আমার টেলিফোন ব্যাধি আছে। একবার কারো সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললে, আবার অন্য কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করে। রুপাদের বাসায় করলাম। রুপার বাবা ধরতেই বললাম, আচ্ছা এটা কি রেলওয়ে বুকিং? রুপার বাবা বললেন, জি না। আপনার রং নাম্বার হয়েছে। তখন আমি বললাম, জাষ্ট ওয়ান মিনিট, রুপা কি জেগে আছে?
রুপার বাবার হাইপ্রেশার বা এই জাতীয় কিছু বোধহয় আছে। অল্পতেই রেগে গিয়ে এমন হইচই শুরু করেন যে বলার না। আমার কথাতেও তাই হলো। তিনি চিড়চিড়িয়ে উঠলেন, কে? কে? এই ছোকরা তুমি কে?
তিনি খুব হইচই লাগালেন। আমি রিসিভার রেখে দিলাম। রুপার বাবা নিশ্চই সবাইকে ডেকে ঘটনা বলবেন। রুপা সঙ্গে সঙ্গে বুঝবে কে টেলিফোন করেছিল। সে হাসবে না রাগ করবে কে জানে। যেখানে রাগ করা উচিত সেখানে সে রাগ করে না, হাসে। যেখানে হাসা উচিত সেখানে রাগ করে।
আমি ওয়ান সেভেনে রিং করে জাস্টিস এম.সোবাহানের বাসা চাইলাম। সম্ভব হলে মীরা বা মীরুর সঙ্গেও কথা বলা যাবে। কী বলব ঠিক করা হলো না। যা মনে আসে তাই বলব। আগে থেকে ভেবে চিন্তে কিছু বলা আমার ¯^fv‡e নেই।
হ্যাঁলো?
কে মীরা?
হ্যাঁ। আপনি কে বলছেন?
আমার নাম টুটুল।
কে?
অনেকক্ষণ চুপচাপ কাটল। মনে হচ্ছে মীরা ঘটনার আকস্মিকতায় বিচলিত। আমার মনে হয় কথা বলবে কি বলবে না বুঝতে পারছে না।
ভুলে গেছেন? ঐ যে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। কী করেছিলাম আমি বলুন তো?
কোত্থেকে টেলিফোন করেছেন?
হাসপাতাল থেকে। পুলিশ মেরে আমার অবস্থা কাহিল করে দিয়েছে। রক্তবমি করেছিলাম।
সে কী কথা, মারবে কেন?
পুলিশের হাতে আসামি তুলে দেবেন আর পুলিশ আসামিকে কোলে বসিয়ে মন্ডা খাওয়াবে? আমি তো আপনাদের কোনোই ক্ষতি করি নি। গাড়িতে ডেকেছেন, উঠেছি। তাছাড়া আপনারা টুটুল টুটুল করছিলেন। আমার ডাক নামও টুটুল।
আপনি কিন্তু বলেছেন আপনার নাম টুটুল নয়।
হ্যাঁ বলেছিলাম। কারণ বুঝতে পারছিলাম আপনি অন্য টুটুলকে খুঁজছিলেন। যার কপালে একটা দাগ।
ওপাশে অনেক্ষণ কোন কথা শোনা গেল না। অন্ধকারে ঢিল ছুড়েছিলাম। মনে হচ্ছে লেগে গেছে। এটা একটা আশ্চর্য ব্যাপার। যা বলি প্রায় সময়ই তা কেমন যেন মিলে যায়। টুটুলের কপালের কাটা দাগের কথাটা হঠাৎ মনে এসেছিল। ভাগ্যিস এসেছিল।
হ্যালো আপনি কোন হাসপাতালে আছেন?
কেন, দেখা করতে আসবেন?
বলুন না কোন্ হাসপাতালে।
বাসায় চলে যাচ্ছি। ওরা বুকের এক্সরে করেছে। দুটা স্টিচ দিয়েছে। বলেছে ভর্তি হবার দরকার নেই।
আমি এক্ষুণি বাবাকে বলছি। বাবা থানায় টেলিফোন করবেন।
আমি শব্দ করে হাসলাম।
হাসছেন কেন?
পুলিশ কি কখনো মারের কথা স্বীকার করে? কখনো করে না। আচ্ছা রাখি।
না না রাখবেন না। প্লিজ রাখবেন না। প্লিজ।
আমি টেলিফোন নামিয়ে রাখলাম। ঠিক তখন প্রবল বর্ষণ শুরু হলো। কালবোশেখী ঝড়। কালবোশেখী ঝড় সাধারণত চৈত্র মাসেই হয়। ঝড়ের নাম হওয়া উচিত ছিল কালচৈত্র ঝড়। দেখতে দেখতে অসহ্য গরম চলে গিয়ে চারদিক হিমশীতল হয়ে গেল। নির্ঘাত আশেপাশে কোথাও শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। ছাদে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজব কি ভিজব না মনস্থির করতে পারছি না। রিনকি বের হয়ে এল বাবার ঘর থেকে। তাকে কেমন যেন শঙ্কিত মনে হচ্ছে। আমি বললাম, রিনকি তুই একটু বসার ঘরে যা। কলিংবেল বাজতেই দরজা খুলে দিবি।
রিনকি বিস্মিত গলায় বলল, কেন?
তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
রিনকি নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে কলিংবেল বাজল। আমার মনটাই অন্যরকম হয়ে গেল। ঝড়বৃষ্টির মধ্যে দেখা হোক দুজনের। দীর্ঘস্থায়ী হোক এই মূহুর্ত। রিনকি দরজা খুলেছে। না জানি তার কেমন লাগছে।
আমি বাদলের ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়লাম। নদীটাকে আনা যায় কিনা দেখা যাক। যদি আনতে পারি ওদের দুইজনকে কিছুক্ষণের জন্যে এই নদী ব্যবহার করতে দেব।
হিমু ভাই।
তুই কি এখনো জেগে আছিস?
হুঁ। রাতে আমার ঘুম হয় না।
বলিস কী।
ঘুমের ওষুধ খাই। তাতেও লাভ হয় না। দশ মিলিগ্রাম করে ফ্রিজিয়াম।
আজ খেয়েছিস?
না। আজ সারারাত তোমার সঙ্গে গল্প করব।
গল্প করতে ইচ্ছে করছে না। আয় তোকে ঘুম পাড়িয়ে দি।
ঘুমুতে ইচ্ছা করছে না।
আজ ঘুমিয়ে থাক। কাল গল্প করব।
ঘুম আসবে না।
বললাম ঘুম এনে দিচ্ছি। নাকি তুই আমার কথা বিশ্বাস করিস না?
কী যে বল। কেন বিশ্বাস করব না? তুমি যা বল তাই হয়।
বেশ তাহলে চোখ বন্ধ কর।
করলাম।
মনে কর তুই হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিস। চৈত্র মাসের কড়া রোদ। হাঁটছিস শহরের রাস্তায়।
হ্যাঁ।
এখন তুই শহর থেকে বেরিয়ে এসেছিস। গ্রাম, বিকেল হচ্ছে। সূর্য নরম। রোদে তেজ নেই। ফুরফুরে বাতাস। তোর শরীরটা ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে।
হুঁ।
হঠাৎ তোর সামনে একটা নদী পড়ল। নদীতে হাঁটু জল। কী ঠাণ্ডা পানি। কী পরিষ্কার। আঁজলা ভরে তুই পানি খাচ্ছিস। ঘুমে তোর চোখ জড়িয়ে আসছে। ইচ্ছা করছে নদীর মধ্যেই শুয়ে পড়তে।
হুঁ।
নদীর ধারে বিশাল একটা পাকুড়গাছ। তাই সে পাকুড়গাছের নিচে এসে দাঁড়িয়েছিস। এখন শুয়ে পড়লি। খুব নরম হালকা দূর্বাঘাসের উপরে শুয়েছিস। আর জেগে থাকতে পারছিস না। রাজ্যের ঘুম তোর চোখে।
বাদল এবার আর হুঁ বলল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ভারী নিশ্বাসের শব্দ শোনা গেল। এই ঘুম সহজে ভাঙবে না।
কেউ যদি এটাকে কোনো অস্বাভাবিক বা অলৌকিক কিছু ভেবে বসেন তাহলে ভুল করবেন। পুরো ব্যাপারটার পেছনে কাজ করছে আমার প্রতি বাদলের অন্ধভক্তি। যে ভক্তি কোনো নিয়ম মানে না। যার শিকড় অনেক দুর পর্যন্ত ছড়ানো। বাদল না হয়ে অন্য কেউ হলে আমার এই পদ্ধতি কাজ করত না। এই ছেলেটা আমাকে বড়ই পছন্দ করে। সে আমাকে মহাপুরষের পর্যায়ে ফেলে রেখেছে।
আমি মহাপুরুষ না।
আমি ক্রমাগত মিথ্যা বলি। অসহায় মানুষদের দুঃখ আমাকে মোটেই অভিভ্থত করে না। একবার আমি এক জন ঠেলাঅলার গালে চড়ও দিয়েছিলাম। ঠেলাঅলা হঠাৎ ধাক্কা দিয়ে আমাকে ড্রেনের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। নোংরা পানিতে আমার সমস্ত শরীর মাখামাখি। সেই অবস্থাতেই উঠে এসে আমি তার গালে চড় বসালাম। বুড়ো ঠেলাঅলা বলল, ধাক্কা দিয়ে না ফেললে আপনে গাড়ির তলে পড়তেন।
আসলেই তাই । আমি যেখানে দঁড়িয়েছিলাম ঠিক সেখান দিয়ে একটা পাজেরো জিপ টার্ন নিল। নতুন আসা এই জিপগুলোর আচার-আচরণ ট্রাকের মত।
আমি গম্ভির গলায় বললাম, মরলে মরতাম। তাই বলে তুমি আমাকে নর্দমায় ফেলবে।
ঠেলাঅলা করুণ গলায় বলল, মাফ কইরা দেন। আর ফেলুম না।
আমি আগের চেয়ে রাগী গলায় বললাম, মাফের কোনো প্রশ্নই আসে না। তুমি কাপড় ধোয়ার লন্ড্রির পয়সা দেবে।
গরিব মানুষ।
গরিব মানুষ, ধনী মানুষ বুঝি না। বের কর কী আছে।
অবাক বিস্ময়ে বুড়ো আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
আমি বললাম, কোনো কথা শুনতে চাই না। বের কর কী আছে।
মাঝে মাঝে মানুষকে তীব্র আঘাত করতে ভালো লাগে। কঠিন মানসিক যন্ত্রনায় কাউকে দগ্ধ করার আনন্দের কাছে সব আনন্দই ফিকে। এই লোকটি আমার জীবন রক্ষা করেছে। সে কল্পনাও করে নি কারোর জীবন রক্ষা করে সে এমন বিপদে পড়বে। যদি জানত এই অবস্থা হবে তাহলেও কি সে আমার জীবন রক্ষা করার চেষ্টা করত?
বুড়ো গামছায় মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বলল, বুড়োমানুষ মাফ কইরা দেন।
টাকা পয়সা কিছু তোমার কাছে নেই?
জ্বে না। কাইলও টিরিপ পাই নাই,আইজও পাই নাই।
যাচছ কোথায়?
রায়ের বাজার।
ঠিক আছে আমাকে কিছুদুর তোমার গাড়িতে করে নিয়ে যাও। এতে খানিকটা হলেও উশুল হবে।
আমি তার গাড়িতে উঠে বসলাম। বৃদ্ধ আমাকে টেনে নিয়ে চলল। পেছন থেকে ঠেলছে তার নাতি কিংবা তার ছেলে। এই পৃথিবীর নিষ্ঠুরতায় তারা দুজনেই মর্মাহত। পৃথিবী যে খুবই অকরুণ জায়গা তা তারা জানে। আমি আরো ভালোভাবে তা জানিয়ে দিচ্ছি।
রাস্তায় এক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে আমি চা আনিয়ে গাড়িতে বসে বসেই খেলাম। তাকিয়ে দেখি বাচ্চা ছেলেটির চোখমুখ ক্রোধ ও ঘৃণায় কালো হয়ে গেছে। যে কোন মূহুর্তে সে ঝাঁপিয়ে পড়বে আমার উপর। আমি তার ভেতর এই ক্রোধ এবং এই ঘৃণা আরো বাড়ুক তাই চাচ্ছি। মানুষকে সহ্যের শেষ সীমা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সহজ কথা নয়। সবাই তা পারে না। যে পারে তার ক্ষমতাও হেলাফেলা করার মতো ক্ষমতা না।
বুড়ো রাস্তার উপর বসে গামছার হাওয়া খাচ্ছে। তার চোখে আগের বিস্ময়ের কিছুই এখন আর তার চোখে নেই। একধরণের নির্লিপ্ততা নিয়ে সে তাকিয়ে আছে। আমি চা শেষ করে বললাম, বুড়ো মিয়া চল যাওয়া যাক। আমরা আবার রওনা হলাম। মোটামুটি নির্জন একটা জায়গায় এসে বললাম, থামাও গাড়ি থামাও। এখানে নামব।
আমি নামলাম। পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগ বের করলাম। আমার মানিব্যাগ সবসময়ই খালি থাকে। আজ সেখানে পাঁচশো টাকার দুটা চকচকে নোট আছে। মজিদের টিউশনির টাকা। মজিদ টাকা পয়সা হাতে পাওয়া মাত্র খরচ করে ফেলে বলে তার টাকা-পয়সার সবটাই থাকে আমার কাছে।
বুড়া মিয়া।
জ্বি।
তুমি আমার জীবন রক্ষা করেছ। কাজটা খুব ভালো কর নি। যাই হোক করে ফেলেছ যখন, তখন তো আর কিছু করার নাই। তোমাকে ধন্যবাদ। দেখি আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতে কেমন লাগে। তোমাকে আমি সামান্য কিছু টাকা দিতে চাই। এই টাকাটা আমার জীবন রক্ষা করার জন্যে না। তুমি যে কষ্ট করে রোদের মধ্যে আমাকে টেনে টেনে এতদুর আনলে তার জন্যে। পাঁচশ তোমার,পাঁচশ এই ছেলেটার।
বুড়ো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল।
আমি কোমল গলায় বললাম, এই রোদের মধ্যে আজ আর গাড়ি নিয়ে বের হয়ো না। বাসায় চলে যাও। বাসায় গিয়ে বিশ্রাম কর।
বুড়োর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ব্যাপারটা এরকম ঘটবে আমি তাই আশা করছিলাম। বাচ্চা ছেলেটির মুখে ক্রোধ ও ঘৃণার চিহ্ন এখন আর নেই। তার চোখ এখন অসম্ভব কোমল। আমি বললাম, এই তোর নাম কী রে?
লালটু মিয়া।
প্যান্টের বোতাম লাগা বেটা। সবক দেখা যাচ্ছে। লালটু মিয়া হাত দিয়ে প্যান্টের ফাঁকা অংশ ঢাকতে ঢাকতে বলল, বোতাম নাই।
তাহলে তো সব সমস্যার সমাধান। হাত সরিয়ে ফেল। আলো হাওয়া যাক।
লালটু মিয়া হাসছে।
হাসছে বুড়ো ঠেলাঅলা। তাদের কাছে এখন আমি তাদের এক জন। বুড়ো বলল, আব্বাজি আসেন, তিন জনে মিল্যা চা খাই। তিয়াশ লাগছে।
পয়সা দেবে কে? তুমি? আমার হাতে কিন্তু আর একটা পয়সাও নেই।
বুড়ো আবার হাসল।
আমরা একটা চায়ের দোকানের দিকে রওনা হলাম। নিজেকে সেই সময় মহাপুরুষ মহাপুরুষ বলে মনে হচ্ছিল। আমি মহাপুরুষ নই। কিন্তু এই ভূমিকায় অভিনয় করতে আমার বড় ভালো লাগে। মাঝে মাঝে এই ভূমিকায় আমি অভিনয় করি, মনে হয় ভালোই করি। সত্যিকার মহাপুরুষরাও সম্ভবত এত ভালো করতেন না।
আমি অবশ্যি এখন পর্যন্ত কোন মহাপুরুষ দেখি নি। তাঁদের চিন্তাভাবনা কাজকর্ম কেমন তাও জানি না। মহাপুরুষদের কিছু জীবনী পড়েছি, সেইসব জীবনীও আমাকে আকৃষ্ট করতে পারে নি। টলস্টয় তের বছরের এক জন বালিকাকে ধর্ষণ করেছিলেন। সেই ভয়াবহ ঘটনা তিনি স্বীকার করেছেন। আমরা সবাই তো আমাদের ভয়ংকর পাপের কথা স্বীকার করি।
আমার মতে মহাপুরুষ হচ্ছে এমন এক জন যাকে পৃথিবীর কোন মালিন্য স্পর্শ করে নি। এমন কেউ সত্যি সত্যি জন্মেছে এই পৃথিবীতে?
ঘুমুতে চেষ্টা করছি। ঘুমুতে পারছি না। অসহ্য গরম ঘুমুতে আমার কষ্ট হয় না, কিন্তু আজকের এই ঠাণ্ডা- ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঘুম আসছে না। শীত শীত লাগছে। খালিগায়ে থাকার জন্যে লাগছে। খালিগায়ে থাকার কারণ আমার পাঞ্জাবি এখন বাদলের গায়ে।
শুয়ে শুয়ে ছেলেবেলার কথা ভাবতে চেষ্টা করছি। বিশেষ কোনো কারণে নয়। ঘুমুবার আগে কিছু একটা নিয়ে ভাবতে হয় বলেই ভাবা।
ময়ূরাক্ষী ৩/৮
আমার শৈশব যাদের সঙ্গে কেটেছে–তারা কেমন?
জন্মের সময় আমার মা মারা যান, কাজেই মার কথা কিছুই জানি না। তিনি দেখতে কেমন তাও জানি না। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে তাঁর কোনো ছবি নেই। বাবা মারা যান আমার ন-বছর বয়সে। তাঁর কথাও তেমন মনে নেই। তাঁর কথা মনে পড়লেই একটা উদ্বিগ্ন মুখ মনে আসে। সেই মুখে বড় বড় দুটি চোখ। ভারী চশমায় ঢাকা বলে সেই চোখের ভাবও ঠিক বোঝা যায় না। মনে হয় পানির ভেতর থেকে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাবার উদ্বিগ্ন গলা, কিরে তোর ব্যাপারটা কী বল তো? পেট ব্যথা করছে?
বাবার বোধহয় ধারণা ছিল শিশুদের একটি মাত্র সমস্যা–পেট ব্যথা। তারা যখন মন খারাপ করে বসে থাকে তখন বুঝতে হবে তার পেট ব্যথা করছে। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে কোনো শিশু যদি জেগে উঠে কাঁদতে থাকে তখন বুঝতে হবে তার পেটে ব্যথা।
বাবার কাছ থেকে কত অসংখ্যবার যে শুনেছি–কী রে হিমু তোর কি পেট ব্যথা না কি? মুখটা এমন কালো কেন? কোন জায়গায় ব্যথা দেখি।
বাবা যে এক জন পাগল ধরণের মানুষ এটা বুঝতে আমার তেমন দেরি হয় নি। শিশুদের বোধশক্তি ভালো। পাগল না হলে নিজের ছেলের নাম কেউ হিমালয় রাখে?
স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে গেলেন। হেডস্যার গম্ভীর গলায় বললেন, ছেলের নাম কী বললেন–হিমালয়?
জি।
আহমদ বা মোহাম্মদ এইসব কিছু আছে?
জি না, শুধুই হিমালয়।
হেডস্যার অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বললেন, ও আচ্ছা।
বাবা উৎসাহের সাথে বললেন, নদীর নামে মানুষের নাম হয়, ফুলের নামে হয়, গাছের নামে হয়, হিমালয়ের নামে নাম হতে দোষ কী?
হিমালয় নাম রাখার বিশেষ কোনো তাৎপর্য কী আছে?
অবশ্যই আছে–যাতে এই ছেলের হৃদয় হিমালয়ের মতো বড় হয় সেজন্যই এই নাম।
তাহলে আকাশ নাম রাখলেন না কেন? আকাশ তো আরো বড়।
বড় হলেও তা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। হিমালয়কে স্পর্শ করা যায়।
কিছু মনে করবেন না। এই নামে স্কুলে ছেলে ভরতি করা যাবে না।
এমন কোনো আইন আছে যে হিমালয় নাম রাখলে সেই ছেলে স্কুলে ভরতি হতে পারবে না?
আইন টাইন আমি জানি না। এই ছেলকে আমি স্কুলে নেব না।
কেন?
সিট নেই?
আগে তো বললেন সিট আছে।
এখন নেই।
শিক্ষক হয়ে মিথ্যা কথা বলছেন–তাহলে তো এখানে কিছুতেই ছাত্র ভরতি করা উচিত না। মিথ্যা কথা বলা শিখবে।
খুব ভাল কথা। তাহলে এখন যান।
এই দীর্ঘ কথোপকথনের কিছুই আমার মনে নেই। মনে থাকার কথাও নয়। বাবা প্রতিটি ঘটনা লিখে রেখে গেছেন বলে বলতে পারলাম। বাবার মধ্যে গবেষণাধর্মী একটা ব্যাপার ছিল। অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে পাতার পর পাতা পরিষ্কার অক্ষরে লিখে গেছেন।
তাঁর বিদ্যা ছিল ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেবার পর রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন আর ফিরে যান নি।
জীবিকার জন্যে ঠিক কী কী করতেন তা পরিষ্কার নয়। জ্যোতিষবিদ্যা, সমুদ্রজ্ঞান, লক্ষণ বিচার এই জাতীয় বইয়ের স্তুপ দেখে মনে হয় মানুষের হাতটাত দেখতেন। একটা প্রেমের সঙ্গেও সম্ভবত যুক্ত ছিলেন। কয়েকটা নোটবই ও লিখেছিলেন। নোটস অব প্রবেশিকা সমাজবিদ্যা। এরকম একটা বই।
তাঁর পরিবারের কারোর সঙ্গে তাঁর কোনোই যোগাযোগ ছিল না। তাঁদের সম্পর্কে আমি জানতে পারি বাবার মৃত্যুর পর। গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় বাবা তাঁর বড়বোনকে একটি চিঠি লিখে জানান যে তাঁর মৃত্যু হলে আমাকে যেন আমার মার বাড়ি পাঠানো হয়। এটাই তাঁর নির্দেশ। এর অন্যথা যেন না হয়।
চিঠি পাওয়ার পরপরই বাবার দিকের আত্মীয়স্বজনে আমাদের ছোট বাসা ভরতি হয়ে যায়। আমার দাদাজানকে তখনি প্রথম দেখি। সুঠাম স্বাস্থ্যের টকটকে গৌরবর্ণেও এক জন মানুষ। চেহারার কোথায় যেন জমিদার-জমিদার একটা ভাব আছে। তিনি মরণাপন্ন বাবার হাত ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, আমার ভূল হয়েছে। আমি বাবা তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। যথেষ্ট পাগলামি হয়েছে, আর না।
আমার বাবা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন, আচ্ছা যাক ক্ষমা করলাম। কিন্তু আমি চাই না আমার ছেলে আপনাদের সঙ্গে মানুষ হোক। ও যাবে তার মামাদের কাছে।
তার মামারা কি আমাদের চেয়ে ভালো?
না ওরা পিশাচ শ্রেণীর–ওদের সঙ্গে থাকলে অনেক কিছু শিখবে।
আমার দাদাজান এবার সত্যি সত্যি কেঁদে ফেললেন। বৃদ্ধ এক জন জমিদার ধরনের মানুষ কাঁদছে–এই দৃশ্যটি সত্যিই অদ্ভুদ। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, তুই এক পাগল, তোর ছেলেটাকেও তুই পাগল বানাতে চাস?
এই নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই না।
আমাদের বড়লোক আত্মীয়স্বজনরা অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে আমাদের বাসার সাজসজ্জা দেখতে থাকেন। এর ফাঁকে ফাঁকে বাবার সঙ্গে আমার দাদাজানের কিছু কথাবার্তা হলো। যেমন–
ঢাকায় কতদিন ধরে আছিস?
প্রায় তিন বছর।
এর আগে কোথায় ছিলি?
তা দিয়ে আপনার দরকার কী?
তোর মা যখন অসুস্থ্য তখন সব খবরের কাগজে তোর ছবি ছাপিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম।
খবরের কাগজ আমি পড়ি না।
আমার বড়ফুপু এই পর্যায়ে হাত ইশারা করে আমাকে ডাকলেন। আদুরে গলায় বললেন, খোকা তোমার নাম কী?
আমি বললাম, হিমালয়।
সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলেন।
দাদা দুঃখিত গলায় বললেন, ছেলের নাম কি সত্যি সত্যি হিমালয় রেখেছিস?
হুঁ।
বাবার সমস্ত আপত্তি অগ্রাহ্য করে তাঁকে একটা বড় ক্লিনিকে ভরতি করা হলো। আপত্তি করার মতো অবস্থাও তাঁর ছিল না। কথা বলা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দুই একটা ছোটখাটো বাক্য বলতেও তাঁর কষ্ট হত। তাঁকে বাইরে চিকিৎসার জন্যে পাঠানো হবে এমন কথা শোনা যেতে লাগল। বাবা তাঁদের সেই সুযোগ দিলেন না। ক্লিনিকে ভরতি হবার ন-দিনের দিন মারা গেলেন।
সজ্ঞানের মৃত্যু যাকে বলে। মৃত্যুও আগমুহূর্তেও টনটনে জ্ঞান ছিল। আমাকে বললেন, তোমার জন্য কিছু উপদেশ লিখে রেখে গেছি। সেগুলো মন দিয়ে পড়বে। তবে লেখাটা অসম্পূর্ণ। সম্পূর্ণ করবার সময় হলো না। আমার দিকের আত্নীয়স্বজনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখবে না এবং তাদের সাহায্য নেবে না। তবে ষোল বছর পরে তুমি যদি মনে কর আমার সিদ্ধান্ত ভুল, তখন তুমি নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এর আগ পর্যন্ত মামার সঙ্গে থাকবে। মনে রাখবে তোমার মামারা পিশাচ শ্রেণীর। পিশাচ শ্রেণীর মানুষদের সংস্পর্শে না এলে, মানুষের সৎগুণ সম্পর্কে ধারণা হবে না।
ডাক্তার এই পর্যায়ে বললেন, আপনি দয়া করে চুপ করুন। ঘুমুবার চেষ্টা করুন।
বাবা শীতল গলায় বললেন, প্রতিপদ শুরু হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ায় আমার মৃত্যু হবার কথা। কাজেই আমাকে বিরক্ত করবেন না। সবচে জরুরি কথাটাই আমার ছেলেকে বলা হয়নি–শোন হিমু, কোনো রকম উচ্চাশা রাখবি না। টাকা-পয়সা করতে হবে, বড় হতে হবে, এই সব নিয়ে মোটেও ভাববি না। সমস্ত কষ্টের মূলে আছে আমাদের উচ্চাশা। আমার উচ্চাশা ছিল বলে প্রথম দিকে খুবই কষ্ট পেয়েছি। শেষের দিকে উচ্চাশা ত্যাগ করতে পেরেছিলাম তাই খানিকটা আনন্দে ছিলাম। আনন্দে থাকাটাই বড় কথা। সবসময় আনন্দে থাকার চেষ্টা করবি।
বাবা কথা বলতে বলতেই একটু থামলেন, হঠাৎ গভীর আগ্রহ এবং বিস্ময়ের সঙ্গে চারদিকে তাকালেন। তারপর মৃদুস্বরে বললেন, ও আচ্ছা তাহলে এর নামই মৃত্যু। এটা মন্দ কী? মৃত্যু তাহলে খুব ভয়াবহ নয়।
তার কিছুক্ষণের মধ্যেই বাবার মৃত্যু হলো।
আমি কিছুদিন আমার দাদাজানের সঙ্গে থাকলাম। তিনি আমার প্রসঙ্গে বারবার বিস্ময় প্রকাশ করতে লাগলেন।
আরে এটা কেমন ছেলে বাবা মরে গেল এক ফোঁটা চোখের পানি নেই। এ তো দেখি তার বাপের চেয়ে পাগল হয়েছে। এই দিকে আয়। বাপ-মা মারা গেলে চোখের পানি ফেলতে হয়।
আমি শীতল গলায় বললাম, আমাকে তুই-তুই করে বলবেন না।
তিনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
দাদাজানের বাড়িটা বিশাল। সেই বিশাল বাড়ির দোতলায় একটা ঘর আমাকে দেয়া হলো। সেই ঘরে এই বাড়ির ছেলে-মেয়েদের জন্যে সার্বক্ষণিক প্রাইভেট টিউটর থাকেন। তাঁর নাম কিসমত মোল্লা।
তিনি যখন শুনলেন আমি কোনো স্কুলে পড়ি না, এতদিন বাবার কাছে পড়েছি তখন একেবারে আকাশ থেকে পড়লেন।
কী পড়েছ বাবার কাছে?
ইংরেজী, বাংলা, অঙ্ক, ভূগোল, আর নীতিশাস্ত্র।
নীতিশাস্ত্রটা কী?
কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ, কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায় এইসব।
কী বলছ কিছুই তো বুঝলাম না ।
যেমন ধরুন মিথ্যা। মিথ্যা বলা মন্দ। তবে আনন্দের জন্যে মিথ্যা বলায় অন্যায় নেই। মিথ্যা দিয়ে আমরা সত্যকে চিনতে পারি।
বলছ কী এসব! বুঝিয়ে বল।
যেমন ধরুন গল্প-উপন্যাস। এসব মিথ্যা। কিন্তু মিথ্যা দিয়ে আমরা সত্যকে চিনতে পারি।
মাস্টার সাহেব চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন। নিজেকে অতি দ্রুত সামলে নিয়ে বললেন–অমবস্যা ইংরেজী কী জানো?
জানি। অমবস্যা হলো নিউমুন। বলে নিউমুন কিন্তু আকাশে তখন চাঁদ থাকে না।
মৃন্ময় শব্দের মানে কী?
মৃন্ময় হলো মাটির তৈরি।
মাস্টার সাহেব আমার কথাবার্তায় অত্যন্ত চমৎকৃত হলেন, কিন্তু বাড়ির অন্য কেউ হলো না । আমার দাদাজান ক্রমাগত বলতে লাগলেন–তোর বাবা ছিলেন পাগল। উন্মাদ। ও যে সব শিখিয়েছে সব ভুলে যা। সব নতুন করে শিখবি। তোকে ভালো ইংরেজি স্কুলে ভরতি করে দেব। আর শোন তোর নাম দিলাম চৌধুরী ইমতিয়াজ। মনে থাকবে?
দাদাজান বাড়িতে ঘোষণা করে দিলেন একে কেউ হিমালয় বা হিমু , কিছুই বলে ডাকতে পারবে না । এর নাম ইমতিয়াজ চৌধুরি। ডাক নাম টুটুল। মনে থাকবে? এই ছেলের মাথার ভিতর এই নাম দুটা ঢুকিয়ে দিতে হবে। সারাদিন খুব কম করে হলেও একে পঁচিশবার চৌধুরি ইমতিয়াজ এবং পঁচিশবার টুটুল ডাকতে হবে, Its an order.
আমাকে সত্যি সত্যি একটা ইংরেজি স্কুলে ভরতি করে দেয়া হলো। স্কুলের পোশাক বানানো হলো।
প্রথমদিন স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখি ময়লা পায়জামা-পাঞ্জাবি উপর একটা কোট চড়িয়ে অত্যন্ত রুগৃণ এক লোক বসার ঘরে বসে আছে । তার হাতে চকচকে নতুন একটা ছাতা, মনে হচ্ছে আজই কেনা হয়েছে। ভদ্রলোকের মুখ ভরতি পান। এস্ট্রেতে সেই পানের পিক ফেলছেন। তাঁর বসে থাকার ভঙ্গি , পান খাওয়ার ভঙ্গি এবং পানের পিক ফেলার ভঙ্গিতে কোনো সংকোচ নেই। যেন এই বাড়ির সঙ্গে তাঁর খুব ভালো পরিচয়। যেন এটা তাঁর নিজেরই ঘর-বাড়ি।
আমি ঘরে ঢোকামাত্রই বললেন, বাবা হিমালয়। আমি তোমাকে নিতে এসেছি। আমি তোমার বড়মামা। আমাকে সালাম কর।
দাদাজান গম্ভীর গলায় বললেন, আমি তো আপনাকে বলেছি তাকে নিতে পারবেন না। সে গ্রামে গিয়ে কী করবে? সে এখানেই থাকবে । পড়াশোনা করবে। তাকে স্কুল ভরতি করা হয়েছে।
আমার বড়মামা বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসলেন। যেন এই রকম হাস্যকর কথা তিনি আগে কখনো শুনেন নি।
দেখেন তালুই সাহেব। ছেলের বাবা পাত্র মারফত এই অধিকার দিয়ে গেছে । এখন যদি আপনারা দিতে না চান, বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। কোর্টে ফায়সালা হবে, উপায় কী? যদিও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মামলা-মোকদ্দমা কোনো কাজের কথা না।
দাদাজানের মুখে কোনো কথা এল না। বড়মামা এস্ট্রেতে আর একবার পানের পিক ফেলে বললেন, বাবার ইচ্ছামতোই কাজ হোক। খামখা আপত্তি করছেন কেন? ছেলের খরচাপাতির জন্যে মাসে মাসে টাকা দিবেন। তাহলেই তো হয়।
আপনি কী করেন?
তেমন কিছু না । সামান্য বিষয়সম্পত্তি আছে। টুকটাক ব্যবসা আছে। ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেম্বার ছিলাম। এইবার জিততে পারি নাই। সতের ভোটে ঠগ খেয়েছি । যদি অনুমতি দেন একটু বেয়াদবি করি?
কী বেয়াদবি?
একটা সিগারেট ধরাই। এমন নেশা হয়েছে না-খেলে দমটা বন্ধ হয়ে আসে।
বড়মামা অনুমতির অপেক্ষা না করেই সিগারেট ধরালেন।
দাদাজান বললেন, আপনি একে নিতে চাচ্ছেন কারণ আপনার ধারণা একে নিলে মাসে মাসে মোটা টাকা পাবেন। তাই না?
বড়মামা অত্যন্ত বিস্মত হওয়ার ভঙ্গি করে বললেন, এই হাতের পাঁচ আঙুলের ভিতর দিয়া অনেক টাকা গেছে। অনেক টাকা আসছে । টাকা আমার কাছে কিছুই না। আসছি রক্তের টানে। রক্তের টান কঠিন জিনিস তালুই সাহেব। এই – যে বোন বিয়ে দিলাম তারপরে আর কোনো খোঁজ নাই। কী যে যন্ত্রণা । যাক হিমালয় বাবাকে দেখে মনটা শান্ত হয়েছে। তা বাবা , তোমার নাম কি সত্যি হিমালয়?
আমি কিছু বলার আগেই দাদাজান বললেন, না ওর নাম চৌধুরি ইমতিয়াজ। চৌধুরী আগে কী জন্যে? চৌধুরী থাকবে থাকবে পিছে। আগে ঘোড়া তারপর গাড়ি।
কী বলেন তালুই সাব?
দাদাজান কোনো উত্তর দিলেন না। তাঁর চোখে-মুখে ক্রোধ ও ঘৃণা। চা এবং কেক এনে কাজের ছেলে সামনে রাখল। বড় মামার মুখে পান। সেই অবস্থাতেই চায়ে চুমুক দিলেন। কেক হাতে নিলেন।
দাদাজান বললেন, আমার ছেলে আপনার বোনের খোজ পেল কী করে?
সেটা তালুই সাব, আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেই ভালো হত। আফসোস সে জীবিত নাই। আমরা আপনার ছেলেকে খুজে বের করি নাই। সে বন্ধুর সাথে আমাদের অঞ্চলে এসেছিল তারপরে কেমনে কেমনে হয়ে গেল। সত্যি কথ বলতে কী তালুই সাব, বিয়ের পর মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। বোনের খোঁজ নাই। নানা লোকে নানা কথা বলে। কেউ বলে নামকাওয়ান্তে বিয়ে করে নিয়ে গেছে, পাচার করে দেবে। ইন্ডিয়া পাকিস্তান তারপর ধরেন মিডল ইস্ট। এইসব জায়গায় মেয়েকে ভাড়া খাটাবে।
বাচ্চা ছেলের সামনে এ রকম কুৎসিত কথা বলবেন না।
কুৎসিত কথা না। এগুলো সত্যি কথা। এই রকম পার্টি আছে।
সত্যিকথা সবসময় বলা যায় না।
আমার কাছে এটা পাবেন না তালুই সাব। সত্য কথা আমি বলবই। ভালো লাগুক আর না-লাগুক।
তাই নাকি?
জি। আর হিমালয় বাবাকে নিয়ে যাব। পরশু সকালে এসে নিয়ে যাবে। তৈরি থাকতে বলেন। মামলার তদবিরে এসেছি। দুটা দিন লাগবে।
এই ছেলেকে আমি আপনার সঙ্গে দেব না।
এসব বলবেন না তালুই সাব। আত্নীয়ের মধ্যে গন্ডগোল আমার পছন্দ হয় না। আইনের আশ্রয় নিলে আপনারও ক্ষতি আমারও ক্ষতি। আর্থিক ক্ষতি, মানসিক ক্ষতি। কোর্ট ফি এখন বাড়ায়ে করেছে তিনগুণ। গরিব মানুষ যে একটু মামলা-মোকদ্দমা করবে সে উপায় রাখে নাই। বাবা হিমালয়,তুমি কি আমার সঙ্গে যেতে চাও না?
চাই।
এইটা তো বাপের ব্যাটা। আজ তাহলে উঠি তালুই সাব। বেয়াদবি যদি কিছু করে থাকি মাফ করে দিবেন। আপনার পায়ে ধরি।
বড়মামা সত্যি সত্যি পা ধরতে এগিয়ে গেলেন। দাদাজান চমকে সরে দাড়ালেন।
দুই দিন পর আমি মামার সঙ্গে রওনা হলাম।
গন্তব্য ময়মনসিংহের হিরণপুর।
আমার বাবা অনেকবারই বলেছেন, আমার মামার পিশাচ শ্রেণীর । কাজেই তাঁদের সম্পর্কে আগে থেকেই একটা ধারণা মনের মধ্যে ছিল। আমি বড় মামা এবং অন্য দুই মামার আচার-আচরণের মোটেই অবাক হলাম না ।
মামার বাড়ি উপস্থিত হবার তৃতীয় দিনের একটা ঘটনার কথা বলি। এই ঘটনা থেকে মামাদের মানসিকতার একটা আঁচ পাওয়া যাবে।
বড় মামার বাড়িতে তিনটা বিড়াল ছিল। এরা খুবই উপদ্রব করত। বড়মামার নির্দেশে বিড়াল তিনটাকে ধরা হলো। তিনি বললেন,হাদিসে আছে বিড়াল উপদ্রব করলে আল্লাহর নামে এদের জবেহ করা যায় । তাতে দোষ হয় না। দেখি বড় ছুরিটা বার কর। এই কাজ তো আর কেউ করবে না, আমাকে করতে হবে। উপায় কী?
মামা নিজেই উঠানে তিনটা বিড়ালকে জবাই করলেন। এর মধ্যে একটা ছিল গর্ভবতী।
ঐ বাড়িতে আমার তেমন কোনো অসুবিধা হয় নি। তিন মামা একসঙ্গে স্কুলঘরের মতো লম্বা একটি টিনের ঘরে থাকতেন। পুরো বাড়িতে ছেলেপুলের বিশাল দল। তাদের জগৎ ছিল ভিন্ন। একসঙ্গে পুকুরে ঝাঁপ দেয়া, একসঙ্গে সন্ধ্যেবেলা পড়তে বসা, একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া। জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল খেলা, গোল্লাছুট খেলা। খাওয়াও হত একসঙ্গে। এক মামি ভাত দিয়ে যাচ্ছেন। আর এক মামি দিচ্ছেন এক হাতা করে তরকারি, দুই হাতা ডাল। চামচে যা উঠে আসে তাই। কেউ বলতে পারবে না আমাকে এটা দাও ওটা দাও। বললেই চামচের বাড়ি।
আমাদের মধ্যে মারামারি লেগেই ছিল।এ ওকে মারছে। সে তাকে মারছে। সেসব নিয়ে কোনো নালিশও হচ্ছে না। নালিশ দেয়ায় বিপদ আছে। এক জন নালিশ দিল – কার বিরুদ্ধে নালিশ, কী সমাচার ভালোমতো শোনাই হলো না। হাতের কাছে যে কয় জনকে পাওয়া গেল পিটিয়ে লাশ বানিয়ে ফেলা হলো। সত্যিকার অপরাধী হয়তো শাস্তিও পেল না।
আমি এই বিশাল দলের সঙ্গে অবলীলায় মিশে গেলাম। সীমাহীন স্বাধীনতা–যে স্বাধীনতা সচরাচর শিশুরা পায় না।
আমরা কী করছি না করছি বড়রা তা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায়ত না।
একজনের হয়তো জ্বর হয়েছে। সে বিছানায় শুয়ে কুঁ কুঁ করছে। কেউ ফিরে তাকাচ্ছে না। নিতান্ত বাড়াবাড়ি না হলে ডাক্তার নেই। মাসে একবার নাপিত এসে সবকটা ছেলের মাথা প্রায় মুড়িয়ে দিয়ে ধান নিয়ে চলে যাচ্ছে। কাপড়-জামারও কোনো ঠিকঠিকানা নেই। এ ওরটা পরছে। ও তারটা পরছে।
মামাদের বাড়ি থেকেই আমি মেট্রিক পাস করি। যে বছর মেট্রিক পাস করি, বড় মামা সে বছরই মারা যান। তাঁর শত্রুর অভাব ছিল না। বলতে গেলে গ্রামের সবাই ছিল তাঁর শত্রু।
এক অন্ধকার বৃষ্টির রাতে একজন কেউ মাছ মারবার কোঁচ দিয়ে বড়মামাকে গেঁথে ফেলে। বিশাল কোঁচ। মামার পেট এ ফোঁড় ও ফোঁড় হয়ে যায়। কোঁচের খানিকটা পিঠ ছেদা করে বের হয়ে থাকে। উঠানে চাটাই পেতে মামাকে শুইয়ে রাখা হয়। দৃশ্য দেখার জন্যে সারা গ্রামের লোক ভেঙ্গে পড়ে।
তাঁকে সদরে নিয়ে যাওয়ার জন্যে মহিষের গাড়ির ব্যবস্থা করা হলো। মামা ঠান্ডা গলায় বললেন, এতক্ষণ বাঁচব না। তোমরা আমাকে থানায় নিয়ে যাও। মরার আগে আমি কারা এই কাজ করেছে বলে যেতে চাই।
মামা কাউকেই দেখেন নি তবু তিনি মৃত্যুর আগে আগে থানার ওসির কাছে চার জনের নাম বললেন। তিনি বললেন, তাঁর হাতে টর্চ ছিল। তিনি টর্চ ফেলে ফেলে এদের দেখেছেন।
ওসি সাহেব মামার দেয়া জবানবন্দি লিখতে লিখতে বললেন–ভাই সাহেব, এই কাজটা করবেন না, ডেথ বেড কনফেসন খুব শক্ত জিনিস। শুধুমাত্র এর উপরই কোর্ট রায় দিয়ে দেবে। নির্দোষ কিছু মানুষকে আপনি জড়াচ্ছেন। এদের ফাঁসি না হলেও যাবজ্জীবন হয়ে যাবে।
মামা বললেন, যা বলছি সবই সত্যি। কোরান মজিদ আনেন। আমি মজিদে হাত দিয়া বলি–।
ওসি সাহেব বললেন, তার দরকার হবে না। নিন এখানে সই করুন। এটা আপনার জবানবন্দি।
মামা সই করলেন। মারা গেলেন থানাতেই। মরবার আগে মেজোমামাকে কানে কানে বললেন, এক ধাক্কায় চার শত্রু শেষ। কাজটা মন্দ হয় না।
চার শত্রু শেষ করার গাঢ় আনন্দ নিয়ে মামা মারা গেলেন। তবে মৃত্যুর আগে মৌলানা ডাকিয়ে তওবা করলেন। তাঁকে খুবই আনন্দিত মনে হলো।
বড়মামি ব্যাকুল হয়ে কাঁদছিলেন। তাকে ডেকে বললেন, তওবা করে ফেলেছি। এখন আর চিন্তা নাই। সব পাপ মাপ হয়ে গেল। সরাসরি বেহেশতে দাখিল হব। খামখা কান্দ কেন? তওবা সময়মতো করতে না পারলে অসুবিধা ছিল। আল্লাহ পাকের অসীম দয়া। সময় পাওয়া গেছে। কান্নাকাটি না করে আমার কানের কাছে দরুদ পড়। কোরান মজিদ পাঠ কর।
মামার মৃত্যুর পর আমি ঢাকায় চলে এলাম। নতুন জীবন শুরু হলো বড় ফুপুর সঙ্গে।
ময়ূরাক্ষী ৪/৮
প্রবল ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙল। চোখ মেলে দেখি বড়ফুপু। পাশের বিছানা খালি। বাদল নেই। সকালে ঘুম ভাঙতেই প্রথম যে জিনিসটা জানতে ইচ্ছা করে–কটা বাজে?
বড়ফুপুকে এই প্রশ্ন করব না ভাবছি তখন তিনি কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, কেলেঙ্কারি হয়েছে।
কি কেলেঙ্কারি?
মানুষকে মুখ দেখাতে পারব না রে।
আমি বিছানায় বসতে বসতে বললাম, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার রাতে এসেছিল, তারপর আর রাতে ফিরে যায় নি–তাইতো?
তুই জানলি কী করে?
অনুমান করে।
আমি সকালে একতলায় নেমে দেখি ঐ ছেলে আর রিনকি। ছেলে নাকি রাতে তোর ফুপার অসুখের খবর পেয়ে এসেছিল। ঝড়বৃষ্টি দেখে আর ফিরে যায় নি। আর ঐ বদ মেয়ে সারারাতে ঐ ছেলের সঙ্গে গল্প করেছে।
বল কী?
আমার তো হাত ঘামছে। কীরকম বদ মেয়ে চিন্তা করে দেখ। মেয়ের কতবড় সাহস। ঐ ছেলে এসেছে ভালো কথা। আমাকে তো খবরটা দিবি?
আমি গম্ভিও গলায় বললাম, ঐ ছেলেরই বা কেমন আক্কেল রাত দুপুরে এল কীজন্যে?
হ্যাঁ দেখ না কান্ড। বিয়ে হয় নি কিছু না, শুধু বিয়ের কথা হয়েছে-এর মধ্যে নাকি সারারাত জেগে গল্প করতে হবে। রাত কি চলে গেছে নাকি?
খুবই সত্য কথা।
এখন ধর কোনো কারণে বিয়ে যদি ভেঙ্গে যায় তারপর আমি মুখ দেখাব কী ভাবে?
আমি এক্ষুনি নিচে যাচ্ছি ফুপু, ঐ ফাজিল ছেলের গালে ঠাশ করে একটা চড় মারব। তারপর দ্বিতীয় চড় রিনকির গালে। মেয়ে বলে তাকে ক্ষমা করার কোনো অর্থ হয় না।
তুই সবসময় অদ্ভুদ কথাবার্তা বলিস কেন? ঐ ছেলের গালে তুই চড় মারতে পারবি?
কেন পারব না?
যে ছেলে দুই দিন পর এ বাড়ির জামাই হচ্ছে তার গালে তুই চড় মারতে চাস? তোর কাছে এলাম একটা পরামর্শের জন্যে।
আজই ওদের বিয়ে লাগিয়ে দাও।
আজই বিয়ে লাগিয়ে দেব?
হুঁ। কাজি ডেকে এনে বিয়ে পড়িয়ে দাও–ঝামেলা চুকে যাক। তারপর ওরা যত ইচ্ছা রাত জেগে গল্প করুক। আসল অনুষ্ঠান পরে হবে। বিয়েটা হয়ে যাক।
ফুপু নিশ্বাস ফেললেন। মনে হচ্ছে আমার কথা তাঁর মনে ধরেছে। আমি বললাম, তুমি চাইলে আমি ছেলেকে বলতে পারি।
ওরা আবার ভাববে না তো আমরা চাপ দিচ্ছি?
চাপাচাপির কী আছে? ছেলে এমন কী রসগোল্লা? মার্বেলের মতো সাইজ। বিয়ে যে দিচ্ছি এতেই তো তার ধন্য হওয়া উচিত। তার তিন পুরুষের ভাগ্য যে আমরা…
ফুপু বিরক্তস্বরে বললেন, ছেলে এমন কী খারাপ?
খারাপ তা তো বলছি না–একটু শর্ট। তা পুরুষ মানুষের শর্টে কিছু আসে যায় না। পুরুষ হচ্ছে সোনার চামচ। সোনার চামচ বাঁকাও ভালো।
আজই বিয়ের ব্যাপারে ছেলে কি রাজি হবে?
দেখি কথা বলে। আমার ধারণা হবে।
তোর কথা তো আবার সবসময় মিলে যায়–একটু দেখ কথা বলে।
আমি আমার পাঞ্জাবি খুঁজে পেলাম না। ফুপু বললেন, বাদল ভোর বেলায় ঐ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে বের হয়েছে।
আমি বাদলের একটা শার্ট গায়ে দিয়ে নিচে নামতেই মেরিন ইঞ্জিনিয়ার সাহেব লাজুক গলায় বললেন, হিমু ভাই আপনাকে একটা কথা বলতে চাই। খুব লজ্জা লাগছে অবশ্যি।
বলে ফেল।
রিনকির খুব শখ পূর্ণিমারাতে সমুদ্র কেমন দেখায় সেটা দেখবে। দুই দিন পরেই পূর্ণিমা।
ও আচ্ছা–দুই দিন পরেই পূর্ণিমা তা তো জানতাম না।
মানে কথার কথা বলছি ধরুন আজ যদি বিয়েটা হয়ে যায়–তাহলে আজ রাতের ট্রেনে রিনকিকে নিয়ে কক্সবাজারের দিকে রওনা হতে পারি। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রাখা আর কী। পরে একটা রিসিপশানের ব্যবস্থা না হয় হবে।
তোমার দিকের আত্মীয়স্বজনরা…
ওদের আমি ম্যানেজ করব। আপনি শুধ এদের বুঝিয়েসুঝিয়ে একটু রাজি করান–মানে রিনকি বেচারির দীর্ঘদিনের শখ। ওর জন্যেই খারাপ লাগছে।
না না, তা তো বটেই। দীর্ঘদিনের শখ থাকলে তা তো মেটানোই উচিত। রাতের টিকেট পাওয়া যাবে তো? পুরো ফার্স্টক্লাস বার্থ রিজার্ভ করতে হবে।
রেলওয়েতে আমার লোক আছে হিমু ভাই।
তাহলে তুমি বরং ঐটাই আগে দেখ। আমি এ দিকটা ম্যানেজ করছি।
আনন্দে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের চোখে চকচক করছে।সে গাঢ় গলায় বলল, রিনকি আমাকে বলেছিল–হিমু ভাইকে বললে উনি ম্যানেজ করে দিবেন। আপনি যে সত্যি সত্যি করবেন বুঝিনি।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, কী নিয়ে গল্প করলে সারারাত?
গল্প আর কী করব বলুন। রিনকি এমন অভিমানী–কিছু বললেই তার চোখে পানি এসে যায়।সুপার সেনসেটিভ মেয়ে। কথায় কথায় একসময় বলেছিলাম যে ইউনিভাসিটিতে পড়ার সময় হেনা নামের একটা মেয়ের সঙ্গে সামান্য পরিচয় হয়েছিল–এতেই রিনকি কেঁদে অস্থির। আমাকে বলেছে আর কোনোদিন যদি আমি ঐ মেয়ের নাম মূখে আনি সে নাকি সুইসাইড করবে। এ রকম মেয়ে নিয়ে বাস করা কঠিন হবে। খুব দুশ্চিন্তা লাগছে হিমু ভাই।
ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে কিন্তু মোটেও চিন্তিত মনে হলো না। বরং খুবই আনন্দিত মনে হলো। আমার ধারণা প্রায়ই সে হেনার কথা বলে রিনকিকে কাঁদাবে। রিনকিও কেঁদে আনন্দ পাবে। ওদের এখন আনন্দরই সময়।
আমি বললাম, কথা বলে সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই । তুমি তোমার আত্নীয়স্বজনকে বল । তার চেয়ে যা জরুরি তা হচ্ছে টিকিটের ব্যবস্থা । আমি ফুপু-ফুপাকে রাজি করাচ্ছি।
রাজি হয়েছে কি-না জেনে গেলে ভালো হতো না–হিমু ভাই?
আমি ভবিষ্যৎ বলতে পারি তুমি কি এটা জানো না?
জানি।
আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি তোমরা দুজন হাত ধরাধরি করে সমুদ্রের পাড়ে হাঁটছ। অসম্ভব জোছনা হয়েছে। সমুদ্রের পানি রুপার মতো চকচক করছে আর তোমরা…
আমরা কী?
থাক সবটা বললে রহস্য শেষ হয়ে যাবে।
আপনি এক অসাধারণ মানুষ হিমু ভাই। অসাধারণ।