যথেষ্ট বকবক করেছেন। দয়া করে মুখ বন্ধ করুন।
জি আচ্ছা। মুখ বন্ধ করলাম।
আমার সামনে বসে থাকবেন না। এই মুহুর্তে বের হয়ে যান।
যাচ্ছি।
Go to hell.
মৃত্যুর পর চেষ্টা করে দেখব–Hell এ যেতে পারি কি-না। আপাতত গুলিস্তানের দিকে যাই। ভালো কথা ইমরুলকে সঙ্গে করে নিয়ে যাই। আজ রাতে যদি ঘুমের ওষুধ ইস্তেমাল করতে চান তাহলে আপনার সুবিধা হবে। পথ খোলা থাকল।
আর কোনো কথা না। অনেক কথা বলে ফেলেছেন।
আমি বললাম, শেষ কথা বলে যাই, উত্তেজিত অবস্থায় ঘুমের ওষুধ খাবেন না। বমি হয়ে যাবে। খালি পেটেও খাবেন না। খালি পেটে ঘুমের ওষুধ খেলেও বমি হয়। হালকা ম্যাকস জাতীয় কিছু খেয়ে নেবেন। সব ট্যাবলেট খাওয়ার পর গরম কফি খেতে পারেন। এতে Action ভালো হয়।
Get Out
আমি ইমরুলকে নিয়ে গেট আউট হয়ে গেলাম। হাবিবুর রহমান সাহেব ঘুমের ওষুধ খাবেন কি-না বুঝতে পারছি না। সম্ভাবনা যে একেবারে নেই তা না। ফিফটি ফিফটি চান্স। মজার ব্যাপার হলো মানব জীবনের সব সম্ভাবনাই ফিফটি ফিফটি। বিয়ে করে সুখী হবার সম্ভাবনা কতটুকু?
ফিফটি ফিফটি চান্স।
বড় ছেলেটি মানুষ হবে সেই সম্ভাবনা কত পারসেন্ট?
ফিফটি পারসেন্ট।
ইমরুলকে নিয়ে রিকশায় চড়েছি। সে খুবই আনন্দিত। আমি বললাম, কেমন আছিসরে ব্যাটা?
ভালো।
কতটুকু ভালো আছিস হাত মেলে দেখা।
সে হাত মেলছে। মেলেই যাচ্ছে…
বুঝতে পেরেছি। খুব ভালো আছিস। দেখি এখন একটা গান শোনা ভালোবাসার গান। ভালোবাসার গান জনিস?
জানি।
ইমরুল তৎক্ষণাৎ গান ধরল–
তুমি ভালোবাস কিনা
আমি তা জানি না…
ভালোবাসার গান ইমরুল এই দুই লাইনই জানে। শিশুদের নিজস্ব বিচিত্র সুরে সে এই গান করছে। রিকশাওয়ালা গান শুনে খুব খুশি। সে ঘাড় ঘুরিয়ে হাসিমুখে বলল— মাশাল্লাহ, এই বিচ্ছু দেহি বিরাট গাতক।
আমি বললাম, এই বিচ্ছ, বল দেখি আমরা কোথায় যাচ্ছি?
ইমরুল বলল, জানি না।
বিশেষ কোথাও যেতে ইচ্ছা করে?
ইমরুল বলল, না।
মাকে দেখতে যাবি?
না।
আসমা হক নামের একজন মহিলা ছিলেন যিনি তোকে নতুন জুতা কিনে দিয়েছেন, তার কাছে যাবি?
না।
রিকশায় চড়তে আমার সব সময়ই ভালো লাগে। আজ যেন একটু বেশি ভালো লাগছে। শুনছি। ঢাকা শহর রিকশামুক্ত হবে। আমরা পুরোপুরি মেট্রোপলিটন সিটির যুগে প্রবেশ করব। শনশন করে গাড়ি চলবে। আধুনিক গতির যুগ। শনশন ঝনঝন।
উল্টোটা হলে কেমন হতো। কেউ যদি এমন ব্যবস্থা করতেন যেন এ শহরে কোনো গাড়ি না চলে। শুধু রিকশা এবং সাইকেল চলবে। কোনো গাড়ি থাকবে না। পৃথিবীর একমাত্র নগরী যেখানে কোনো গাড়ি নেই। রাস্তায় কুৎসিত হর্ন বাজবে না। জলতরঙ্গের মতো টুনটুন করে রিকশার ঘন্টি বাজবে। নগরীতে কোনো কালো ধোয়া থাকবে না। পর্যটনের বিজ্ঞাপনে লেখা হবে–
DHAKA
CITY OF RICKSHAW
প্রতিটি রিকশার পেছনে বাধ্যতামূলকভাবে চিত্রকর্ম থাকতে হবে। ভ্ৰাম্যমাণ চিত্রশালা। আমরা পেইনটিং দেখতে দেখতে রিকশায় চড়ে ঘুরব। মন্ত্রীদের জন্যে থাকবে। ফ্ল্যাগ বসানো রিকশা। প্ৰধানমন্ত্রীও রিকশায় করেই যাবেন। তার আগে পেছনে থাকবে সাইকেল আরোহী নিরাপত্তা-কমীরা। রিকশার কারণে গতির দিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে যাব। সবদিক দিয়েই তো পিছিয়ে পড়ছি। গতির দিকে পিছিয়ে পড়লে ক্ষতি কী?
ইমরুল বলল, পিপি করব।
আমাদের রিকশা রাস্তার মাঝামাঝিতে। জামে জট খেয়ে গেছে। জটি খুলবে। এমন সম্ভাবনা নেই। বাধ্য হয়েই ইমরুলকে রিকশার পাটাতনে দাঁড় করিয়ে প্যান্টের জিাপার খুলে দিলাম। সে মহানন্দে তার কর্মকরছে। আশপাশের সবাই মজা পাচ্ছে। কৌতূহলী হয়ে দেখছে। একজন আবার গাড়ির কাচ নামিয়ে ফাট করে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলল। ছবিটা ভালো হবার কথা। সুন্দর কম্পোজিশন।
ইমরুল বলল, আমি ছান্তা খাব।
ছান্তা হলো ফান্টা। সে বাংলা ভাষার প্রতিটি শব্দ স্পষ্ট করে বলতে পারে, তারপরও কিছু কিছু অদ্ভুত শব্দ সে তার ঝুলিতে রেখে দিয়েছে। ফান্টাকে বলবে ছান্তা। গাড়িকে বলবে রিরি। শিশুদের মধ্যে এই ব্যাপারটা আছে। প্রথম শৈশবের কিছু শব্দ সে অনেকদিন ধরে রাখে। একদিন হঠাৎ সে এই শব্দগুলি ছেড়ে দেয়। আর কোনোদিন ভুলেও উচ্চারণ করে না। যে বিশেষ দিনে এই ঘটনাটি ঘটে। সেই বিশেষ দিনেই তার শৈশবের সমাপ্তি।
ইমরুলকে ছান্তিা খাইয়ে আমি মাজেদা খালাকে টেলিফোন করলাম। তিনি টেলিফোনে আর্তনাদের মতো শব্দ করলেন–তুই কোথায়?
আমি চমকে উঠে বললাম, আবার কী হয়েছে?
তুই ড়ুব মেরে কোথায় ছিলি? আমি কম করে হলেও দশ হাজারবার তোর খোঁজে লোক পাঠিয়েছি।
গুরুতর কিছু কি ঘটেছে খালা? খালু সাহেবের জবান খুলেছে? উনি কথা বলা শুরু করেছেন?
ও যেমন ছিল তেমন আছে। তোকে খুঁজছি। অন্য কারণে। আসমার মাথা খারাপের মতো হয়ে গেছে।
কেন?
তুই একবার ইমরুলকে দেখিয়ে এনেছিস, তারপর আর তোর কোন খোঁজ নেই। বেচারি ছেলেটার জন্যে অস্থির হয়ে আছে।
টাকা-পয়সা ক্লিয়ার করে মাল ডেলিভারি নিয়ে যাক। মাল আমার সঙ্গেই আছে।
হিমু শোন, এ ধরনের ফাজলামি কথা তুই আর কোনদিন বলবি না। কোনোদিন না।
আচ্ছা, বলব না।
ছেলেটাকে তুই এক্ষুণি ওদের কাছে দিয়ে আয়। এই মুহুর্তে।
এই মুহুর্তে ডেলিভারি দিতে পারব না।
কেন? শেষ সময়ে বাবা-মা ঝামেলা করছে? জানি এরকম কিছু হবে। শেষ মুহুর্তে দরদ উথলে উঠবে।
এই মুহুর্তে ডেলিভারি দিতে পারছি না, কারণ মিসেস আসমা হকের স্বামী আমাকে বলেছেন, তাঁর স্ত্রীর ত্ৰিসীমানায় যেন আমি না থাকি। তাঁর সঙ্গে ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত মাল ডেলিভারি হবে না।