ঘুমিয়ে পর। যথাসময়ে জাগিয়ে দিব।
একবার ঘুমিয়ে পড়লে কেউ আমাকে জাগাতে পারে না।
চিন্তা নেই, ঘুমন্ত অবস্থাতেই ধরাধরি করে তোমাকে হোটেলের রুমে নিয়ে তুলব।
তুমি যে বাড়িতে থাক সেখানে আমাকে নিয়ে যাও।
আমি কোনো বাড়িতে থাকি না। মেসে থাকি। সেখানে তোমাকে নেয়া যাবে না।
কেন?
মোস হচ্ছে পায়রার খুপড়ির মত ছোট ছোট কিছু রুম। সেই সব রুমে আলো বাতাস ঢোকা নিষিদ্ধ। কমন বাথরুম। বাথরুম ব্যবহার করতে হলে লাইনে দাঁড়াতে হয়। মেসের মালিক মশা, মাছি, তেলাপোকা এইসব পুষেন।
বল কি। কোন পুষেন?
যারা মেসে থাকে তাদের জীবন অতিষ্ঠ করার জন্যে পুষেন।
তুমি ঠাট্টা করছ?
না।
আমি প্রথম তোমার মেসে যাব তারপর অবস্থা দেখে ডিসিসান নেব।
তা করতে পার।
আমি এখন ঘুমিয়ে পড়ব।
এমনি এমনি ঘুমিয়ে পড়বে? না-কি আমাকে ঘুম পাড়ানি গান গাইতে হবে?
তুমি ঘুমপাড়ানি গান জান?
জানি। তবে আমাদের দেশে পুরুষদের ঘুম পাড়ানি গান গাওয়া নিষিদ্ধ। ঘুম পাড়ানি গান শুধু মা গাইবেন।
আশ্চর্য তো।
আশ্চর্যের সবে শুরু। তুমি আরো অনেক আশ্চর্যের সন্ধান পাবে।
প্লীজ একটা ঘুম পাড়ানি গান গাও। আমি গাইলাম,
খুকু ঘুমালো
পাড়া জুড়ালো
বর্গি এল দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে?
এলিতা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তুৰ্গেনিভের এক উপন্যাস পড়েছিলাম, “যে নারীকে ঘুমন্ত অবস্থাতে সুন্দর দেখায় সেই প্রকৃত রূপবতী।” এলিতাকে প্রকৃত রূপবতী বলা যেতে পারে। রবীন্দ্ৰনাথ ইয়েলো ক্যাবে উপস্থিত থাকলে বিড় বিড় করে বলতেন–
দেখিানু তারে উপমা নাহি জানি
ঘুমের দেশে স্বপন একখানি,
পালঙ্কেতে মগন রাজবালা,
আপন ভরা লাবণ্যে নিরালা।
পকেটে মোবাইল বাজছে। মাজেদা খালা ধার হিসেবে আমাকে এই মোবাইল দিয়েছেন। যত দিন এলিতা বাংলাদেশে থাকবে ততদিন মোবাইল আমার সঙ্গে থাকবে যাতে আমি সব সময় খালার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারি।
হিমু এলিতা কি এসেছে?
হুঁ।
তার অবস্থা কি?
সে গোঁফ কমিয়ে মেয়ে হয়ে গেছে।
ফোনটা এলিতার কাছে দে কথা বলি। তোকে কিছু জিজ্ঞেস করা অর্থহীন।
এলিতা ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে তাকে ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে ঘুম পাড়িয়েছি। এখন সে আছে গভীর ঘুমে। এই মুহুর্তে স্বপ্ন দেখছে।
বুঝলি কি করে স্বপ্ন দেখছে?
REM হচ্ছে। তাই দেখে বুঝছি?
REM আবার কি?
Rapid eye movement. চোখের পাতা দ্রুত কাঁপছে। সুন্দর কোনো স্বপ্ন দেখার সময় এই ঘটনা ঘটে। যখন ভয়ংকর স্বপ্ন কেউ দেখে তখন চোখের পাতার সঙ্গে ঠোঁটও কাঁপে।
আমার সঙ্গে চালাবাজি করবি না।
আচ্চা যাও করব মা।
এলিতা উঠবে কোথায়?
এখনো বুঝতে পারিছ না ঘুম ভাঙ্গুক তারপর ডিসিসান হবে।
ও তোর ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে না কি?
না।
এক কাজ কর আস্তে করে মেয়েটার মাথা তোর কাঁধে এনে ফেল। ও যেন বুঝতে না পারে।
লাভ কি?
ঘুম ভেঙ্গে এলিতা দেখবে তোর ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে তাতে লজ্জা পাবে। লজ্জা থেকে প্ৰেম।
লজ্জা থেকে প্রেম হয় এটা জানা ছিল না।
খালা বললেন, রাগ থেকে প্রেম হয়, ঘৃণা থেকে প্রেম হয়, অপমান থেকে প্রেম হয়, লজ্জা থেকে হয়।
আমি বললাম, তোমার কথায় মনে হচ্ছে সব কিছু থেকে প্রেম হয়। হয় না কি থেকে সেটা বল।
তুইতো বিপদে ফেললি।
খালা সুসংবাদ আছে এলিতা নিজে থেকেই আমার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।
ভেরি গুড। একটা ছবি তুলতে পারবি?
ছবি কিভাবে তুলব?
তোকে যে মোবাইলটা ধার দিয়েছি সেখানে ছবি তোলার অপসান আছে। অপসানে যা। এক হাতে মোবাইলটা তোদের দু’জনের মুখের কাছে এনে বাটনে টিপ দে।
আমি ছবি তুললাম না। এলিতার নিদ্রাভঙ্গের অপেক্ষায় থাকলাম।
এলিতা এখনো ঘুমুচ্ছে। মেসে আমার বিছানায় বাচ্চাদের মত কুকড়িমুকড়ি ঘুম। এই ঘরে দিনের বেলাতেও কিছু ড্রাকুলা মশাকে দেখা যায়। ড্রাকুলা মশাদের বিশেষত্ব হচ্ছে এরা কানের কাছে ভন ভন করে না। সরাসরি রক্তপান। ধর তক্তা মার পেরেক টাইপ। ড্রাকুলা মশাদের হাত থেকে এলিতাকে বাচানোর জন্যে তার বিছানায় আলম মশারি খাটিয়ে দিয়েছেন।
ঘুম ভাঙ্গলেই এলিতার ক্ষিধে পাবে। সেই ব্যবস্থাও আলম করে রেখেছেন। গফরগায়ের গোল বেগুনের চাক্তি হলুদ লবণ মাখিয়ে রাখা হয়েছে। নতুন আলু কুচি কুচি করে লবণ পানিতে ভেজানো। দেশি মুরগির ডিমে সামান্য দুধ দিয়ে প্রবলভাবে ফেটানো হয়েছে। কালিজিরা চাল এনে রাখা হয়েছে। দশ মিনিটের নোটিসে খাবার দেয়া হবে।
আমি আলমের ঘরে বসে আছি। বালক হাজতি কাদের নেই। কোথায় গেছে কখন ফিরবে কিছুই বলে যায় নি।
আলম বলল, হিমু ভাই আমি চিন্তা করে একটা বিষয় পেয়েছি।
কি পেয়েছেন?
একটা রহস্যের সমাধান পেয়েছি।
এখন বলা যাবে না। অন্য কোনো সময় বলব।
আপনার যখন বলতে ইচ্ছা করবে, বলবেন।
আমি যে দিনরাত দরজা জানালা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকি, খামাখা বসে थकेि नीं। छिा कझिं।
এখন কি নিয়ে চিন্তা করছেন?
আজ কোনো চিন্তা শুরু করতে পারি নাই। গতকাল চিন্তা করেছি, মশা নিয়ে।
মশা নিয়ে কি চিন্তা?
দুপুরবেলা মশা গালে কামড় দিয়েছে। গাল ফুলে গেছে তখন শুরু করলাম মশা নিয়ে চিন্তা। মানুষের যেমন শেষ বিচারের দিনে হিসাব নেয়া হবে মশারও কি হবে? আমাদের যেমন দোজখ বেহেশত আছে মশাদের কি আছে? দুষ্ট মশাদের আল্লাহপাক কি দোজখের আগুনে পুড়াবেন?