• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
সোমবার, জুন 16, 2025
  • Login
BnBoi.Com
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

বাঁধনহারা – কাজী নজরুল ইসলাম

Badhon- hara by Kazi Nazrul Islam

জানি না বোন, তোদের এই বেহেশ্‍তের ফুল দুটির পবিত্র ভালোবাসায় কার অভিশাপ ছিল। তোরা যে উভয়ে উভয়কে হৃদয়ের নিভৃততম মহান আসনে বসিয়ে বুকের সমস্ত ঐশ্বর্য দিয়ে অর্ঘ্য বিনিময় করতিস, তা আমার চক্ষু কোনোদিনই এড়ায়নি। তোরা হাজার ছল-ছুতো আসিলা করে খুব মস্ত মাথা নাড়া দিয়ে ‘না – না’ বললেও – ওরে, তোদের প্রাণের ভাষা যে চোখে-মুখে লাল অক্ষরে লেখা হয়ে ধরা পড়ত! পুরুষদের কথা বলতে পারিনে, কিন্তু এ জিনিসগুলো মেয়েদের চোখ এড়ায় না, তা তারা যতই উদাসীন ভাসা-ভাসা ভাব দেখাক। তার কারণ বোধ হয়, এদিক দিয়ে অধিকাংশ মেয়েই ভুক্তভোগী। তাছাড়া, মেয়েদের আবার মন নিয়েই বেশির ভাগ কারবার। স্নেহ-ভালোবাসা – সোহাগ-যত্ন রাতদিন তাদের ঘিরে রয়েছে, তাদের বুকের ভেতর ঝরনাধারার মতো নানান দিকে পথ কেটে বিচিত্র গতিতে বয়ে চলেছে আর সহস্র ধারায় বিলিয়েও এ অফুরন্ত স্নেহ-দরদ তাদের এতটুকু কমেনি। সে-কোন্ অনন্ত স্নেহময়ী মহানারীর স্নেহ-প্রপাত যেন এ নিঝর-ধারা উৎস! আমরা মা বোন স্ত্রী কন্যা বধূ হয়ে সংসার-মরুর আতপতপ্ত পুরুষ-পথিকের পথে মরূদ্যান রচনা করছি, তাদের গদ্যময় জীবনকে স্নেহ-কবিতা সৌন্দর্য-মাধুর্যে মণ্ডিত করে তুলছি, তাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রাকে সুনিয়ন্ত্রিত করে দিচ্ছি, – ভালোবাসা দিয়ে সব গ্লানি সব ক্লান্তি সব নৈরাশ্য দৈন্য-আলাই-বালাই মুছে নিচ্ছি, – আমাদের কাছে তাই ফাঁকি চলে না! আমরা সবজান্তার জাত।… তাই, আমি তোদের এই চোরের মতো সন্ত্রস্তভাব দেখে (আর, বড়ো লজ্জার কথা, সেই সঙ্গে তোর বেহায়া ভাইঝিও) মুখ টিপে হাসতাম। মানব-প্রাণের এই যে বাবা-আদমের কাল থেকে সৌন্দর্যের প্রতি প্রাণের প্রতি মানুষের টান, প্রাণের টান, গোপন পূজা – একে মানুষ কখনও ঘৃণা করতে পারে না ; অবশ্য নীচমনা লোকেদের কথা বলছি না। তাই তোদের দুজনারই মধ্যে ওই যে একটা মজার টানা-হেঁচড়ার ভাব, লাজ-অরুণ সংকোচ আর সবচেয়ে ওই ঘটি-বাটি-চুরি-করা ছেঁচকি চোরের মতো ‘এই বুঝি কেউ দেখে ফেললে রে – এই ধরা পড়লাম রে’ ভাব আমাদের যে কী আনন্দ দিত, তা ঠিক বোঝানো যায় না। বিপুল একটা তৃপ্তির গভীর স্বস্তিতে আমাদের দুজনারই বুক ভরে উঠত। তোর সদানন্দ ভাইটির তো দু-এক দিন চোখ ছলছল করে উঠত। আর পাছে আমার কাছে ধরা পড়ে অপ্রতিভ হয়ে যান, তাই তাড়াতাড়ি ‘ধ্যেৎ, চোখে কী-ছাই পড়ে গেল’ বলে চোখ দুটো কচলাতে থাকতেন, নয়তো এসরাজটা নিয়ে সুর বাঁধায় গভীর মনোনিবেশ করতেন। আহা, খাপছাড়া আশ্বিনের এক টুকরো শুভ্র সজল চপল মেঘের মতো নূরু, যা কভু জমে হয়ে যায় শক্ত তুহিন, আবার গলে ঝরে পড়ে যেন শান্ত বৃষ্টিধারা, – মন্দার-পারিজাতের চেয়েও কোমল, পাহাড়-ছোটা-ঝরনা-মুখের চেয়েও মুখর, শিশুর চেয়েও সরল হাসিভরা, পবিত্রতা-ভরা প্রাণ, স্নেহহারা বাঁধন-হারা নূরু, – সে আবার সংসারী হবে, তোর কিরণ-ছটায় তার সজল মেঘলা জীবনে ইন্দ্রধনুর সুষমা-মহিমা আঁকা যাবে, – ওঃ, সে কী দৃশ্য বেহেশ্‍তে হুর-গেলেমান, বা স্বর্গে অপ্সরি-কিন্নরী বলে কোনো প্রাণী থাকলে এ খোশখবরের ‘মোজদা ’ তারা স্বর্গের দ্বারে দ্বারে বিলিয়ে এসেছিল, মেওয়া-মিষ্টির খাঞ্চা ঘরে ঘরে ভেট দিয়েছিল!

আমরা তোদের এই পূর্বরাগকে কেন প্রশ্রয় দিতাম জানিস? হাজার অন্দরমহলের আড়াল-আবডালের ছাপা থাকলেও আমাদের অনেকের জীবনেই এমন একটা দিন-ক্ষণ আসে, যখন একজনকে দেখেই প্রাণের নিভৃত পুরে কোনো অনুরাগের গোলাবি ছোপের দাগ লেগে যায়। এ অনুরাগ আবার অনেক সময় ভালোবাসাতেও পরিণত হতে দেখা যায়, আর সেটা কিছুই বিচিত্র নয়। অবশ্য তা কারুর হয়তো সফল হয়, কারুর বা সে আশা মুকুলে ঝরে পড়ে, আবার কেউ হয়তো সাপের মানিকের মতন মর্মর মর্মে তাকে আমরণ লুকিয়ে রাখে, – তার অন্তর্যামী ভিন্ন অন্য কেউ ঘুণাক্ষরেও তা জানতে পারে না। আমার কথা তো জানিস। আমার বাবাজান যখন সাবজজ হয়ে বাঁকুড়ায় বদলি হলেন, তখন আমার বয়স পনেরো-ষোলোর বেশি হবে না। তখনও আমি থুবড়ো। তাই মাজানের চাড়ে আমার শাদির জন্যে বাবাজান একটু ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আজকাল বাপ-মা-রা মহাজন-বিদায় বা ঘরের আবর্জনা ঝেঁটিয়ে ফেলার মতোই যেন দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে চায়, ব্যস্ত হয়ে পড়লেও আমাকে ওরকম অনহেলা হেনেস্থা সইতে হয়নি। বড্ড আদরেই মানুষ হয়েছিলাম বোন, বাপের একটি মেয়ে – বাবাজান তো আমায় ‘আম্মাজান’ আম্মাজান’ করে আদর-সোহাগ দিয়ে হয়রান করে ফেলতেন। সবচেয়ে তাঁর বেশি ঝোঁক ছিল আমায় লেখাপড়া শেখাবার। এর জন্য কত টাকা যে খরচ করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। আমার ঘরই তো একটি জবরদস্ত লাইব্রেরি ছিল, তার ওপর আবার এক ব্রাহ্ম শিক্ষয়িত্রী রেখে আমায় নানা বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। লোকে, বিশেষ করে গোঁড়া হিন্দুরা, কেন যে ভাই ব্রাহ্মদের ঠাট্টা করে, আমি বুঝতে পারিনে! আমার বোধ হয় ও শুধু ঈর্ষা আর নীচ-মনার দরুন। ভালো-মন্দ সব সমাজেই আছে, তাই বলে যে অন্যের বেলায় শুধু মন্দের দিকটাই দেখে ছোটোলোকের মতো টিটকিরি মারতে হবে এর কোনো মানে নেই। আমার পূজনীয়া শিক্ষয়িত্রী ওই ব্রাহ্ম মহিলার কথা মনে পড়লে এখনও একটা বুক-ভরা পবিত্র ভক্তিতে আমার অন্তর মন যেন কানায় কানায় ভরে ওঠে। এত মহিমান্বিতা মাতৃশ্রী- মণ্ডিতা যে ধর্মের নারী, এত অনবদ্য পূত শালীনতা ও সংযমবিশিষ্টা যে সমাজের নারী সে ধর্মকে সে সমাজকে আমি সালাম করি। আমি তাঁকে মায়ের মতোই ভক্তি করতে পেরেছিলাম, ভালোবাসতে পেরেছিলাম এমনই স্নেহ-মাধুর্যে পবিত্র স্নিগ্ধতায় ভরা ছিল তাঁর ব্যবহার! মা কত দিন এসে হেসে বলতেন, – ‘দিদি, তুমি আমার রেবাকে মা ভুলিয়ে দিলে দেখচি।’ তিনিও হেসে বলতেন, – ‘তা বোন, আজকালকার মেয়েগুলোই নিমকহারাম, আজ তোমাকে ছেড়ে আমাকে মা বলচে, আবার দু-দিন বাদে শাশুড়ি গতরখাকিকে মা বলবে গিয়ে। আর তাছাড়া আমার সাহসিকাও তোমার নাম করতে পাগল। সে আবার আপশোশ করে যে, কেন তোমার পেটে সে জন্মায়নি। এখন এক কাজ করি এসো, আমরা মেয়ে বদল করি।’ তুই বোধহয় শুনেছিস যে, ওঁর সাহসিকা বলে আমারই বয়সি একটি মেয়ে ছিল। তাতে আমাতে এত গলায়-গলায় মিল ছিল, তা যদি শুনিস তো তুই অবাক হয়ে যাবি। আমার সে শিক্ষয়িত্রী-মা আজ আর নেই, – আজ এই কথাটি মনে হতেই দেখেছিস টস টস করে আমার চোখ দিয়ে জল বেয়ে পড়ল! সাহসিকা বি. এ. পাস করে এখন এক স্কুলের প্রধানা শিক্ষয়িত্রীর কাজ করছে। প্রথম জীবনেই সে বুকে মস্ত এক দাগা পেয়ে বিয়ে-টিয়ে করেনি, চিরকুমারী থাকবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। সে এখনও মাঝে মাঝে আমায় চিঠি দেয়, সে চিঠিগুলোর এক একটা অক্ষর যেন বুক ফাটা কান্নার অশ্রুফোঁটা। তুই যদি আসিস তা হলে এবার সব চিঠিগুলো তোকে দেখাব। আঃ, সে কতদিন তাতে আমাতে দেখা নেই. তবু তার কথাটা যখনই মনে হয় তখনই যেন জানটা সাতপাক মোচড় খেয়ে ওঠে। আমার বিয়ের সময় তার কী আমোদ! তাঁরা সবাই আমার বিয়েতে এসেছিলেন। আজ আমার মাও নেই, তারও মা নেই, তাঁরা বোধ হয় বেহেশ্‍তে গিয়ে আবার একসঙ্গে মিলেছেন, তাঁদের এই অভাগি মেয়েদের জন্যে সেখানেও জান খাঁ খাঁ করে কিনা, কান্না পায় কিনা, তা কে জানে? অন্য কোনো জাতির কোনো ধর্মের কোনো সমাজের নারীর মধ্যে কই নারীত্বের এমন পূর্ণ বিকাশ তো দেখিনি। এই সমাজের যত নারী দেখেছি, সবারই ব্যবহার কথাবার্তা এত সুন্দর আর মিষ্টি যে, তাতে বনের পাখিরও ভুলে যাওয়ার কথা, এঁদের বুকে যেন স্নেহের ভরা গঙ্গা বয়ে যাচ্চে! যারা একে বাড়াবাড়ি বলে বা মানে না, উলটো নিন্দা করে, তারা বিশ্বনিন্দুক। আমার বোধহয় এঁরাই এদেশে সর্বাগ্রে সামাজিক পারিবারিক যত অহেতুক খামখেয়ালির বন্ধনকে কেটে স্বাধীন উচ্চশির নিয়ে মহিমময়ী রানির মতো দাঁড়িয়েছেন বলেই দেশের অধীনতা-পিষ্ট বন্ধন-জর্জরিত লোকের এত বুক-চড়চড়ানি। এঁদের সঙ্গে যে খুব সহজ সরল স্বচ্ছন্দে প্রাণ খুলে মিশতে পারা যায়, এইটেই আমাকে আনন্দ দেয় সবচেয়ে বেশি। এঁদের মধ্যে ছোঁয়াচে রোগ বা ছুতমার্গের ব্যামো নেই, কোনো সংকীর্ণতা, ধর্মবিদ্বেষ, বেহুদা বিধি-বন্ধন নেই। আজ বিশ্ব-মানব যা চায় সেই উদারতা সরলতা সমপ্রাণতা যেন এর বাইরে ভিতরে ওতপ্রোতভাবে জড়ানো রয়েছে। আমরা বড়ো বড়ো হিন্দু পরিবারের সঙ্গেও মিশেছি, খুব বেশি করেই মিশেছি এবং অনেক হিন্দু মেয়ের সঙ্গে খুব ভাবও হয়েছিল, কিন্তু এমন দিল-জান খোলসা করে প্রাণ খুলে সেখানে মিশতে পারিনি। কোথায় যেন কী ব্যবধান থেকে অনবরত একটা অসোয়াস্তি কাঁটার মতো বিঁধতে থাকে। আমরা তাঁদের বাড়ি গেলেই, তাঁরা হন আর না হন, আমরাই বেশি সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি, – এই বুঝি বা কোথায় কী ছোঁয়া গেল, আর অমনি সেটা অপবিত্র হয়ে গেল। আমরা যেন কুকুর বেড়াল আর কী! তাঁরাও আমাদের বাড়ি এসে পাঁচ-ছয় হাত দূরে দূরে পা ফেলে ড্যাং পেড়ে পেড়ে আসেন, পাছে কোথায় কী অখাদ্য কুখাদ্য মাড়ান। এতে মানুষকে কত ছোটো হয়ে যেতে হয়, তার বুকে কত বেশি লাগে। এখনও দেশে পনেরো আনা হিন্দুর সামাজিকতা এই রকম আচার-বিচারে ভরা। যাঁরা শহরে থেকে বাইরে খুব উদারতার ভান দেখান তাঁদের পুরুষরা যাই হন, মেয়েদের মধ্যে এখনও তেমনই ভাব। ভিতরে এত অসামঞ্জস্য ঘৃণা-বিরক্তি চেপে রেখে বাইরের মুখের মিলন কি কখনও স্থায়ী হয়? এ মিথ্যা আমরা উভয়েই মনে মনে খুব বুঝি কিন্তু বাইরে প্রকাশ করিনে। পাশাপাশি থেকে এই যে আমাদের মধ্যে এতো বড়ো ব্যবধান, গরমিল – এ কী কম দুঃখের কথা? আমাদের আত্মসম্মান আর অভিমান এতে দিন দিনই বেড়ে চলেছে। আমরা আর যাই হই, কিন্তু কেউ হাত বাড়িয়ে দিলে বুক বাড়িয়ে তাকে আলিঙ্গন করবার উদারতা আমাদের রক্তের সঙ্গে যেন মেশানো। তাই এই অবমাননার মধ্যে হঠাৎ এই ব্রাহ্মসমাজের এত প্রীতিভরা ব্যবহার যেন এক-বুক অসোয়াস্তির মাঝে স্নিগ্ধ শান্ত স্পর্শের মতো নিবিড় প্রশান্তি নিয়ে এসেছে। আমাদের ঘরের পাশের হিন্দু ভগিনীগণ যখন এমনি করে মিশতে পারবেন, তখন একটা নতুন যুগ আসবে দেশে। আমি জোর করে বলতে পারি, এই ছোঁয়া-ছুঁয়ির উপসর্গটা যদি কেউ হিন্দুসমাজ থেকে উঠিয়ে দিতে পারেন, তাহলেই হিন্দু-মুসলমানের একদিন মিল হয়ে যাবে। এইটাই সবচেয়ে মারাত্মক ব্যবধানের সৃষ্টি করে রেখেছে, কিন্তু বড়ো আশ্চর্যের বিষয় যে, হিন্দু-মুসলমানে মিলনাকাঙ্ক্ষী বড়ো বড়ো রথীরাও এইটা ধরতে পারেননি, তাঁরা অন্য নানান দিক দিয়ে এই মিলনের চেষ্টা করতে গিয়ে শুধু পণ্ডশ্রম করে মরচেন। আদত রোগ যেখানে, সেখানটা দেখতে না পেয়ে কানা ডাক্তারের মতন এঁরা একেবারে মাথায় স্টেথিস্কোপ বসিয়ে গম্ভীরভাবে রোগ ও ওষুধ নির্ণয়ের চেষ্টা করছেন। এই ‘ছুতমার্গ’ দেশ থেকে ঝেঁটিয়ে বের করতে আমাদের হিন্দু মা-বোনদেরই চেষ্টা করতে হবে বেশি। কেননা পুরুষদের চেয়ে এঁদেরই এ বদ-রোগটা ভয়ানক মজ্জাগত। আজকাল অনেক হিন্দু ভদ্রলোক, বিশেষ করে নব্য সম্প্রদায় (যুবক প্রৌঢ় দুই) খুব প্রাণ খুলে একসঙ্গে আমাদের পুরুষদের সঙ্গে বসে আহার করেন, আলাপ করেন, এতটুকু ছোঁয়া যাওয়ার ভয় নেই। কিন্তু আমাদের হিন্দু ভগিনীরা হাজার শিক্ষিতা হলেও অমনটি পারে না। এটা তাদের ধর্মের অঙ্গ কিনা জানি না, কিন্তু আমার বোধ হয় দুনিয়ার কোনো ধর্মই এত অনুদার হতেই পারে না, এ নিশ্চয়ই সমাজের সৃষ্টি। দেশ-কাল-পাত্র ভেদে সমাজের সংস্কার হওয়া উচিত নয় কি? – হায় কপাল! দেখেছিস কী লিখতে গিয়ে কী সব বাজে বকলাম! আমি এতক্ষণ ভুলেই গিয়েছিলাম, যে তোকে চিঠি লিখছি। এ কথাগুলো লিখবার সময় আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি সাহসিকাকে চিঠি লিখচি, কারণ, তাতে আমাতে এই মতো আলোচনাই হয় বেশি। থাক যা লেখা গেল ঝোঁকের মাথায়, তাকে অনর্থক ছিঁড়ে ফেলেই বা কী হবে? ভালো লাগে তো পড়িস, নয়তো ও জায়গাটুকু বাদ দিয়েই পড়িস। এখন আমার সেই হারানো কাহিনিটা আবার ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করি।

Page 26 of 43
Prev1...252627...43Next
Previous Post

অগ্নিবীণা – কাজী নজরুল ইসলাম

Next Post

কুহেলিকা – কাজী নজরুল ইসলাম

Next Post

কুহেলিকা - কাজী নজরুল ইসলাম

রুবাইয়াত্‌-ই-ওমর খৈয়াম - কাজী নজরুল ইসলাম

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আত্মজীবনী
  • ইতিহাস
  • উপন্যাস
  • কবিতা
  • কাব্যগ্রন্থ
  • গল্পের বই
  • গোয়েন্দা কাহিনী
  • ছোট গল্প
  • জীবনী
  • দর্শন
  • ধর্মীয় বই
  • নাটকের বই
  • প্রবন্ধ
  • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
  • বৈজ্ঞানিক বই
  • ভূতের গল্প
  • রহস্যময় গল্পের বই
  • রোমাঞ্চকর গল্প
  • রোম্যান্টিক গল্পের বই
  • শিক্ষামূলক বই
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result
  • বাংলাদেশী লেখক
    • অতুলচন্দ্র গুপ্ত
    • অভিজিৎ রায়
    • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
    • আনিসুল হক
    • আবু ইসহাক
    • আবু রুশদ
    • আবুল আসাদ
    • আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন
    • আবুল বাশার
    • আরজ আলী মাতুব্বর
    • আল মাহমুদ
    • আসাদ চৌধুরী
    • আহমদ ছফা
    • আহমদ শরীফ
    • ইমদাদুল হক মিলন
    • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
    • কাসেম বিন আবুবাকার
    • জসীম উদ্দীন
    • তসলিমা নাসরিন
    • দাউদ হায়দার
    • দীনেশচন্দ্র সেন
    • নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
    • নিমাই ভট্টাচার্য
    • প্রফুল্ল রায়
    • প্রমথ চৌধুরী
    • ময়ূখ চৌধুরী
    • মহাদেব সাহা
    • মাহমুদুল হক
    • মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    • হুমায়ূন আহমেদ
  • ইন্ডিয়ান লেখক
    • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়
    • অতুল সুর
    • অদ্রীশ বর্ধন
    • অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • অনীশ দেব
    • অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • অমিয়ভূষণ মজুমদার
    • আশাপূর্ণা দেবী
    • আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
    • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
    • কাজী নজরুল ইসলাম
    • ক্ষিতিমোহন সেন
    • তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
    • তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
    • দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
    • নারায়ণ সান্যাল
    • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
    • নীহাররঞ্জন গুপ্ত
    • পাঁচকড়ি দে
    • পূর্ণেন্দু পত্রী
    • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    • বিমল মিত্র
    • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    • হেমেন্দ্রকুমার রায়
  • বিভাগসমূহ
    • আত্মজীবনী
    • ইতিহাস
    • উপন্যাস
    • কবিতা
    • কল্পকাহিনী
    • কাব্যগ্রন্থ
    • খেলাধুলার বই
    • গল্পের বই
    • গোয়েন্দা কাহিনী
    • ছোট গল্প
    • জীবনী
    • দর্শন
    • ধর্মীয় বই
    • নাটকের বই
    • প্রবন্ধ
    • বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
    • বৈজ্ঞানিক বই
    • ভূতের গল্প
    • মুক্তিযুদ্ধের-বই
    • রহস্যময় গল্পের বই
    • রোমাঞ্চকর গল্প
    • রোম্যান্টিক গল্পের বই
    • শিক্ষামূলক বই
    • সমগ্র
  • সিরিজ বই
    • মিসির আলী সমগ্র
    • হিমু সিরিজ

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In