মজনু মিয়া আমাকে দেখেই গম্ভীর মুখে বলল, হিমু ভাই। আপনার সাথে আমার কিছু প্রাইভেট কথা আছে।
‘প্রাইভেট কথা শুনব, তার আগে আপনি আমার ভাগ্নেকে দেখে রাখুন। এর নাম মোরশেদ। এ আপনার এখানে খাবে। টাকাপয়সা একসময় হিসেব করে দেয়া হবে। আপনি খাতায় লিখে রাখবেন।’
মজনু মিয়া বিরস মুখে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল।
আমি বললাম, অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন কেন?
‘আপনার সাথে আমার প্রাইভেট কথা আছে।’
‘বলুন প্রাইভেট কথা, শুনছি।’
‘আসেন, বাইরে আসেন।’
আমি মোরশেদকে বসিয়ে বাইরে এলাম। মজনু মিয়া দুঃখিত গলায় বলল, আমি আপনারে খুবই পেয়ার করি, হিমু ভাই।
‘তা আমি জানি।’
‘আপনার উপর মনটা আমার খুব খারাপ হয়েছে। কাজটা আপনি কী করলেন?’
‘কোন কাজ?’
‘ঐদিন দুপুররাতে মোস্তফাকে বললেন, মোরগ-পোলাও কর। আপনারা সাতটা মানুষ মিলে চারটা মুরগি খেয়ে ফেলেছেন। আচ্ছা ঠিক আছে, খেয়েছেন ভাল করেছেন—চার মুরগির জন্য মজনু মিয়া মরে যাবে না।’
‘তা হলে সমস্যা কি?’
‘ঐ রাতে আপনে বললেন, আমি দুই দিন হোটেলে আসব না। বলেন নাই?’
‘বলেছি।’
‘কথাটা আপনে এদের বলতে পারলেন, আমারে বলতে পারলেন না?’
‘আপনাকে বললে কী হত?’
‘আমি সাবধান থাকতাম। সাবধান থাকলে কি অ্যাকসিডেন্ট হয়?’
‘অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল?’
মজনু মিয়া বিরক্ত মুখে বলল, আপনি এমন একটা ভাব ধরলেন যেন কিছুই জানেন না। আপনি পীর-ফকির মানুষ—কামেল আদমী—এটা আর কেউ না জানুক, আমি জানি। আপনারে যে খাতির করি—ভালবাসা থেকে যতটা করি, ভয়ে তারচে’ বেশি করি। কখন কি ঘটনা ঘটবে এটা আপনি আগেভাগে জানেন। জানেন না?
আমি কিছু বললাম না। মজনু মিয়া বলল, আপনি ঠিকই জানতেন যে আমার অ্যাকসিডেন্ট হবে। রিকশা থেকে পড়ে পা মচকে যাবে। তার পরেও আমাকে না বলে অন্য সবেরে বললেন। কাজটা কি ঠিক হল হিমু ভাই?
‘বেশি ব্যথা পেয়েছেন?’
‘অল্পের জন্যে পা ভাঙ্গে নাই। মচকে গেছে। সাত দিন হয়ে গেছে, এখনো ঠিকমতো পা ফেলতে পারি না। চিলিক দিয়ে ব্যথা হয়।’
‘আপনার প্রাইভেট কথা শেষ হয়েছে মজনু মিয়া?’
‘জ্বি, শেষ হয়েছে। আবার এক বন্ধুকে নিয়ে এসেছেন—দেখে তো মনে হয়—মাথা আউলা। ইয়াদ সাহেবের মতো যন্ত্রণা করবে।’
‘ইয়াদ কি এখনো আসে? তাকে তো আসতে নিষেধ করেছি।’
‘না, উনি আর আসেন না। উনি আছেন কেমন?’
‘জানি না কেমন। অনেক দিন দেখা হয় না। ভালই আছে মনে হয়—মজনু মিয়া, ক্যামেরা কিনবেন?’
‘ক্যামেরা?’
‘জ্বি, ক্যামেরা মিনোলটা। সঙ্গে ঝুম লেন্স আছে।’
‘আমি ক্যামেরা দিয়ে কি করব? আমি বেচি ভাত।’
‘ভাতের ছবি তুলবেন। পৃথিবীতে সবচে’ সুন্দর ছবি হল—ভাতের ছবি। ধবধবে শাদা।’
মজনু মিয়া বিরক্ত হয়ে বলল, আপনি বড় উল্টাপল্টা কথা বলেন হিমু ভাই। আগা-মাথা কিছুই বুঝি না।’
‘ক্যামেরা কিনবেন না?’
‘জ্বি-না।’
‘জিনিসটা কিন্তু ভাল ছিল। সস্তায় ছেড়ে দিতাম।’
‘মাগনা দিলেও আমি নিব না, হিমু ভাই। আসেন চা খান। নাকি ভাত খাবেন? ভাল সরপুটি আছে।’
‘ভাত খাব না। ক্যামেরা বিক্রির চেষ্টা করতে হবে। চলি মজনু মিয়া।’
আমি চলে গেলাম তরঙ্গিণী স্টোরে। মুহিব সাহেব নেই। নতুন একটি ছেলে বিরস মুখে দরজা বন্ধ করছে। রাত মাত্র এগারোটা, এর মধ্যই দোকান বন্ধ। আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম, ভাল আছেন? সে সরু চোখে তাকাল। কিছু বলল না।
‘মুহিব কোথায়?’
‘উনার চাকরি চলে গেছে। উনি কোথায় আমি জানি না।’
‘চাকরি গেল কেন?’
‘জানি না। মালিক জানে। আপনে উনার কে হন?’
‘কেউ হই না। টেলিফোন করতে এসেছি। টেলিফোন করা যাবে?’
‘জ্বি-না। মালিকের নিষেধ আছে।’
‘পাঁচটা টাকা যদি আপনাকে দিই তাহলে করা যাবে?’
লোকটা টেলিফোন খুলে দিল। আমি ডায়াল ঘোরাতে-ঘোরাতে বললাম, মুহিবকে বদলে আপনাকে নেয়া মালিকের ঠিক হয়নি। আপনার হল চোর-স্বভাব। মাত্র পাঁচ টাকার জন্যে মালিকের নিষেধ অমান্য করেছেন। এক শ’ টাকার জন্যে দোকান খালি করে দেবেন।
লোকটা আমার দিকে ভীত চোখে তাকাচ্ছে। আমি তাকে অগ্রাহ্য করে বললাম, হ্যালো।
ওপাশ থেকে ডাক্তার ইরতাজুল করিম বললেন, কাকে চাচ্ছেন?
‘আপনাকে। আমি হিমু। চিনতে পারছেন?’
‘পারছি। কি চান?’
‘কিছু চাচ্ছি না। আপনি কি ক্যামেরা কিনবেন? ভাল ক্যামেরা।’
‘হিমু সাহেব, রাতদুপুরে আমি রসিকতা পছন্দ করি না।’
‘এটা কিন্তু সাধারণ ক্যামেরা না। এর সঙ্গে দু’জন মানুষের ভালবাসার এবং ভালবাসা ভঙ্গের ইতিহাস জড়ানো আছে। আমি আপনাকে সস্তায় দেব।’
খট করে শব্দ হল। ডাক্তার ইরতাজুল করিম টেলিফোন নামিয়ে রাখলেন। রাত ঠিক সাড়ে এগারোটায় আমি নীতুকে টেলিফোন করলাম। নীতু আমার গলা খুব ভাল করে চেনে। তবু তীক্ষ্ণ গলায় বলল, আপনি কে বলছেন?
আমি বললাম, সরি, রং নাম্বার হয়েছে।
নীতু তৎক্ষণাৎ বলল, রং নাম্বার হয়নি। আপনি ঠিকই করেছেন। ইয়াদকে চাচ্ছেন? ও বাসায় নেই।
‘আমি ইয়াদকে চাচ্ছি না। আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’
‘আমার সঙ্গে আবার কী কথা?’
‘জরুরি কথা।’
‘টেলিফোনে বলা যাবে? টেলিফোনে বলা না গেলে, আপনি চলে আসুন। গাড়ি পাঠাচ্ছি। আপনি কোথায় আছেন বলুন।’
‘গাড়ি পাঠাতে হবে না। টেলিফোনে বলা যাবে। আপনি কি একটা ক্যামেরা কিনবেন?’
‘কি কিনব?’
‘ক্যামেরা। সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স ক্যামেরা। অটোম্যাটিক ম্যানুয়েল দু’টাই আছে। প্লাস একটা ঝুম লেন্স। সেকেন্ড হ্যান্ড হলেও ভাল জিনিস।’
‘চোরাই মালের ব্যাবসা কবে থেকে শুরু করলেন?’
‘আপনার কী করে ধারণা হল যে আমার ক্যামেরা নেই? সেকেন্ড হ্যান্ড ক্যামেরা কেনার জন্যে আমি আগ্রহী…?’
আমি গম্ভীর ভঙ্গিতে বললাম, খুব যারা বড়লোক, সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিসের প্রতি তাদের একধরনের আগ্রহ থাকে। বঙ্গবাজারে যেসব পুরানো কোট বিক্রি হয়—তাদের বড় ক্রেতা হলেন কোটিপতিরা। তারাই আগ্রহী ক্রেতা।
‘কোটিপতিদের সম্পর্কে আপনার খুব ভ্রান্ত ধারণা হিমু সাহেব। কোটিপতিদের কোনোকিছু সম্পর্কেই আগ্রহ থাকে না। যাই হোক, আপনার সঙ্গে আমি তর্কে যেতে চাচ্ছি না। আপনার ক্যামেরা আমি কিনব না। তবে কত টাকার আপনার দরকার আমাকে বলুন, আমি টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
‘হাজার পাঁচেক দিতে পারবেন?’
‘এখন পাঠাব?’
‘জ্বি, পাঠিয়ে দিন।’
‘কোথায় আছেন ঠিকানা বলুন।’
‘আমাকে পাঠাতে হবে না। আমি এক ভদ্রলোকের ঠিকানা দিচ্ছি—তাঁর ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলেই হবে।’
আমি মোরশেদ সাহেবের ঠিকানা দিলাম। টেলিফোনে শুনতে পাচ্ছি—নীতু খসখস করে লিখছে।
‘হিমু সাহেব।’
‘জ্বি?’
‘আপনার একটা চিঠি পাঞ্জাবির পকেটে ছিল। পেয়েছেন? ইয়াদকে দিয়ে পাঠিয়েছিলাম।’
‘পেয়েছি।’
‘পড়ছেন?’
‘পুরোটা পড়তে পারিনি—অর্ধেকের মতো পড়েছি।’
‘আপনি কি আমাকে বিশ্বাস করতে বলছেন যে পুরো চিঠি আপনি পড়েন নি অর্ধেক পড়েছেন?’
‘বিশ্বাস করতে বলছি।’
‘আপনার আচার-আচরণে কতটা সত্যি আর কতটা ভান, দয়া করে বলবেন?’
‘ফিফটি-ফিফটি। অর্ধেক ভান, অর্ধেক সত্যি।’
‘এই চিঠিটা আমি পড়ে ফলেছি। কিছু মনে করবেন না। আই অ্যাম সরি। আচ্ছা, আপনি কি রূপা মেয়েটিকে নিয়ে একদিন আসবেন আমাদের বাসায়?—উনাকে দেখব। উনি আসতে না চান—আমি আপনার সঙ্গে যেতে রাজি আছি।’
‘আচ্ছা, একদিন নিয়ে যাব।’
এমা দরজা খুলে তাকিয়ে রইল
এমা দরজা খুলে তাকিয়ে রইল। মনে হচ্ছে আমাকে চিনতে পারছে না। মাফলার দিয়ে মাথা ঢাকা। চিনতে না পাবার সেটা একটা করাণ হতে পারে।
‘কেমন আছেন?’
এমা যন্ত্রের মতো বলল, ভাল।
‘আপনার পরীক্ষা কেমন হল খোঁজ নিতে এলেম।’
‘ভেতরে আসুন।’
আমি ভেতরে ঢুকলাম। এমা দরজা বন্ধ করে দিল। রাত আটটা বাজে টিভিতে বাংলা খবর হচ্ছে। খবর পাঠকের মুখ দেখা যাচ্ছে, কথা শোনা যাচ্ছে না।এদের বাড়ি পুরোপুরি নিঃশব্দ। একটু অস্বস্তি লাগে।
‘আপনার দাদীমা ভাল আছেন?’
‘হ্যাঁ, ভালই আছেন।’
‘কাজের মেয়েটা যে চলে গিয়েছিল, ফিরেছে?’
‘না।’
‘আমি কি বসব?’
‘বসুন।’
আমি বসলাম। এষা আমার মুখোমুখি বসল। তার চোখে আজ চশমা নেই। সে মনে হয় শুধু পড়াশোনার সময় চোখে চশমা দেয়। মেয়েটার চোখ দু’টা খুব সুন্দর। আজ এষাকে আরো সুন্দর লাগছে। একটু বোধহয় রোগাও হয়েছে। কানে সবুজ পাথরের দু’টা দুল। ঐ রাতে দুল দেখিনি।
‘হিমু সাহেব, ঐদিন আপনি আমাদের কিছু না বলে চলে গেলেন কেন?’
‘আপনি আপনার হ্যাসব্যান্ডের সঙ্গে কথা বলছিলেন, কাজেই আপনাদের বিরক্ত করলাম না। বিদেয় হয়ে গেলাম।’
এষা তীক্ষ্ণ গলায় বলল, আমি হাসব্যান্ডের সঙ্গে কথা বলছিলাম আপনাকে কে বলল? ও বলেছে?
‘আমি অনুমান করেছি। তারপর মোরশেদ সাহেবের সঙ্গে কথাও বললাম।
উনার খিলগাঁর বাসাতেও গিয়েছি।’
‘আমি আপনার ব্যাপার কিছু বুঝতে পারছি না। ওকে কি আপনি আগে থেকে চিনতেন?’
‘না, চিনতাম না। ঐ রাতেই প্রথম পরিচয় হল।’
সঙ্গে সঙ্গে বাসায় চলে গেলেন! সবসময় তাই করেন?’
‘কাউকে পছন্দ হলে করি। উনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। খুব পছন্দ হয়েছে।’
এষা চাপা গলায় বলল, পাগল কিন্তু বাইরে থেকে বোঝা যায় না, এমন মানুষরা বোরিং হয়, কিন্তু এরা বোরিং হয় না।
‘আপনার কাছে কিন্তু হয়েছে।’
‘আমার কাছে হয়েছে, কারণ আমাকে তার সঙ্গে জীবনযাপন করতে হয়েছে। একজন বিকৃতমস্তিষ্ক মানুষের সঙ্গে জীবনযাপন ক্লান্তিকর ব্যাপার। যাই হোক, আপনি এসেছেন যখন বসুন। দাদীমা বাসায় নেই, উনি চলে আসবেন। আপনি চা খেতে পারেন, আজ ঘরে চা চিনি সবই আছে।’
‘আমি আজ উঠব। কোনো-একদিন ভোরবেলায় আসব।’
‘না—আপনি বসবেন। দাদীমা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। আপনি চলে যাওয়ায় ঐদিন আমার উপর খুব রাগ করেছিলেন। উনার ধারণা—আমিই আপনাকে বিদেয় করে দিয়েছি। আজ আপনি দাদীমার মাথা থেকে ঐ ধারণা দূর করবেন এবং আপনার ঠিকানা লিখে রেখে যাবেন।’
‘আপনার দাদীমা না আসা পর্যন্ত আমাকে এখানে একা-একা বসে থাকতে হবে?’
‘আমি থাকব আপনার সঙ্গে। একা বসিয়ে রাখব না।’
‘আমরা কী নিয়ে কথা বলব? দু’জন মানুষ তো চুপচাপ মুখোমুখি বসে থাকতে পারে না। আমাদের কথা বলতে হবে।’
‘বলুন কথা।’
‘আপনার দাদীমা’র কি ফিরতে রাত হবে?’
‘বেশি রাত হবার কথা না। তিনি জানেন আমি এখানে একা আছি।’
আমি টিভির দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। শব্দহীন খবর পাঠ দেখতে মন্দ লাগছে না। এরও একটা আলাদা মজা আছে। খবর পাঠকদের কখনোই খুব খুঁটিয়ে দেখা হয় না, তাঁদের কথাই শুধু শোনা হয়। কথা বন্ধ করে দিলেই শুধু ব্যক্তি হিসেবে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েন। তাঁদের খুঁটিয়ে দেখতে ইচ্ছা করে।
‘হিমু সাহেব।’
‘জ্বি?’
‘ও যে অসুস্থ সেই খবরটি কি আপনাকে দিয়েছে?’
‘এপিলেন্সির কথা বলছেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘জ্বি,উনি আমাকে বলেছেন।’
‘বিয়ের আগে কিন্তু আমাদের কিছু বলেনি। এমন ভয়ংকর একটা অসুখ সে গোপন করে গেছে।’
‘বিয়ের আগে অসুখটা হয়ত ভয়ংকর ছিল না।’
‘সবসময়ই ভয়ংকর ছিল। ছ’বছর বয়স থেকেই এই অসুখ নিয়ে সে বড় হয়েছে।’
‘তা হলে মনে হয়—উনি অসুখে অভ্যন্ত হয়ে যাওয়ায় এটা হয়েছে। উনি ঘরেই নিয়েছেন, তাঁর অসুখের ব্যাপারটা সবাই জানে, নতুন করে কাউকে কিছু জানানোর প্রয়োজন নেই। ইচ্ছা করে যে তিনি ব্যাপারটা গোপন করেছেন তা আমার মনে হয় না।’
‘আপনি কি তাকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করছেন?’
‘তা করছি। উনি আমার বন্ধুমানুষ। বন্ধুকে বন্ধু ডিফেন্ড করবে। বাইরের কেউ করবে না। তা ছাড়া এখন তো আপনারা আলাদা হয়ে গেছেন। উনার যা কিছু মন্দ তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন কেন? উনার ভাল যদি কিছু থাকে তা নিয়ে থাকুন।’
‘ওর ভাল কিছু নেই। ও পুরোপুরি অসুস্থ একজন মানুষ। ওর খিলগাঁ বাসায় আপনি গিয়েছেন। সেখানে কি কোনো আমগাছ দেখেছেন? দেখেননি। ও কিন্তু প্রায়ই বাসার সামনে একটা আমগাছ দেখে। আমগাছের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। একবার রাতদুপুরে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলল, এষা, চল আমরা দু’জন গাছটার নিচে বসি।’
‘আপনি নিশ্চয়ই বসতে যাননি?’
‘না, যাইনি।’
‘গেলে ভাল হত। আপনি যদি বলতেন—চল যাই বসি গাছের নিচে। কিংবা যদি বলতেন—তোমার এই আমগাছের ডালে একটা দোলনা টানিয়ে দাও—আমি দোলনায় চড়ব—তাহলে খুব ইন্টারেস্টিং হত।’
‘এত কি পাগলামির প্রশ্রয় দেয়া হত না?’
‘না, হত না। আপনি যাকে পাগলামি ভাবছেন তা হয়তো পাগলামি নয়। আলেকজান্ডার পুশকিন তাঁর বাড়ির পেছনে সব সময় একটা দিঘি দেখতে পেতেন। জোছনা রাতি দিঘির পাড়ে বেড়াতে বেড়াতে যেতেন।’
‘একজন বিখ্যাত ব্যক্তি পাগলামি করে গেছেন বলেই পাগলামিকে স্বীকার করতে হবে?’
‘না, হবে না, এম্নি বললাম। আপনি ঐ লোককে ছেড়ে এসে ভালই করেছেন। ও বেশিদিন বাঁচবেও না। স্বামীর মৃত্যু আপনাকে দেখতে হবে না। আপনাকে বিধবা শব্দটার সঙ্গে যুক্ত হতে হবে না। বিধবা খুব পেলেটেবল শব্দ নয়। তা ছাড়া একজন ভয়াবহ অসুস্থ, রুগ্ণ মানুষের সঙ্গে যুক্ত থেকে নিজের জীবনটাকে নষ্ট করবেন কেন? একটাই আপনার জীবন। একটাই পৃথিবী। দ্বিতীয় কোনো পৃথিবী আপনার জন্যে নেই। সেটাকে নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। তা ছাড়া মোরশেদ সাহেবের আপনাকে প্রয়োজন নেই, তাঁর আছে নিজস্ব পৃথিবী, নিজস্ব পৃথিবী। অল্প যে –ক’দিন বাঁচবেন, তিনি তাঁর আমগাছ নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারবেন। আপনার তো কোনো আমগাছ নেই—কাজেই আপনার একজন বন্ধু প্রয়োজন। ওমর খৈয়াম পড়েছেন?—