শিলুবাবা, তুমি ভয় পেয়ো না, সময় তোমার স্বপক্ষে আছে। ভাগ্যে থাকলে লিসাকে আমরা হয়তো ধরে রাখতে পারব। তোমার মা এবং আমি আবার বলছি, লিসা আমাদের সংসারে স্বাগত। অসুস্থ লিসাকে আমরা যত্ন করবার দায়িত্ব নিতে রাজি আছি। কাগজে প্রকাশিত চিঠির বাক্য থেকে পিছু হটছি না। দুজনেই এসো। আমরা অবসরপ্রাপ্ত, আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় রয়েছে মনোযোগ দেবার মতন। চিঠিতে আমরা বলেছিলাম এটা লিসারও বাড়ি। এখনও তাই বলছি।
তুমি ঠিকই বলেছ। একটা মাত্র জীবন আমাদের। বড়ই শীগগির ফুরিয়ে যায়। তার মধ্যে যে কটি প্রাণের সঙ্গে সংযোগ সাধন করতে পারি, সেটুকুই লাভ। বয়েসের সঙ্গে সঙ্গে লাভ-ক্ষতির হিসেবগুলো সব পালটে যাচ্ছে। যা বুঝলাম। এই মৃত্যুশাসিত জীবনে ক্ষতি শুধু একটাই। অপ্রেমে। বিচ্ছেদে। ঘৃণায়। মৃত্যু তো আসবেই, তুমি ঠিকই বলেছ। তাকে ভয় পাওয়া অর্থহীন। ভয় যন্ত্রণাকে। দেহের চেয়েও, মনের যন্ত্রণাকে। তুমি অপরের মুখ চেয়ে, সেই যন্ত্রণা লাঘবের কাজে নিজেকে নিয়োগ করেছ। তোমার মানুষ-জন্ম সার্থক হয়েছে, নিজেকে তুমি আর্তের সেবায় উৎসর্গ করেছ। We are proud of you, my son! এবার লিসার শুশ্রূষার কাজে তুমি আমাদেরও সঙ্গে নাও। মনে রেখো তুমি একাকী নও, তোমরা দুজনে নিঃসঙ্গ নও। We have all the time in the world to look after you two-15773115 7/5 at আমার প্রচুর অবকাশ। কোন কাজে যে লাগব, তাই ভেবে পাই না।
শিলুবাবা, পালিয়ে থেকে লাভ নেই। যা ঘটে গিয়েছে, তা নির্মম বটে, কিন্তু সেটাই বাস্তব। যত কঠোরই হোক সত্যকে তো মেনে নিতেই হবে আমাদের। এখন দেখা দরকার, সেই কঠোর বাস্তব, সেই মর্মান্তিক সত্য থেকে কতটা প্রাণরস নিংড়ে নেওয়া যায়। প্রাণের সম্ভাবনা অশেষ। ইটচাপা পড়া ঘাস দেখেছ? সাদা রং হয়ে যায়, কিন্তু বেঁচে থাকে। ভালোবাসার সম্ভাবনাও অশেষ। মনের বল হারিও না। মনে বল রেখো।
খুকু ছুটি নিচ্ছে তোমার কাছে যাবে বলে। বিশেষত মোনালিসার কাছেই। তার কাছে আমাদের যে গর্হিত অপরাধ হয়ে গেছে, যদি তার আংশিক প্রায়শ্চিত্তও এখন করা সম্ভব হয়! Its never too late. শিলুবাবা, Life has infinite possibilities তাই খুকু যাচ্ছে তোমাদের সঙ্গে করে এখানে নিয়ে আসতে। ওকে ফিরিয়ে দিও না। মোনালিসাকেও প্রস্তুত করো। ওর মা-কে বুঝিয়ে বলো। মনে মনে তৈরি থেকো, অনেক সমস্যা, অনেক অপমানের, বহু লাঞ্ছনার মধ্যে এসে পড়বে। তবুও ফিরে এসো, যদিও জানি ফিরে এসেও জীবন সহজ হবে না। কঠিন দুরূহ পথ পরিক্রমার জন্য প্রস্তুত হয়েই এসো। আমরাও থাকব তোমাদের সঙ্গে। আছি। ভরসা রেখো।
মা চিঠি দেবেন দুয়েকদিনের মধ্যেই। তোমার মায়ের মতো নিশ্চয় আরো অজস্র মা বলছেন, ঠাকুর আমার ছেলের রোগটা আমাকে দিয়ে দাও, ছেলেকে সুস্থ করে দাও–সুরমার মতো ঠান্ডা মাথা মেয়েও শেষে লোকনাথ বাবাকে এহেন অন্যায়, মরীয়া অনুরোধ-উপরোধ করছে দেখে চিঠি উত্তরটা আমিই দিয়ে দেওয়া স্থির করলুম। এই চিঠির মনের ভাষাটা কিন্তু আমাদের দুজনেরই। আরও একটা কথা! এতদিন বাদে চিঠি যদি দিলে, সেটা একলা মায়ের নামে? বাবা বাদ? তোমার মা চিঠি পেয়ে খুব যে নিশ্চিন্ত হয়েছেন তা বলতে পারি না। কিন্তু সুষমা, খুকু, এরা দুজনে তোমার মাকে বোঝাচ্ছে যে আরও কত খারাপ খবর হতে পারত। হয়নি, সে শুধু ভগবৎকৃপায়।
মায়ের ও আমার স্নেহাশীর্বাদ নিও। মোনালিসাকেও জানিও। বাড়ি ফেরার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নাও। ইতি।
তোমার বাবা চিরশুভার্থী
শ্ৰী আদিত্য রায়।