ওসি সাহেব কবিতা শেষ উঠে দাড়ালেন। আমি বললাম, আবার কবে। আসবেন?
ওসি সাহেব জবাব দিলেন না। আমি হঠাৎ করে বললাম, পায়ের আলতা খুব সুন্দর জিনিস কিন্তু আলতাকে সব সময় পায়ে পড়ে থাকতে হয় এর উপরে সে উঠতে পারে না।
ওসি সাহেব ঠাণ্ডা গলায় বললেন, হঠাৎ আলতার প্রসঙ্গ তুললেন কেন?
এমনি তুললাম। আলাপ আলোচনার মানুষ প্রায়ই প্রসঙ্গ ছাড়া কথা বলে। ননসেন্স রাইম যেমন আছে, ননসেন্স কথাবার্তাও আছে।
ওসি সাহেব বললেন, আমরা স্ত্রীর নাম আলতা এটা আপনি জানেন?
আগে জানতাম না। এখন জানলাম।
ওসি সাহেব কঠিন চোখে কিছুকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলেন। ভদ্রলোক বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন। ধাক্কা সামলাতে কিছু সময় লাগবে।
তানিজা এবং তার বাবার জুতা
তানিজকে তার বাবার জুতা ফিরিয়ে দিয়েছি। বাসায় তখন তানিজা এবং তার কাজের মেয়ে ছাড়া কেউ ছিল না। সদর দরজা তালাবদ্ধ। কথা হল জানালা দিয়ে।
আমি বললাম, তালাবদ্ধ কেন?
তানিজা বলল, মা বাইরে গেছে তো এই জন্যে। তালা খোলা থাকলে অনেক সমস্যা।
সমস্যা বেশি থাকলে তালাবদ্ধ থাকাই ভাল! আমি তোমার বাবার জুতা ফিরিয়ে দিতে এসেছি।
আপনার রঙ পছন্দ হয় নি? অন্য রঙ দেব?
রঙ ঠিক আছে। ঠিক করেছি। জুতা পড়ব না।
চা খাবেন। চা দেব।
দও এক কাপ চা ৷
জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চা খেয়ে চলে এলাম।
এলিতা ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছল
এলিতা ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছল ডিসেম্বর মাসের চার তারিখ। বুধবার সময় সকাল ন’টা। দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি, জেট লেগ, অপরিচিত নতুন দেশে প্ৰথম পা দেয়ার শংকায় সে খানিকটা বিপর্যন্ত।
সে ছেলে সেজে আসে নি। মেয়ে সেজেই এসেছে। কালো টপের সঙ্গে লাল, হলুদ, সবুজ রঙের স্কার্ট। রঙগুলি একটির গায়ে একটি মিশে সাইকাডেলিক আবহ তৈরি করেছে। আমার সঙ্গে কাদের। সে বিড় বিড় করে বলল, কেমুন সুন্দর মেয়ে দেখছেন ভাইজান? সাক্ষাৎ হুর।
কাদোরের হাতে প্ল্যাকার্ড ধরা। সেখানে বাংলায় লেখা মি. এলিত। এলিতার আকার বাদ দেয়া হয়েছে নামের মধ্যে পুরুষ ভাব আনার জন্য।
এলিতা এগিয়ে এল।
আমি বললাম, তোমার না পুরুষ সেজে আসার কথা।
এলিতা বলল, পাসপোর্টে লেখা আমি মেয়ে, পুরুষ সেজে আসব কিভাবে?
মাজেদা খালা বলেছিলেন, এলিতা টিচার রেখে বাংলা শিখে এসেছে। তার বাংলার নমুনায় আমি চমৎকৃত। সে বলল, ‘আইচা টিক চে’। আমি বললাম, এর মানে কি? ? এলিতা বলল, এর অর্থ হয়। It’s ok. তখন বুঝা গেল। সে বলছে ‘আচ্ছা ঠিক আছে’। তার অদ্ভুত বাংলায় আচ্ছা ঠিক আছে হয়ে গেল ‘আইচা টিক চে।’
তার আরো কিছু বাংলা,
উষন লগা চে : উষ্ণ লাগছে। অর্থাৎ গরম লাগছে।
খাইদ ভাল চে : খাদ্য ভাল লাগছে।
কিনিত বিরাকত : কিঞ্চিৎ বিরক্ত।
পাঠকদের সুবিধার জন্যে তার সঙ্গে কথোপকথন সহজ বাংলায় লেখা হবে। তবে দু’একটা বিশেষ ধরনের বাংলা ব্যবহার করা হবে। কাদেরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার পর এলিতা অবাক হয়ে বলল, “বালকের চশখু পবিত্রতা হয়।” অর্থাৎ এই বালকের চোখের মধ্যে পবিত্রতা আছে।
ইয়েলো ক্যাব নিয়ে আমরা ঢাকার দিকে যাচ্ছি। সে আগ্রহ নিয়ে ঢাকা শহর দেখছে। তার চোখে খানিকটা বিস্ময় বোধ। সে বলল, তোমাদের শহরতো যথেষ্ট পরিষ্কার।
তুমি কি ভেবেছিলে? নোংরা ঘিঞ্চি শহর দেখবে?
হুঁ। আমাকে তাই বলা হয়েছে। রাস্তায় এত দামী দামী গাড়ি দেখেও অবাক হচ্ছি। রিকশা কোথায়? আমি শুনেছি। ঢাকা রিকশার শহর। গায়ে গায়ে রিকশা লেগে থাকে। ফুটপাত দিয়ে কেউ হাঁটতে পারে না। রিকশার উপর দিয়ে হাঁটতে হয়।
রিকশা প্রচুর দেখবে। এটা ভিআইপি রোড এই রোডে রিকশা চলাচল করে না।
আমি যে বাড়িতে পেইং গেস্ট থাকব। সেখানে কি যাচ্ছি?
মাজেদা খালার বাসায় তোমাকে রাখার প্রাথমিক চিন্তা ছিল। সেটা ঠিক হবে না। তিনি তাঁর স্বামীর গায়ে এসিড ছুড়ে মারার জন্যে আলমারিতে এক বোতল এসিড লুকিয়ে রেখেছেন। এসিড ছোড়াছুড়ির মধ্যে উপস্থিত থাকা কোনো কাজের কথা না।
এসিড ছুড়ে মারা মানে?
এসিড ছুড়ে মুখ ঝলসে দেয়া এ দেশে স্বাভাবিক ব্যাপার। মনে কর কোনো ছেলে কোনো মেয়ের প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করতে চাইল। মেয়ে রাজি না হলেই মুখে এসিড।
Oh God.
আমি যদি তোমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেই সঙ্গে সঙ্গে না বলবে না। কায়দা করে এড়িয়ে যাবে।
না বললে আমার মুখে এসিড মারবে?
সম্ভাবনা আছে। আমি তো এই দেশেই বাস করি।
লেগপুলিং করবে না। আমি কোথায় থাকব। সেই ব্যবস্থা কর।
তোমাকে হোটেলেই থাকতে হবে। পেইং গেষ্ট হিসেবে কেউ তোমাকে রাখতে রাজি হবে না।
কেন রাজি হবে না?
রজি না হবার অনেক কারণ আছে। মূল কারণ একটাই। মূল কারণ কেউ তোমাকে বলবে না। আমি বলে দেই?
দাও।
মূল কারণ হল তুমি পরীর মত রূপবতী একটি মেয়ে। এমন রূপবতী একজনকে কোনো গৃহকর্ত্রী বাড়িতে জায়গা দেবে না। তাদের স্বামী তোমার প্রেমে পড়ে যেতে পারে এই আশংকায়।
এলিতা শব্দ করে হাসছে। তার হাসি দেখতে এবং হাসির শব্দ শুনতে ভাল লাগছে। বাংলাদেশের কিশোরীরা শব্দ করে হাসে। একটু বয়স হলেই হাসির শব্দ গিলে ফেলে হাসার চেষ্টা করে। চেষ্টাতে সাফল্য আসে। এক সময় হাসির শব্দ পুরোপুরি গিলে ফেলতে শিখে যায়। হারিয়ে ফেলে চমৎকার একটি জিনিস।
এলিতা বলল, প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে।