গল্প বলুন শুনি।
ওসি সাহেব মুখের চামড়া আরো শক্ত করতে চাচ্ছেন। পারছেন না। গল্প শোনায় লোভ তার মধ্যে কাজ করছে। হুজুগের এই গল্প আমি অনেকের সঙ্গে করেছি। যারা শুনেছে তারা সবাই হো হো করে হোসেছে। শুধু পুলিশ অফিসাররা কেউ হাসেন নি। আমি গল্প শুরু করলাম।
এক ভদ্রলোক মতিঝিলে কাজ করেন। সত্তুর তলায় তাঁর অফিস। একদিন তিনি মন দিয়ে ফাইল দেখছেন তখন হন্তদন্ত হয়ে তার রুমে পিওন ঢুকে উত্তেজিত গলায় বলল, স্যার খবর শুনেছেন আপনার স্ত্রীতে আপনার গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে পালিয়ে গেছেন!
ভদ্রলোক চূড়ান্ত অপমানিত বোধ করে জানালা খুলে লাফ দিলেন। লাফ দেবার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মনে হল, আরে আমারতো গাড়িই নাই। ড্রাইভারের প্রসঙ্গ আসছে কেন?
কংক্রিটের মেঝেতে আছড়ে পড়ার আগ মুহুর্তে মনে হল, আরে আমিতো এখনো বিয়েই করি নি।
ওসি সাহেব শব্দ করে হেসে উঠলেন। অনেক কষ্টে হাসি থামালেন।
আমি বললাম, ভাই আপনিতো ভেজাল পুলিশ অফিসার।
ওসি সাহেব বললেন, আমি বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল পাওয়া অফিসার। এখন পর্যন্ত এক টাকা ঘুস খাই নি।
এই জন্যেই তো আপনি ভেজাল।
ওসি সাহেব হাতের পেনসিল নামিয়ে হাই তুলতে তুলতে বললেন, একটা কাগজে আপনার নাম ঠিকানা লিখে চলে যান।
ছেড়ে দিচ্ছেন?
হ্যাঁ ছেড়ে দিচ্ছি।
আমি যাব না।
যাবেন না মানে?
আমার সঙ্গে আরো যে দু’জন আছে তাদেরকে না নিয়ে যাব না। আমি একজন রাশিয়ান পরী বিয়ে করতে যাচ্ছি। আমার লোক বল নাই। এরা থাকলে নানান ভাবে সাহায্য করবে। গায়ে হলুদের ব্যাপার আছে। মেয়ের বাড়িতে মাছ পাঠাতে হবে। বিয়েতে আপনি উপস্থিত থাকলে আমি খুবই খুশি হব স্যার।
ওসি সাহেব হাতের পেনসিল নামিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন।
সন্ধ্যার দিকে আমরা তিনজনই ছাড়া পেলাম। আলম এবং বালক হাজতি কাদের আমার মেসে থাকতে এল। কাদের ঘোষণা করল সে বাকি জীবন আমার সঙ্গে থাকবে। আমার সেবা করবে। গা হাত পা টিপে দিবে।
আলম এই জাতীয় কোনো কথা বললেন না। তবে তিনি জানালেন যে মেস বাড়িতে থাকবেন সেখানে তাঁর মুখ দেখানোর অবস্থা নেই। মেসে অনেক টাকা বাকিও পড়েছে, কাজেই…..
গত সাতদিনের ঘটনা বা দুর্ঘটনা
গত সাতদিনে আমার জীবনে যে সব ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটেছে তা আলাদা শিরোনামে লিখছি। পাঠকদের সুবিধার জন্যে। পাঠকরা যে সব ঘটনা জানতে চান শিরোনাম দেখে তা ঠিক করবেন। ঘটনা প্রবাহ নিম্নরূপ।
রাশিয়ান পরী
তার ঢাকায় আসার সময় হয়ে গেছে। সে আগামী বুধবার সিঙ্গাপুর এয়ার
লাইনসে আসছে। মাজেদা খালাকে সে একটি e-mail পাঠিয়েছে। খালা তার কপি আমার কাছে পাঠিয়েছেন। এর বাংলা—
আমার খাদ্য : নিরামিশ। মাঝে মধ্যে ডিম চলতে পারে। রাতে ফলাহার করি। একটা আপেল (সবুজ), একটা কলা এবং থাই পেপে। লাঞ্চে আমি এক গ্লাস ব্লেড ওয়াইন খাই (৭৫ m l), ঘুমাতে যাবার আগে ব্ল্যাক কফি।
বাসস্থান : আমি সাধারণ বাংলাদেশী একটি পরিবারের সঙ্গে থাকতে চাই। পেইং গেষ্ট হিসেবে থাকব। এটাচিড বাথরুম থাকতে হবে। টয়লেট পেপার থাকতে হবে। এই বাথরুম অন্য কেউ ব্যবহার করবে না। টয়লেটে অবশ্যই হট ওয়াটারের ব্যবস্থা থাকবে। দরজা জানালায় নেট থাকবে যাতে মশা মাছি না আসে। বেডশীট এবং টাওয়েল প্রতিদিন সকল দশটার মধ্যে বদলাতে হবে। ঘরে অবশ্যই এসি থাকতে হবে। ইন্টারনেট কানেকশন লাগবে।
যাতায়াত : আমার জন্যে একটা সাইকেল লাগবে। আমি সাইকেলে যাতায়াত করব। যে আমার গাইড তাকেও সাইকেলে সর্বক্ষণ আমাকে অনুসরণ করতে হবে। গাইড প্রতিদিন একশ ডলার করে পাবে। তার খাওয়া-দাওয়া এর মধ্যেই ধরা থাকবে। আমার মেয়ে পরিচয় গাইড নিজে জানবে কিন্তু কাউকে জানাতে পারবে না।
গাইড : গাইডের ইংরেজি ভাষায় দখল থাকতে হবে। আমি বাংলা ভাষা শিখে এসেছি তারপরেও কিছু কথা হয়তোবা। আমি বাংলায় প্রকাশ করতে পারব না। গাইডকে বুদ্ধিমান হতে হবে। থার্ডওয়ার্লড কান্ট্রিতে বকর বকর করতে পারাকেই বুদ্ধিমত্তা ধরা হয়। আমার গাইড অতিরিক্ত কথা একেবারেই বলবে না।
আলম এবং বালক হাজতি কাদের
মেসে আমার পাশের ঘরটি তাদের জন্যে ভাড়া নিয়েছি। আলম দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা এই ঘরে থাকেন। ঘর থেকে বের হন না। দাড়ি গোঁফ কামান না। যে কোনো কারণেই হোক তিনি মহাদুশ্চিন্তায় আছেন। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষের চুল দাড়ি দ্রুত বাড়ে। তারও বেড়েছে। লম্বা দাড়ি গোফে তার চেহারায় ঋষিভাব চলে এসেছে। তাকে দেখে মনে হয়। সারাক্ষণ বিশেষ কিছু নিয়ে ভাবছেন। তিনি কেরোসিন কুকার কিনেছেন। দুইবেলা নিজে রান্না করে নিজের খাবার নিজেই খান। কাদেরকে ভাগ দেন না। এ নিয়ে কন্দেরের কোনো মাথা ব্যথা নেই। আলম। যেমন সারাক্ষণ ঘরের ভেতর থাকেন, কাদের থাকে বাইরে। রাতে হঠাৎ হঠাৎ আসে। তাকে দেখে মনে হয় সে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। পরিকল্পনা সে কারো কাছে প্ৰকাশ করছে না। সে মাঝে মাঝে আমার কাছে আসে। মাথা নিচু করে মেঝেতে বসে থাকে। আমার চোখের দিকে তাকায় না।
একরাতে আমি নিজ থেকেই বললাম, কিছু বলবি?
হুঁ।
বলে ফেল। পেটে কথা জমিয়ে রাখা ঠিক না। পেটে বেশিদিন গোপন কথা থাকলে এ্যাপেডিসাইটিস ফুলে যায়। ব্যথা শুরু হয়। তখন আর অপারেশন ছাড়া গতি থাকে না।