কুকুর এবং ইলিশ
এই ফটোগ্রাফটা কাওরান বাজার মাছের আড়তে তোলা। একজন ইলিশ মাছের ঝাকা নিয়ে বসেছে। কুচকুচে কালো এক কুকুর এসে ইলিশ মাছ মুখে নিয়ে দৌড়াচ্ছে। কুকুরের পেছনে দুনিয়ার ছেলে।পুলে। কুকুর ইলিশ মাছ মুখে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। রাস্তার দু’পাশের গাড়ি থেমে আছে। ফটোগ্রাফটা এই সময়ে তোলা। কুকুর ইলিশ মাছ মুখে নিয়ে অবাক হয়ে তাকাচ্ছে। তাকে নিয়ে এত হৈচৈ কেন হচ্ছে তা বুঝতে পারছে না।
পিতা পুত্র এবং সাগর কলা
এই ফটোগ্রাফটা সোহারওয়ার্দি উদ্যানের বেঞ্চে তোলা। পিতা এবং পুত্র বসে আছে। বাবার হাতে একটা সাগর কলা, ছেলের হাতে একটা সাগর কলা। বাবা তার হাতের কলা ছেলেকে খাওয়াচ্ছে। ছেলে তার হাতের কলা বাবাকে খাওয়াচ্ছে।
ইটালিয়ান হোটেলের রুটি
রাস্তার পাশে ইটাবিছানো খাবারের দোকান। অতি বৃদ্ধ একজন রুটি খাচ্ছে। তার হাতে কাচা মরিচ। সে কাচা মরিচের দিকে তাকিয়ে রুটি খাচ্ছে।
কসাই এর চা পান বিরতি
ফটোগ্রাফটা নিউমার্কেটের কসাই এর-দোকানে তোলা। গরুর বড় বড় রান ঝুলছে। রানের ফাঁকে কসাইকে দেখা যাচ্ছে। তার হাতে গ্লাসভর্তি চা। একটা গরুর কাটা মাথা কসাইয়ের পাশে রাখা। মনে হচ্ছে গরুর মাথা অবাক হয়ে কসাইয়ের চা পান দৃশ্য দেখছে।
এলিতা আমাকে বিদায় করে দিয়েছে, কাজেই মাজেদা খালার মোবাইল ফেরত দিয়ে আসতে হবে। আমি মোবাইল ফেরত দিতে গেলাম। খালু সাহেবের মানিব্যাগ সঙ্গে নিলাম। কিছু টাকা খরচ করে ফেলেছিলাম। এলিতার ডলার ভেঙ্গে টাকা করে নিলাম, তারপরেও পঞ্চাশ টাকা কম হল।
মাজেদা খালা আমাকে দেখেই তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, এলিতা মেয়েটা কত অভদ্র তুই জানিস?
নাতো।
ওকে কয়েকবার টেলিফোন করেছি। বাসায় লাঞ্চ করতে বলেছি সে আসে নি। টেলিফোন করি, মিসকল হয়ে থাকে এই মেয়ে কল রিটার্ন করে না। তার জন্যে সব কিছু করে দিলাম। আমি এখন কি-না আমাকেই চিনে না। নিজেকে সে কি ভাবে? রূপবতী মেয়ে হয়ে আমার মাথা কিনে নিয়েছে? আমার মাথা এত সস্তা না। এখন বল তোর সঙ্গে তার ব্যবহার কেমন। অভদ্র মেয়ের গাইড হবার দরকার নেই। তুই চাকরি ছেড়ে দে।
খালা থামতেই আমি বললাম, চাকরি ছাড়ার উপায় নেই খালা। এলিতা আমার চাকরি নট করে দিয়েছে। চার দিন হল পথে পথে বেকার ঘুরছি।
বলিস কি?
বিয়েটা মনে হয় হল না।
এই নিয়ে তুই ভাবিস না। রূপ দিয়ে কিছু হয় না। মেয়েদের রূপ আর পদ্মপাতার জল একই। মন খারাপ করিস না।
আচ্ছা করব না। খালু সাহেবের টেলিফোনের ব্যাপারটা কিছু হয়েছে?
আমার ধারণা ধরে ফেলেছি। লোক লাগিয়েছি সে পাত্তা লাগচ্ছে। আমার কাছে বাহাত্তুর ঘন্টা সময় চেয়েছিল। আগামীকাল বাহাত্তুর ঘণ্টা পার হবে।
এসিড কবে ঢালবে?
বুঝতে পারছি না। তাড়াহুড়া করবে না। তাড়াহুড়ার ব্যাপার না। এসিড ঠিকমত ঢালতে হবে। বেঁচে থাকলেও চোখ যেন যায়।
মাজেদা খালা হতভম্ব গলায় বললেন, এইসব কি ধরনের কথা।
আমি বললাম, তুমি মুখে এসিড ঢালবে সব ঠিক থাকবে তাও তো হবে না।
মাজেদা খালা বললেন, তুই একটা ক্রিমিনাল। তুই আর এই বাড়িতে আসবি না।
খালু সাহেবের পরকিয়া প্রেমের কি হবে? এতবড় একটা অন্যায় চোখ বুজে সহ্য করবে?
একটা কেন দশটা পরকিয়া করুক তার জন্যে আমি চোখ গেলে দিব? তুই আমাকে ভাবিস কি? তোর এসিডের বোতল নিয়ে এক্ষুনি বিদায় হ।
আর এ বাসায় আসব না?
অবশ্যই না।
খালু সাহেবের সঙ্গে শেষ দেখা করে যাই।
খালু সাহেব শোবার ঘরে আধশোয়া হয়ে ন্যাশানাল জিওগ্রাফি পড়ছেন। টিভি চলছে, টিভিতেও ন্যাশানাল জিওগ্রাফি। ডাবল একশান।
আমাকে ঢুকতে দেখে খালি সাহেব মহা বিরক্ত গলায় বললেন, হুট করে ঘরে ঢুকে পড়লে? সামান্য ভদ্রতার ধারও ধার না। ব্যক্তিগত শোবার ঘরতো। গণ বৈঠকখানা না। ইচ্ছা হল, ঢুকে পড়লে।
আমি বললাম, ধোঁয়া বাবার কাছে গিয়েছিলাম। উনি মানিব্যাগ উদ্ধার করেছেন। মানিব্যাগ নিয়ে এসেছি। সব ঠিকঠাক আছে কি-না দেখে নিন।
হতভম্ব খালু সাহেব মানিব্যাগ হাতে নিলেন। উল্টে পাল্টে দেখলেন। চোখ ছানা বড় হওয়া বলে একটা কথা বাংলা সাহিত্যে প্রচলিত আছে। খালু সাহেবের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। তবে বেশ বড় সাইজের ছানাবড়া। আমি বললাম, ধোঁয়া বাবা আপনার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
কেন?
মানিব্যাগ থেকে উনি পঞ্চাশটা টাকা রেখে দিয়েছেন। খড় কিনবেন। খড়ে পানি দিয়ে ভেজানো হবে। সেই ভেজা খড় জ্বালানো হবে। এতে প্রচুর ধোঁয়া হয়। খালু সাহেব! যাই ভাল থাকবেন। আপনার সঙ্গে আর দেখা হবে না।।
দেখা হবে না কেন?
মাজেদা খালা আমাকে এ বাড়িতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।
আমি চলে এলাম। খালু সাহেব তাকিয়ে রইলেন তাঁর মানিব্যাগের দিকে।
মেসে ফিরে দেখি আমার ঘরের সামনে টুলের উপর পেনসিল ওসি বসা। তাঁর মুখ গম্ভীর হাতে পেনসিলের বদলে ফ্লাস্ক।
আমি বললাম, বাইরে বসে আছেন কেন? আমার ঘরের দরজা খোলা। ঘরে বসে অপেক্ষা করলেই হত। কোনো কাজে এসেছেন না-কি সামাজিক সৌজন্য সাক্ষাৎ? আসুন ঘরে গিয়ে বসি।
ওসি সাহেব ঘরে ঢুকলেন। টেবিলের উপর চায়ের ফ্লাস্ক রাখতে রাখতে বললেন, দুটা কাপের ব্যবস্থা করুন। ফ্লাস্কে চা নিয়ে এসেছি।
ট্যাবলেট সিঙ্গাড়া আনেন নি?
না। পরের বার আসব। আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করব। সত্য জবাব দেবেন। কাদের কোথায়?