সে আছে এলিতার সঙ্গে। এলিতাকে ছবি তুতে সাহায্য করছে। এলিতা হল…
এলিতার বিষয়টা জানি। সে বাংলাদেশে কেন এসেছে তাও জানি। আমি কাদেরের বিষয়ে জানতে চাচ্ছি।
সে আমাকে জানিয়েছে সে ঠিক করেছে একটা খুন করবে। দিন তারিখ আমার ঠিক করে দেয়ার কথা। পঞ্জিকা দেখে ভাল দিন বের করব। পঞ্জিকা কেনা হয় নি।
পঞ্জিকার জন্যে খুন আটকে আছে?
আমি বললাম, শুধু পঞ্জিকা না। শাহরুখ খানের জন্যেও আটকা আছে।
সে কে?
বলিউডের কিং খানকে চেনেন না? আপনারতো চাকরি যাবার কথা। কাদের আর্মি স্টেডিয়ামে কিং খানের খেলা দেখার পর খুনটা করবে। তিন হাজার টাকার টিকিট কাটবে। তার হাতে এখন টাকা আছে। এলিতা প্ৰতিদিন তাকে বিশ ডলার করে দিচ্ছে।
আমি দুটা গ্লাসের ব্যবস্থা করলাম। গ্লাস ভর্তি চা নিয়ে দু’জন মুখোমুখি বসেছি। ওসি সাহেবের মুখ আরো অন্ধকার হয়েছে। আমি বললাম, আলতা ভাবি কেমন আছেন।
ওসি সাহেব বিরক্ত গলায় বললেন, তার বিষয়ে কথা বলার জন্যে আমি আপনার এখানে আসিনি। আমি এসেছি কাদেরকে এ্যারেষ্ট করে নিয়ে যাবার জন্যে। ওকে টোপ হিসেবে বাইরে ছেড়ে রাখা হয়েছে। আমাদের ইনফরমেশন যা জোগাড় করার করেছি। এখন তাকে আটক করা যায়।
আমি বললাম, এতদিন যখন অপেক্ষা করেছেন আরো কয়েকটা দিন করুন। কিং খানের খেলাটা হয়ে যাক।
উনি কি খেলা দেখাবেন?
আমি জানি না কি খেলা দেখাবেন। নিশ্চয়ই ভাল কোনো খেলা। বাংলাদেশের মানুষ আধাপাগল হয়ে গেছে। আমি ভাবছি মিস এলিতাকেও খেলাটা দেখাব। উনি রাজি হলে হয়।
চা খাওয়া শেষ হবার পরেও ওসি সাহেব অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলেন। কাদের এবং আলম ফিরে এল। ওসি সাহেব খানিকক্ষণ কাদেরের দিকে তাকিয়ে তাকে এ্যারেস্ট না করেই চলে গেলেন।
বাটারফ্লাই এফেক্ট
‘বাটারফ্লাই এফেক্ট’ নামের একটা বিষয় আছে। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর লেখকরা বাটারফ্লাই এফেক্টকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন। ‘পৃথিবীর এক প্রান্তে প্রজাপতির পাখার কাঁপনে অন্যপ্রান্তে প্ৰচণ্ড ঘূর্ণিঝড় হতে পারে এই হল ‘বাটারফ্লাই এফেক্ট’।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন কলেজের সামনের রাস্তায় বাটারফ্লাই এফেক্টের লীলাভূমি। কিছুদিন পরপর এইসব রাস্তায় ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটে যার উৎপত্তি হয়ত রেইনফরেষ্টের কোনো গাছের পাতার কাঁপন।
ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তায় এই ঘটনাই এখন ঘটছে আমি তার একজন দর্শক।
দু’টা বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি দোতলা বাস। বাস দুটির অপরাধ কি কেউ বলতে পারছে না। বিনা অপরাধেতো কেউ শাস্তি পায় না। বাস দু’টি নিশ্চয়ই বড় ধরনের কোনো অপরাধ করেছে।
হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে কয়েকটা প্রাইভেট কারের কাঁচ ভাঙা হয়েছে। মন হয় আরো হবে। গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গার দৃশ্য সুন্দর। কাচগুলি পাউডারের মত গুড়া হয়ে যায়। গুড়া অবস্থায় ঝিকমিক করে আলো দেয়।
ঢাকা কলেজের পাশেই সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড়ে পুলিশ ফাড়ি। সেখান থেকে কয়েকজন পুলিশ এসেছিল। ছাত্ররা ধাওয়া করে তারা যেখান থেকে এসেছিল সেখানে ফেরত পাঠিয়েছে। পুলিশরা এখন সিগারেট ধরিয়ে রিল্যাক্স করছে। তাদেরকে আনন্দিত মনে হচ্ছে। অল্পতেই ঝামেলা থেকে উদ্ধারের আনন্দ।
টায়ার জ্বালানো হয়েছে। টায়ার থেকে বুন্কা বুন্কা ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমি মোটামুটি নিরীহ টাইপ একজনকে (তিনি ঢাকা কলেজের ছাত্র। চেনার উপায় কলেজের মনোগ্রাম বসানো হাফ হাতা সার্ট হিটলার টাইপ গোঁফ রেখেছে, কিন্তু তাকে দেখাচ্ছে চার্লি চ্যাপলিনের ম,) জিজ্ঞেস করলাম, ভাই ঘটনা কি?
তিনি বললেন, ঢাকা কলেজের এক ছাত্রকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে রাস্তায় ফেলেছে।
আমি আৎকে উঠে বললাম, বলেন কি। ঢাকা কলেজের ছাত্র পরিচয় পাবার পর তাকে তো কোলে করে নামানো দরকার ছিল। কোলে করে নামিয়ে টা টা বাই বাই বলে একটা ফ্লাইং কিস।
আপনি কে?
আমি কেউ না। দর্শক। আপনারা চমৎকার খেলা খেলছেন, দর্শক লাগবে না?
চার্লি চ্যাপলিন হঠাৎ উগ্ৰমূর্তি ধারণ করলেন। গলা উঁচিয়ে ডাকতে লাগলেন, হামিদ ভাই! হামিদ ভাই এদিকে আসেন। এই লোক ছাত্রদের নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলছে।
হামিদ ভাই নামে যাকে ডাকা হল তিনি অসম্ভব ব্যস্ত। তিনি পেট্রোল দিয়ে গাড়িতে আগুন ধরানোর দায়িত্বে আছেন। পেট্রোল ভর্তি জেরিকেন নিয়ে ছোটাছুটি করছেন।
আমি বললাম, হামিদ ভাই ব্যস্ত আছেন যা করার আপনাকেই করতে হবে। একটা প্রশ্নের উত্তর দিনতো গাড়িতে আগুন দেয়ার পেট্রোল কি আপনাদের কাছে মজুদ থাকে?
প্রশ্নের উত্তর পাবার আগেই বিকট শব্দে দুটা ককটেল ফাটলো। একই সঙ্গে একটা বাচ্চা মেয়ে ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। আমি তাকে টেনে কোলে তুললাম।
এর মধ্যে হামিদ ভাই এসে দাঁড়িয়েছেন। হামিদ ভাই এর পাশে আরেকজন তার হাতে চাপাতি। চাপাতি নিশ্চয়ই মেজে ঘসে রাখা হয়। সূর্যের আলোয় ঝক ঝক করছে।
হামিদ ভাই বললেন, এই লোক সমস্যা করছে? হ্যালো ব্রাদার আপনি কে?
আমি বললাম, আলাপ পরিচয় পরে হবে। এই মেয়েটাকে হাসপাতালে নিতে হবে। আপনাদের কাপ্তকারখানা দেখে বেচারি। আনন্দে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
হামিদ ভাই বললেন, অল্পের উপর ছাড়া পেয়ে গেলেন। এই মেয়ে না থাকলে আপনার আজ খবর ছিল।
চাপাতি ভাইয়া চাপাতি দুলিয়ে কি খবর হতে পারে তার নমুনা দেখালেন।