ইমরুলের একটি 3R সাইজ ছবি পাঠাইলাম। ছবিতে সে একটু বাঁকা হইয়া দাঁড়াইয়া আছে। ইহা কোনো শারীরিক ক্ৰটি নহে। ছবি তুলিবার সময় কেন জানি সে খানিকটা ডান দিকে হেলিয়া দাঁড়ায়। ফুল ফিগারের এই ছবিতে তার মুখাবয়ব স্পষ্ট নয় বলিয়া মুখের একটি ক্লোজ-আপ ছবিও পাঠানো হইল। একটি হাস্যমুখী ছবি পাঠাইতে পারিলে ভালো হইত। তাহার হাসি সুন্দর। সে এমনিতে খুবই হাসে, শুধু ছবি তুলিবার সময় গভীর হইয়া থাকে। ইহা তাহার পুরানা অভ্যাস।
ইমরুলের আঁকা কিছু ছবি (সর্বমোট তিন) পাঠাইলাম। তিনটিই ভূতপ্রেতের ছবি। তাহার আকা একটি ল্যান্ডস্কেপ পাঠাইতে পারিলে ভালো হইত। গাছ-নদী-সূর্যস্ত-পালতোলা নৌকা টাইপ ছবি। কিন্তু ইমরুল ভূতের ছবি ছাড়া অন্য কোনো ছবি আকে না।
আপনাকে যে তিনটি ভূতের ছবি পাঠানো হইয়াছে তাহার মধ্যে একটি পানিভূতের ছবি। বাকি দুইটি রাক্ষসের ছবি। ইমরুলের আঁকা প্রতিটি রাক্ষস এবং ভূতের আলাদা আলাদা নাম আছে। যেমন, পানিভূতটির নাম— হাকু। এই ভূতের বিশেষত্ব হইল তাহার প্রধান খাদ্য মানুষের গু। [গু শব্দটি সরাসরি ব্যবহার করিবার জন্য আমি দুঃখিত। আপনার রুচিবোধকে আহত করিয়া থাকিলে নিজগুণে ক্ষমা করিবেন।]
বিশেষ আর কী? ইমরুল বিষয়ে সমস্ত তথ্যই জানাইলাম, বাকি আপনার বিবেচনা। অতি শীঘ্র দেশে আসিয়া মাল ডেলিভারি নিয়া আমাকে দায়মুক্ত করিবেন। অধীনের ইহাই বিনীত প্রার্থনা। আল্লাহপাক আপনাকে এবং আপনার স্বামীকে মঙ্গলমতো রাখুক— ইহাই তাহার দরবারে আমার ফরিয়াদ।
আসসালাম।
হিমু
প্রোপাইটার
হিমু শিশু সাপ্লাই কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড
রেজিস্টার্ড নাম্বার পেনডিং
জনাব হিমু সাহেব,
অপ্রয়োজনীয় তথ্যে পরিপূর্ণ। আপনার দীর্ঘ পত্র পেয়ে আমি খুবই বিরক্ত হয়েছি। আপনি কুরুচিপূর্ণ আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করেছেন, আপনার হাতের লেখাও অপাঠ্য। ভবিষ্যতে ভাষা ব্যবহারে শালীন হবেন এবং যা বলতে চান সরাসরি বলবেন। দীর্ঘ পত্ৰ পাঠের সময় আমার নেই।
যে শিশুটিকে আপনি আমাদের জন্যে ঠিক করে রেখেছেন তার বিষয়ে আমার এবং আমার স্বামী দুজনেরই কিছু আপত্তি আছে। যতদূর মনে হয় এই শিশুটিকে আমরা গ্ৰহণ করতে পারব না। কারণগুলি স্পষ্ট করে বলি।
এক
শিশুর মানসিকতা সুস্থ নয়। যে শিশু ভূত-প্ৰেত-রাক্ষস ছাড়া অন্য কিছুর ছবি আঁকতে পারে না তার মানসিকতা অবশ্যই সুস্থ নয়। এই বিষয়ে আমরা মনস্তত্ববিদ প্রফেসর জেনিংস-এর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাকে ছবি তিনটিও দেখিয়েছি। উনি নিজেও বলছেন শিশু অসুস্থ পরিবেশে বড় হচ্ছে। শিশুর মনে নানান ধরনের ক্ৰোধ এবং ভীতির সঞ্চার হচ্ছে বলেই ছবিগুলি এমন হচ্ছে। ছবিতে গাঢ় লাল রঙের অতিরিক্ত ব্যবহারেই তিনি চিন্তিত বোধ করছেন।
দুই
আপনি লিখছেন শিশুটি সব সময় অসুখে-বিসুখে ভোগে। তার মানে শিশুটি জন্ম-রুগ্ন। তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই নেই। আমরা একটি স্বাস্থ্যবান শিশু চেয়েছি। চির রুগ্ন শিশু চাই নি।
তিন
শিশুটির যে ছবি পাঠিয়েছেন তা দেখেও আমি চিন্তিত বোধ করছি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে তার চোখ ছোট এবং টানা টানা। মঙ্গোলিয় বেবির লক্ষণ।
চার
ছবিতে শিশুটি বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আপনি লিখেছেন এটা তার কোনো শারীরিক ক্ৰটি নয়। ছবি তোলার সময় সে বাঁকা হয়ে দাঁড়ায়। আমার সে-রকম মনে হচ্ছে না। তার দাঁড়ানোর ভঙ্গি দেখে মনে হয় সে পোলিও রোগগ্ৰস্ত। তার একটি পা অপুষ্ট।
আমার কেন জানি ধারণা হচ্ছে। আপনার কোম্পানি আমাকে বাজে শিশু গছিয়ে বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে। আপনাকে দোষ দিচ্ছি না, বাংলাদেশের সব কোম্পানিই এই জিনিস করে। আপনি তার ব্যতিক্রম হবেন কেন?
যাই হোক, আপনি এই শিশুটি বাদ দিয়ে অন্য কিছু দেখুন। আমি ইমরুল নামের শিশুটির প্রতি আগ্রহী নই। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে আমি দেশে আসব। তখন যদি সম্ভব হয়। কয়েকটি শিশু আমাকে দেখাবার ব্যবস্থা
করবেন।
ইতি
আসমা হক
পিএইচডি
পুনশ্চ : ভবিষ্যতে আমাকে হাতে লিখে কোনো চিঠি পাঠাবেন না। কম্পিউটারে কম্পোজ করে পাঠাবেন। অবশ্যই চিঠি সংক্ষিপ্ত হতে হবে।
***
মিসেস আসমা হক
পিএইচডি
জনাবা,
আপনার পত্ৰ পাইয়া মৰ্মাহত হইয়াছি। অনেক সাধ্য সাধনা করিয়া ইমরুলকে ডেলিভারির জন্যে প্রস্তুত করিয়াছিলাম। আপনার পত্র পাইয়া মহাসঙ্কটে পড়িয়াছি। এখন ইমরুলকে নিয়া কী করি! মিডলইস্টে উটের জকি হিসাবে প্রেরণ ছাড়া এখন আর আমার কোনো গতি নাই। কী আর করা, ইহাই ইমরুলের কপাল। এই জন্যেই পল্লীর মরমী কবি বলিয়াছেন, কপাল তোমার রঙ্গ বোঝা দায়। আপনার কপালে যে শিশু আছে আপনি তাহাকেই পাইবেন। শত চেষ্টা করিয়াও অন্য কোনো শিশুঁকে আপনার কাছে গছাইয়া দেওয়া যাইবে না। আমাদের কোম্পানি আপনার কোলে আপনার পছন্দের শিশু তুলিয়া দিবে, ইহাই আমাদের অঙ্গীকার। আমাদের কোম্পানির মটো
বিদেশের ঘরে ঘরে দেশের সেরা শিশু। ইহা শুধু কথার কথা নহে। ইহাই আমাদের পরিচয়।
আপনাকে আরো দীর্ঘ পত্ৰ লিখিবার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আপনি সংক্ষিপ্ত পত্র দিতে বলিয়াছেন বলিয়া এইখানেই শেষ করি।
ইতি আপনার একান্ত বাধ্যগত
হিমু
প্রোপাইটার
হিমু শিশু সাপ্লাই কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড
***
হিমু,
এই ছাগলা তুই পেয়েছিস কী? আসমাকে তুই ছাইপাশ কী চিঠি লিখছিস? তোর মতলবটা কী? আমি যদি ঝাড়ুপেটা করে তোর বিষ না ঝাড়ি আমার নাম মাজেদা না।