তার পরে তো দেখেছ? জবাকুসুমসংকাশংকে দেখছ না? কোথায় লাগে প্রসেনজিৎ? সূর্যের মতো ভিরিলিটি আর কিসের আছে? নিজের ঘরে এমন আদিত্যবর্ণং পুরুষং মহান্তম্ নিয়ে, বোনের দিকে
সুরমা কথার মাঝপথেই ঢুকে পড়েন,
জামাইবাবুর মতো অমন একমাথা চুল কি তোমার আছে? সুষির টাকে বেদম আপত্তি ছিল। হল তো? আর ধর্ম? পড়ো তুমি গায়ত্রী মন্ত্র চোখ মেলে? উনি গায়ত্রী না পড়ে জলস্পর্শ করেন না! তারপরে, জামাইবাবু সংস্কৃত জানেন, শাস্ত্রটাস্ত্র পড়েছেন। ডাক্তার হলে কী হবে তিনবেলা আহ্নিক করেন। তখন কি বুঝেছি এর মানে কী? আর তারপরে ধরো-পরিবারে শুধুই শ্বশুর-শাশুড়ি। এক ননদ। সে বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে। এর চেয়ে ঝাড়াঝাঁপটা শ্বশুরবাড়ি কোথায় পাবে?এতগুলো প্লাস পয়েন্টের পরেও যেটা সবচেয়ে জরুরি, তাও ছিল–ধনৈশ্বর্যে লক্ষ্মী লাভ হবে। কোনোদিন অর্থাভাব হবার কথা নয়। শ্বশুরের এত সম্পত্তি আছে। এমনি আইডিয়াল সম্বন্ধেও মেয়ে না দিলে, কি তোমাকে দেবেন?
এবার হেসে উঠে এক হাতে সুরমার কোমরটা সহসা জড়াবার চেষ্টা করেন আদিত্য। তখুনি উল্টোপাক খেয়ে তরুণীর দ্রুততায় নিমেষে নিজেকে মুক্ত করে নেন সুরমাও। আদিত্য কিন্তু আবার পাকড়াও করেন স্ত্রীকে।
আর আমি? আমি কেমন পাত্র?
কোনো গুণ নাহি তার কপালে আগুন!
আহা সে তো শিবঠাকুর! আমি কি শিবঠাকুর?
তুমি তার সাঙ্গোপাঙ্গোদের একজন।
নন্দী, না ভৃঙ্গী?
দুটোই একসঙ্গে!
আচ্ছা সুরো, আমি একেবারে প্রসেনজিতের বিপরীত মেরু, না? শুনতে শুনতে হঠাৎ স্ট্রাইক করল ব্যাপারটা। কী দেখে তোমাকে দিলেন উনি আমার হাতে? আমার তো ছিল না কিছুই, শুধু দূর আশা ছাড়া।
তাই বা খারাপ কী? একটু থেমে সুরমা বলেন, ইনফ্যাক্ট, তোমাদের বারদির ভিটেবাড়িটা একবার গিয়ে দেখে আসার ইচ্ছে আছে। ওটা তো লোকনাথ বাবারও ভিটে।
জ্যোতি বসুর বাবারও ভিটে বারদি।
কিসের সঙ্গে কী!
কেন গুরুর সঙ্গে গুরুই তো!
লোকনাথবাবা শুধু গুরু নন। অনেক বেশি।
জ্যোতিবাবুও তাই।
ঠাট্টা রাখো। জ্যোতিবাবুকে আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা হয়। হি ইজ অ্যান অনেস্ট ম্যান। নির্লোভ। ঘুষ খান না। পার্সোনাল গেইনের জন্য রাজনীতি করেন না। কত বছরের অভিজ্ঞতা বলো তো ভারতীয় রাজনীতিতে? ওঁর সঙ্গে তুলনীয় আরেকটা নাম দেখাও দেখি? কেউ নেই!
কেন, প্রিন্স অব কারগিল? কবি অটল বিহারী বাজপেয়ী!
তোমাকে নিয়ে পারা গেল না।
আরে, গিভ দ্য ডেভিল হিজ ডিউ? ও-ও পার্সোনাল গেইনের জন্য রাজনীতি করে না, অনেক বছরের অভিজ্ঞতা আছে, অ্যান অনেস্ট, অ্যান্ড লার্নেড় ম্যান, ঘুষটুষ খায় না, উপরন্তু কবিতা লেখে। ওয়ান আপঅন জ্যোতিবাবু কিনা?
আরে? তুমিও কি বেজেপি হয়ে গেলে নাকি? জামাইবাবুর মতন? কি সর্বনাশ!
আজ্ঞে না, আমি যা ছিলুম ছাত্রবয়স থেকে এখনও তাই আছি। তাই থাকব ম্যাডাম। এম. পি. তো নই, যে ফ্লোরক্রসিং করলে জীবনে উন্নতি হবে? আমার ইনসেটিভষ্টা এতে কী, বলুন? আপনি দেখছি ঠাট্টা বোঝেন না।
তবু ভালো! ঠাট্টা!
চা শেষ? যাও, তবে সুষমাকে ফোনটা করে ফ্যালো এইবারে?
ওঃ হো! থ্যাকিং য়ু–ভুলেই যাচ্ছিলাম–
চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে তাড়াতাড়ি ফোনটা তুলে নেন সুরমা। নিজের কাপে আর একবার চা ঢালতে ঢালতে আদিত্য জিগ্যেস করেন, তোমাকে আরেক কাপ দিই? সুরমা বলেন, হ্যাঁ, প্লিজ!
.
কি রে সুষি ফোন করেছিলি?
তুই বেরিয়েছিলি কোথায়? আজ তো তোর গানের ক্লাস নেই?
নাঃ, এই একটু খুচরো বাজার করতে, দু-একজনের জন্য দু-একটা শখের জিনিস–রাস্তায় ঘুরে ঘুরে–ওই আরকি–তোরা কেমন আছিস বল? তোকে কাল রাতের খবরে টিভিতে দেখলাম। মঞ্চে বসে আছিস। পুলিশ কমিশনার আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সঙ্গে।
ওঃ! পথের শিশুদের জন্য ওঁরা একটা প্রকল্প করেছেন নবদিশা বলে। CINI, CARE বালিকা সুরক্ষা খেলাঘর এমনি অনেকগুলো NGO নিয়ে কাজ করবেন–তারই উদ্বোধনী সভা
সুন্দর লাগছিল তোকে।
সেই তো হয়েছে ঝামেলা। যত সিম্পলই সাজি না কেন, টিভিতে সুন্দর দেখাবেই। আর তোর জামাইবাবু বিচলিত হয়ে পড়াবেনই। কী যে করি, বুড়ো হয়ে মরতে চললুম, এখনও এই যন্ত্রণা কাটল না। ওঁর স্বভাব আর বদলাল না। বরং বয়স যত বাড়ছে মন্দ গুণগুলোও তত বাড়ছে।
আসলে জামাইবাবুর সেই স্বর্গ-মর্ত্য কাঁপানো রূপটা তো আর নেই। ভুঁড়ি হয়ে, নাদুসনুদুস, অন্যরকম দেখতে হয়েছেন–তায় মাথাভর্তি অত পাকাচুল। পুরো গোঁপটা সাদা! এদিকে তোকে বয়সের চেয়েও অনেক বেশি ছোট দেখায়। ফিট আছিস। টাইট, হালকা সুশ্রী আছিস তো। তাই ওঁর চোখ টাটায়। হি ইজ জেলাস অফ ইউ। হি ফিলস্ ইনসিকিয়োর।
কিসের জন্যে জেলাস হবে বল্ তো? আমি কী করেছি?
অফ ইয়োর ইয়ুথফুলনেস। ফিগারই তো শুধু নয়, মুভমেন্টস, রেসপন্সেস, তোর অ্যাটিটুড টু লাইফসবকিছুর মধ্যেই অল্পবয়সটা সারাক্ষণ ফুটে বেরোয়।
আর ইয়ুথ! তুই তো জানিস বাড়িতে কিসের মধ্যে থাকি!
থাকলেই বা? এনার্জিটাই যৌবনের আসল কথা। তুই তো হাজার কাজে সারাক্ষণ দৌড়ে বেড়াচ্ছিস একটা আরবি ঘোড়ার মতন। আর জামাইবাবু ভুড়িদাস হয়ে খাটে শুয়ে শুয়ে শরবৎ খাচ্ছেন, আর পান চিবোচ্ছেন, টি. ভি. দেখছেন আর কাগজ পড়ছেন। নড়ে বসছেন না। ওঁর তোকে হিংসে হবে না তো কি! ওটুকু এখনও তোর অভ্যেস হল না? তুই এখনও ওই নিয়ে কাঁদবি? সুষি!