জানবে। যে কোনোভাবেই হোক জানবে।
এলিতা বলল, আমি কোনো ঝামেলায় জড়াব না। এই মেয়েকে রাখব না।
আমি বললাম, আজ তোমার জন্মদিন। জন্মদিনে একা একা থাকবে?
জন্মদিন জান কিভাবে?
তুমি নিজের সম্পর্কে যে ই-মেইল পাঠিয়েছ। সেখানে জন্মদিন লেখা আছে। ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার কি জান? আজ তানিজা মেয়েটিরও জন্মদিন।
এলিতা তানিজার তাকিয়ে বলল, হ্যাপি বার্থডে তানিজা। তানিজা মিষ্টি করে হাসল। তানিজা এখনো কথা বলা শুরু করে নি। কথা বলা শুরু করলে এলিতা বুঝবে কি জিনিস রেখে যাচ্ছি।
এলিতার কাছ থেকে একশ ডলার নিয়ে সোনারগাঁ হোটেলের বেকারি থেকে জন্মদিনের কেক কিনে এলিতার ঘরে পাঠিয়ে দিলাম।
কেকের উপর ফুল লতা পাতার ফাঁকে বাংলায় লেখা
তানিজা
এলিতা
হারিয়ে যাওয়া সব সময়ই আনন্দময়।
এলিতার এই বাংলা পড়ে বুঝতে পারার কথা।
মেসে ফিরে দেখি তানিজার মা আমার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছেন। আমাকে দেখেই তাঁর প্রথম কথা, আমার মেয়ে কই?
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, আপনার মেয়েকে উপহার হিসেবে একজনকে দিয়ে এসেছি। ঐ মেয়ের ছিল জন্মদিন। জন্মদিনের উপহার।
কি বললেন?
কি বললাম তাতো শুনেছেন। তারপরেও আরেকবার স্পষ্ট করে বলছি, আপনার মেয়েকে উপহার হিসেবে একজনকে দিয়ে এসেছি।
আমি আপনাকে খুন করে ফেলব।
খুন করতে চাইলে করতে পারেন। আসুন ঘরে আসুন। কি পদ্ধতিতে খুন করবেন। সেটা শুনি।
আমি আপনাকে র্যাবের হাতে তুলে দিব। র্যাব আপনাকে ক্রসফায়ারে মারবে।
ক্রসফায়ারে মেরে ফেললে তো আপনি মেয়ের কোনো সন্ধান পাবেন না। ক্রসফায়ারের কথা। আপাতত ভুলে যান। আসুন শর্ত নিয়ে আলোচনা করি।
শর্ত মানে। কিসের শর্ত?
যে শর্তে আমি আপনাকে তানিজার সন্ধান দিতে পারি।
মেয়ে নিয়ে পালিয়ে যাবেন! আবার শর্ত দেবেন? মগের মুলুক পেয়েছেন?
আমি হাসতে হাসতে বললাম, আমার কাছে মগের মুলুক না। আমার কাছে বাংলা মুলুক। আপনার কাছে মগের মুলুক। স্বামী স্ত্রী ঝগড়া করে আলাদা হয়ে যাবেন। মেয়ে হারিয়ে ফেলবেন। যে আপনার মেয়েকে খুঁজে পেয়েছে তাকে ক্রসফায়ারে দেবেন?
কথার কচকচানিতে আমি যাব না। এক্ষুনি আমার মেয়েকে দিতে হবে। যদি না দেন তার পরিণাম ভাল হবে না।
আপনি চিৎকার বন্ধ করে স্বামীকে নিয়ে আসুন। দু’জনে মুচলেকা দিন কখনো ঝগড়া করবেন না। তারপর মেয়ের সন্ধান দেব। তার আগে না। ভাল কথা আপনার হাতে সময় কিন্তু বেশি নেই। আপনার মেয়ে দেশের বাইরে চলে যাবে। মনে হয় ইন্ডিয়ায় যাবে। জানেন নিশ্চয়ই ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশে গরু আসে, বিনিময়ে আমরা নানান বয়সের মেয়ে পাচার করি।
আমার শেষ কথাতে কাজ হল। তানিজার মা টেলিফোন করে তানিজার বাবাকে আনলেন। এই ভদ্রলোক মেয়ে হারানোর কথা কিছুই জানতেন না। সব শুনে তার হার্ট এ্যাটাকের মত হল। বুকে হাত দিয়ে বিড় বিড় করে বললেন, শাহানা আমার বুকে ব্যথা করছে। আমার বুকে ব্যথা করছে।
শাহানা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, কাগজে কি লিখতে হবে বলুন। আমরা লিখে দিচ্ছি।
আমি বললাম, কিছু লিখতে হবে না। দু’জন এক সঙ্গে মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাবেন এটাই যথেষ্ট। আপনার মেয়ে আছে সোনারগাঁ হোটেলে রুম নাম্বার ৭৩২, এই রুমে একটা পরী থাকে। পরীটার নাম এলিতা। আপনার মেয়েকে পরীর হেফাজতে রেখে এসেছি।
মা-বাবা দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তারা আমার কথায় পুরোপুরি বিভ্ৰান্ত। আমি বললাম, দেরী করবেন না চলে যান।
তানিজার বাবার মনে হয় আবার বুকে ব্যথা শুরু হয়েছে। তিনি বুকে হাত দিয়ে কুঁ কুঁ শব্দ করছেন। আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়েকে দেখতে পাবেন। উঠে দাঁড়ান তো।
তানিজার বাবা বললেন, ভাই আপনি চলুন আমাদের সঙ্গে।
আমি বললাম, আজ রাস্তায় রাস্তায় কিছুক্ষণ হাঁটব তারপর আমার এক খালাতো ভাই বাদলের সন্ধানে যাব। ওকে অনেক দিন দেখি না।
তানিজার বাবা কাদো কঁদো গলায় বললেন, ভাই মেয়েটাকে পাব তো?
আমি বললাম, অবশ্যই পাবেন। স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে ভালবাসা এবং মমতায় তাকে রাখবেন। আপনাদের মধ্যে ঝগড়া হলে এই মেয়ে আবারো হারিয়ে যাবে। এটা যেন মাথায় থাকে। দ্বিতীয়বার হারিয়ে গেলেও ফেরত পাবেন। তৃতীয়বার হারালে আর পাবেন না। একে বলে দানে দানে তিন দান। তিনের চক্ৰ।
বেল টিপতেই মেজো খালু (বাদলের বাবা)। দরজা খুলে দিলেন, আমাকে দেখে হাহাকার ধ্বনি তুললেন, হিমু সর্বনাশ হয়ে গেছে। তোমার খালা চলে গেছেন।
খালা চলে গেলে খালুর খুশি হওয়া উচিত। উনি মনের সুখে ছাদে বোতল নিয়ে বসতে পারবেন। হাহাকার ধ্বনির অর্থ বুঝলাম না।
খালু হতাশ গলায় বললেন, দুপুরে সামান্য কথা কাটাকাটি হয়েছে। সে শাহরুখ খানের প্রোগ্রাম দেখবে। আমি বললাম পুরুষ মানুষের স্টেজে ফালাফালি করবে। এটা দেখার কি আছে। তোমার খালা বলল, আমি তোমার সঙ্গে বাস করব না; আমি বললাম, নো প্রবলেম। গো টু শাহরুখ খান। তার কোমড় জড়িয়ে ধরে নৃত্য কর। কথা শেষ করার আধঘণ্টার মাথায় সে স্যুটকেস গুছিয়ে চলে গেল।
আমি বললাম, শাহরুখ খানের কাছে নিশ্চয়ই যান নি। নিজের বাবার বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। আপনি এত অস্থির হচ্ছেন কেন?
খালু দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বললেন, মূল ঘটনা তুমি বুঝতে পারিছ না। তোমার খালা কিংখানের কাছে গেলেও আমার কিছু যায় আসে না। সে আমাকে পথে বসিয়ে দিয়ে গেছে। আমার বোতল নিয়ে গেছে।