বাংলাদেশ পাদুকা বিক্রেতা সমিতির সভাপতি হাজি চাঁন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভদ্র ভাষায় প্রতিবেদকের সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু করেন। এক পর্যায়ে বলে উঠেন “…পুত তোরে আমি জুতা খিলায়া দিমু।”
প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে এমন ব্যবহার কখনো আশা করা যায় না।
বিষয়টার আমরা সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
একটি চৈনিক প্ৰবাদ
একটি চৈনিক প্ৰবাদ আছে—“তুমি কাউকে ধাক্কা দিয়ে খাদে ফেলে দিতে চেষ্টা করো যেন সে খাদ থেকে উঠতে না পারে।” এই প্রবাদের ব্যাখ্যা হল। খাদ থেকে উঠতে পারলে সে প্রতিশোধ নেবে। তাকে সেই সুযোগ না দেয়া।
আলম জুতা সন্ত্রাসী হিসেবে এখন থানা হাজতে। চৈনিক প্রবাদ অনুসারে আমার চেষ্টা করা উচিত যেন তিনি জামিনে বের হতে না পারেন। চৈনিক প্রবাদ আমাদের জন্যে খাটে না। আমাদের প্রবাদ হচ্ছে-কাউকে খাদে ফেলতে হলে তুমি নিজে তা করবে না। অন্যকে দিয়ে করবে। খাদে পড়ে যাওয়া ব্যক্তির প্রতি প্রচুর সহানুভূতি দেখাবে। যার সাহায্যে তুমি অসহায় মানুষটিকে খাদে ফেলেছ এক পর্যায়ে তার নাম তুমি প্রকাশ করে তাকেও বিপদে ফেলবে। সব শেষে মানব চরিত্রের অবক্ষয় নিয়ে হা-হুতাশ করবে। দৈনিক পত্রিকায় চিঠি লিখবো। চিঠির শিরোনাম, দেশ আজ কোথায় যাচ্ছে? দেশের বিখ্যাত কবিদের কবিতা শিরোনামে ব্যবহার করলে চিঠি সহজে ছাপা হবে। উদাহরণ, “উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ।”
আমি ঠিক করলাম যে জুতাজোড়া নিয়ে এত কাণ্ড সেই জুতাজোড়া আলমকে দিয়ে আসব। পুলিশ ইচ্ছা করলে জুতাজোড়া আলামত হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
স্যুট টাই পরে খালি পায়ে তৈরি হলাম। খালু সাহেবের প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে খানিকটা চমকালাম। প্যান্টের পকেটে মানিব্যাগ। বেশ কিছু হাজার টাকার নোট দেখা যাচ্ছে। সবুজ নোটও কিছু আছে। আমেরিকান ডলার। নানান ধরনের কার্ড। আমেরিকান এক্সপ্রেস, ভিসা জাতীয় হাবিজাবি। কিছু কাগজপত্র ক্লিপ দিয়ে আটকানো। নিশ্চয়ই অতি জরুরি।
মানিব্যাগ হারিয়েছে এই খবর খালু সাহেবের এর মধ্যে জেনে ফেলার কথা। বাসায় নিশ্চয়ই ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেছে।
খালু সাহেব হাইপারটেনশনের রুগী। আমি নিশ্চিত তিনি বিছানায় পড়ে গেছেন এবং তার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। খবর নেবার জন্যে মাজেদা খালাকে টেলিফোন করলাম। খালা কঁদো কাদো গলায় বললেন, তোর খালুর মানিব্যাগ পকেটমার হয়েছে।
বল কি? টাকা পয়সা কি পরিমাণ ছিল?
টাকা পয়সা নিয়ে তোর খালুর মাথা ব্যথা না। জরুরি একটা টেলিফোন নাম্বার লেখা ছিল, ঐ নাম্বারটা হারানোতেই সে অস্থির।
কার নাম্বার?
কার নাম্বার সে বলছে না।
নাম্বার মোবাইল ফোনে সেভ করা যায়। এই নাম্বার সেভ করা নেই কেন?
আমি কিভাবে বলব?
আমি গলা নামিয়ে বললাম, খালু সাহেবের কোনো গোপন বান্ধবীর নাম্বার না তো?
পাগলের মত কথা বলছিস কেন? এই বয়সে তার আবার গোপন বান্ধবী কি?
খালা। একটা চিনা প্ৰবাদ আছে, “বিড়াল, কাক এবং বৃদ্ধ পুরুষ এই তিন শ্রেণীকে বিশ্বাস করবে না।” চায়নিজ ব্রা মোক্ষম মোক্ষম প্ৰবাদ বের করেছে। কোনটাই ফেলনা না।
খালা হতভম্ব গলায় বললেন, কি বলছিস তুই? তোর কথাবার্তা শুনেতো আমার হাত পা কাপা শুরু হয়েছে। আমি কি তোর খালুকে চেপে ধরব?
হাইপারটেনশনের রুগী বেশি চাপাচাপি করা ঠিক হবে না। মানিব্যাগ উদ্ধার হোক তারপর টেলিফোন রহস্যের জট খোলা হবে।
মানিব্যাগ উদ্ধার হবে কিভাবে? দোয়া কালাম পড়তে থাক। বাসায় নিয়ামূল কোরান আছে না? সেখানে দেখ হারানো জিনিস ফেরত পাবার দোয়া আছে। এক মনে পড়তে থাক।
হিমু! তুইতো আমাকে বিরাট টেনশনে ফেলে দিলি। তুই এক্ষুনি বাসায় আয়।
এখন আসতে পারব না। থানা হাজতে যেতে হবে।
জুতা সন্ত্রাসী আলমকে পুরোপুরি বিধ্বস্ত মনে হল। এক চোখে কালসিটা পড়েছে। অন্যটা টকটকে লাল সেখান থেকে পানি পড়ছে। তিনি মেঝেতে পা ছড়িয়ে হাজতের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছেন, বিড় বিড় করছেন। নিশ্চয়ই কোনো দোয়া কালাম পড়ছেন। মসজিদ এবং থানা হাজত হল এক মনে আল্লাহকে ডাকার জায়গা।
আমি হাজাতের লোহার শিকের ওপাশ থেকে বললাম, আলম ভাই কেমন আছেন?
তিনি চমকে তাকালেন। তবে আমাকে চিনতে পারলেন না। ঝামেলার সময় দেখা মানুষকে ঝামেলা মুক্ত অবস্থায় বেশিরভাগ সময় চেনা যায় না।
আমি বললাম, মেরেতো দেখি আপনাকে তক্তা বানিয়ে ফেলেছে।
আপনি কে?
আমার নাম হিমু। আমি এসেছি আলামত জমা দিতে। জুতাজোড়া এনেছি। আপনাকে কোর্টে তুললে আলামত লাগবে। ওসি সাহেব কি বলেছেন? আপনাকে কোর্টে তুলা হবে? না-কি কয়েকদফা ডলা দিয়ে ছেড়ে দেবে?
আলম হতাশ গলায় বললেন, ওসি সাহেব দশ হাজার টাকা চেয়েছেন। টাকা দিলে মামলা কোর্টে উঠবে না। আমি দশ হাজার টাকা কই পাব? দুটা প্রাইভেট টিউশানি করে মাসে আড়াই হাজার টাকা পাই। পত্র-পত্রিকায় ছবি। ছাপা হয়ে গেছে। টিউশানিওতো এখন থাকবে না।
আমি বললাম, না থাকারই কথা। সন্ত্রাসীকে কে শিক্ষক হিসাবে রাখবে? উন্নতমানের সন্ত্রাসী হলে একটা কথা ছিল। জুতা সন্ত্রাসী।
কি বিপদে পড়লাম দেখেন। রাতে কিছু খাই নাই। সকালেও না। টাকা। দিলে এরা খানা এনে দেয়। টাকা নাই খানাও নাই।
আমি বললাম, মশার কামড় খাচ্ছেন না? মশা এবং ছারপোকা কামরালে। ক্ষুধা কমে। বৈজ্ঞানিক সত্য। পাঞ্জাবীটা খুলে রাখুন। ভালমত মশা কামড়াক। কম্বল বিছিয়ে শুয়ে পড়ুন। ছারপোকা চলে আসবে।