আমি যে সব মোমেন্ট ক্যামেরায় ধরেছি সেগুলি কোথায় পাব?
নতুন মোমেন্ট তৈরি হবে।
এলিতা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, তোমার কাছে আসাই আমার ভুল হয়েছে। আমাকে শুধু একটা কথা বল, তোমাদের পুলিশ কি আমাকে সাহায্য করতে পারবে?
অবশ্যই পারবে। তারা ছিনতাই এর পুরো ঘটনাটা লিখবো। কোথায় ছিনতাই হয়েছে ক্যামেরার দাম। ছিনতাইকারীর চেহারার বর্ণনা সব লেখা হবে। একে বলে General Diary সংক্ষেপে GD. লেখালেখির পর তুমি চলে আসবে পুলিশ খাতা বন্ধ করে চা খাবে, পা নাচাবে।
তুমি বলতে চাচ্ছি। এইসব লেখালেখি অৰ্থহীন?
সবকিছুইতো অর্থহীন। পৃথিবী যে ঘুরছে এটা অর্থহীন না। না ঘুরলে কি ক্ষতি হত?
এলিতা মুখ কঠিন করে বলল, আমি যাচ্ছি।
আমি বললাম, হোটেলে গিয়ে তো মন খারাপ করেই থাকবে তারচে চল ধোঁয়া বাবা’র কাছে যাই। দেখি তিনি কোনো ব্যবস্থা করতে পারেন কি-না।
ধোঁয়া বাবা মানে?
ইংরেজিতে Smoke Father, একজন আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। জ্বিন পরী এইসব অদৃশ্য প্রাণী পুষেন। তিনি অনেক কিছু বলতে পারেন। এমনও হতে পারে তোমার ক্যামেরা কোথায় আছে তার সন্ধান দিলেন। ক্যামেরা উদ্ধারের ব্যবস্থা করলেন।
এলিতা বলল, দিস ইজ বুলশীট।
আমি বললাম, বুলশীট হোক বা কাউ ডাং হোক চেষ্টা করতে দোষ কি। কবি বলেছেন,
“নাই কোনো শেষটা
করে যা চেষ্টা।”
ডুবন্ত মানুষ খড়খুটা ধরে ভেসে উঠতে চায়। ক্যামেরার শোকে অস্থির তরুণী ধোঁয়া বাবা ধরবে এটাই স্বাভাবিক।
নৌকায় বুড়িগঙ্গা পাড় হচ্ছি। এলিতা নিজেকে কিছুটা সামলেছে, অবাক হয়ে চারপাশ দেখছে। অবাক হবার মত কিছু চারপাশে নেই। ময়লা আবর্জনায় দূষিত এবং বিষাক্ত নদী। লঞ্চ স্টিমার ভোঁ ভোঁ করছে। অসংখ্য নৌকা ভাসছে। দেখে মনে হচ্ছে পানিতে ঘোঁই পাকানো ছাড়া এদের কারোরই কোনো গন্তব্য নেই। নৌকা দুলছে, এলিতা মনে হয় খানিকটা ভয় পাচ্ছে। সে ক্ষীণ গলায় বলল, নৌকা ডুবে যাবে নাতো?
আমি বললাম, ডুবতে পারে। তুমি সাঁতার জানি না?
না।
আমি বললাম, সাঁতার জেনে মরার চেয়ে সাঁতার না জেনে মরে যাওয়া ভাল।
ভাল কেন?
অল্প পরিশ্রমে মৃত্যু। বাঁচার জন্যে হাত পা ছুড়ে ক্লান্ত হতে হবে না। তাছাড়া পানিতে ডুবে মরার জন্যে এই সময়টা বেশ ভাল।
কেন?
পানি গরম। শীতের সময় নদীর পানি থাকে গরম।
তোমার উদ্ভট কথা শোনার মানে হয় না। আর একটি কথাও বলবে না। শুধু যদি কিছু জানতে চাই তার উত্তর দেবে।
আচ্ছা।
আমরা যার কাছে যাচ্ছি, স্মোক ফাদার। তাকে কি টাকা পয়সা দিতে হবে।
খুশি হয়ে কিছু দিলে উনি নেন। না দিলেও অসুবিধা নেই। উনার চাহিদা অল্প। ধোঁয়া খেয়ে বাঁচেন তো। প্রোটিন, কাৰ্বোহাইড্রেটের ঝামেলা নেই। ফ্রেস ধোঁয়া হলেই চলে।
তুমি বলতে চোচ্ছ উনি ধোঁয়া খেয়ে বঁচোন?
সবাই তাই বলে।
আমাকে এইসব তামশা বিশ্বাস করতে বলছ?
বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার। তবে বিশ্বাস করাই নিরাপদ। কারণ কবি বলেছেন, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।
এলিতা বলল, তোমার সঙ্গে আসা ভুল হয়েছে। ক্যামেরার শোকে অস্থির ছিলাম। লজিক কাজ করছিল না। ঠিক করে বল তোমার অন্য কোনো মতলব নেইতো? ভুলিয়ে ভালিয়ে আমাকে নির্জন কোনো জায়গায় নিয়ে যাবার মতলব করবে না। আমি ক্যারাটে জানি। ক্যারাটোতে ব্ল্যাক বেল্ট পাওয়া মেয়ে। তাছাড়া আমার সঙ্গে স্প্রে আছে।
স্প্রেটা কি?
আমেরিকান মেয়েরা নিজেদের প্রটেক্ট করার জন্যে ব্যাগে ম্প্রে রাখে। চোখের উপর স্প্রে দিয়ে দিলে জন্মের মত অন্ধ হয়ে যাবে।
তোমার সঙ্গে স্প্ৰে আছে?
অবশ্যই। আমি স্প্রে ছাড়া চলাফেরা করি না। স্প্রে ব্যাগে আছে।
তোমার সঙ্গেতো ব্যাগ নেই। আমার ধারণা ক্যামেরার সঙ্গে তোমার হ্যান্ডব্যাগও ছিনতাইকারী নিয়ে গেছে। সে এখন মলমপাটি হয়ে গেছে। স্প্রে মেরে পথচারীকে অন্ধ করে টাকা পয়সা নিয়ে যাচ্ছে।
এলিতা কঠিন চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। ডাগর আঁখির কারণে চোখে কাঠিন্য আসছে না।
আমরা ধোঁয়া বাবার আস্তানায় সন্ধ্যা মেলানোর আগে আগে পৌঁছলাম। প্রচুর দর্শনার্থী বাবার জন্যে অপেক্ষা করছে। তবে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ডাক পেলাম।
ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ঘর। এক কোনায় লাল গামছা কোমড়ে জড়িয়ে ধোঁয়া বাবা পদ্মাসনের ভঙ্গিতে বসে আছেন। তার মাথার উপর লাল সালুর চাদর। একপাশে মালশায় ঘনঘনে কয়লার আগুন মাঝে মধ্যে সেখানে ধূপের দানা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ধূপের গন্ধ, ধোঁয়ার গন্ধ সব মিলিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসার মত পরিবেশ। বাবার মুখ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। তিনি মাঝে মাঝে কারণ ছাড়াই বিকট হা করছেন তখন মুখের ভেতরে লাল জিভ দেখা যাচ্ছে মুখের ভেতরটা অন্ধকার। অন্ধকারে লাল জিভ কেন দেখা যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। আলো বিশেষজ্ঞ এলিত হয়ত বলতে পারবে।
এলিতা বলল, Oh God. What is this.
ধোঁয়া বাবা বললেন, হিমু ভাই আছেন কেমন?
আমি বললাম, ভাল।
শাদা চামড়ার এই ছেমড়ি কে?
ফটোগ্রাফার। সমস্যায় পড়ে এসেছে।
ছেমড়ি বাংলা বুঝে?
খুব যে বুঝে তা বলা যাবে না।
ধোঁয়া বাবা চিন্তিত গলায় বললেন, আমিতো হালার ইংরেজি জানি না। ছেমড়ির সঙ্গে কথা কমু ক্যামনে?
যা পারেন বলেন। আমি দোভাষির কাজ করব।
ছেমড়িরে বলেন, তার কি সমস্যা যেন বলে।
আমি এলিতাকে বললাম, তোমার কি সমস্যা বাবাকে বুঝিয়ে বল। বাবা শুনতে চাচ্ছেন।