতেই পারে না!