আমি আর কোথাও চিঠি দেব না, কাউকে না তোমায়ও না। আর আমার খোঁজ করবার চেষ্টা কোরো না। মনে কোরো ধূমকেতু দেখার মতো দু-দিন একটা অমঙ্গলকে দেখে স্নেহ করেছিলে, ভালোবেসেছিলে। আজ সে অকস্মাৎ এসে আবার অকস্মাৎ হারিয়ে গেল, তখন ওকে আবার দেখতে চাওয়া পণ্ডশ্রম। ধূমকেতুর একটা নিয়ম আছে – সেই নিয়মাধীন যদি হই, তবে আবার দেখা দিব, আপনারা দেখতে না চাইলেও।
খবর পেয়েছি সোফির বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু বিয়ের পরই তার ভীষণ অসুখ, হয়তো বা বাঁচবে না। আমার চেয়ে সে খবর আপনিই বেশি জানেন। আর একটা ভীষণ খবর পেয়েছি, মাহ্বুবা হতভাগি বিধবা হয়েছে, তার বৃদ্ধ স্বামী মারা গেছেন। মাহ্বুবা নিজে লিখেছে চিঠি। সে লিখেছে, সে-ই এখন সমস্ত জমিদারির মালিক। সংসারে আর তার মন নাই ; সে নাকি শিগগিরই পবিত্র স্থানসমূহ পর্যটন করতে বেরোবে, মক্কা-মদিনাও আসবে এবং আরও লিখেছে বোগদাদ শরিফও আসতে পারে। আমি বারণ করিনি। আর আমার ভয় নেই তাকে।
যে মাহ্বুবা একদিন স্বেচ্ছায় আমাকে পাওয়ার লোভ দুহাতে ঠেলে দিয়েছিল ; আমার মহৎ জীবন পাছে বিবাহের জন্য নিষ্ফল হয়ে যায়, তাই আমাকে নিজে হাতে মরণের মুখে পাঠিয়ে দিলে – তাকে যদি আজ অযথা সন্দেহ করি, তাহলে আমার ইহকালে পরকালে কোথাও মুক্তি হবে না, সাহসিকাদি।
আমাদের পল্টন শিগগির ফিরে যাচ্ছে। শিগগির সব ভাইরা আমার দেশে ফিরবে। আমিই আর ফিরব না।
আমি আবার তিন বছরের জন্য অঙ্গীকারপত্র লিখে দিয়ে যুদ্ধ অফিসে নতুন কাজ নিয়েছি। ইচ্ছা করলেও আর যেতে পারব না এ তিন বছরের মধ্যে।
আমার বাঁধনহারা জীবন-নাট্যের একটা অঙ্ক অভিনীত হয়ে গেল। এর পর কী আছে, তা আমার জীবনের পাগলা নটরাজই জানেন।
আশীর্বাদ করো তোমরা সকলে, আবার যখন আসব রঙ্গমঞ্চে – তখন যেন আমার চোখের জলে আমার সকল গ্লানি, সকল দ্বন্দ্ব কেটে যায় – আমি যেন পরিপূর্ণ শান্তি নিয়ে তোমাদের সকলের চোখে চোখে তাকাতে পারি। ইতি –
অভিশপ্ত
নূরুল হুদা
(সমাপ্ত)